রবিউল আওয়াল ১৪৩২হিঃ (১৯)

কাশগর ও কায়রো

জাতিসঙ্গ না জাতিসঙ্ঘর্ষ!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে বিজয়ী পক্ষ ভাবলো, পৃথিবীকে এবার যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে নিরাপদ করা দরকার১৯২০ সালে তাই গঠিত হলো জাতিপুঞ্জ ( league of nations )কিন্তু যুদ্ধের বিভীষিকা আরো ভয়াবহরূপে ফিরে এলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমেকারণ তত দিনে এসে গেছে পারমাণবিক বোমা, যা প্রায় হেরে যাওয়া দেশ জাপানের দুটি শহরের উপর ফেলা হলোউদ্দেশ্য ছিলো বোমার ধ্বংস ক্ষমতা সরেজমিনে পরীক্ষা  করে দেখামানবজাতি ভয়ে বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলো, মাত্র একটি বোমা কীভাবে চোখের পলকে লক্ষ লক্ষ মানুষের একটি জনপদ মিসমান করে দিতে পারে!  জাতিপুঞ্জের মৃতদেহের উপর গঠন করা হল জাতিসঙ্ঘ ( united nations organisation )বলা হল যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ করা এবং বিশ্বজাতিক শান্তি ও সম্প্রিতি সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্যেকিন্তু জাতিসঙ্ঘ এখন শুধু জালিমের জুলুমের হাতিয়ারদুর্বল রাষ্ট্রগুলো জাতিসঙ্ঘকে মান্য করে, আর জাতিসঙ্ঘ মান্য করে সবল রাষ্ট্রকে, এটাই আজকের বাস্তবতা

অমুসলিম জাতিবর্গের জন্য জাতিসঙ্ঘ, বলা যায়, আশির্বাদই হয়েছে, কিন্তু মুসলিমজাতির ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘকে সাক্ষাৎ অভিশাপ বললেও কম বলা হয়তুরস্কের উছমানি খেলাফত, বলকান, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আফগানিসত্মান, ইরাক, ইরান,ইন্দোনেশিয়া ও সুদানের ক্ষেত্রে সেটাই দেখা যাচ্ছেপারমাণবিক অভিযোগে ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপে যুক্তরাষ্ট্র , বৃটেনকে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়ে চলেছে জাতিসংঘ, অথচ ইসরাইলের দিকে অঙ্গুলি উত্তোলনেরও সাহস নেই তারযুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে ইরাকের উপর দীর্ঘ ১৫ বছর অন্যায় অবরোধ আরোপ করে রেখেছিল জাতিসঙ্ঘফলে অপুষ্টি, অনাহার ও বিনা চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ নিরীহ ইরাকির প্রাণহানি ঘটেএরপর দীর্ঘ অবরোধে মৃতপ্রায় দেশটির উপর সর্বাধুনিক মারাণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার দোসররাটুঁ  শব্দটিও করেনি জাতিসঙ্ঘএই বিশ্বসংস্থায় সবারই সমান অধিকারকিন্তু যুক্তরাষ্ট্রই যেন আজ জাতিসঙ্ঘ এবং জাতিসঙ্ঘই  যেন যুক্তরাষ্ট্রইরাকে  বলা হলো, সাদ্দামের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছেতুমি না দিলে পাবে কোথায় সাদ্দাম! কল্পিত অস্ত্র যখন পাওয়া গেলো না তখনো আগ্রাসন বন্ধ হলো না; জাতিসঙ্ঘওতারপর গণহত্যার অভিযোগে প্রহসনের বিচারে সাদ্দামের ফাঁসি হলোকিন্তু ফিলিস্তিনে ইসরাইলী গণহত্যা মুখে কোথায় আমেরিকা, জাতিসঙ্ঘ? একটা কাগুজে নিন্দাও তো পাশ হলো না! কাশ্মীরে ভারতীয় নর- পশুদের মুসলিমনিধনও যেন কোন অপরাধ নয়কাশ্মীর প্রথমে লড়াই করেছে স্বাধিকারের জন্য, এখন লড়ছে স্বাধীনতার জন্যঅর্ধশতাব্দী ধরে ভারত জাতিসঙ্ঘের প্রসত্মাব উপেক্ষা করছে, আর জাতিসঙ্ঘ অন্ধ সেজে আছেপূর্ব তিমূরে খৃস্টান জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে কী ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া বিশ্বশক্তিবর্গের! কী ঝড়ো পদক্ষেপ জাতিসঙ্ঘের!সঙ্কট শুরুর মাত্র বিশ দিনের মাথায় পৌঁছে গেলো জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষীবাহিনীসুদানের ক্ষেত্রেও খৃস্টানআধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলকে শেষপর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করেই ক্ষান্ত হলো জাতিসঙ্ঘওদিকে ফিলিপাইনে মরো মুসলিম জনগোষ্ঠী মরছে কয়েক যুগ ধরে, আর জাতিসঙ্ঘ যেন বোবা প্রাণী!  

এসব দেখে যে কেউ আজ বলতে বাধ্য হবে, এ বিশ্বসংস্থাটি অন্যদের জন্য জাতিসঙ্ঘ হলেও মুসলিম বিশ্বের শুধুই জাতিসঙ্ঘর্ষ যার একমাত্র কাজ হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের  বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন ও গণহত্যাকে বৈধতা ছত্রচ্ছায়া দিয়ে যাওয়ামুসলিম নেতৃবৃন্দকে যখন জাতিসঙ্ঘের দুয়ারে ধর্ণা দিতে দেখি তখন শুধু আফসোস হয়কী দেবে তাদেরকে জাতিসঙ্ঘ ছলনা, প্রতারণা ও মিথ্যা আশ্বাস ছাড়া! 

আজ সময় এসেছে মুসলিম নেতৃবৃন্দের নতুন করে ভেবে দেখারবিশ্বমুসলিম সংস্থা ওআইসিকেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে জাতিসঙ্ঘের বিকল্প শক্তিরূপে, যদি আমরা মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে চাইআমেরিকা, বা জাতিসঙ্ঘ নয়, আমাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে আমাদেরই আর এজন্য চাই সীসাঢালা ঐক্যকিন্তু হায়...... 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা