শাবান ১৪৩১হিঃ (১৭)

কাশগর ও কায়রো

ইরানের উপর ইসরাইলী আগ্রাসন কি আসন্ন?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

 

এ লেখাটি শুরু করার জন্য কম্পিউটারের সামনে যখন বসছি তখন একটি বড় প্রশ্ন আমার মনে বারবার উঁকি দিচ্ছে। ১৯৮১ সনে দুটি মুসলিম দেশ ইরাক-ইরানের ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের সময় ইহুদিরাষ্ট্র ইসরাইল ইরাকের ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লীটি ধ্বংস করে দিয়েছিলো। আন্তর্জাতিক কোন অধিকারবলে ইসরাইল এটা করতে পেরেছিলো? তখন আমেরিকা ও জাতিসঙ্ঘ ইরাকের উপর ইসরাইলী হামলার কোন প্রতিবাদ করেনি। কেন করেনি? কোন মুসলিম দেশ যদি একই কাজ করতো, আমেরিকা ও তার তল্পীবাহী প্রতিষ্ঠানটির প্রতিক্রিয়া কী হতো?

বেশ কিছুদিন ধরে ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার উপর হামলা করার সদম্ভ ঘোষণা দিয়ে আসছে। শুধু তাই নয়, এ উদ্দেশ্যে গোপন প্রস্ত্ততিও শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ইসরাইলি বিমানবাহিনীর কয়েকটি বিমান গ্রীসের উপর দিয়ে দূরপাল্লার প্রস্ত্ততিমূলক উড্ডয়নে অংশ নিয়েছে। তাছাড়া যুদ্ধবিমান এফ-১৬ সি, আমেরিকার একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে প্রয়োজনীয় অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে সম্প্রতি গাজার উদ্দেশ্যে ত্রাণসামগ্রী বহনকারী সুদানী কনভয় এবং তুর্কী জাহাজ লক্ষ্য করে ইসরাইলী যুদ্ধবিমান যে অভিযান পরিচালনা করেছে তার একটি উদ্দেশ্য ছিলো ইরানের উপর আকাশআগ্রাসন পরিচলানার সামর্থ্য যাচাই করে দেখা। ইসরাইল এখন নিজেকে এধরনের যে কোন অভিযানের জন্য সক্ষম বলে মনে করে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অসম্মতির কারণে ইসরাইল এখনো পর্যন্ত সংযম প্রদর্শন করছে বলে মনে করা হয়।   

সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার উপর হামলার উদ্দেশ্যে ইসরাইল ইরানের দক্ষিণ অঞ্চলের পারস্য উপসাগরে পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত কয়েকটি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ মোতায়েন করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৩২০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের দুটি সাবমেরিন জার্মানি ইসরাইলকে উপহাররূপে দান করেছে; হিটলারের সেই জার্মানি, যেখানে ষাটলাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিলো বলে বলা হয়, যার দায়, প্রেসিডেন্ট ওবামার মতে, এখন ফিলিস্তিনের মুসলিম জনগণকেই বহন করতে হবে। ইতিহাসের কি নিষ্ঠুর খেলা! 

পর্যবেক্ষকদের মতে ইসরাইলকে নৌঅভিযানের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হচ্ছে তুরস্কের নতুন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। ১৯৮১ সনে ইরাকের পারমাণবিক স্থাপনার উপর হামলার সময় ইহুদিরাষ্ট্র ইসরাইল মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কের আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি পেয়েছিলো, কারণ তুরস্কে তখন ক্ষমতায় ছিলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সরকার। বর্তমানে সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে ইসলামপন্থী দল, যারা পাশ্চাত্যের সমর্থনপুষ্ট কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কী সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টায় বিস্ময়কর সাফল্যের পরিচয় প্রদান করছে। এ পরিস্থিতিতে ইসরাইল আশঙ্কা করছে, ইরানের উপর সম্ভাব্য বিমানহামলার সময় তুরস্ক তার আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি নাও দিতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় বিকল্প হিসাবে নৌঅভিযানের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে এবং সে সুযোগ তার সামনে খুলে দিয়েছে আরেক মুসলিম দেশ মিশর। সম্প্রতি মিশর বন্ধুরাষ্ট্র ইসরাইলকে এই মর্মে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে যে, পারস্য উপসাগরে যাওয়ার পথে ইসরাইলী সাবমেরিনকে সুয়েজখাল পার হতে সে বাধা দেবে না। কারণ ইরান সম্পর্কে মিশর ইসরাইলের অনুরূপ ধারণা পোষণ করে, অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য এখন ইসরাইল নয়, ইরানই আসল হুমকি! 

স্থানীয় পর্যায়ে হোক, কিংবা  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, রাজনীতির খেলা আসলেই বড় চিত্তাকর্ষক। একসময় ইসরাইলই ছিলো মিশরের জানি দুশমন, এখন ইহুদিরাই হলো মিশরের জিগরি দোস্ত! কয়েক বছর আগেও সুয়েজখাল অতিক্রম করা ছিলো ইসরাইলের স্বপ্নের অতীত। তখন ইসরাইলি কোন জাহাজ পারস্য উপসাগর অভিমুখে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিলো গোটা আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে, যা প্রায় অসম্ভব একটি  চিন্তা। এখন সুয়েজখাল ইসরাইলের একেবারে হাতের নাগালে। কারণ নির্বাচনী বেড়া পার হওয়া এবং ক্ষমতা আকড়ে থাকার জন্য ৮১ বছরের বুড়ো হোসনি মোবারকের জন্য ওবামার আশীর্বাদ প্রয়োজন। 

যাই হোক, ইরানকে উদ্দেশ্য করে পারস্য উপসাগরে  ইসারইলের সাবমেরিন মোতায়েনের খবর নতুন করে গুরুতর মধ্যপ্রাচ্য- পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কারণ ইসরাইলী সাবমেরিন নিমজ্জিত অবস্থান থেকে উপরিভাগের কোন লক্ষ্যবস্ত্ততে পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করতে সক্ষম। পর্যবেক্ষকদের একটি অংশ অবশ্য মনে করছে, যা কিছু হচ্ছে তার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে ইরানকে কাবু করে আলোচনার টেবিলে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করা। কারণ আফগানিস্তান ও ইরাকের আগ্রাসনের পর আমেরিকার পক্ষে নতুন আরেকটি যুদ্ধ শুরু করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের আরেকটি অংশের মতে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি অর্জনের সম্ভাবনা হিন্দু-ইহুদি-খৃস্টান চক্রকে এখন এতটাই বেশামাল করে তুলেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে কোন কিছুই ঘটতে পারে। আমেরিকা হয়ত সরাসরি জড়িত হবে না, তবে ইসরাইলকে সম্ভবত খুব দ্রুতই সবুজ সঙ্কেত দেয়া হবে।

মুসলিম বিশ্ব যথারীতি নির্বিকার! সউদী বাদশাহ আমেরিকা ঘুরে এসেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ- মাধ্যমে অবশ্য মুসলিম বিশ্বের ভিবাক ব্যক্তিটির কোন সফরই ঘটনা নয়। তাই সিঙ্গাল কলামের খবরও হয় না। আমরা জানি না, ঐ সফরে তিনি কী দিয়ে এসেছেন এবং কী নিয়ে এসেছেন, তবে এতটুকু বলতে পারি, সাবধান! সাবধান! বারবার ঘুঘু খেয়ে যেতে পাবে না আর ধান!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা