রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

তোমাদের পাতা

কত কলি হায়, না ফুটেই ঝরে যায়!!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

ডালিয়া একটি ফুলের নাম। যখনই ভাবি ফুলটির কথা, অজানা একটি ভালোলাগা আমাকে দোলা দেয়। আমার বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে; আমি অনেক ফুলের মালা গেঁথেছি, কিন্তু ডালিয়া, আমার বাগানে কখনো ফুটেনি। কারণ এ ফুলের গাছ আমার বাগানে ছিলো না। অনেক দিনের ইচ্ছে ডালিয়া ফুলের চারা সংগ্রহ করার। ইচ্ছে ছিলো, চেষ্টাও ছিলো, কিন্তু সম্ভব হয়নি।

একদিন অপ্রত্যাশিতভাবেই আমার ইচ্ছে পূর্ণ হলো, ডালিয়া ফুলের চারা আমার বাগানে এলো। বাগানের নরম মাটিতে পরম মমতার সঙ্গে চারা রোপণ করলাম, যেন আমার হৃদয়ের নরম মাটিতেই রোপণ করা হলো।

মাটির আর্দ্রতা এবং হৃদয়ের উষ্ণতা, এ দু’য়ের ছোঁয়া পেয়ে ডালিয়ার চারাটি বেশ দ্রুত বড় হলো। সবুজ পাতাগুলো এত কোমল, এত ¯িœগ্ধ ছিলো যে, ইচ্ছে হতো, একটু ছুঁয়ে দেখি! এই সবুজ পাতার পরশে মন চলে যেতে দূরের  স্বপ্নময় এক সবুজের কাছে!

এক সুন্দর সকালে দেখি, ডালিয়ার ডালে ভোরের শিশিরমাখা কয়েকটি কলি উঁকি দিয়েছে! ধীরে ধীরে কলিগুলো বড় হলো। দেখতে কী যে সুন্দর হলো! আনন্দের উত্তাপে, উষ্ণতায় তখন আমার হৃদয় যেন বিগলিত! আমার সর্বসত্তা যেন প্রতীক্ষার ব্যাকুলতায় অস্থির!! কখন ফোটবে আমার বাগানে আমার প্রিয় ডালিয়া ফুল!!

হঠাৎ কী হলো! অজানা একটা আশঙ্কায় ভিতরটা যেন অস্থির হয়ে উঠলো। শুধু অস্থিরতাটা বুঝতে পারি, কারণটা বুঝতে পারি না!

বলতে বেমাননা হবে হয়ত, ডালিয়া নামের ফুল যেমন আমার প্রিয় তেমনি প্রিয় ছিলো আমার একটি ছাগলছানা, আদর করে যার নাম রেখেছি ডালিয়া।

এক অলস দুপুরে বাগানে গিয়ে দেখি, আমার দুষ্ট ডালিয়া আমার প্রিয় ডালিয়াকে ...!! সবুজ পাতা, আর কচি ডাল একটাও নেই! কয়েকটি কলি শুধু পড়ে আছে মাটিতে! প্রিয় কিছুর হাতে প্রিয় কিছুর সর্বনাশ হলে মনের অবস্থা কেমন হয়, বা হতে পারে সে অভিজ্ঞতা সেদিনই প্রথম হলো। চোখ থেকে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরলো ডালিয়ার মৃত্যুতে এবং কলিগুলোর মর্মান্তিক পরিণতিতে। বুঝতে পারিনি, হঠাৎ দেখি নিজের অজান্তেই ডালিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর জানাচ্ছি!

একদিন একজন দরদী মালীর মুখে শুনেছিলাম, ‘কিন্তু কত কলি হায়, না ফুটেই ঝরে যায়!’

হৃদয় ও আত্মার কত কষ্ট, কত বেদনা ও যন্ত্রণা ছড়িয়ে আছে এ শব্দক’টির শরীরে এত দিন বুঝিনি, আজ যেন নিজের হৃদয়ের কষ্ট দিয়ে কিছুটা বুঝতে পারলাম! ...

সম্পাদক ঃ হায়, কত অবুঝ তুমি! বৃক্ষ-উদ্যানের কলি, আর মানব-উদ্যানের কলি, দু’টোর যন্ত্রণা তোমার কাছে এক হলো!!

০০ তুমি লিখেছো, ‘আমার কষ্ট কেউ বুঝতে পারেনি। কেউ আমাকে একটু সান্ত¦না দিতে এগিয়ে আসেনি। তাই আহত হৃদয়ে একটু সান্ত¦নার কোমল পরশ পাওয়ার জন্য পুষ্পের দরদী মালীর দুয়ারে আজ আমার দস্তক! ...

০০ আমি আর কী করতে পারি,  তোমার অবুঝতাকে শুধু করুণা করতে পারি।

তবে তুমি যদি তোমার ডালিয়া ফুলের কলিগুলোর কাছ থেকে এ শিক্ষাটুকু অর্জন করে থাকো যে, তোমার দ্বারা যেন মানব-উদ্যানের কোন ‘ফুলকলি’ কখনো নষ্ট না হয়, তাহলে আমি মনে করবো, ঐ ফুলের কলিগুলোর ঝরে যাওয়া সার্থক! এ দীর্ঘ জীবনে আমার মানব-বাগানে মানুষের বেশে দেখেছি কত দুষ্ট সবুজ পোকা, যারা সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে নষ্ট করেছে কত সম্ভবানাপূর্ণ ফুলের কলি। আমি ছিলাম সেই বাগানের মালী। কিন্তু পারিনি সবুজ পোকার দুষ্ট দৃষ্টি হতে রক্ষা করতে বহু ফুলের কলি।

কখনো এমন হয়েছে যে, বুঝতেই পারিনি, কোন কলিকে আমার অজান্তেই ধরে ফেলেছে কোন সবুজ পোকা। বুঝতে পেরেছি কখন? যখন দেখি পোকায় খাওয়া কোন কলি পড়ে আছে গাছের নীচে মাটিতে!

হে প্রিয়, তোমার ডালিয়া ফুলের কলিগুলো থেকে এ শিক্ষাটুকু অন্তত গ্রহণ করো, তাহলেই তোমার কষ্ট হবে সার্থক।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা