আল কুদসসংখ্যা (৩/২)

কাশগর ও কায়রো

বিদায় জেইদ রাদ আল-হোসায়ন!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার জেইদ রাদ আলহোসায়ন তার নির্ভীক কণ্ঠ ও সুস্পষ্ট বিবেকি বক্তব্যের জন্য সবসময় আলোচনার মধ্যে ছিলেন। বিশেষ করে আরাকানট্রাজেডি ও  রোহিঙ্গাবিপর্যয়ের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই তিনি মানবতাবাদী ভূমিকা পালনের চেষ্টা করেছেন। জাতিসঙ্ঘে তিনিই প্রথম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিধনকে জাতিগত নিধনের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ এবং গণহত্যা বলে মন্তব্য করেন।

জেরুসালেম সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি কিছুতেই একমত হতে পারছেন না। এটাকে তিনি মনে করেন চরম হঠকারী সিদ্ধান্ত, যাতে মুসলিম ও ফিলিস্তীনী স্বার্থ ক্ষুণœ হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মহাসচীব বারবার তাকে চাপ দিচ্ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় আরো ক্ষীণকণ্ঠ হওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি শুধু বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ,

আর কারো কাছে নয়। আরেকবার ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না।

সহকর্মিদের কাছে এক ই-মেইল বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘চিন্তাভাবনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আরেকবার স্বপদে বহাল থাকার জন্য আমি রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে আপোশ করতে চাই না।

স্পষ্টতই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুসালেমসম্পর্কিত সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এর আগে তিনি ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছিলেন, তিনি আসলে পার্বত্যপথে নেমে আসা বাসড্রাইভারের মত। এটা নিঃসন্দেহে ‘বেপরোয়া ড্রাইভিং’ উল্লেখ্য, জেইদ রাদ আল-হোসায়নের ই-মেইল প্রকাশিত হওয়ার পরো ট্রাম্প জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের     সদস্যদেশগুলোকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, জেরুসালেমইস্যুতে যারা বিদায় জেইদ রাদ/৭-এর পর আমেরিকার বিরুদ্ধে ভোট দেবে তিনি তাদের সাহায্য বন্ধ করে দেবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসঙ্ঘের এক কর্মকর্তা বলেন, জেইদকে বলা হয়েছিলো, ‘আপনি অত্যন্ত চৌকশ কর্মকর্তা। আমরা আপনাকে পরবর্তী মেয়াদের জন্যও চাই, যদি আপনি নিজের অবস্থানকে অপেক্ষাকৃত নমনীয় করতে সম্মত হন।

জেইদ তাদের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘বিবেক মারা গেলে মানুষ নড়াচড়া করে, তবে বেঁচে থাকে না।’

জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচীব বান কি মুনের আমলে ২০১৪ সালে জর্দানের পেশাদার কূটনীতিক জেইদ রা‘দ আলহোসায়ন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনার নিযুক্ত হন। ২০০০ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি জাতিসঙ্ঘে জর্দানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

নব্বইয়ের দশকে তিনি সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় জাতিসঙ্ঘের শান্তিমিশনে রাজনৈতিক কর্মকর্তা ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সবাই তার পেশাদারিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আপোশহীন ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি সর্বত্র অত্যন্ত আলোচিত।

তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চী সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘গণহত্যার অপরাধের জন্য ভবিষ্যতে তিনি বিচারের সম্মুখীন হতে পারেন।’

মানবাধিকারসংগঠনগুলো জেইদ সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করে বলেছে, জাতিসঙ্ঘে মানবাধিকার রক্ষায় তিনি শক্তিশালী কণ্ঠ।

জাতিসঙ্ঘে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক লুইস বলেন, এটা দুঃখজনক যে, আপোশ না করার কারণে জেইদ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য স্বপদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা