রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭)

তোমাদের পাতা

তোমাদের লেখা, ভোরের রাঙ্ সূর্যের প্রভা!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

শিউলী, তুমি কি আকাশের তারা?!

রাত যখন ভোর হয়, আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবি, কোথায় লক্ষ তারার মেলা? কোথায় তাদের ঝিলিমিলি?!

শিউলী গাছের তলায় গিয়ে দেখি অসংখ্য শিউলী ঝরেছে সবুজ ঘাসের উপর! তখন ভাবি, ভোরের ঝরা শিউলী ফুলেরাই হয়ত ছিলো রাতের আকাশে মিটিমিটি তারা!

আবার রাত আসে; আকাশে তারা জ্বলে। আমি ভাবি,  ভোরের শিউলীরা আবার বুঝি ফিরে এসেছে রাতের আকাশে! তারাদের আলোঝলমলতা এবং শিউলীফুলের শুভ্র ও মিষ্টি সুবাস আমাকে মুগ্ধ করে। তারাদের ছাড়িয়ে আরো দূরে বহু দূরে আমি অনুভব করি পরম আলোর উদ্ভাস! শিউলীফুলের শুভ্রতা ছাড়িয়ে আমার অন্তদৃষ্টি অনুভব করে পরম শুভ্রতার পরশ। আমার হৃদয় তাতে লাভ করে আশ্চর্য এক উজ্জ্বলতা; অপূর্ব এক শুভ্রতা। যে উজ্জ্বলতা আকাশের তারাদের মত নয়, অন্যরকম; যে শুভ্রতা ভোরের শিউলীদের মত নয়, অন্যরকম।

নতুন ভোরে আবার গিয়ে দাঁড়াই শিউলীগাছের তলায়, এক নতুন আকুতি নিয়ে।

অনেকগুলো ঝরেছে! আকাশের তারাগুলো যেন মাটিতে ছড়িয়ে আছে ফুল হয়ে!

একটা দু’টো এখনো ঝরছে। হাত বাড়িয়ে দিই। কিছু পড়ে হাতের তালুতে, কিছু পড়ে মাথায় শরীরে! কী এক স্বর্গীয় অনুভূতি যে হয় তখন!

মনে মনে জিজ্ঞাসা করি ঝরা শিউলীদের, তোমরা কি রাতের তারা, ভোরের শিউলী!? তোমরাই কি আকাশের আলো, পৃথিবীর শুভ্রতা!? মনে হয় শিউলীরা চুপি চুপি বলে আমাকে- ‘আমরা ¯্রষ্টার দান, তাদের জন্য, রাতের আঁধারে যারা সাড়া দেয় যখন ডাক আসে, ‘আছে কি কোন ...!!

শিউলীফুল আরো যেন বলে আমার সর্বসত্তাকে আপ্লুত করে, ‘আলো ও শুভ্রতা দিয়ে জীবনকে আলোকিত ও শুভ্র করো। আলো ও শুভ্রতাই হলো জান্নাতের পথ।

মুহিব্বুল্লাহ বিন মাসরূর

০০ প্রিয় বিন মাসরূর, তোমার লেখাটির জন্য তুমি এবারের প্রথম অতিথিসম্পাদক। তোমার কাছে কি লেখাটির অনুলিপি আছে? থাকলে সম্পাদনার সঙ্গে মিলিয়ে পড়ো গভীর পর্যালোচনার দৃষ্টিতে। আমরা তোমার আলোকিত ও শুভ্র-সুন্দর জীবন কামনা করি।

ঁআভিজাত্য-আমার অভিজ্ঞতা

আভিজাত্য সম্পর্কে আমার এ ক্ষুদ্র জীবনে বড় সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। এখানে সে সম্পর্কেই কিছু কথা- আমার অভিজ্ঞতা হলো, আভিজাত্য, বিত্ত ও প্রাচুর্যের সঙ্গে যেমন হতে পারে তেমনি হতে পারে দারিদ্র্যের সঙ্গে। বিত্তবানই অভিজাত হয়, দরিদ্র কখনো অভিাজত হতে পারে না, এ ধারণা আমার কাছে বারবার ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

একবারের ঘটনা, আব্বুর সঙ্গে ঢাকার পথে আমি বাসের যাত্রী। পথে বিশ্রামের জন্য বাস এক পান্থনিবাসের সামনে থামলো। এমন সময় এক পত্রিকাবিক্রেতা সামনে এসে বললো, হুযূর, একটা নিলে খুশী হতাম। এটাই আমার জীবিকার উপায়। আব্বু পত্রিকা খরিদ করলেন। এমন সময় চেহারা-সূরতে এক বিত্তশালী, ঐ লোকটির দিকে একশটাকার নোট ছুঁড়ে দিলো। লোকটি প্রথমে অবাক হয়ে ‘দাতা’র দিকে তাকালো, তারপর বিনয়ের সঙ্গে, তবে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বললো, সাহেব, আপনি ভুল বুঝেছেন। আমি ভিক্ষা করি না। পত্রিকা বিক্রি করে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা উপার্জন করি। ...

 

হাস্সান, ঢালকা নগর, ঢাকা

 

 

মনে পড়ে এবং মনে পড়ে না!!

মনে পড়ে তোমাকে এবং তোমার দরদী মালীকে। ভালোবাসার তুলিতে এঁকেছিলাম যে তোমার ছবি এবং তাঁর স্মৃতি হৃদয়ের পটে! তোমার কি মনে পড়ে ‘বাগান থেকে ঝরে পড়া ফুলের’ কথা এবং তাঁর!!

মনে পড়ে তোমার অঙ্গনের সেই আলোর ইশারা, সেই নূরের ফোয়ারা, একদিন আমার দুঃখে ভরা জীবনে এনেছিলো যা আসমানের সান্ত¡না। তোমার কি মনে পড়ে ‘বসন্তের পথভোলা বুলবুলি’র কথা এবং তাঁর!!

মনে পড়ে তোমার সেই শোকার্ত সময়ের কথা, তোমার মালী যখন বহু দূরে জীবনের আশা ও শঙ্কার সন্ধিক্ষণে; আমাদের তো তখন চোখ ভিজেছিলো! আমাদের তো হৃদয় তখন অস্থির ছিলো এবং দিল ছিলো বে-কারার। তোমার কি মনে পড়ে সেই ভেজা চোখ, সেই অস্থির হৃদয়, সেই বে-কারার দিল এবং তাঁর!!

মনে পড়ে শাসনে সোহাগে আমাদের আগলে রাখা সেই মানুষটির কথা, যিনি ছিলেন আমার সান্ত¡না, আর আমি ছিলাম তাঁর যন্ত্রণা! আরো মনে পড়ে সেই কোমল ¯িœগ্ধ মানুষটির কথা যার কাছে পেয়েছি আলোর লেখা এবং লেখার আলো। তোমার কি মনে পড়ে ‘হারিয়ে যাওয়া একটি জোনাকির কথা এবং তাঁর!!

মনে পড়ে বন্ধুদের কথা, কষ্টের সময়, ব্যথা ও যন্ত্রণার সময় এবং মুমূর্ষতার শয্যায় পেয়েছি যাদের সেবা ও সমবেদনা। তোমার কি মনে পড়ে ‘ডানাভাঙ্গা সেই পাখীটি’র কথা এবং তাঁর!!

মনে পড়ে তোমার বাগানের সেই ফুলগুলোর কথা, রাত জেগে সাজিয়েছি কত না সাজে, শুধু তাঁর জন্য! তোমার কি মনে পড়ে ‘ফুলের সান্নিধ্য-বঞ্চিত একটি মুখের কথা এবং তাঁর!!

মনে পড়ে তাঁর সান্নিধ্যে পূর্ণিমা যাপনের সেই ¯িœগ্ধ পবিত্র মুহূর্তগুলোর কথা। তোমার কি মনে পড়ে জোসনাবঞ্চিত ও কক্ষচ্যুত কোন জীবনের কথা এবং তাঁর!!

এভাবে অনেক কিছু মনে পড়ে! আবার অনেক কিছু মনে পড়ে না! স্মৃতি ও বিস্মৃতির বিষণœ মোহনায় দাঁড়িয়ে আজ শুধু ভাবি, আবার কি ফিরে আসতে পারে না সেই দিন, রাত; সেই সকাল, সন্ধ্যা; সেই চাঁদ, সেই জোসনা!!

আরিফ বিল্লাহ

(অসুস্থতায় ঝড়ে পড়া, মাদরাসাতুল মাদীনাহর চতুর্থ বর্ষের তালিবে ইলম, নিজেকে এখনো ভাবতে পারি না, এ বাগান থেকে বিচ্ছিন্ন ফুল!)

০০ !!! ???

 

 

আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি

প্রতিদিন দেখি সূর্যের উদয় ও অস্ত এবং দেখি মধ্যগগণে সূর্যের অবস্থান। সূর্যের আলো ও উত্তাপে আমরা বেঁচে আছি; পৃথিবীতে বেঁচে আছে প্রাণ। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, এ তো প্রতিদিনের পরিচিত দৃশ্য। প্রায় প্রতিদিনই দেখি। কিন্তু আজ যেমন করে দেখলাম তেমন করে আর কখনো দেখা হয়নি। আজ যে শিক্ষা পেলাম তা আর কখনো পাইনি। যিনি বলেছেন সত্য বলেছেন, ‘শিক্ষা গ্রহণ করা তখনই সম্ভব হয়, হৃদয় যখন উন্মুক্ত হয়।’

আজকের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখে হঠাৎই মনে হলো, সূর্য যেন আমারই জীবনের প্রতিচ্ছবি! ভোরে পূর্বদিগন্তে যখন রাঙা সূর্যের সজীব হাসিটি দেখতে পাই, মনে হয়, এ আমারই শৈশবের আলোক-উদ্ভাস! কিন্তু হায়, কত অল্প সময়ে জন্য পূর্বদিগন্তে সূর্যের মিষ্টি আলো এবং কত অল্প সময়ের জন্য আমার জীবন-প্রভাতের সোনালী শৈশব!

অদৃশ্যের সেই পরম শক্তির অমোঘ নির্দেশে ধীরে ধীরে সূর্য এগিয়ে যায় তার সারা দিনের জীবন-রেখা অনুসরণ করে এবং একসময় সগৌরবে অবস্থান করে মধ্যগগনে, যেন আমারই জীবনের তারুণ্য ও যৌবনের উচ্ছলতার প্রতিচ্ছবি হয়ে। কিন্তু কত অল্প সময়ের জন্য জীবন -মাত্র একদিনের হলেও- কখনো মনে হয় না ‘ব্যর্থ’! উদয় -কালে যেমন তেমনি অস্তকালেও সে পৃথিবীকে আলো দান করে। ‘আমার জীবনও হতে পারে সার্থক, যদি আমি নিজের জীবনে সত্যের আলো ধারণ করতে পারি এবং আমার চারপাশের মানুষের জীবনে আলো দান করতে পারি! জীবনের প্রতিটি আচরণে ও উচ্চারণে যদি হতে পারি করুণাময়ের অনুগত।

জুনাইনা বিনতে মুতিউর-রহমান/ আদর্শনগর, চিটাগাং রোড, এন গঞ্জ

০০ প্রিয় জুনাইনা, উপরে তোমার লেখাটিকে আমূল সম্পাদনার মাধ্যমে নতুন করে সাজানো হয়েছে। তোমার মূল লেখাটিও নীল বক্সের ভিতরে ছাপা হলো। আশা করি, এতে তুমি এবং সবাই বুঝতে পারবে একটি লেখার কাঠামো, তার ভাষাসজ্জা ও শব্দচয়ন কেমন হতে পারে বা হওয়া উচিত। যদি নিয়মিত চর্চা ও অনুশীলন করা হয় তাহলে দেখবে প্রতিদিনই কিছু না কিছু উন্নতি হচ্ছে। এমন একটি দু’টি কলমের উদাহরণ এখানে দিতে পারি, পুষ্পের সঙ্গেই কলমের অনুশীলন শুরু করেছিলো, এখন তাদের লেখায় অভাবনীয় উন্নতি ...! পুষ্পের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রকাশনায় তাদের লেখাগুলো, আর তৃতীয় প্রকাশনার লেখাগুলো মিলিয়ে দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।

কিন্তু সমস্যা হলো, নিবেদিতপ্রাণ কলমসেবকের এখন বড় অভাব! অধিকাংশই এমন যে, তাদের প্রথম লেখাটাই হয় শেষ লেখা। পুষ্পের পাতায়ই এর নমুনা রয়েছে। আশা করি তুমি এমন হবে না! আশা করি তুমি নিয়মিত লিখবে এবং তা  শুধু কলমকে ভালোবেসে, কলমের সাধনায় আত্মনিয়োগ করে এবং ‘কলমের মোহ’ থেকে মুক্ত হয়ে।

তুমি এবার পুষ্পের অতিথি- সম্পাদক। আমরা তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি

কুড়িয়ে পাওয়া পুষ্পের গল্প

আমার জীবনের নয়টি বছর কেটেছে শিক্ষার ‘ভুল পথে’। এরপর দ্বীনের সঠিক বুঝ পেয়ে কাওমী মাদরাসায় প্রবেশ করলাম। তখন পরিচয় হলো এসো আরবী শিখি কিতাবটির সঙ্গে।

একদিন হঠাৎ মাদরাসা পরিচ্ছন্ন করার সময় একটি পত্রিকা কুড়িয়ে পেলাম। ‘পুষ্প’! তখনো বুঝতে পারিনি, কুড়িয়ে পাওয়া কী অমূল্য হীরকখ-!

যখন পুষ্পের একেকটি পাপড়ির সুবাস গ্রহণ করা শুরু হলো তখন তো আনন্দে আমি আত্মহারা!

কিন্তু এ আনন্দ খুব স্থায়ী হলো না। এক ঝড়ো ঝাপটায় পুষ্প হারিয়ে গেলো শুধু আমার জীবন থেকে নয়, সবারই জীবন থেকে। দুঃখে বেদনায় তখন কী যে ভারাক্রান্ত হলাম!

দীর্ঘ সাতবছর পার হলো। কীভাবে পার হলো তা জানেন শুধু আল্লাহ! কত প্রার্থনা, কত মুনাজাত এবং কত অশ্রুপাত, পুষ্প আবার যেন ফিরে আসে তার পূর্ণ বসন্তবাহার নিয়ে আমাদের সবার জীবনে।

আমার নির্জন রাতের মুনাজাতে গড়িয়ে পড়া ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুই যেন ফুল হয়ে ফুটল বাগানে, আর আল্লাহর অসীম করুণায় শুরু হলো পুষ্পের ‘তৃতীয় বসন্ত’!

আলহামদু লিল্লাহ, এবারের বসন্তে একে একে পাঁচটি ফুল ফুটেছে নতুন বর্ণ, নতুন সুবাস ও নতুন আলোর ছটা নিয়ে। অন্তর থেকে কামনা করি, পুষ্পের এ বসন্ত স্থায়ী হোক। পুষ্পের সুবাস সবার জীবনকে যেন করে সুবাসিত, পুষ্পের দরদদী মালীকে আল্লাহ খায়র ও বরকতের সঙ্গে দীর্ঘজীবী করুন, আমীন।

মিনহাজুল ইসলাম, মাসনা মাদরাসা, যশোর

 

চড়ুই পাখীরা শিক্ষা দিলো!

তাওহীদ বিন মুখলিছ

গাছটা বেশ বড়ই ছিলো। অনেক ডাল ছিলো, আর ছিলো সবুজ পাতা। সবুজ পাতাগুলোর দিকে যখন তাকাই, আমার ভিতরটা যেন সবুজ হয়ে যায়। গাছটাতে অসংখ্য চড়–ই পাখী বাস করতো। সকাল-সন্ধ্যা চড়ুই পাখীদের কিচিরমিচিরে সব যেন মুখরিত থাকতো। আমি মুগ্ধ হয়ে চড়–ই পাখীদের সম্মিলিত গান শুনতাম। সকালে পাখীগুলো খাদ্যের সন্ধানে বের হতো। উড়ে যেতো দূরে বহু দূরে। সন্ধ্যায় আবার ফিরে আসতো। গাছের ডালে ডালে এত অসংখ্য পাখী! এত কিচির মিচির! অথচ সবুজপাতার আবরণের কারণে তাদের খুব একটা দেখা যেতো না।

আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, হাজার হাজার পাখী একটা গাছের মধ্যে বাস করে, কী সুন্দর মিলে মিশে! কোন ঝগড়া নাই, বিবাদ নাই। সবাই যেন আত্মীয়! মানুষের সমাজে তো ভাইয়ে ভাইয়ে পর্যন্ত বিবাদ হয়!

একদিন কী কারণে যেন একটা ডাল কাটা হলো; মাত্র একটা ডাল! কিন্তু সেদিন কী হলো?! সব চড়–ই পাখী গাছ ছেড়ে চলে গেলো! আর ফিরে এলো না। এলো না তো এলোই না!

প্রথমে তো বুঝতে পারিনি, ঘটনা কী?! পরে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হলো যে, একটি ডালের পাখীরা তো তাদের বাসস্থান হারিয়েছে; তাই তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে অন্য পাখীরাও চলে গিয়েছে। যেখানেই ওরা থাকবে, একসঙ্গে থাকবে!

সেদিন যেমন বুঝিনি, আজো বুঝতে পারি না, মানুষে আর পাখীতে এ পার্থক্য কেন?

তাওহীদ বিন মুখলিছ, মুক্তাগাছা, মোমেনশাহী

০০ প্রিয় তাওহীদ, তোমার চড়–ই পাখীসম্পর্কিত লেখাটির সম্পাদিত রূপ পাশে দেখো। তোমার গোলাব গাছের করুণ পরিণতি আমারও অন্তরে ব্যথা সৃষ্টি করেছে। কে এমন নিষ্ঠুর, রাতের আঁধারে গাছটাকে শেকড়শুদ্ধো উপড়ে ফেললো!

তবে আমার আরেকটা ব্যথার কারণ হলো, গোলাব গাছের করুণ পরিণতি দেখে তুমি বিস্বিত হয়েছো, বিস্মিত হওনি! তুমি লিখেছো, ‘বাগানে পৌঁছার পর আমার চোখ তো বিস্বয়ে চড়কগাছ!

প্রথম কথা বিস্ময় লিখতে হবে স+ম সংযুক্ত। চড়কগাছের সঙ্গে চোখ হয় না, চক্ষু হয়। তৃতীয় কথা, ‘চক্ষুচড়কগাছ’ এ বাগধারা  শোক ও বেদনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা তেমন সঙ্গত নয়। তুমি লিখতে পারো, বিস্ময়ে বেদনায় আমার চক্ষু তো স্থির!

 

 

শৈশবের হাতছানি

শৈশবে বড় ভালো লাগতো দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ এবং চারপাশে সবুজের সমারোহ। আর ভালো লাগতো সারাটা দুপুর বড় পুকুরে সাঁতার কাটা। ভালো লাগতো বিকেলের শান্ত পরিবেশে ধরলাপাড়ের বড় মাঠে খেলাধূলার মধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আনা। মাঠের পাশে ছিলো শুভ্র কাশবন। কখনো উদাস চোখে তাকিয়ে থাকতাম দিগন্তজোড়া কাশবনের দিকে। বাতাশে/সের মৃদু প্রবাহে দোলখাওয়া কাশফুলগুলো আমারও ছোট্ট

হৃদয়ে কেমন এক তরঙ্গদোলা সৃষ্টি করতো।

কখনো ভরা বর্ষায় নৌকা ভাসাতাম। কখনো জানালায়দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে বৃষ্টি দেখতাম। টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার অদ্ভূ/দ্ভুত সুরছন্দ হৃদয়

ছুঁয়ে যেতো।

কখনো সময় পার হতো পাখীর বাসা খুঁজে খুঁজে। পেলে সঙ্গে নিয়ে আসতাম, আর নাগালের বাইরে হলে ঢিল ছুঁড়তাম। তখন বুঝতাম না, পাখীদেরও কষ্ট হয়। এখন বুঝি।

বাড়ীর পিছনের ঘন বাঁশঝাড়ে সন্ধ্যারাতে জোনাকির মেলা বসতো। আম্মুর নিষেধ সত্ত্বেও জোনাকি ধরতে যেতাম। আঁধারের মধ্যে জোনাকির আলো-কণার ছোটাছুটি বড় ভালো লাগতো। ...

স্বপ্নের শৈশব আজ হারিয়ে গিয়েছে জীবনের অঙ্গন থেকে। এখন ‘শৈশবহারা এক এতীম’ শহুরে জীবনের ঘেরাটোপে আবদ্ধ।

শৈশবের স্মৃতি মনকে এখন বড় উতালা করে তোলে। সবুজের প্রতি এখনো আছে আমার আকুতি। কিন্তু সবুজ হারিয়ে গিয়েছে জীবন থেকে। গ্রামও তো এখন আর গ্রাম নেই! না আছে বাঁশঝাড়, না আছে জোনাকির আলো!

হায়, যদি আবার ফিরে পেতাম শৈশবের স্বপ্নীল দিনগুলো, কিংবা ফিরে যেতে পারতাম সেই দিনগুলোর কাছে!

ওমায়ের বিন ইসলাম, জামিয়া রাহমানিয়া, মুহম্মদপুর ঢাকা

০০ প্রিয় ওমায়ের। তোমার লেখা সম্পর্কে ভাবছি কী বলা কর্তব্য। কারণ সমালোচনায় তোমরা উদ্যম হারিয়ে ফেলো, আবার প্রশংসায় আত্মতুষ্টিতে আক্রান্ত হও।

তবু বলছি, যথেষ্ট অপরিপক্বতা সত্ত্বেও তোমার লেখার আন্দায ভালো। সম্ভাবনা আছে, যদি সাধনা যুক্ত হয়। আর এখানেই আছে বড় একটা ‘মগর’!

তোমার চিঠি আমাকে সত্যি ভাবিয়ে তুলেছে। তুমি অনুরোধ করেছো তোমার লেখা সম্পর্কে ‘নির্মোহ’ পর্যালোচনা করতে। আচ্ছা, তোমার বড় কাউকে যদি  নির্মোহ হওয়ার পরামর্শ দাও, আদবের খেলাফ কি হয়? এখান থেকেই বুঝতে পারো ‘এতদিনের লালিত স্বপ্নের পথে’ কত দূর এগিয়েছো। শব্দ শুধু সুন্দর হলেই হয় না। শব্দের প্রয়োগও হতে হয় সুন্দর!

আরেকটা প্রশ্ন; তুমি শৈশবের স্মৃতিচারণ করেছো। কতকিছুই তো এলো, এলো না শুধু মায়ের কথা! যাও এলো, শুধু মায়ের নিষেধ অমান্য করার কথা! বুঝতে পারছো, লালিত স্বপ্নের পথে কত দূর এগিয়েছো! লাল কালিতে চিহ্নিত বানানত্রুটি কি কোন সতর্কবার্তাই বহন করে না!

এসো, একটা পরীক্ষা করি, তুমি কি পাঠানো লেখার অনুলিপি রেখেছো, যাতে আমার সম্পাদনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারো? যদি রেখে থাকো, তাহলে খুব ভালো, আর...!

যাই হোক, আশা করি, তোমার লালিত স্বপ্ন একসময় পূর্ণ হবে। আল্লাহ যেন তাই করেন, আমীন।

 

শৈশব দেখে মনে পড়ে শৈশব

 

আছরের সময় দেখি, দু’টি ছোট্ট ছেলেকে রেখে ফিরে যাচ্ছেন বাবা। ছেলে দু’টির তখন কী নীরব কান্না! গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছে, জামার হাতা দিয়ে চোখ মুছেও কূল পাচ্ছে না! দেখে কী যে মায়া হলো! মনে পড়লো নিজের শৈশবের কথা। আমাকেও এভাবে মক্তবে দাখেল

করা হয়েছিলো, আর আমি চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছি!

দিন তো বসে নেই! পার হয়ে গিয়েছে দীর্ঘ দশটি বছর। মক্তব, হিফযখানা পার হয়ে এখন আমি কিতাববিভাগের ছাত্র। কিন্তু মনে

হয়, এই তো সেদিনের ঘটনা! এভাবেই শিশুদের বড় হতে হয় বড় হওয়ার অনেক যন্ত্রণা সহ্য করে! প্রজন্মের পর প্র... এভাবেই চলছে। আমার মত এই শিশু-দু’টিও হয়ত একদিন বড় হবে এবং আমার মত, অন্য শিশুর কান্না দেখে নিজের ফেলে আসা শৈশবের স্মৃতিচারণ করবে।

নিয়ামুল হক, ইউসুফ, তাজমহল রোড, মুহম্মদপুর, ঢাকা

আ  মা  র  প্র  তি  জ্ঞা

আমার আজকের কাগজ-কলমের সান্নিধ্য গ্রহণ সুন্দর কোন লেখা তৈরী করার জন্য নয়। আজ আমি বসেছি মনের কিছু প্রতিজ্ঞা সাদা কাগজের বুকে কালো কালির হরফে লিখে রাখার জন্য। কারণ আমি বিশ্বাস করি, হৃদয়ের অনুভব-অনুভূতি ও চিন্তা-ভাবনা যখন কলমের মাধ্যমে কাগজের পাতায় উঠে আসে/অঙ্কিত হয় তখন সেগুলোর একটি স্বতন্ত্র সত্তা তৈরী হয়, যা অন্যরকম একটি মহিমা ও আভিজাত্য লাভ করে। আমি চাই আমার আজকের প্রতিজ্ঞা কালি-কলমের স্পর্শে তেমনি মহিমা ও আভিজাত্য অর্জন করুক।

কী সেই প্রতিজ্ঞা? হাঁ, একজন ভালো মানুষ হওয়ার প্রতিজ্ঞা; আল্লাহ তা‘আলার একজন নেক বান্দী হওয়ার প্রতিজ্ঞা; মা-বাবার চক্ষু শীতলকারী সুসন্তান হওয়ার প্রতিজ্ঞা এবং ...!

মাহমূদা বিনতে শহীদ, মাদরাসাপাড়া, ধুলের চর, টাঙ্গাইল

(প্রিয় মাহমূদা ...! সর্বান্তকরণে কামনা করি, তোমার প্রতিজ্ঞা সফল হোক! তোমার লেখা সুন্দর সম্ভবনার প্রতি ইঙ্গিতবাহী। অনুলিপি যদি রেখে থাকো তাহলে সম্পাদনার সঙ্গে ...)

জীবনে রোদ ও ছায়া

গ্রীষ্মের দুপুর। একটুকরো মেঘ নেই সারাটা আকাশে। ‘অগ্নিগোলা’টা যেন আগুন ঝরাচ্ছে। রোদে পুড়ে সারখার হচ্ছে গোটা প্রকৃতি। এটাকেই হয়ত বলে কাঠফাটা রোদ। তার মধ্যেও কৃষক মাঠে কাজ করছে। কর্ষিত ভূমিতে ঘাম ঝরিয়ে সোনার ফসল ফলাচ্ছে।

ভাবতে অবাক লাগে! রোদে পুড়ছে কৃষক, অথচ তার মুখে নেই কোন অভিযোগ; তার চেহারায় নেই বিরক্তির কোন চিহ্ন! যত অভিযোগ, যত বিরক্তি তা হলো তাদের মুখে, তাদের অবয়বে যারা গাড়ীতে যাতায়াত করে এবং শীতল কক্ষে বাস করে!

রোদের তাপ ও সূর্যের প্রখরতা আজ যেমন অনুভব করছি তেমন আগে করিনি। পথে বের হওয়ার সময় কী কারণে যেন ছাতাটা সঙ্গে নেয়া হয়নি। এত দিন পথ চলেছি ছাতামাথায়, আজ পথ চলছি রোদমাথায়! ঘামে যেন একেবারে নেয়ে উঠেছি। তবু মনে কোন বিরক্তি নেই। বরং আমার ভুলের কাছে কৃতজ্ঞবোধ করলাম রোদকে তার সঠিক প্রকৃতিতে অনুভব করতে পারার জন্য।

জীবনে সূর্যের কী ভূমিকা সে আলোচনা এখানে থাক! পৃথিবীতে প্রাণ ধারণের জন্য তাপ ও উত্তাপের কী প্রয়োজন সে কথাও পরে অন্য কোন সুযোগে না হয় হবে! আজ শুধু বলতে চাই, আজকের আগুন ঝরা রোদ আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, কাল হাশরে সূর্য হবে মাথার ‘একহাত’ উপরে! সেই ‘কেয়ামতি সূর্য’ থেকে নাজাত লাভের এখনই তো ...! দুনিয়ার সূর্যের আগুনঝরা রূপটি দেখে আমরা যেন বুঝতে পারি আখেরাতে মাথার উপর অবস্থান করা সূর্যকে।

ছায়া কত বড় নেয়ামত তা বুঝতে হলে জিজ্ঞাসা করো মরুভূমির মুসাফিরকে, যে কখনো পেয়েছে মরূদ্যানের ছায়া। কিংবা তুমি নিজেই কোন গ্রীষ্মের দুপুরে একটু গিয়ে বসো সবুজ বৃক্ষের ছায়ায়।

রোদ ও ছায়া দু’টোই আসলে জীবনের অপরিহার্য অংশ। দুনিয়ার সূর্য যেমন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আখেরাতের সূর্যকে, তেমনি দুনিয়ার বৃক্ষছায়া স্মরণ করিয়ে দেয় হাশরে আরশের ছায়াকে, যা লাভ করবে সাত শ্রেণীর ভাগ্যবান মানুষ।

০০ প্রিয় বায়েজিদ হোসাইন, খুলনা,

তোমার ‘রোদ’ লেখা থেকে তৈরী হয়েছে ‘জীবনে রোদ ও ছায়া’ লেখাটি। এভাবে আমার কলম তোমার কলমের দানে হয়েছে সমৃদ্ধ। তাই তুমি পুষ্পের এ সংখ্যার সম্মানিত অতিথি-সম্পাদক।

ভুলতে পারি না সেই পাখীটিকে!

যাকিয়া বিনতে শহীদ/ ধুলের চর মাদরাসাপাড়, টাঙ্গাইল

দেখতে ভারি সুন্দর দু’টি পাখী আমার জীবনে এসেছিলো! চোখের চাহনীতে ছিলো আশ্চর্য মায়া। দানা খেতো খুব সুন্দর করে। ক্ষুধা পেলে করুণ স্বরে ডাকতো। আমাকে দেখলে খুশী হতো। মনে হয়, বুঝতে পারতো, এখন দানা পাবে। ওদের প্রতি আমার অন্তরে অন্যরকম এক মমতাবোধ ছিলো, হয়ত এটাকেই বলে মাতৃমমতা!

খাঁচার পাখী যেমন ছটফট করে, ওরা তেমন করতো না। ছোট্ট সুন্দর খাঁচাটিতে শান্তভাবে বসে থাকতো। মনেই হতো না, ওদের কোন দুঃখ আছে! মুক্ত আকাশে মুক্তভাবে উড়তে না পারার কারণে কোন কষ্ট আছে! এর কারণ হয়ত এই যে, পৃথিবীর বুকে চোখ মেলেই নিজেদের ওরা খাঁচার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলো, আর ভেবেছিলো, এটাই ওদের সম্পূর্ণ জগত! এটাই ওদের সুন্দর পৃথিবী! হয়ত খাঁচার ভিতর থেকে বাইরের পৃথিবীটাকে দেখতে পাওয়াই ছিলো ওদের জন্য অনেক বেশী আনন্দের, বিস্ময়ের!!

পাখী দু’টির প্রতি আমার মমতা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিলো, যেদিন তাদের জীবনে আমি দেখতে পেলাম নারীজীবনেরই আবছা একটা ছায়া। তখন মনে হলো, পাখী দু’টি যেন আমার দেশের, আমার সমাজের, আমারই মত হাজারো অবলা নারীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

ওদের খাঁচাটা সারা দিন বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখতাম। রাতে রেখে দিতাম আমার বিছানার পাশে। ওদের শেষ রাতের কলরবেই আমার ঘুম ভাঙ্গতো। ওদের তাসবীহ-যিকিরেই প্রতিদিন আমার ফজর হতো। আমারও হৃদয়ে একটি পবিত্র সকাল যাপনের ইচ্ছে জাগ্রত হতো।

শুরু থেকেই পাখীদু’টির বন্দীজীবন আমার জন্য ছিলো কষ্টের। তাই শেষ পর্যন্ত পাখীদু’টিকে মুক্ত করে দেয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম। পাখীদু’টিকে খাঁচা থেকে বের করলাম। পরম মমতায় কিছুক্ষণ তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে বিসমিল্লাহ বলে ছেড়ে দিলাম।

পাখীদু’টি আমাকে অবাক করে উড়ে গিয়ে খাঁচার মধ্যেই প্রবেশ করলো! যেন জানিয়ে দিলো, আমার সঙ্গবিহীন মুক্তি ও স্বাধীনতা ওদের চাই না!

পাখীদু’টির প্রতি আনন্দে কৃতজ্ঞতায় আমার চোখের পাতাদু’ট ভিজে উঠলো। সত্যি বলতে কী, এমন আনন্দপূর্ণ মুহূর্ত আমার জীবনে কমই এসেছে! কিন্তু হায়, মানুষ যদি জানতো, তার জীবনে একটু পরে কী আছে! হাসি-আনন্দ দু’টোই তাহলে সংযমের মধ্যে থাকতো।

তখন থেকে খাঁচার মুখটা খুলেই রাখতাম। যদি কখনো ওদের ছোট্ট প্রাণে মুক্তির আকুতি জাগে তখন যেন স্বচ্ছন্দে ওরা মুক্তির পথ বেছে নিতে পারে।

এবং একটি পাখী কয়েকদিন পর মুক্তির পথ বেছে নিলো। সেটি ছিলো পুরুষপাখী!

যদিও আমার কষ্ট হলো যে, পাখীটি একা কেন গেলো! সঙ্গিনীকে নিয়ে কেন গেলো না! পাখীজগতের পুরুষেরাও তাহলে ...!

তবু আমি খুশী হলাম পাখীটির মুক্তির আনন্দের কথা ভেবে। কিন্তু আমার দুঃখ শুরু হলো খাঁচার মধ্যে পাড়ে থাকা সঙ্গিহীন পাখীটির জন্য! ও যে আমারই মত ‘নারী’!

সঙ্গীর বিচ্ছেদবেদনায় পাখীটি দিন দিন কেমন যেন হয়ে গেলো! আগের মত ডাকে না। দানা-পানিও  ছোঁয় না। আমার আদর-সোহাগেও আগের মত সাড়া দেয় না।

একদিন সকালে দেখি, খাঁচার মধ্যে পাখীটি ...!!

নাহ, আর ভাবতে পারি না; ভাবতে চাইও না। যদি স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারতাম ওর মৃত্যুকরুণ দৃশ্যটি, হয়ত কিছুটা শান্তি পেতাম।

০০ তোমার লেখা যথেষ্ট সম্ভাবনা-পূর্ণ! নিয়মিত ‘যোগ, যোগাযোগ ও সংযোগ’ আশা করি!

 

 

গোলাব থেকে গন্ধরাজ

এবং

গন্ধরাজ থেকে গোলাব!

মারিয়ানা বিনতে আরশাদ, জেলা সদর, টাঙ্গাইল

স্বপ্নের বাস্তবায়ন এত সহজ নয়, জানা ছিলো, কিন্তু শুরুতেই আমার স্বপ্ন এভাবে হোঁচট খাবে, ভাবতেও পারিনি! আমার প্রিয় দু’টি গোলাবের চারা তুলে দিয়েছিলাম একজন দায়িত্বশীল মানুষের হাতে। মাদরাসার বাগানে লাগাবেন। তাতে গোলাবের অসংখ্য কলি আসবে এবং ফুল হয়ে ফোটবে! আর ...!

বাগান করার আকুতি তো আমার বহু দিনের। কিন্তু একটুকরো মাটি ছিলো না, তাই বাগান করা আর হয়ে উঠেনি। টবে অবশ্য চারা লালন করেছি, যখনই সুযোগ হয়েছে।

এখন আল্লাহ একটুকরো জমি দান করেছেন, তাতে মক্তব হয়েছে অজপাড়াগাঁয়ের বঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য।

তো চেয়েছিলাম, এখানেই হবে আমার স্বপ্নের বাগান! আর তার শুভসূচনা হবে গোলাবের চারাদু’টি দিয়ে। কিন্তু ওরা মেরেই ফেললো ‘সন্তানতুল্য’ আমার চারাদু’টি! আমি যেন এখনো শুনতে পাই গোলাবের চারাদু’টির মৃত্যু-আর্তনাদ! কোন পাষাণহৃদয় কি কিছুই শুনতে পায়নি?!

আমার মেয়ে দু’টি অনেক যত্ন

করে টবের মধ্যে চারাদু’টি রেখেছিলো, যেন ওদের দু’টি বোন! শুনে ওরাও খুব কষ্ট পেলো। আমি ওদের কোন সান্ত¡না দিতে পারিনি। ছোট মেয়েটি বললো, আম্মু যারা ফুলকে ভালোবাসতে পারে না, তারা কীভাবে...!?

বড় মেয়েটি নীরব ছিলো। কিছু বলতে গিয়েও যেন সংযম অবলম্বন করছে। আমি জানি, ওর ভিতরে কান্না কেমন উথলে ওঠছে! কারণ চারাদু’টির প্রতি ওরই যত্ন মমতা ছিলো বেশী।

হঠাৎ মনে পড়লো আমার প্রিয় মানুষটির প্রিয় গন্ধরাজের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা, যা পড়েছি এবং পড়ি পুষ্পের পাতায়। আমার যদি এত কষ্ট হয় তাহলে তাঁর কেমন কষ্ট হয়েছিলো তখন! মনটা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো। মেয়েদের বললাম। তারাও মনে হলো সান্ত¡না পেলো। ...

মারিয়ানা বিনতে আরশাদ, জেলা সদর, টাঙ্গাইল

০০ যেহেতু ‘মা’, আপনি করেই বলছি। প্রচুর সীমাবদ্ধতার ভিতরেও আপনার লেখা এত ভালো যে, আমার ছেলেদের লজ্জাই পাওয়া উচিত! আপনার কলমের জন্য, আর আপনার চাঁদের কণাদু’টির জন্য আমি দিল দিয়ে দু‘আ করছি।

 

মাদরাসাতুল মাদীনার

খিদমতি কাফেলা

তিনদিনের জন্য আজ মাদরাসাতুল মাদীনাহর খিদমতি কাফেলা রওয়ানা হয়েছে টেকনাফের উদ্দেশ্যে। বলা হয় ‘মুহাজিরীন শিবির’, আসলে তেরপাল ও পলিথিনের মাধ্যমে মাথা গুঁজার সামান্য একটু ঠাঁই, যা মানুষের থাকার উপযোগী কিছুতেই নয়। সেখানেই আশ্রয় নিয়েছে আরাকান থেকে প্রাণ হাতে পালিয়ে আসা লাখ লাখ মুহাজিরীন, যারা আমাদেরই মত কালিমায় বিশ্বাসী মুসলিম ভাই-বোন।

‘ত্রাণ’ বিতরণের নামে শুরুতে তো বেশ জাযবা ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিলো বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে। মসজিদ থেকেও ‘ত্রাণ’ নিয়ে গিয়েছে মানুষ দলে দলে। এখন সবকিছু যেন শুধু থেমেই যায়নি, থমকেও গিয়েছে।

মাদরাসাতুল মাদীনাহ শুরু থেকেই মুহাজিরীন ভাইদের খিদমতে নিয়োজিত রয়েছে। একের পর এক নিয়মিত কাফেলা যাচ্ছে সাধ্যমত ‘খিদমত’ নিয়ে, যাতে সাগরে বিন্দুর মত হলেও মুহাজিরীন ভাইদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।

এটা আমাদের একাদশতম কাফেলা। একদিকে কাফেলা রওয়ানা হয়, অন্যদিকে কয়েকজন তালিবে ইলম বিশেষ আমলে মশগুল হয়, যাতে কাফেলার উপর আল্লাহর গায়বি মদদ নাযিল হয়। কাফেলা ফিরে আসা পর্যন্ত যিকির তিলাওয়াতের আমল দিন-রাত পালক্রমে চলতে থাকে। একটি কাফেলা ফিরে আসার পর নতুন কাফেলার প্রস্তুতি শুরু হয়। তখন আদীব হুযুরের অস্থিরতা এমন হয় ...

সাফওয়ান বিন সিদ্দীর্কু-রহমান

মাদরাসাতুল মাদীনাহ, হযরতপুর

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা