সফর ১৪৩১ হি:(১৫)

এসো কলম মেরামত করি

এসো কলম মেরামত করি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 এমনই হয়; যারা অন্যের সংশোধন নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা সাধারণত নিজের কথা ভুলে যায়। মনে থাকে না যে, তাদের নিজেদেরও সংশোধনের প্রয়োজন আছে। আমারও তাই হয়েছে। তোমাদের কলম মেরামতে আমি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, ভুলে গেছি আমার নিজেরও কলমটা মেরামত করা দরকার। তাই আজ তোমাদের কলম থাক, আমার নিজের কলমটা একটু মেরামত করি। অবশ্য তাতে তোমাদেরও লাভ, যদি মনযোগ দিয়ে দেখো, কীভাবে আমার কলম আমি মেরামত করছি।

পুষ্পের প্রথম সংখ্যার কচি ও কাঁচার সম্পাদকীয়টি পুষ্পসমগ্রে একবার দেখে নাও। অনেক আগের লেখা; এখন পড়ে দেখি; শব্দে, বাক্যে, বিন্যাসে এবং বক্তব্যের উপস্থাপনে যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। লেখাটি পড়তে গিয়ে এখন আমি রীতিমত লজ্জা পাচ্ছি, ভুলের এত ‘কাদামাটি’ গায়ে মেখে লেখাটা পাঠকের সামনে হাযির হয়েছিলো! যাক, লেখাটির কিছু কিছু ভুলত্রুটি এখন এখানে সংশোধন করছি। দেখো-

‘ছোট্ট বন্ধুরা! এটা হলো তোমাদের পাতা। তোমাদের কচি হাতের কাঁচা কলমের লেখাই শুধু ছাপা হবে এখানে। তাই এ পাতার নাম হলো কচি ও কাঁচা।’

সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, নির্দোষ লেখা। কিন্তু দেখো, এটি যেহেতু ছোট্টদের পাতা সেহেতু তাদের একক ভূমিকা থাকা উচিত ছিলো, সম্পাদক বা অন্য কারো ছায়াপাত এখানে থাকা উচিত ছিলো না, অথচ ‘ছাপা হবে’ বলার কারণে অন্য কারো পরোক্ষ ছায়াপাত ঘটেছে। যদি লেখা হতো, ‘এটা হলো তোমাদের পাতা। এখানে শুধু তোমরাই লিখবে তোমাদের কচি হাতের কাঁচা কলমে। এখানে বড়দের ‘প্রবেশ নিষেধ’!’

যদি এভাবে লেখা হতো তাহলে কি আগের চেয়ে ভালো হতো না!

তারপর দেখো- ‘দিন-রাত কত কিছুই তো তোমাদের সামনে ঘটতে থাকে। যে কোন ঘটনা তোমাদের মনে দাগ কাটে সেটাই লিখে ফেলতে পারো কলমটা তুলে, খাতাটা মেলে।’

এখন মনে হচ্ছে, ‘কত কিছুই তো তোমাদের’ এখানে কাছাকাছি তিনটি ‘ত’ উচ্চারণে কঠিনতা সৃষ্টি করেছে। ‘ঘটতে থাকে’ এর উচ্চারণও কঠিন। এভাবে লিখলে ভালো হতো- ‘দিন-রাত কত কিছুই তো ঘটে তোমাদের সামনে! ছোট-বড় কত ঘটনা! কোন ঘটনা যদি তোমাদের মনে দাগ কাটে সেটাই লিখে ফেলতে পারো, কলমটা তুলে, খাতাটা মেলে।’

শেষ অংশটা কয়েক রকম হতে পারে

(ক) কলমটা তুলে, খাতাটা মেলে

(খ) কলমটা তুলে, খাতাটা খুলে

(গ) খাতা-কলম নিয়ে

(ঘ) কাগজ-কলম নিয়ে

আমরা ‘খাতাটা মেলে লিখতে বসেছি, এরকম বলি না। তবে ‘খাতাটা খুলে’ এখানে দু’টি ‘খ’-এর কাছাকাছি উচ্চারণ কিছুটা অসুন্দর বলে ‘খুলে এর স্থানে ‘মেলে’ ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু সেটাও খুব সুন্দর হয়নি। তার চেয়ে, ‘খাতা-কলম নিয়ে’ বা ‘কাগজ-কলম নিয়ে’ লিখলে আরো ভালো হতো।

‘কোন ঘটনা যদি তোমাদের মনে দাগ কাটে’- এখানে শর্ত আরোপ করার কী প্রয়োজন ছিলো! তার চেয়ে এভাবে লিখলে ভালো হতো না!- ‘দিন-রাত কত কিছুই তো ঘটে তোমাদের সামনে! ছোট-বড় কত ঘটনা! সেগুলোই তো হতে পারে তোমাদের লেখার বিষয়! একটা দু'টো ঘটনা লিখে ফেলো না কাগজ-কলম নিয়ে!’

আবার দেখো-

(ক) ‘এমনকি আম্মু তোমার জন্য দুধ রেখেছেন, আর দুষ্ট বেড়ালটা সুযোগ না, পেয়ে চুকচুক করে খেয়ে ফেললো সেই দুধ; এটাও তো একটা মজার ঘটনা হলো!’

(খ) ‘এমনকি আম্মু যে তোমার জন্য দুধ রেখেছেন, আর কোন ফাঁকে দুষ্ট বেড়ালটা সেই দুধ খেয়ে ফেললো চুকচুক করে, এটাও তো বেশ মজার ঘটনা।’

(গ) ‘এমনকি আম্মু দুধ রেখেছেন তোমার জন্য, আর চুকচুক করে সেই দুধ খেয়ে ফেললো দুষ্ট বেড়ালটা। তোমার তাতে কষ্ট হলো, হয়ত কান্নাও পেলো।’

একটু চিন্তা করলেই তুমি বুঝতে পারবে যে, এখানে (ক)-এর চেয়ে (খ) সুন্দর হয়েছে, আবার (গ) হয়েছে (খ)-এর চেয়ে সুন্দর।

তারপর দেখো- ‘এখন তুমি দুধ না পাওয়ার কষ্টটা হজম করে এ ঘটনাটাই লিখে ফেলো না টুক করে! দেখবে, কেমন সুন্দর একটা লেখা হয়ে গেলো!’

‘দুধ না পাওয়ার কষ্টটা’ আরো সহজ হয় যদি বলি, ‘দুধের কষ্টটা। তাছাড়া ছোটদের জন্য ‘কষ্টটা হজম করা’ কঠিন, তার চেয়ে সহজ হলো ‘কষ্টটা ভুলে যাওয়া’। সুতরাং এভাবে লিখলে ভালো হতো- ‘এখন তুমি দুধের কষ্টটা ভুলে গিয়ে এ ঘটনাটাই লিখে ফেলো না টুক করে। দেখো, কত সুন্দর একটি লেখা হয়ে গেলো তোমার!

আরো সুন্দর হয় যদি লিখি- ‘এখন তুমি দুধের কষ্টটা ভুলে যাও, কাগজ-কলম নিয়ে বসে যাও এবং এভাবে লিখে ফেলো- ‘আম্মু আমার জন্য দুধ রেখেছিলেন। দুষ্ট বেড়ালটা কোন্ ফাঁকে চুকচুক করে খেয়ে ফেললো সবটুকু দুধ। আমার তখন খুব কান্না পেলো। থাক, আমার তো আম্মু আছেন। আমি তো আম্মুর হাতে প্রতিদিন দুধ খেতে পাই। বেড়ালটার তো আম্মু নেই; ও খাক না একদিন!’ দেখো, কত সুন্দর লেখা হয়ে গেলো!’

পরবর্তী অংশটা হলো- ‘তখন মনে হবে; বেড়ালের দুধ খেয়ে ফেলাটা মন্দ হয়নি তেমন, এই ফাঁকে সুন্দর একটি লেখা তো তৈরী হলো।’

এই ফাঁকে, মানে কোন্ ফাঁকে? বেড়ালের দুধ খাওয়ার ফাঁকে? কিন্তু লেখা তো হয়েছে বেড়ালের দুধ খাওয়ার পরে, দুধ খাওয়ার ফাঁকে নয়! সুতরাং কথাটা সঠিক নয়।

এভাবে লিখলে ভালো হতো- ‘তখন মনে হবে, নাহ! দুধ খেয়ে বেড়ালটা ভালোই করেছে, তাতে আমার সুন্দর একটি লেখা হয়েছে!’

পরবর্তী অংশটি হলো- ‘আর যদি সেই লেখাটা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও তাহলে তো কথাই নেই! পুষ্পের পাতায় তোমার নামে ছাপা হয়ে গেলো লেখাটা, বাহ, কী মজা! বেড়াল খেলো দুধ, আর তুমি হয়ে গেলে লেখক!’

‘তাহলে তো কথাই নেই’ একথাটা এখানে তত উপযোগী নয়, এখানে হতে পারে, ‘তাহলে তো আরো ভালো!

‘তোমার নামে ছাপা হয়ে যাবে’- এখন মনে হচ্ছে ছোটদেরকে নামের প্রলোভন দেয়া ঠিক নয়; বরং এভাবে লিখলে ভালো হতো- ‘আর যদি সেই লেখাটি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও তাহলে তো আরো ভালো! পুষ্পের পাপড়িতে লেখাটি ছাপা হলো, ছোট্ট বন্ধুরা সেই লেখা পড়ে খুশী হলো! বাহ, কী মজা! বেড়াল খেলো দুধ, তুমি হলে লেখক, আর আমি! পুষ্পের জন্য পেলাম একটি সুন্দর লেখা!

আমরা যদি নিজেদের লেখাগুলো নিজেরা এভাবে সংশোধনের চেষ্টা করি, তাহলে ধীরে ধীরে আমাদের সুন্দর থেকে সুন্দরতর হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাওফীক দান করুন, আমীন।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা