রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭)

তোমাদের পাতা

তো মা কে

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

রাতের আকাশে কত তারা ঝিলমিল করে! পূর্ণিমার চাঁদ কী ¯িœগ্ধ জোসনা ছড়ায়, পৃথিবী যেন জোসনার আলোতে প্লাবিত হয়! সন্ধ্যার আঁধারে জোনাকিরা কী অপূর্ব আলোকসজ্জার আয়োজন করে!

এই তারা, এই জোসনা, এই জোনাকির আলো কার জন্য? আমার জন্য, শুধু আমার জন্য!!

ভোরে পাখীর গানে প্রকৃতি মুখরিত হয়ে ওঠে; ফুলবনে প্রজাপতিরা উড়ে বেড়ায় রঙিন ডানা মেলে; ফুলে ফুলে মৌমাছি মধু আহরণ করে।

পাখীর গান, প্রজাপতির রঙিন ডানা, আর মৌমাছির মধু আহরণ কার জন্য? আমার জন্য, শুধু আমার জন্য!!

পাহাড়ের কোল বেয়ে উচ্ছল ঝর্ণা বয়ে চলে যেন সঙ্গীতের সুর সৃষ্টি করে! রিমঝিম বৃষ্টি নামে, আর মন যেন কেমন করে! বৃষ্টির পরে রোদ হাসে, আর রঙধনু সাতটি রঙের বাহার সাজায়!

ঝর্ণার উচ্ছল সঙ্গীত, বৃষ্টির রিমঝিম সুর এবং রঙধনুর রঙের বাহার কার জন্য? আমার জন্য, শুধু আমার জন্য!!

বাগানে কলি আসে, কলিরা ফুল হয়ে ফোটে; সুবাস ছড়ায়! ডালে ডালে মুকুল আসে, মুকুলেরা সুস্বাদু ফল হয়। আমাদের রসনা তৃপ্ত হয়। মাঠে মাঠে সোনার ফসল ফলে, কৃষকের মুখে হাসি ফোটে!

এই ফুল ও ফল, এই সবুজ মাঠ ও সোনার ফসল কার জন্য? আমার জন্য, শুধু আমার জন্য!!

ভোরে পূর্বদিগন্তে রাঙা সূর্য মিষ্টি আলো ছড়ায়! দুপুরে সূর্যের প্রখর রোদে গাছেরা শীতল ছায়া দান করে! সাঝের বেলা পশ্চিম দিগন্তে বিষণœতার কী অর্পূব লালিমা ছড়িয়ে পড়ে!

ভোরের রাঙা সূর্যের মিষ্টি আলো, প্রখর রোদে গাছের শীতল ছায়া, পশ্চিম দিগন্তে সাঝের বিষণœ লালিমা কার জন্য? আমার জন্য! শুধু আমার জন্য!!

আকাশে মেঘ জমে; মেঘেরা কত রকম আল্পনা আঁকে! মেঘের আল্পনা দেখে হৃদয়ে কত রকম কল্পনা জাগে! মেঘের আল্পনা, আর হৃদয়ের কল্পনা একাকার হয়ে জীবনের স্বপ্নরা পেখম মেলে!

এ আল্পনা, এ কল্পনা, স্বপ্নের এই পেখমমেলা কার জন্য? আমার জন্য! শুধু আমার জন্য!!

মায়ের কোল আলো করে প্রতিদিন কত শিশুর আগমন ঘটে! মায়ের বুকে মমতার শুভ্রধারা প্রবাহিত হয়! ধীরে ধীরে শিশুর জীবন পরিপুষ্ট ও সমৃদ্ধ হতে থাকে! মায়ের কোল ও তার বুকের উত্তাপ, মায়ের মমতার আঁচল ও চোখের জল এবং একটি শিশুর জীবনের ছায়া বিস্তার কার জন্য? আমার জন্য! শুধু আমার জন্য!!

জগত-সংসারে যা কিছু শুভ্র ও সুন্দর, যা কিছু ভালো ও কল্যাণকর, হে পরম প্রিয়, সব তোমারই দান আমার জন্য! আমাদের জন্য!!

আমি এবং আমরা; আমাদের জীবনের প্রতিটি সকাল ও সন্ধ্যা, প্রতিটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস, আমাদের জাগরণ ও নিদ্রা, আমাদের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্না সব তোমারই জন্য নিবেদিত হে পরম প্রিয়!

এই যে জীবন এবং জীবন থেকে বিদায় গ্রহণ; জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে জীবনের যত আশা-আকাক্সক্ষা, যত সফলতা ও ব্যর্থতা, যত পূর্ণতা ও অপূর্ণতা, জীবনের যত কল্পনা ও পরিকল্পনা, জীবনের যত অভিযান, অভিযাত্রা, যত উত্থান-পতন সব তোমারই জন্য নিবেদিত হে পরম প্রিয়!

যখন আসবে মৃত্যুর হাতছানি তখন আমি কিছু চাই না, চাই শুধু তোমাকে! সূর্য যখন হবে মাথার উপরে, তখন আমি কিছু চাই না, চাই শুধু তোমাকে এবং তোমার আরশের ছায়া!!

জীবনে মরণে, হে পরম প্রিয়, তোমাকে যারা পেয়েছে তারা ধন্য! ধন্য তাদের জন্ম এবং ধন্য তাদের মৃত্যু।

বান্দার শেষ মিনতি হে পরম প্রিয়, দয়া করে আমাকে দান করো ‘তোমাকে’!!!

চোখের আলো যখন নিভে যায়, তোমার করুণার আলো যেন দেখতে পাই হে পরম প্রিয়!!!

তোমাকে আমার জীবনের আলো-ছায়ার মধ্যে পেয়েছি অনেক দিন তো হলো! অন্তত একজন অপরজনের পরিচয় অর্জন করার জন্য, বাইরের ও ভিতরের পরিচয় অর্জন করার জন্য এটা যথেষ্ট সময়।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা