মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

তোমাদের পাতা

তোমাকে

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

তোমাকে আজ কিছু কথা বলতে চাই, স্পষ্টভাষায়। এত দিন তুমি বলেছো, আমি শুনেছি। তোমার প্রতিটি কথা কখনো বিঁধেছে কাঁটার মত, কখনো খঞ্জরের মত। আমি নীরবে সয়েছি। আমার বুকের রক্তক্ষরণে তোমার যদি আনন্দ হয়, ক্ষতি কী! তাই তোমাকে এমনকি বুঝতেও দেইনি কাঁটার বিঁধন ও খঞ্জরের আঘাত। হাসি হাসি মুখটি করে শুনেছি তোমার প্রতিটি কথা। তুমি বুঝতে পারোনি হাসির পিছনের ব্যথাটুকু। ব্যথা বুঝতে হলে হৃদয়ের নিভৃতে প্রবেশ করতে হয়, অন্তত হৃদয়ের বাতায়নপথে উঁকি দিতে হয়। সে অবসর কোথায় তোমার! কিংবা অতি সমান্য একটু ইচ্ছা!!আজ তুমি সব সীমা লঙ্ঘন করেছো। আজ তোমার প্রতি আমার শুভকামনাকেই তুমি প্রশ্নবিদ্ধ করেছো! আসলে বলতে হবে, তীর বিদ্ধ করেছো!জানতাম না, এমন বিষমাখা তীরও ছিলো তোমার তূণীরে!আজ জীবনের সন্ধ্যাবেলা আমি তোমাকে ক্ষমা করতে চাই। তোমার প্রতিটি আঘাতের উপর, প্রতিটি ব্যথা ও যন্ত্রণার উপর আমি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টির প্রলেপ দিতে চাই। তোমার প্রতি আমার শুভ কামনা -তুমি যদি বিশ্বাস নাও করো- আমি অব্যাহত রাখতে চাই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। তাতে আমার আত্মা অন্তত এই সান্ত¡নাটুকু পাবে, তোমার ঘৃণাকে, তোমার কপটতাকে (এ শব্দটির জন্য ক্ষমা করো বন্ধু!) জয় করে তোমাকে আমি ভালোবাসতে পেরেছি। আমার জন্য এটা হবে অনেক বড় সান্ত¡না যে, তোমার ঘৃণা আমার ভালোবাসার কাছে পরাস্ত হয়েছে। আমার শুভকামনা তোমার বিদ্বেষের উপর জয়ী হয়েছে।যাওয়ার পথে একটা অনুরোধ রেখে যেতে চাই। ইচ্ছে তো হয় মিনতি শব্দটি ব্যবহার করি, যেমন সারা জীবন করেছি, যদিও মিনতির মর্যাদা কখনো তুমি রক্ষা করোনি। কিন্তু আজ আশঙ্কা হয়, মিনতি শব্দটির তুমি অবমাননা করবে।তো বিদায়ের পথে তোমাকে একটা অনুরোধ করে যেতে চাই। যখন আমি থাকবো না তখন কোন এক অবসরে নিজেকে একবার প্রশ্ন করো।আমি থাকবো না, কিন্তু আমার ভালোবাসা এবং আমার শুভকামনা প্রভাততারার মত জ্বল জ্বল করবে। এবং আশা করি, তোমার ঘৃণার আকাশে তা আরো বেশী দ্যুতি ছড়াবে। হয়ত নিজের কাছে নিজের প্রশ্ন তোলা তখন সহজ হবে।একবার, অন্তত একবার নিজেকে প্রশ্ন করো। আমার ভালোবাসা ও শুভকামনাকে অশ্রদ্ধা করে এবং আমার প্রতি ঘৃণা পোষণ করে জীবনে তোমার কী প্রাপ্তি হলো? তোমার বাগানে কি নতুন বসন্ত এসেছে? নতুন ফুল ফুটেছে? কোকিল-বুলবুলি নতুন সুরে গান গেয়েছে? অথচ আমার ভালোবাসার কল্যাণে সবই ছিলো তোমার জীবন-উদ্যানে; বসন্ত ছিলো, ফুল ছিলো, গান ছিলো। হায়, তবু তুমি বুঝলে না?! বলতে ইচ্ছে করে কবির ভাষায়, ‘যেদিন আমি হারিয়ে যাবো, বুঝবে সেদিন বুঝবে, সন্ধ্যা তারায় আমার খবর পুছবে...!আমার কথা যদি জানতে চাও, বলবো, তোমার প্রতিটি আঘাত আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। প্রতিটি অশ্রুবিন্দু ও রক্তবিন্দু আমার হৃদয়ের উদ্যানে সাদা-লাল ফুল হয়ে ফুটেছে। সবাই জানতে চায়, আমার কলমের কালিতে এত সুবাস কেন?! এমনকি তুমিও! এত দিন বলিনি, আজ বলে যাই, প্রিয়, সবই তোমার আঘাতের কল্যাণ! সবই তোমার ব্যথার দান!!যত দিন বেঁচে থাকবো, তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞই থাকবো, প্রতিটি কাঁটার বিঁধনের জন্য, প্রতিটি খঞ্জরের আঘাতের জন্য এবং তোমার তূণীরের প্রতিটি বিষমাখা তীরের জন্য। আচ্ছা, কখনো যদি মনে হয়, তুমি ভুল করেছো; মনে হতেও তো পারে! কখনো যদি তোমার ‘একসময়ের’ কোমল হৃদয়ে অনুশোচনা জাগ্রত হয়, হতেও তো পারে! তখন হে প্রিয়, আমার কবরের কাছে এসে দাঁড়িয়ো। তোমার দু’ফোঁটা চোখের জলে এবং প্রার্থনার ঝিরঝির শিশিরে আমার কবর যদি সিক্ত হয় ...!!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা