মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

তোমাদের পাতা

রসের লমদানি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

বেকারসমস্যা ও কর্মসমস্যা!ইহা রসে টইটুম্বুর একটি লেখা। প্রিয় পাঠক, ইহাকে বেশী কাত করিয়া পড়িও না; তাহাতে রসটুকু পড়িয়া যাইতে পারে!দেশের মানুষের, শুনিতে পাই, এখন কোন কাম নাই, কাজ নাই, আর ইহা তো জানা কথা, নাই কাজ তো খৈ ভাজ! তাই লোকেরা এখন খৈ ভাজিতেছে, অর্থাৎ শোরগোল করিতেছে! শোরগোল করা, আর খৈ ভাজা, একই কথা! প্রথমটায় আছে হৈ চৈ, দ্বিতীয়টায় খৈ খৈ! পার্থক্য কোথায়?! তো দেশের সর্বত্র এখন মহাধূম -ধামে শোরগোলের খৈ ভাজা চলিতেছে। হয়ত তুমি বলিবে, কোথায় খৈ! কোথায় শোরগোল! আমি তো কিছুই শুনিতে পাই না!! আমি বলিব, সম্ভবত তোমার উভয় কর্ণগহ্বরে শিমুল তুলা বিরাজ করিতেছে, তাই শুনিতে পাও না। যখন তুলা ফেলিয়া দিবে, কিংবা আপসে আপ পড়িয়া যাইবে তখন আলবৎ শুনিতে পাইবে এবং বুঝিতেও পাইবে, শোরগোল কাহাকে বলে এবং উহা কত প্রকার ও কী কী! না প্রশ্ন করিও না! আমি নিজেই ‘শিমুল তুলা’র গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হাজির করিতেছি। ‘কর্ণগহ্বরে শিমুল তুলা’- ইহার একটি প্রাচীন ও আদি সংস্করণ আছে; আবার আধুনিক ও সাম্প্রতিক সংস্করণ আছে। আধুনিক সংস্করণে কর্ণগহ্বরে ঠিক তুলা থাকে না, থাকে ‘এয়ারফোন’। ইহার অসুবিধা প্রচুর, তবে সুবিধা হইল, ইহা একদিকে বাহিরের শব্দ রোধ করে, অন্যদিকে দিব্বি গান শোনার ‘সুব্যবস্থা’ করিয়া দেয়। লোকেরা আগেকার কালে বলিত, পিঠে বেঁধেছে কুলো, কানে দিয়েছে তুলো।’ ফলে যতই পিঠে কিলাও, ব্যথা লাগে না, তদ্রƒপ যতই গলা ফাটাইয়া চিৎকার কর, কিছুই শ্রুত হয় না, অর্থাৎ কিনা কর্ণগহ্বরে কোন শব্দ প্রবেশ করে না এবং কানের অন্দরে কোন আওয়ায দুখূল করে না!হাঁ, প্রশ্ন করিতে পার, শিমুল তুলার রহস্য কী?! যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন। কথা হইল, প্রাচীনকালে লোকেরা শুরুতে তাহাদের কর্ণগহ্বরে সাধারণ তুলাই ব্যবহার করিত। কিন্তু দেখা গেল, উহা দ্বারা সাধারণ স্তরের শব্দ ঠেকান গেলেও, অতি উচ্চস্তরের শব্দ প্রতিরোধ করা যায় না। তুলার বেড়া ফাঁকি দিয়া কীভাবে কীভাবে যেন উহারা কর্ণগহ্বরে ঢুকিয়াই পড়ে। উচ্চস্তরের শব্দ অবশ্য সর্বদা সৃষ্টি হইত না। যখন দুর্ভিক্ষ দেখা দিত, কিংবা কারণে অকারণে নতুন কর বসিত, অনাবৃষ্টির উপর ফসলে নতুন খাজনা লাগিত তখন চাষাভুষা ও ভুখা-নাঙ্গা প্রজাগুলা ভীষণ চিৎকার জুড়িয়া দিত। তাহাতে ভদ্রলোকদের, বিশেষ করিয়া দেশকে যাহারা শাসন করিতেন এবং শাসনের প্রয়োজনে প্রজাগুলাকে শোষণ করিতেন তাহাদের শান্তিভঙ্গ হইত। ফলে শাসনে শোষণে বড় ধরনের বিঘœ উপস্থিত হইত। সন্দেহ নাই, যথেষ্ট গুরুতর সমস্যা!আর আধুনিককাল বল, বা প্রাচীনকাল, যেখানে সমস্যা সেখানেই বুদ্ধিজীবীদের পুরা ‘পাল এবং ঝাঁক’ নাক ও মগজসহ উপস্থিত! প্রথমে তাহারা সমস্যার গর্ত তালাশ করিয়া নাকখানা উহাতে গলাইয়া দেয়, অতঃপর মগজ খাটাইয়া সমাধান পয়দা করে। তবে বুঝিবার বিষয় হইল, প্রাচীনকালের বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞান-বুদ্ধির নাকি কিঞ্চিৎ ঘাটতি ছিল। থাকিতেই পারে। তাহাদের নিকট তো বিদেশের ডিগ্রী ছিল না! সম্পূর্ণ দেশীয় জ্ঞান এবং দেশীয় বুদ্ধি!! তবে তাহাদের নাক ও মগজ কাজ করিত তুলনামূলক ভালো, কারণ সমস্যাটা বিদেশী নহে, সম্পূর্ণ দেশী। তাই কিঞ্চিৎ বিলম্ব ঘটিলেও সামাধান যাহা আসিত, মোটামুটি তাহাতে কাজ হইত।পক্ষান্তরে আধুনিককালের বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞান-বুদ্ধি নাকি অতিমাত্রায় উর্বর এবং উচ্চফলনশীল; এককথায় বলিতে পার, হাইব্রিড! হইতেই পারে। কারণ তাহাদের শুরুর দিকের ডিগ্রীগুলা দেশের হইলেও, উচ্চস্তরের সমস্ত ডিগ্রী বিদেশী কালেকশন, নিদেন-্পক্ষে ইন্ডিয়ান, নৈনিতাল এবং শান্তিনিকেতন। ফলে তাহাদের জ্ঞান ও বুদ্ধি যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে তৎপর হইত বটে, মগর নাক ও মগজ কাজকরিত বড় ধীরে। কারণ ডিগ্রী বিদেশী, অথচ সমস্যা দেশী। ফলে সমাধানের ‘ডিম্বপ্রসব’ ঘটিত বটে, তবে সমস্যার নতুন নতুন ডালপালা গজাইত।দেশের নেত্রী, অন্তত রাজনীতির পলিটিক্সে যথেষ্ট ‘বুদ্ধিমতি’!১কারণ শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে আধুনিক বুদ্ধিজীবীদের প্রশ্রয় দিলেও রাজনীতির পলিটিক্সে তিনি প্রাচীন বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেন এবং সুফলও হাতেনাতে প্রাপ্ত হন। নির্বাচনগুলা ইহার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। দেশের সমস্যার মত আমারও কথা বড় বেশী ডালপালা বিস্তার করে! তো কোথায় যেন ছিলাম! হাঁ, সাধারণ তুলা চাষাভুষা ও ভুখা-নাঙ্গা প্রজাগুলার উচ্চস্তরের শব্দ রোধ করিতে পারিত না। যাহারা দেশের মাথা এবং দশের বোঝা, অর্থাৎ কিনা শাসক ও শোষক, তাহাতে তাহাদের বড় শান্তিভঙ্গ হইত। সন্দেহ নাই, সমস্যা গুরুতর। সুতরাং সমাধানের জন্য তেলে মাখনে প্রতিপালিত বুদ্ধিজীবীদের ডাক পড়িল। তাহারা নাক ও মজগসমেত হাজির। কেহ কেহ অবশ্য ‘ডাকপাড়িবার’ আগেই হাজিরা দিলেন এবং নাক ও মগজের মশক শুরু করিয়া দিলেন। সমস্যার ছোট-বড় বিভিন্ন গর্তে অনেকগুলা নাক গলাইয়া, অনেকগুলা মগজ ঘর্মাক্ত করিয়া একটি সমাধান বাহির করা হইল, শিমুল তুলা! যাহারা দেশের শাসক এবং দশের শোষক তাহারা শিমুল তুলায় বড় আরাম পাইলেন। তখন হইতে কর্ণগহ্বরে শিমুল তুলার প্রচলন। আচ্ছা, তুমি যদি হাতে কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করিতে চাহ তবে, মগডালের নাগাল হয়ত পাইবে না, মন্ত্রীদিগকে জিজ্ঞাসা করিতে পার। দেশের সমস্যার মত আমারও কথা বড় বেশী ডালপালা বিস্তার করে। তো শুরুতে কোথায় যেন ছিলাম! হাঁ, শোরগোল! দেশের মানুষ এখন শোরগোলের খৈ ভাজিতেছে? তা কিসের শোরগোল, কিসের খৈ?! না, দেশে নাকি এখন বেজায় রকম বেকার! আর তাহাদের সংখ্যা কমিতেছে না, বরং যাহাকে বলে, বানের পানির মত(থুক্কু, বানের জলের মত) হু হু করিয়া কেবল বাড়িতেছে!! শোরগোলের খৈ ভাজা মানে বিক্ষোভ, মিছিল, শ্লোগান ও দাবী, ‘বেকার সমস্যা দূর কর, নইলে গদি ছাড়!!’ অর্থাৎ দেশের মানুষ কিনা শোরগোলের খৈ ভাজিয়া বেকার সমস্যা দূর করিবার চেষ্টায় নামিয়াছে!বুঝিতে পারি না, লোকেরা এত বোকা কেন? তাহাদের ঘটে বুদ্ধির এত কাহাত কেন? তাহারা তো, গোমাতার পূজা করে, কিংবা গরুর গোশত খায়। আর গরুর দুধ তো উভয় পক্ষই পান করে! অর্থাৎ কিনা মাংসে দুধে ও গোবরে মূত্রে গরুর সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট হৃদ্যতা ও রিশতাদারি! তবে বুদ্ধির ঘাটতি কেন ঘটিবে!! দেখ, আমার জানামতে, বেকার মানুষ দেশের জন্য সমস্য নহে, বরং অতি উত্তম সমাধান! কাজের মানুষগুলাই বরং দুর্ভাগা গরীব দেশটার জন্য আসল সমস্যা। আমি তো বলি, ‘বেকার সমস্যা’ এই ধারণা ‘কর্মগ্রস্ত’ মানুষের অপপ্রচারমাত্র। বেকার মানুষের সৌভাগ্যে হিংসায় জ্বলিয়া পুড়িয়া মরে কিনা! আমার কথা যদি বিশ্বাস কর তো বলি, বেকার মানুষের মত নিরীহ প্রাণী এই বঙ্গাল মুল¬ুকে দ্বিতীয়টি তুমি খুঁজিয়া পাইবে না। বেকার মানুষ কি ঘুষ ‘আহার’ করে? খাদ্যে ভেজাল মিশ্রিত করে? রোগীর গলদেশ কর্তন করে? কিংবা দেশের সম্পদ পাচার করে? ব্যাংকের তলা ফুটা করে? শেয়ারবাজারের কথা বলিব না! বুড়া হয়ত ‘অলবোগাস’ বলিয়া চিৎকার জুড়িয়া দিবে! তো উপরে যাহা যাহা বলিলাম, এবং বলিলাম না, এইগুলা তো সব কর্মগ্রস্ত মানুষের কর্ম! চিন্তা করিয়া দেখ, দেশের আগিলা-পিছিলা উযির-মন্ত্রী সকলে যদি বেকার থাকিত, ব্যবসায়ীরা যদি হাত গুটাইয়া ঘরে বসিয়া থাকিত, চোর ও পুলিশ উভয় প্রকার জীবগুলা যদি কর্মবিরতি করিত, আর ডাক্তার বাবুরা সত্যি সত্যি যদি কর্মহীন হইতেন, বল দেখি, দেশের বুকে কেমন একটা ‘স্বর্গ স্বর্গ ভাব’ বিরাজ করিত! দুঃখ এই যে, আমার কথাগুলা বাসি হইবার আগে কেহ কানে তুলিতে চাহে না, নতুবা দেশের প্রচুর কল্যাণ হইতে পারিত। তবু বলি, বাংলাকে যদি ঠিক ঠিক সোনার বাংলা করিতে চাহ, সকলকে অন্তত কিছুকাল বেকার ভাতা দিয়া বসাইয়া রাখ। কাহাকেও কোন কাজ করিতে দিও না; চোর, মন্ত্রী, পুলিশ কাহাকেও না। বণিকগুলাকে অন্তত ব্যাংকপাড়ার ধারে কাছেও ভিড়িতে দিও না। এমনকি ডাক্তার বাবুকেও বলিয়া দাও, দয়া করিয়া তুমি রোগী দেখিও না এবং একগাদা টেস্ট লিখিও না। রোগী নিজে আসিয়া তোমাকে দেখিয়া যাইবে এবং ...।***বেকার মানুষ কত প্রকার ও কী কী? জানো না! তবে আইস, আমার চারিপার্শ্বে গোল হইয়া বইস। এই সম্পর্কে আমি তোমাদিগকে পর্যাপ্ত জ্ঞান দান করিব। চুপচাপ শ্রবণ কর, গোলমাল করিও না। গোলমাল করিলে আমার উপরের চেম্বারে গোলযোগ দেখা দেয় এবং সবকিছু মালগোল হইয়া তিলতাল করিয়া তালগোল পাকাইয়া যায়, তখন গোলগাল মস্তকটি প্রতিবাদ করিয়া বলে, আমি কোন কাজ করিব না!তো বেকার মানুষ কত প্রকার ইহা জানিবার পূর্বে জানিত হও যে, বেকার মানুষ কোন কাজই করে না ইহা সত্য, তবে পূর্ণ সত্য নহে। আমার মতে অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কর্ম তাহারা অতি নিষ্ঠার সহিত সম্পন্ন করে। তদুপরি ঐ কর্মগুলিতে দেশের মঙ্গল ছাড়া কোন অমঙ্গল নাই। প্রথমত অত্যন্ত আগ্রহের সহিত তাহারা বাড়ির বাজার সদায় করিয়া থাকে। নিন্দুকেরা এই আগ্রহের ব্যাখ্যা চাহিতে পারে, কিন্তু ‘চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকিব’ এই রূপ লিখিত বা অলিখিত কোন চুক্তি কি ছিল? তবে! দ্বিতীয়ত তাহারা তিন বেলা নির্বিবাদে মুখ বুজিয়া আহার করে; কখনো মাছের মু- বা দুধের সর তালাশ করে না। (নিন্দুকেরা বলে, বসিয়া বসিয়া অন্ন ধ্বংস করা। বড়ই অন্যায্য কথা! যিনি মুখ দিয়াছেন তিনিই না আহার দান করেন। সুতরাং কাহার অন্ন কে ধ্বংস করে, বল!) বেকার লোকেরা আর কী করে! চায়ের দোকানে পত্রিকা পড়ে, কিংবা বড় জোড় রাস্তার মোড়ে আড্ডা দেয়, বিড়ি টানে এবং দেশের ভবিষ্যত চিন্তা করে। বৎসগণ, নীরবে শ্রবণ কর। এই বার আমি বেকার মানুষের তকসীম মানে ক্লাশিফিকেশন মানে শ্রেণীবিন্যাস করিব। আমার মতে বেকার মানুষ মোটামুটি তিন প্রকার। প্রথম প্রকার, যিনি কাজ তালাশ করেন, মগর খুঁজিয়া পান না। হাতে ফাইল, গায়ে ময়লা জামা, পায়ে তলাক্ষয় জুতা! ঘামে হবুজবু! এই রূপ অবস্থায় তিনি যখন কোন দফতরের দরজার সামনে দাঁড়ান তখন বড় বড় হরফে জ্বল জ্বল করিয়া একটি লেখা ভাসিয়া ওঠে, ‘কর্মখালি নাই’। কোথাও কোথাও বেকার মহাশয়ের সঙ্গে রসিকতা করিয়া ইংরেজিতে লেখা থাকে, ‘নো ভেকেন্সি’। একজন বেকার, একবার দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করিয়া বসিলেন, মহাশয়, ‘নো ভেংচি’ কথাটার কী অর্থ? দারোয়ান তাহার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকাইলেন যাহার তরজমা হইতে পারে, ‘বাপু, তুমি কি ঐ হাসপাতালের পলাতক’?তো এই প্রকার বেকার যাহারা তাহাদিগকে কেহ করুণা করিয়া বলে, বেচারা বেকার! আবার কেহ তাচ্ছিল্য করিয়া বলে, অপদার্থ কোথাকার!!আরেক প্রকার বেকার হইল, তিনি কাজ তালাশ করেন না, কাজই তাহাকে তালাশ করে এবং এই সুবাদে কখনো কখনো তাহার সঙ্গে মোলাকাতও হয়। কিন্তু বেকার মহাশয় উন্নত নাশিকা কুঞ্চিত করিয়া বলেন, বড়ই নি¤œস্তরের কাজ, ইহা আমার উপুক্ত কর্ম নহে। বিশ্বাস না হয়, আমার ডিগ্রীর তালিকাটা পড়িয়া দেখ। তো ইহারা কর্মে অনাগ্রহী নহে। কর্ম দ্বারা দেশোদ্ধারে ইহাদের পূর্ণ রুচি আছে, এমনকি অভিরুচিও আছে। কিন্তু উপযুক্ত কর্ম তাহাদের নিকট আসে না বলিয়া তাহারা বেকার, আর দেশ তাহাদের সেবা হইতে বঞ্চিত! তবে তাহারা উপযুক্ত কাজের অপেক্ষায় এবং দেশকে উদ্ধার করিবার আশায় শুইয়া বসিয়া বেকারত্ব ভোগ করেন। ইহারা নিজেদের কখনো বেকার মনে করেন না, কেহ মনে করিলে রীতিমত গোস্সা করেন,। আত্মপরিচয়প্রসঙ্গে ইহাদের বক্তব্য, ‘আর কিছু না হউক, মনে করিতে পার, আমরা উপযুক্ত কর্মের অপেক্ষায় ‘রিজার্ভ বেঞ্চের বাসিন্দা’। সুতরাং দেশের কর্তব্য হইল, আচ্ছা দেশের না হউক, পরিবারের কর্তব্য হইল দেশের ও পরিবারের অমূল্য সম্পদ মনে করিয়া, আমাদের জন্য উন্নত মানের খাদ্যের ব্যবস্থা করা, যাহাতে যথাসময়ে দেশের সেবায় নিযুক্ত হইয়া দেশকে আমরা রামপুর বা সিঙ্গাপুর কিছু একটা বানাইতে পারি।এই প্রকার বেকার মানুষকে কেহ করুণা করে না, বরং অবজ্ঞা/উপহাস করে; তবে কিনা আড়ালে আবডালে।বেকারদের তৃতীয় শ্রেণীটি ভালো করিয়া বুঝিয়া লও। ইহারা হইল সুখের বেকার, বা শৌখিন বেকার। ইহারা কর্ম তালাশ করে না, আবার কর্মও ইহাদিগকে তালাশ করে না। ইহাদের বেকারত্ব কস্মীন-কালেও দূর হয় না। ইহারা স্থায়ী বেকার এবং আমার ক্ষুদ্র গবেষণামতে ইহারা দেশের জন্য স্থায়ী সম্পদ।এই শ্রেণীটি দৃশ্যত কর্মমুক্ত, তবে অদৃশ্যত বড়ই কর্মব্যস্ত। ইহারা দেশের উদ্ধারকর্মে শুধু ব্যস্ত নহে, রীতিমত ব্যতিব্যস্ত। রাজনীতির নেতা, উপনেতা, পাতি নেতা, এমনকি হবু নেতা, ইহাদের উপর বড়ই নির্ভরশীল, বিশেষ করিয়া নির্বাচনের মৌসুমে এবং হরতালের উৎসবে! এমন কোন লীগ নাই যাহাতে লিক করিয়া ইহারা প্রবিষ্ট নহে।ইহারা পারতপক্ষে পিতৃদেবের ছায়া মাড়াইতে চাহে না। তবে ভাগ্য যখন অপ্রসন্ন হয়, তখন গৃহত্যাগের মুখে গৃহে প্রবেশ-কারী পিতার সামনাসামনি ঘটিয়া যায়, বিপরীত ঘটনাও ঘটে। কে গৃহ ত্যাগ করিতেছিল, আর কে গৃহে প্রবেশ করিতেছিল, ইহা বড় কথা নহে; বড় কথা হইল উভয়ে মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত মোলাকাত! তখন পিতৃদেব অত্যন্ত মধু বর্ষণ করিয়া যাহা বলেন, তাহা এই- ‘আর কতকাল বাপের অন্ন ধ্বংস করিবে? দেশকে পরে উদ্ধার করিও, কিছু একটা করিয়া আগে আমাকে তো উদ্ধার কর। দেখিতে পাও না, শিরদাড়া বক্র হইয়া আসিতেছে!ইহরা সময়ের বড় পাকা হিসাব রাখিয়া গৃহে প্রবেশ করে। মা কীভাবে যেন বুঝিয়া ফেলেন, তাহার পুত্রধন দেশের কর্মে ঘামিয়া চুবিয়া একপেট ক্ষুধা লইয়া তাহার আঁচলের ছায়ায় আসিয়াছে। তিনি চুপি চুপি...এখন যাইবার কালে তোমাদিগকে একটি সুখবর দিব। আমি নিজেও বেকার শ্রেণীর অন্তভুক্ত একজন নিরীহ প্রাণী। তবে আমার শ্রেণীটি আমি নিজে ঠাহর করিতে পারিতেছি না; আগামীবার তোমরা নির্ধারণ করিও। *

গৃহস্থের বুদ্ধি বাড়িতে হয় চোর থাকিতে।তাহাতে চোরকে পাকড়াও করা সহজ, শায়েস্তা করাও সহজ। অন্যথায় উল্টা চোরের হাতে নাজেহাল হইবার সমূহ খতরা। অর্থাৎ চোর তোমাকেই জড়াইয়া ধরিয়া গলা বাড়াইয়া চিৎকার জুড়িয়া দিবে, ‘চোর চোর’! আর লোকেরা কিনা আন্ধারে অন্ধের মত তোমাকে কিলাইতে শুরু করিবে। তুমি ‘কিলিত’ হইবে, আর আর্তনাদ করিবে। মগর লোকেরা তোমার আর্তনাদ ঠাহর করিতে করিতে এবং কিলের ‘বৃষ্টি-বারিশ’ থামিতে থামিতে তুমি তো লবেজান, ঐ দিকে চোর মিয়াঁ মালসমেত গায়েবান!আচ্ছা, বল দেখি, তোমার কি মনে হয় না, কিছুদিন যাবৎ নাদান গৃহস্থ চালাক চোরের হাতে আচ্ছা রকম নাজেহাল হইতেছে! কারণ চোর থাকিতে গৃহস্থের বুদ্ধি বাড়ে নাই। হাট করিয়া দরজা খোলা রাখিয়া গৃহস্থে গৃহস্থে ‘কিলাকিলি’ এবং ‘চুলাচুলি’! এই না সুযোগে চোরের দল ঘরে ঢুকিয়া শুরু করিল খুশির কোলাকুলি! অতঃপর গলাগলি!! অতঃপর ...!!তাহাদের এখন এতই বাড় যে,শুরুতে ঢুকিয়াছিল চোর হইয়া, এখন বাহির হইতে চায় ডাকাত সাজিয়া! দুর্ভাগা দেশটা বারবার গোল্ল¬ায় যায় শুধু এই কারণে যে, এখানে সকলের বুদ্ধি বাড়ে যখন চোর চলিয়া যায়। এই দেখ না, লগি-বৈঠায় বেচারা গণতন্ত্র যখন আধমরা তখন কিছু কিছু বুদ্ধি বাড়িল! তবু তাহারা মন্দের ভালো!খাদেমানে ইসলাম কা হাল আওর ভী বুরা!! তাহাদের বুদ্ধি কখনই বাড়ে না; চোর থাকিতেও না, যাইবার পরেও না। তাই তো একহালি মুন্সি, দেড়হালি ফেরকা!তবে দশদিন ও একদিনের প্রাচীন প্রবচনটি অতি সত্যবচন!(লগি-বৈঠার সময়ের লেখা, যাহা দেশের মানুষ এখন ভুলিয়াই গিয়াছে)নাছীরুদ্দীন হোজ্জা, আমি জানিতাম তিনি আগিলা যামানার ইনসান। বুদ্ধিমান মানুষ কত রকম বোকামি করিতে পারে, এই বিষয়ে তিনি নাকি ছিলেন যিন্দা নমুনা! সেদিন বড় চাঞ্চল্যকর খবর জানা গেল, নাছিরুদ্দীন হোজ্জা হাল যামানায় পুনরায় পয়দায়েশ ফরমাইয়াছেন এবং আগিলা যামানার বিপরীতে নমুনা কায়েম করিতেছেন যে, বোকা মানুষ কত রকম বুদ্ধির কাজ করিতে পারে! এই সুবাদে তিনি তালিম দিতেছেন, কীভাবে বড় বড় সোনার টুকরা তামা হইয়া যায়, যেমন আগিলা যামানায় তালিম দিতেন, কীভাবে বড় বড় তামার টুকরা সোনা হইয়া যায়! জানা গিয়াছে, হোজ্জা সাহেবের হালযামানার তালিম কতিপয় বঙ্গসন্তান উত্তমরূপে রপ্ত করিয়া বঙ্গদেশের কেন্দ্রীয় অর্থালয়ে ইতিমধ্যে হাতেকলমে প্রয়োগ করিয়াছে এবং যথেষ্ট সুফল প্রাপ্ত হইয়াছে!



শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা