মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

তোমাদের পাতা

আ মা কে

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

আমার একটি মিনতি শোনো! একটু কাছে এসো। মানুষে মানুষে আজ যে বিশাল দূরত্ব, যে বেদনাদায়ক অপরিচয় তা অতিক্রম করে একটু কাছে এসো। আমাকে তোমার বুকের একটু তাপ ও উত্তাপ দাও; আমাকে তোমার হৃদয়ের একটু উষ্ণতা ও আকুতি দাও! আমাকে একটু ভালোবাসা দাও!! এসো, কাছে এসো, আমাকে একটু জোসনা ও শিশিরের ¯তা দাও; রাঙ্গা ভোরের মিষ্ট আলো এবং রঙধনুর বর্ণচ্ছটা দাও; আমাকে সবুজ পাতার পরশ দাও এবং ফুলের সুবাস দাও! আমাকে একটু ভালোবাসা দাও!! এসো, কাছে এসো, আমাকে রিমঝিম বৃষ্টি, পাখীর গান এবং ঝরণার কুলকুল সঙ্গীত দাও; আমাকে গাছের ছায়া ও মেঘের ছায়া দাও; আমাকে মরূদ্যানের শীতলতা দাও! আমাকে একটু ভালোবাসা দাও!!এসো, কাছে এসো, আমি তোমাকে উপহার দেবো কিছু কষ্ট, কিছু ব্যথা এবং কিছু দহন-যন্ত্রণা!! আমার মনের কিছু কষ্ট, আমার অন্তরের কিছু ব্যথা এবং আমার হৃদয়ের কিছু দহন-যন্ত্রণা। কিছু কষ্ট আছে। কেউ জানে না, সবার আগোচরে হৃদয়ের নিভৃতে কষ্টগুলো আমি লালন করেছি। কাউকে আমার কষ্টের কথা বলতে পারিনি; বলতে চাইও নি! কষ্টের কথা কি সবাইকে বলা যায়?! কষ্টের কথা কি বাজারে ফেরী করে বলার বিষয়?! হৃদয়ের কষ্ট খুবই মূল্যবান সম্পদ। হৃদয়ের কষ্ট তো আকাশের দান। শরীরের কষ্ট, ক্ষুধা-অনাহারের জ্বালা, রোগ-ব্যাধির যন্ত্রণা -এগুলো মানুষ-অমানুষ সবারই হয়; এমনকি পশু-প্রাণীরও হয়। এসব কষ্টের কথা সবাইকে বলা যায়, আপন পর সবাইকে জানানো যায়। দেখতে পাও না, ভিক্ষুক ক্ষুধার যন্ত্রণা সবার সামনে তুলে ধরে! সবার কাছে হাত পাতে! কিন্তু মনের কষ্ট? হৃদয়ের ব্যথা? অন্তরের দহন-যন্ত্রণা? র্দদে দিল? মানুষেরই শুধু হয়! এবং শুধু তাদেরই অন্তরে জন্ম নেয়; তাদেরই হৃদয়ের গভীরে শুধু প্রতিপালিত হয় এবং তাদেরই দিলের ভিতরে শুধু খোশবু ছড়ায় যারা মনের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার, অন্তরের শুভ্রতা ও হৃদয়ের পবিত্রতা অনাবিল রাখার এবং দিলের ‘হাল ও কায়ফ’কে পাকিযা রাখার চেষ্টা করে।মনের কষ্ট, অন্তরের ব্যথা, হৃদয়ের দহন-যন্ত্রণা আকাশের দান। এগুলো আসমানের আমানত। আকাশ যাকে ভালোবাসে,আসমান যার প্রতি সদয় থাকে, ব্যথার উপহার দ্বারা তাকেই শুধু সমৃদ্ধ করে; কষ্টের শিশির দ্বারা তাকেই শুধু সিক্ত করে; দরদের শবনম দ্বারা তাকেই শুধু ...!ব্যথা ও কষ্ট শুধু যে ধৈর্য ও ছবরের বিষয় তা কিন্তু নয়; ব্যথা ও কষ্ট আনন্দেরও বিষয়, শোকর-কৃতজ্ঞতারও বিষয়, শান্তি ও প্রশান্তি এবং প্রাপ্তি ও তৃপ্তিরও বিষয়।জীবনের বিভিন্ন সময়, হৃদয় ও আত্মা যখন পরিচ্ছন্নতা, তা, শুভ্রতা ও পবিত্রতার স্পর্শে আকাশমুখী ছিলো তখন আকাশ আমাকে কিছু ব্যথা দান করেছে, যেমন বৃষ্টি দান করে, যেমন শিশির ও শবনম দান করে।আকাশ থেকে পাওয়া সেই ব্যথা ও কষ্টগুলো এত দিন আমি হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে রেখেছি এবং সযতেœ লালন করেছি, এমন কারো প্রতীক্ষায় যাকে আমার কষ্টগুলো ...!কষ্টের কথা কাকে বলা যায়?! যে তোমার কাছে আসে, ভালোবাসার ফুল নিয়ে, যে তোমাকে কাছে টানে শুভকামনার আকুতি ও মিনতি দিয়ে, যে তোমাকে আলিঙ্গন করে হৃদয় ও আত্মায় উষ্ণতা ধারণ করে! যে তোমার সঙ্গে শুধু মুখের ভাষায় কথা বলে না, বলে হৃদয়েরও ভাষায়, যে তোমাকে অনুভব করে হৃদয়ের উত্তাপ ও ব্যাকুলতা দিয়ে, আত্মার প্রশান্তি ও তৃপ্তি দিয়ে, ব্যথা ও কষ্টের কথা তাকেই শুধু বলা যায়।জীবনে একটা সময় আসে যখন ব্যথা-আপ্লুত হৃদয়ে একটি মিনতি পেখম মেলে। তখন হৃদয় কাউকে না কাউকে পেতে চায়, যার মধ্যে ভালোবাসার উষ্ণতা আছে এবং অন্তরঙ্গতার উত্তাপ; পেতে চায় ব্যথা ও কষ্টের ‘পুষ্পগুচ্ছ’টি তাকে অর্পণ করার জন্য। আমার মিনতি শোনো, একটু কাছে আসো...

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা