মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

তোমাদের পাতা

সম্পাদকের রোযনামচা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

১৪ -১১ - ৩৯ হি.গত সংখ্যার ‘তোমাদের চিঠি, আমাদের পত্র’ বিভাগে দেখুন- প্রশ্নকারীর প্রশ্নটি হলো-‘শীতকালে বলুন তো কেন গাছের পাতা ঝরে যায়?উত্তর ছিলো এই- ‘শীতকালে বলবো! আচ্ছা শীতকাল আসুক।প্রশ্নকারীর বক্তব্যে ‘শীতকাল’ ছিলো পাতা ঝরার কাল বা ‘র্যফ’। সে হিসাবে বলা দরকার ছিলো, বলুন তো, শীতকালে পাতা ঝরে কেন?কিন্তু বাক্যের বিন্যাসের কারণে শীতকালটি বলার কালও হতে পারে, অর্থাৎ পতা ঝরে কেন, এর উত্তরটা শীতকালে বলুন। বলাবাহুল্য, এটা প্রশ্নকারীর উদ্দেশ্য নয়। বাক্যবিন্যাসের এই যে সামান্য দুর্বলতা, এটাকেই উত্তরের জন্য কাজে লাগিয়ে বলা হয়েছে, ‘শীতকালে বলবো! আচ্ছা শীতকাল আসুক।সম্পাদনার আগে ছিলো- ‘আচ্ছা, শীতকালে বলবো।’ এখানে সমস্যা হলো, শীতকালে বলার ওয়াদা হচ্ছে; অথচ, হায়াতের বিশ্বাস নেই। তাছাড়া উত্তরের কুশলতাটি স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয় উত্তরে ওয়াদা নেই। তাই ওয়াদারক্ষার দায়ও নেই; তদুপরি উত্তরের কৌশলটা সুস্পষ্ট।১৬ - ১১ - ৩৯ হি.গত সংখ্যার একই বিভাগে ইবাদুর রহমানের প্রশ্নগুলো ছিলো খুবই সাদামাটা, মোটেই বুদ্ধিদীপ্ত নয়। সিদ্ধান্ত নিলাম, এর উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। হঠাৎ মনে পড়লো আমাদের কৈশোরের ঘটনা। এক সহপাঠী ছিলো এই নামে। দরসে হুযূর বলতেন, তুমি তো মুফরাদ, নাম জমা কিল্লাত ডিঙ্গিয়ে একেবারে জমা কাছরাত! রহস্যটা কী?! মনে হলো, বাহ, প্রশ্নের ধারে কাছে না গিয়েও তো হতে পারে সুন্দর কৌতুক!! তাই লিখলাম, ‘আগে বলো তো, তুমি কয়টা আব্দুর-রহমান!পাঠকের আদালতে ডানে দেখুন, ‘মনে হয় আপনি ভড়কে গিয়েছেন।’ প্রথমে ছিলো ‘ভয় পেয়েছেন’, আসলে এখানে ভড়কে যাওয়াই হলো যুতসই শব্দ। ‘ভড়কানো’ মানে শুধু ভয় পাওয়া নয়, হঠাৎ ভয় পেয়ে আত্মরক্ষার জন্য পিছিয়ে আসা। বিশেষ ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার স্থলে ‘ভড়কে যাওয়া’র ব্যবহার অধিক সঙ্গত। এটা আসলে যুক্তির বিষয় না, অনুভবের বিষয়।১৭ - ১১ - ৩৯ হি.ঘাসফড়িং.. শেষ লাইনটি ছিলো, কখনো কি ঘাসফড়িংটির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ হবে?! দ্বিতীয় দফার সম্পাদনার সময়  শেষ দিকে একটি লাইন খালি হলো। ভাবলাম, ছোট্ট একটি ফুল দিয়ে, বা শুরুতে ঘাসফড়িং-এর যে ছবি সেটি ছোট্ট করে এখানেও দিয়ে খালি লাইনটি পূর্ণ করি। শুরুতে ঘাসফড়িং-এর বড় ছবি, আর শেষেও ছোট্ট ছবি! বড় থেকে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যেন শেষ হয়ে গেলো ঘাসফড়িং-টার জীবন!! চিন্তাটা ভালোই মনে হলো। এর মধ্যে হঠাৎ একটা চিন্তা ঝিলিক দিলো, আচ্ছা, এই যে, মানবশিশুর দুঃখ-দুর্দশায় চোখে পানি এলো না, এ অপরাধবোধটির কাছে যদি আবার ফিরে যাই! যদি প্রতিজ্ঞা করি, ঘাসফড়িংটিকে যে বাঁচাতে পারিনি, আর সে জন্য ক্ষমা চাওয়ারও সুযোগ নেই। তো যদি কখনো একটি মানবশিশুকে বাঁচানোর সুযোগ হয়, আর আমি চেষ্টা করি, হয়ত আমার হৃদয়, আমার আত্মা, আমার বিবেক ঘাসফড়িংটির পক্ষ হতে আমাকে ক্ষমা করে দেবে! চিন্তাটিকে মনে হলো আল্লাহর দান, আকাশের করুণা। তখন শেষ বাক্যের পর এই শেষ বাক্যটি লিখলাম। ‘কখনো যদি একটি শিশুর প্রাণ বাঁচাতে পারি!!’১৭ - ১১ - ৩৯ হি.ছেলেদের আর মেয়েদের লেখা আসার অনুপাত হলো দশ ও এক; বিশ্বাস হয়! এটাই হলো আমাদের সমাজের, বিশেষ করে দ্বীনী সমাজের বাস্তবতা। জ্ঞানের পথে, শিক্ষার পথে তাদের অগ্রসর হওয়ার সুযোগ তো এমনিতেই নেই, তার উপর মনের কষ্টগুলো লেখারও সুযোগ নেই। আমার নাতিনটির কথা ভাবি, কত অবারিত সুযোগ দিয়েছেন আল্লাহ ওকে!! ওর বয়সের কত মেয়ে কত স্বপ্ন দেখে, কিন্তু ...!১৮ - ১১ - ৩৯ হি.আশ্চর্য! গতকাল যে কথাটি ভেবে কষ্ট পেলাম, আজ দেখি, একটি মেয়ে তার চিঠিতে সেই কষ্টের কথাগুলোই লিখে পাঠিয়েছে। চিঠিটা লিখেছে বেশকিছুদিন আগে। বড় ভাই মাদরাসায় পড়ে। তাকে অনেক বার বলার পর দয়া করে চিঠিটা ডাকে দিয়েছে। হায়রে ছেলে, আর মেয়ে! হায়রে ভাই, আর বোন!!(প্রথমে ছিলো, ‘হায়রে ছেলে! হায়রে মেয়ে!!’ তারপর লিখলাম, হায়রে ছেলে! হায়রে মেয়ে!! হায়রে ভাই! হায়রে বোন!! চারবার ‘হায়রে’ লিখে মনে হলো, আমার অবস্থাই হয়ে গেলো, ‘হায়রে’! তাই লিখলাম হায়রে ছেলে ও মেয়ে! হায়রে ভাই ও বোন!! এখন মনে হলো সঠিক হরফুল আতফ এখানে‘ও’ নয়, বরং ‘আর’।)১৭ - ১০ - ৩৯ হি.পুষ্পের নতুন দু’টি বিভাগ ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা’ শুরু তো করেছি। ভেবেছিলাম, ...এর কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য পাবো। হয়ত এদু’টি পাতা নিয়ে আমাকে চিন্তা করতে হবে না! কিন্তু যা ভেবেছি তা ভাবনার ঘেরাটোপেই আবদ্ধ হয়ে আছে। সবক’টি লেখা এখনো আমাকেই লিখতে হচ্ছে।আমার জীবনের সবচে’ বড় ব্যর্থতা, কাজের জন্য উপযুক্ত মানুষ তৈয়ার করতে পারিনি।একটি ছেলে লিখেছে, ‘ইচ্ছে করে, উড়াল দিয়ে আকাশটা ছুঁয়ে আসি!’যারা কিছু করতে চায় তারা উদ্ভট চিন্তা করে না, তারা বাস্তব জগতেই বিচরণ করে এবং ‘বাস্তব’কে নিজের জীবনে বাস্তব করার সাধনা করে। আচ্ছা বাপু, তুমি উড়াল দিয়ে চাঁদটা ছুঁলে  হবেটা কী! তোমাকে তো পৃথিবীতেই আবার ফিরে আসতে হবে এবং এখানেই জীবনটাকে যাপন করতে হবে?!কেউ বলতে পারে, ‘এগুলো তো নির্দোষ কল্পনা, যা লেখক-সাহিত্যিকদের গুণ, এগুলো থেকেই তো লেখার প্রেরণা আসে।’ কে জানে, হয়ত সত্য! তবে আমি বিশ্বাস করি, আমার চিন্তা, আমার কল্পনা এবং আমার লেখার সাধনা হতে হবে জীবনের বাস্তবতার পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে, অন্তত যতদিন আমার জীবনের ভিত্তি তৈরী না হয়ে যায়।২০ - ১১ - ৩৯ হি.গত সংখ্যার প্রথম কথা ও শেষ কথার চিন্তাটি হঠাৎ উদ্ভাসিত হলো এভাবে- দেখি, ছেলে বসে আছে পূর্বদিকে এবং বেশ নিমগ্ন ‘সুলতান আব্দুল হামীদ’-এ। আমি বসে আছি পশ্চিম দিকের দেয়ালসংলগ্ন হয়ে। কীভাবে যেন কল্পনায় উদিত সূর্য ও অস্তগামী সূর্য-এর একটা ছবি ভেসে উঠলো, আর মনে হলো, এটাই তো আসলে জীবনের বাস্তবতা! ....তখনই লেখাদু’টির পুরো অবয়ব চিন্তায় এসে গেলো। কিন্তু লেখার সুযোগ হলো না। এভাবে লেখার অনেক চিন্তা ও বীজ হারিয়ে যায়। এ লেখাটি আল্লাহর শোকর হারায়নি। ঘুরে ফিরে চিন্তায় রয়েই গিয়েছে। ১৮ - ১০ - ৩৯ হি.পুষ্পকে রঙ্গিন সাজে সাজাতে গিয়ে এত ধকল পোহাতে হবে জানলে কখনোই এ পথে যেতাম না। এখন আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে মন সায় দেয় না। এটা যেন নিজের কাছে নিজের পরাজয়, যা খুব সহজে কখনো স্বীকার করতে চাই না। ২১ - ১১ - ৩৯ হি.সুযোগ পেলে পুষ্পের বিগত সংখ্যাগুলো পড়ার চেষ্টা করি। এমন এমন ভুল, ত্রুটি, বিচ্যুতি, অসম্পূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা নযরে আসে যে, ইচ্ছে করে নিজেকে ধরে...!বানানবিভ্রাট ও প্রƒফসংশোধনের দুর্বলতা তো আছেই। সেটা তো অনন্যোপায় হয়ে মেনে নিয়েছি। কিন্তু, ভাষার দুর্বলতা! সাহিত্যের বিচ্যুতি! আলঙ্কারিক অসৌন্দর্য!! এগুলো ক্ষমা করি কীভাবে?!‘আলকুদসসংখ্যা’-এর প্রথম পৃষ্ঠায় আছে, ‘এ আঘাতই যেন হয় শেষ আঘাত। এবার যেন চিরকালের জন্য জেগে উঠতে পারি, জ্বলে উঠতে পারি! এবার যেন আলকুদসের জন্য, আলআকছার জন্য শেষ লড়াই লড়তে পারি! হাতের অস্ত্র এবং দিলের হাতিয়ার একসঙ্গে যেন ঝলসে ওঠে; নাছরে মুবীন ও ফাতহে ক্বারীব যেন ঝল্কে ওঠে! ...এ পর্যন্ত ঠিক ছিলো। প্রতিটি বাক্যে পর্ববিভক্তি, শব্দচয়ন এবং আবেগের উচ্ছ্বাস, সবই ছিলো সাবলীল ও গতিময়। প্রতিটি বাক্য ও বাক্যাংশ যেন দিলের দরিয়ায় একটি করে মউজ! কিন্তু এর পরের বাক্যটি! ‘এবার যেন আলকুদসের, আলআকছার অধিকার ফিরে পাই।’ একেবারে ফ্যাকাশে ও সাদামাটা! যেন প্রাণহীন আইনের ভাষা! কোথায় সেই আবেগ! কোথায় হৃদয়ের সেই তরঙ্গজোয়ার!!যদি সমাপ্তিটা এমন হতো, ‘এবার যেন হেলালের ঝা-া ওড়ে আলকুদসের আকাশে, আলআকছার চূড়ায়। এবার যেন বলতে পারি, ‘আমরা ফিরে এসেছি চিরকালের জন্য...’ আগের চেয়ে তো ভালো হতো!! ২৩ - ১১ - ৩৯ হি.পাঠকের কাছ থেকে এমন লেখা কমই আসে যা হৃদয়কে আকৃষ্ট করে। সবকিছু সাদামাটা, গতানুগতিক! চিন্তার বৈচিত্র্য, কল্পনার জাদুময়তা এগুলোর ছায়া পর্যন্ত নেই। কোন লেখার মান লেখকের বয়স ও জ্ঞানের স্তর থেকে নেমে যাবে কেন? যুবক কেন কিশোরের মত, আর কিশোর কেন শিশুর মত লিখবে? আবার শিশু-কিশোর কেন পাকা মানুষের মত লেখার চেষ্টা করবে! আদর্শ লেখা হবে সেটাই যার মধ্যে বয়সের ‘ধর্ম’ রক্ষা পায়। হয়ত কথাটা সহজ করে বোঝাতে পারলাম না! তবে বিষয়টা বড় পীড়াদায়ক। ২৪ - ১০ - ৩৯ হি.বানানবিভ্রাট-এর আশ্চর্য এক নমুনা পেলাম একটি পত্রিকায় একজন দামী মানুষের লেখায়। এ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে হঠাৎ নিজের কাছেই নিজে লজ্জা পেলাম। অনেকটা যেন ‘ময়ূরের নযর পায়ের দিকে গেলো, আর পেখম গুটিয়ে গেলো’! অন্যের বিষয় নিয়ে কথা বলে কী লাভ, নিজের ত্রুটিগুলো সংশোধনের চেষ্টা করা বরং ভালো।  ২৫ - ১০ - ৩৯ হি.পুষ্পের বিশেষ করে ছেলে মেয়েদের কাছে এত দিন ছিলাম ভাইয়া; ভালোই ছিলাম। কেউ কেউ বললো, দাদা, নানা; তাও মন্দ ছিলো না! এবার একটি ছেট্ট মেয়ে লিখে বসেছে, ‘পরদাদা’! দুষ্ট মেয়ে, আমি যে তোমার ‘আপন’ দাদা নই তা তো সবাই জানে! সেটা আবার এত ঘটা করে বলতে হবে!! আশ্চর্য, আমাকে ‘পরদাদা’ বলার প্রজন্ম কি এসে পড়েছে পৃথিবীর আলোবাতাসে!! আমার যে আরো কিছুদিন থাকার ‘মিনতি’! এবং তা তোমাদেরই জন্য!!(সবুজ অংশটি যুক্ত করেছি সম্পাদনার সময়। প্রথমে লিখেছিলাম, ‘থাকার ইচ্ছে’; মনে হলো, পরিমাণ বোঝা গেলো না, তাই লিখলাম ‘থাকার আকুতি’; এখন মনে হলো, এখানে তো শুধু আমার দিকটাই প্রকট হলো! অথচ আমার ইচ্ছে বলো, আকুতি বলো, তার কী মূল্য! শেষে লিখলাম ‘থাকার মিনতি’ তাতে পরম সত্তার সমীপে মনের আকুতি নিবেদনের কোমল ও ¯িœগ্ধ রূপটি পরিস্ফুট হলো।)২৬ - ১১ - ৩৯ হি.বাংলাভাষার চর্চাটা -সত্যিকার অর্থে যেটাকে চর্চা বলে- মাদরাসায় যেমন কম, সাধারণ বিদ্যাঙ্গনগুলোতেও কম। আমি মনে করি, মাদরাসার ‘তালেবান-তালেবাত’-এর হাতে সুযোগ অনেক বেশী, কিন্তু চেতনার বড় অভাব। একটা ছেলে-কাফিয়ার জামাতে পড়ে- শক্তি লিখেছে ‘স’ দিয়ে। এরকম ভুল কি মাদরাসার বাইরে পাওয়া যাবে?! কত বড় লজ্জার বিষয়!! ২৭ - ১১ - ৩৯ হি.এবারে তেঁতুলিয়া পৃষ্ঠার দু’টি লেখা এবং কায়রো ও কাশগর পৃষ্ঠায় মরো মুসলিম-এর উপর লেখাটি তৈীর করেছি নয়া দিগন্তে (৮/৮/২০১৮) (৯/৮/১৮ প্রকাশিত লেখা অবলম্বন করে। আগ্রহী পাঠক-যারা লেখার অঙ্গনেও বিচরণ করেন- লেখাগুলো সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখতে পারেন। উপকার হবে আশা করি। ২৯ - ১১ - ৩৯ হি.গত সংখ্যা ৬৮তমপৃষ্ঠায় শিউলী ফুল সম্পর্কে ছোট্ট একটি লেখা ছিলো। উপরে ও নীচে কিছু জায়গা রেখেছিলাম, আমার শিউলী গাছের কাছ থেকে সান্ত¡নারূপে পাওয়া সর্বশেষ শিউলীফুলের ছবি দেয়ার জন্য। প্রযুক্তিটা আমার জানা নেই। যার জানা আছে তাকে অনুরোধ করলাম। সে বললো, ‘পরে’! সেই পরে আর হলো না! ফুলের ছবির অভাবে লেখাটাই যেন নিষ্প্রাণ হয়ে গেলো!! চেষ্টা করবো প্রযুক্তিটা শিখে নিতে, যাতে এ বিষয়েও আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়। আসলে এ যুগে স্বনির্ভরতার কোন বিকল্প নেই! অন্তত আমার জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা তো এটাই!২৬ - ১০ - ৩৯ হি.আগামী সংখ্যার ‘তোমাকে’ সাফফানা লিখেছে। ও তিনবার পাঠিয়েছে, আমি তিনবার হারিয়েছি। লেখক/লেখিকা হিসাবে তার কষ্ট পাওয়ার অধিকার আছে। সম্ভবত ‘বাবা’ সুবাদে হাসিমুখে মাফ পেয়ে গিয়েছি! লেখাটি আমার কাছে বড় ভালো লেগেছে।  যে ক’জন পুষ্পকে পুষ্পের মত ভালোবাসে, তাদের মধ্যে সে প্রথম কাতারেই হবে। ওর মুখের ছবিটা যখনই কল্পনায় উদ্ভাসিত হয়, অফুরন্ত শুভকামনা শিশিরের মত ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে! সম্ভবত এর কারণ শুধু ‘রক্ত’ নয়; এর কারণ কলমের প্রতি ওর মমতা এবং আমার চিন্তার সঙ্গে একাত্মতা। আল্লাহ যেন তাকে ছায়া দান করেন এবং ‘অপছায়া’ থেকে রক্ষা করেন, আমীন।  ২৭ - ১০ - ৩৯ হি.একটি নতুন চিন্তা আল্লাহ তা‘আলা দান করেছেন। সেটাকে এককথায় প্রকাশ করা যায়, ‘পত্রিকার মধ্যে আরেকটি ক্ষুদে পত্রিকা’। পুষ্পে এবং যে কোন পত্রিকায় সাধারণত উপরে ও নীচে একটা রেখা টেনে দেয়া হয়। এটা করা হয় সজ্জাগত সৌন্দর্যের কারণে এবং পৃষ্ঠার শুরু ও শেষ চিহ্নিত করার সুবিধার্থে। তো আমরা যদি প্রতিটি পৃষ্ঠার এই রেখা-অংশকে লেখায় রূপান্তরিত করি! অর্থাৎ যে কাজ রেখা থেকে নিচ্ছি সেটাই যদি লেখা থেকে নিই! তাহলে কতগুলো নতুন মযমূন আসতে পারে! সজ্জার সজ্জাও হলো, লেখার লেখাও হলো! অথচ আলাদা কোন স্থান বা কালি-কাগজ খরচ হলে না! শুধু এই যে, ছোট হরফের লেখা একটু কষ্ট করে পড়তে হবে।গত সংখ্যায় নমুনা হিসাবে কিছু লেখা দিয়েছি। আশা করি, এ তাজরাবা সফল হবে এবং পত্রিকার জগতে চিন্তার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, ইনশাআল্লাহ!প্রথম পৃষ্ঠার লেখাটি দেখুন-অন্যকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দাও, গায়ব তোমার এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা গায়ব থেকে করবেন। কারো অগ্রগতিতে বাধা দিয়ে কেউ এগিয়ে যেতে পারে না।(এটি ৫.৫ পয়েন্টের লেখা) শততম পৃষ্ঠার উপরের লেখাটি-সেদিন যদি তুমি দাঁড়াতে আমার পাশে আল্লাহর ওয়াস্তে! কিসের ভয় ছিলো তোমার? লোকনিন্দার? আমি কিন্তু আজ দাঁড়াতে চাই তোমার পাশে, যদিও যা করেছো, প্রজ্ঞার সঙ্গে করোনি।(এটি ৬.৫ পয়েন্টের লেখা)শততম পৃষ্ঠার নীচের লেখাটি- দু’দিনের দুনিয়া থেকে অনন্ত জীবনের পথে বিদায় যেন হয় ঈমানের সঙ্গে, আসানির সঙ্গে! যাওয়ার কালে যেন শুনি, ‘এসো ফিরে তোমার রবের কাছে সন্তুষ্ট হয়ে এবং সন্তুষ্টি পেয়ে, দাখেল হও আমার বান্দাদের কাতারে এবং দাখেল হও আমার জন্নাতে।’ (এটি ৫ পয়েন্টের লেখা)তাহলেই ভেবে দেখুন, একশ পৃষ্ঠায় কতগুলো মযমূন এসে যায়, বাড়তি কোন দায় ছাড়া! এটাকে কি ‘পত্রিকার ভিতরে নতুন পত্রিকা’ বলা যায় না? (মাজাল্লা দ্যর মাজাল্লা?!)৪ - ১২ - ৩৯ হি.স্বাস্থ্য...বিভাগে লিভার (যকৃত) সম্পর্কে লিখেছি যে লেখাটিকে অবলম্বন করে, তাতে -বড় ভালো লাগলো যে,- লেখক আল্লাহকে স্মরণ করেছেন। সাধারণত এটা দেখা যায় না। শুধু বিস্ময় প্রকাশ করা হয়, ¯্রষ্টার কুদরতের কথা বলা হয় না। ক্ষুদ্র মানুষ, কত অহঙ্কার! এর মধ্যে বিনয় ও কৃতজ্ঞতার এই ছোট্ট নামুনাটি দেখে আপ্লুত হয়েছি। ৬ - ১২ - ৩৯ হি.বিজ্ঞান চিন্তা পত্রিকাটি অল্প সময়ে ভালোই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তবে মৌলিকত্ব কিছু নেই। ইন্টারনেট থেকে নিছক অনুবাদ, সঙ্গে সেখান থেকে নেয়া কিছু আকর্ষণীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক ছবি। সজ্জাটা অবশ্য ভালো।তার চেয়ে পাঁচ দশক ধরে প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকী অনেক বেশী সৃজনশীল, যার অবদান অনেক বেশী মৌলিক। দু’টো পত্রিকাই আমার জন্য যথেষ্ট সহায়ক এবং সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ।বিজ্ঞান চিন্তার সম্পাদকীয় শিরোনাম হলো, ‘ভবিষ্যতে ফিরে যেতে চাই’; চাওয়া হিসাবে মন্দ নয়, তবে ফেরা হয় সেখানে যেখানে আগে থাকা হয়েছে! *

‘যদিও যোগ্যতা আমার খুব সামান্য এবং তা নিজের অর্জন কিছুতেই নয়, আল্লাহর দয়া ও দান; যদিও জানি, আমার কলমের শক্তি সামান্য, আমার কলমের কালি অতি অল্প, তবু যখন লিখতে শুরু করি, অদৃশ্য থেকে আশ্চর্য এক শক্তি অনুভব করি। ...’ লেখাটা বেশ দীর্ঘ। একজন তালিবে ইলমের রোযনামচা থেকে নেয়া। ভালোই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে বয়সের তুলনায় যথেষ্ট পরিপুষ্ট। এভাবে লিখলে হয়ত আরো ভালো হতো- যখন লিখতে শুরু করি, স্পষ্ট অনুভব করি, অদৃশ্যের কোন শক্তি যেন আমাকে সাহস যোগায়, আমাকে পথ দেখায়। রোযনামচা লেখার সময় তো নিজের গতিতেই লিখে যাবে, তবে পুষ্পের জন্য পাঠানোর সময় কিছু সম্পাদনা করার সুযোগ অবশ্যই আছে। সুখের বিষয়, এ ছেলেটি নিয়মিত রোযনামচা লেখে এবং যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে; যথেষ্ট যত্ন ও মনোযোগের সঙ্গে; যথেষ্ট মমতা ও আত্মনিবেদনের সঙ্গে। সুফলও আসছে তার সঞ্চয়ে। আসলে লেখা শেখার জন্য রোযনামচা এমনই কল্যাণপ্রসূ একটি উপায়, যদি ঠিকমত এর ব্যবহার হয় তাহলে কলমের জন্য, চিন্তার জন্য, চেতনার জন্য এবং চরিত্রের জন্য তা অকল্পনীয় সুফল বয়ে আনে।আফসোস তো এই যে, খুব কম তালিবে ইলম যথাযোগ্যভাবে রোযনামচার সঙ্গে সময় যাপন করে, তারপর বলে, লিখছি, কিন্তু কোন সুফল তো পাচ্ছি না!আমি জানতে চাই, বিনয়ের সঙ্গে; এই ছেলেটি বলছে, সে অনেক সুফল পাচ্ছে! তো সে কেন পায়, তুমি কেন পাও না! সে কী করে, আর তুমি কী করো না?!আচ্ছা, লেখা না হয় নাই শেখা হলো, পতায় পাতায় জীবনের কিছু কিছু স্মৃতি তো ধরে রাখা হয়! সেটাও কি কম কল্যাণের বিষয়?! 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা