রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭)

তোমাদের পাতা

জীবনের আলোকিত পরিবর্তন! জীবনের আলোকিত প্রত্যাবর্তন!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

আসসালামু আলাইকুম

আমি প্রফসের হযরত মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান সাহবে দামাত বারাকাতুহুম-এর সোহবতে আসার সূচনা-র্পব নয়িে এই লখোটি লখিছে।ি

এটি মাসকি আল-কাউসার পত্রকিায় ছাপানোর যাবতীয় প্রস্তুতি নওেয়া হয়ছেলি। সম্পাদক সাহবেগণ তা কয়কেটি র্পবে ছাপানোর জন্য স্থরি করছেলিনে।

শষে র্পযন্ত হযরত মাওলানা আব্দুল মালকে সাহবে দামাত বারাকাতুহুম আমাকে এটি পুষ্প পত্রকিায় পাঠাতে বললনে। তনিি জানালনে, এটি পুষ্পরে জন্যই বশেি উপযোগী.....

 

সুপ্রিয়! সালামে মাসনূন! আশা করি আল্লাহর রহমতে কুশলেই আছেন। আপনার পক্ষ হতে অপ্রত্যাশিত ই-মেইলটি পেয়ে তার ‘কথিত এবং অকথিত’ বক্তব্য আশা করি অনুধাবন করতে পেরেছি।

আমার জিজ্ঞাসার জবাবে আপনি ‘অবাধ সম্পাদনা’য় সম্মতি প্রদান করেছেন সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। জাযাকাল্লাহু খায়রান। এমন গরীব মানুষের গরীব ঘরের দিকে পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য আপনার মান্যবরকে ধন্যবাদ! সেই পথ অনুসরণ করে গরীবের দুয়ারে দস্তক দেয়ার জন্য আপনাকেও!

সম্ভবত কখনো আমাদের দেখা হয়নি। জীবনের প্রথম গায়েবানা সম্বোধন কেমন হয়, আমার অভিজ্ঞতা নেই। অসৌজন্য প্রকাশ পেলে মাফ...!

আপনার কাছে অনুলিপি আছে নিশ্চয়! সম্পাদনাটি মিলিয়ে দেখে মতামত জানালে কৃতজ্ঞ হবো এবং সে আলোকে পরবর্তী ...!

কামনা করি, পবিত্রতার পথে আপনার অভিযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে! গরীবের কলমের কালি এবং একটি দু’টি ফুলের পাপড়ি এ অভিযাত্রার পথে নিবেদিত হতে পেরেছে, এতেই আমরা খুশী! -সম্পাদক, পুষ্প

 

 

১। মহাসাগরের পানে সময়ের স্রােত বয়ে যায়! দিন রাতের আবর্তন চলতেই থাকে। দিনের পর রাত, রাতের পর দিন! সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে সকাল, এভাবেই চলছে জীবনের পরিক্রমা। বহুবার শুনে এসেছি এবং জীবনের বাস্তবতায়ও দেখি, সময় থেমে থাকে না এবং জীবনের চাকা কখনো ...!

সময়ের আবর্তনে প্রকৃতির মাঝে এবং বৃক্ষ ও তার পত্রপল্লবে বারবার ‎পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে- গ্রষ্মী, বর্ষা, শরত, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।

জীবন ও প্রকৃতি দু’টোই পবির্তনের ধারায় প্রবাহিত। পরিবর্তন ছাড়া প্রকৃতি এবং পরিবর্তন ছাড়া জীবন কল্পনাই করা যায় না।

পরিবর্তন আসে আমাদের শরীরে ও দেহাবয়বে। এ পরির্বতন ঘটে প্রকৃতির অমোঘ বিধানকে অনুসরণ করে। সুতরাং এ পরিবর্তন অনিবার্য। এ পরিবর্তন রোধ করার শক্তি-সাধ্য কারো নেই। আর সবার মত আমারো জীবনে এসেছে এবং আসছে এ পরিবর্তন।

একসময় শিশু ছিলাম, এখন আর শিশু নই। শৈশব থেকে তারুণ্যে, তারপর যৌবনের বসন্ত-অঙ্গনে ঘটেছে আমার অভিষেক। যৌবন আমাকে যেমন বরণ করেছে, তেমনি যৌবন এখন আমাকে বিদায় জানানোরও আয়োজন শুরু করেছে।

একসময় জীবনকে শুধু উপভোগ করেছি তারুণ্যের উচ্ছলতা ও যৌবনের মাদকতার সঙ্গে। জীবন থেকে দু’হাত ভরে শুধু গ্রহণ করেছি; জীবনকে কিছু দেয়ার দায় কখনো বোধ করিনি। প্রকৌশল পড়েছি, আর জীবনের দায় কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছি। কিন্তু এখানেও আসে পরিবর্তন! নিজের অজান্তেই একসময় জীবনের দায় চেপে বসে আমাদের উপর এবং আমরা জীবনের দায় বহন করতে শুরু করি, ইচ্ছায়, বা অনিচ্ছায়! প্রস্তুতি গ্রহণ করে, বা অপ্রস্তুত অবস্থায়। আমারও জীবনে এসেছে এ পরিবর্তন। আমারও জীবন থেকে নিজের অজান্তেই কখন যেন বিদায় নিয়েছে ভোগ-উপভোগের মধুর সময়। আমাকেও গ্রহণ করতে হয়েছে জীবনের কিছু দায়, কিছুদায়িত্ব। আমারও জীবনে এসেছে বন্ধন ও সংযম এবং পরিমিতি ও সীমাবদ্ধতা!

এটাও জীবনের অনিবার্য পরিবর্তন। চাইলেই মানুষ এড়িয়ে যেতে পারে না এ পরিবর্তন।

পড়েছি, বা পড়িনি; জীবনের নিয়মেই একসময় পড়া শেষ হয়েছে। তারুণ্যের উচ্ছলতা ও যৌবনের চঞ্চলতা জীবন থেকে তখনো বিদায় না নিলেও জীবনের দাবী রক্ষা করে চাকুরি জীবনে প্রবেশ করেছি। নেভী থেকে বুয়েটে এসেছি চার বছর হয়ে গেলো।

তো এই যে দেহের বৃত্তে এবং জীবনের পরিম-লে নিরন্তর বিপুল পরিবর্তন, এগুলো আসলে আমার সত্তার বহিরাঙ্গনের পরিবর্তন! এই পরিবর্তন জীবনের লক্ষ্যকে এবং পৃথিবীতে মানুষের জন্মগ্রহণের উদ্দেশ্যকে তেমন একটা স্পর্শ করে না। এই সব পরিবর্তনের ভিতর দিয়েই জীবন-নদীর স্রােত মহাসাগরের অভিমুখে বয়ে যেতেই থাকে। কিন্তু জন্মের মাধ্যমে আমি যে মৃত্যুর দায় গ্রহণ করেছি! সারা জীবন আমাকে যে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং যখন সময় হবে-এক মুহূর্ত আগেও না, একমুহূর্ত পরেও না- যখন সময় হবে মৃত্যুকে আমার আলিঙ্গন করতেই হবে। কুল্লু নাফসিন যাাইকাতুল মাঊত- প্রতিটি প্রাণীকেই জন্মের দায়রূপে মৃত্যুকে আঙ্গিন করতেই হবে। যদি যথাযোগ্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকো তবু; যদি গাফেল, উদাসীন ও অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকো তবু!

যারা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে তাদের মৃত্যু হয় একরকম! সেই মৃত্যুকে বলা হয় সুন্দর মৃত্যু। অনেকবার শুনেছি সেই সুন্দর মৃত্যুর কথা। ফিরেশতা আসেন জান্নাতের লেবাস নিয়ে, জান্নাতের আতর-সুবাস নিয়ে এবং ...! সেই মৃত্যুর পর মানুষ যখন কবরের আশ্রয় গ্রহণ করে, কবরের মাটি তাকে স্বাগত জানায় এবং বলে, ঘুমিয়ে থাকো তুমি নতুন দুলহা/ দুলহানের মত। কেউ তোমাকে বিরক্ত করবে না...!

যারা মৃত্যু সম্পর্কে থাকে গাফেল উদাসীন ও অপ্রস্তুত তারাও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়। তাদের মৃত্যু হয় আরেক রকম। সে মৃত্যুকে বলা হয় অসুন্দর মৃত্যু! সে মৃত্যু বড় কঠিন ও বেদনা-দায়ক! বড় আযাবপূর্ণ ও যন্ত্রণাদায়ক। মৃত্যুর ফিরেশতা তার কাছেও আসেন, তবে জাহান্নামের আগুনে লেবাস ও দুর্গন্ধ নিয়ে এবং ...! তাকে যখন কবরের হাওয়ালা করা হয়, কবরের মাটি তখন তাকে বলে...!!

তো মৃত্যুর জন্য নিরন্তর প্রস্তুতি- এর অর্থ কী? এর মর্ম ও তাৎপর্য কী? এটা উপলব্ধি করার জন্য এবং মৃত্যুর প্রস্তুতির পথে জীবনকে পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজন মানুষের ভিতরের সত্তায় আমূল কিছু পরিবর্তনের! সেই পরিবর্তনটা কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে আমাদের মধ্যে নিজে নিজেই এসে যায় না। সে পরিবর্তন আমাদের নিজেদেরই অর্জন করতে হয় সরা জীবনের নিরন্তর চেষ্টা সাধনার মাধ্যমে! মেহনত-মোজাহাদার মাধ্যমে। হৃদয় ও আত্মার সংশোধন এবং কলব ও রূহ-এর ইছলাহের মাধ্যমে।

এ পরিবর্তন যাদের জীবনে আসে, মানুষের সমাজে এবং জীবনের মঞ্চে তারা বরিত হন সৎ ও পবিত্র মানুষরূপে! আর যারা এ পরিবর্তন থেকে বঞ্চিত তারা হয় মন্দ ও অপবিত্র মানুষ! গান্দা ও না-পাক ইনসান।

মানুষের জীবনের অন্তর্সত্তায় পরিবর্তনের কিছু উদাহরণ আমার চোখের সামনেই ছিলো। মানুষটা একরকম ছিলো। জীবন উচ্ছল গতিতেই বয়ে চলেছিলো, হঠাৎ দেখি, কী এক যাদুশক্তির বলে মানুষটা যেন অন্য রকম হয়েগেলো! আগে ছিলো মিথ্যাচার ও পাপাচারের সঙ্গে তার বসবাস! এখন তিনি সত্যের অনুসারী ও পুণ্যের সন্ধানী! আগে ছিলো সম্পূর্ণ অসংযমের এক জীবন। যখন যা ইচ্ছে তাই করেছেন। কখনো কোন বন্ধন বা শাসন অনুভব করেননি। হঠাৎ দেখি, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করছেন সতর্কতার সঙ্গে, প্রতিটি পদক্ষেপের পরিণাম ও পরিণতি চিন্তা করে। হঠাৎ শুনি তার মুখে, এটা বৈধ, ওটা অবৈধ! এটা করতে হবে, সেটা করা যাবে না।

মানুষের জীবনে পরিবর্তনের এই যে নতুন রূপ, এর সঙ্গে পরিচিত হয়ে আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতাও অর্জিত হলো! সংযমহীন জীবনে না আছে শান্তি ও প্রশান্তি, না আছে তৃপ্তি ও পরিতৃপ্তি, না আছে স্বস্তি ও আশ্বস্তি- এককথায় যাকে বলে ইতমিনানে কলব! পক্ষান্তরে পরিবর্তনসমৃদ্ধ যে জীবন! শাসন ও বিধিবন্ধনের যে সংযমী জীবন, সেই জীবনের অনুসারী মানুষ-গুলোকে দেখেছি, আর মনে হয়েছে, কত শান্তি ও প্রশান্তি তাদের জীবনে! কত তৃপ্তি ও পরিতৃপ্তি এমনকি মরুভূমির মত রৌদ্রদগ্ধ জীবনের পথ অতিক্রম-কালেও। এটাকে তারা বলেন ইতমিনানে কালব।

তো দূর থেকে কারো কারো জীবনের অন্তর্সত্তায় এই সুন্দর পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করে নিজেরও ইচ্ছে হয়েছে, আমারও জীবনে, জীবনের অন্তর্সত্তায় যদি এমন পরিবর্তন আসতো, কত না ভালো হতো!

কীভাবে আসে মানুষের জীবনের অন্তর্জগতে এরূপ বিপ্লবী পরিবর্তন? বারবার শুনেছি, তবে খুব একটা উপলব্ধি করার সুযোগ হয়নি; শুনেছি এ পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন কোন না কোন আলোকিত মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ এবং নিষ্কম্প আলোকবর্তিকারূপে জীবনের চলার পথে তাকে অনুসরণ! এ আয়াতের উদ্ধৃতিও শুনেছি-

كونوا مع الصادقيـن

তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। তাদের সঙ্গ গ্রহণ করো, যাতে তাদের সত্যনিষ্ঠা তোমাদেরও মধ্যে সঞ্চারিত হয়! যাতে তাদের আলোকিত অন্তরের প্রদীপ থেকে তোমাদের অন্ধকার হৃদয়ের প্রদীপ প্রজ্বলিত হতে পারে। ...

কোথায় পাবো এমন আলোকিত মানুষ! কোথায় তিনি যার কাছে রয়েছে হৃদয় ও আত্মাকে সংশোধন করার এবং আলোকিত করার পরশপথর?! বারবার শুনেছি, আল্লাহ যখন মুমিনকে ভালোবাসেন তখন তার জীবনে সুন্দর পরিবর্তনের ব্যবস্থা গায়ব থেকেই তিনি করে দেন। তিনিই বান্দাকে নিয়ে যান একজন আলোকিত মানুষের সান্নিধ্যে। এরপর সেই আলোক স্পর্শে তার হৃদয় ও আত্মার জগত থেকে ধীরে ধীরে দূর হতে থাকে সর্বপ্রকার অন্ধকার! এবং হতে থাকে আলো ও নূরের উদ্ভাস! এ আয়াতও শুনেছি-

আল্লাহ মুমিনীনের বন্ধু! তিনি তাদের বের করে আনেন যাবতীয় অন্ধকার থেকে ঈমানের আলোর দিকে! ...

আরো শুনেছি, এই পরিবর্তনের শুভ্রতা গ্রহণের জন্য এবং ধারণের জন্য সর্বপ্রথম যে জিনিসটির প্রয়োজন তা হলো মানুষের নিজের ভিতর থেকে উঠে আসা আকুতি! নিজেই তোমাকে উদ্যোগী হতে হবে এবং সচেষ্ট হতে হবে ভিতরের সেই পরিবর্তনের জন্য, যা মানুষকে সামাজিক প্রাণী থেকে সত্যিকারের মানুষে এবং নেক ইনসানে রূপান্তরিত করে। তো আত্মপ্রচেষ্টাই হলো শুভ পরিবর্তনের প্রথম শর্ত। তুমি যখন পরিবর্তনের আকুতি নিয়ে, সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে; চেষ্টা মেহনত শুরু করবে তখন গায়বের আড়াল থেকে, পর্দার আড়াল থেকে স্বয়ং আল্লাহ তোমার জীবনে পরিবর্তনের যাবতীয় আয়োজন নিজেই সম্পন্ন করে দেবেন। এ প্রসঙ্গে বারবার শুনেছি এ আয়াত-

আল্লাহ কখনো কোন কাউমের অবস্থার পরিবর্তন ঘটান না, যতক্ষণ না নিজেরাই তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনে উদ্যোগী হয়। ...

আরো শুনেছি (মাযমূন)- ‘যারা আমাকে পাওয়ার আকুতি নিয়ে নিরন্তর মেহনত মোজাহাদা করবে, অবশ্যই আমি তাদের দেখাবো আমাকে পাওয়ার, আমার পর্যন্ত পৌঁঁছার বিভিন্ন পথ। আমার পর্যন্ত তারা পৌঁছেই যাবে এ পথে, কিংবা ওপথে, সত্যের কোন না কোন পথ ধরে, আলোকিত কারো না কারো হাত ধরে।

আল্লাহর শোকর আমার জীবনের অন্তর্জগতে প্রথম যে পরিবর্তন আমি অনুভব করি তা হলো সুন্দর পরিবর্তনের জন্য একটি কোমল আকুতি! একটি চিনচিনে ব্যথা ও তাড়না অন্ধকার থেকে আলোর পথে অভিযাত্রা শুরু করার জন্য।

দ্বিতীয় পরিবর্তনটি হলো আমার ভিতরে কোন আলোকিত মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণের একটি সু¯িœগ্ধ আকুতি। বলা যায়, আমার রূহ ও কলব, আমার হৃদয় ও আত্মা ধীরে ধীরে পিপাসার্ত হতে শুরু করলো কোন আলোকিত মানুষের সান্নিধ্য লাভের জন্য! নিজেকে-জীবনের সব আবর্জনা, কলঙ্ককালিমা ও অন্ধকারসহ নিজেকে তার হাতে অর্পণ ও সমর্পণ করার জন্য!! আমার সর্বসত্তায় তখন একটাই ছিলো আকুতি! মৃত্যুর পর যে অনন্ত জীবন, সেই জীবনে মুক্তি সফলতা এবং নাজাত ও কামিয়াবি হাছিলের জন্য জীবনের সব আঁধার দূর করতে হবে এবং সত্যের আলোকরশ্মি গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কোথায় তিনি! কোন অন্তর্লোকে তার অধিবাস!!

তারপর জীবনের কোন্ এক শুভ লগ্নে আকাশ থেকে যেন কল্যাণের শিশির বর্ষিত হলো আমার উপর! সত্যি সত্যি একদিন একজন আলোকিত মানুষের সন্ধান আমি পেলাম। তাঁর সান্নিধ্য ও সংস্পর্শ লাভ করে আমি ধন্য হলাম। জীবনের লাগাম ও বন্ধন তাঁর হাতে সোপর্দ করে আমি দায়মুক্ত হলাম। একটা দায় শুধু থাকলো, যে দায় একান্তই অপরিহার্য কলব ও রূহের ইছলাহ এবং হৃদয় ও আত্মার সংশোধন লাভের জন্য। তিনি পথ দেখাবেন, আমি শুধু পথ চলবো! তিনি আদেশ করবেন, আমি শুধু মান্য করবো।

আত্মসংশোধনের মাধ্যমে জীবনের অন্তর্জগতে এই যে পরিবর্তন, শুনেছি, এটাকে বলা হয় প্রত্যাবর্তন। প্রথম প্রথম কথাটা কিছুই বুঝে আসতো না! পরিবর্তনের অর্থ তো হলো আগের কিছু ত্যাগ করে নতুন কিছু গ্রহণ। পরিবর্তন অর্থ কীভাবে হতে পারে প্রত্যাবর্তন?! মানে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া?!

আলোকিত জীবনের আলোকস্পর্শে একসময় জীবনের এই গূঢ় রহস্যও আমার সামনে উদ্ভাসিত হতে লাগলো। ইসলামই একমাত্র ধর্ম, একমাত্র দ্বীন এবং একমাত্র শরী‘আত যে মানবসৃষ্টি ও মানবজন্ম সম্পর্কে একটি নিষ্পাপ ও পবিত্র ধারণা দান করেছে। আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- প্রতিটি শিশু ফিতরতের উপর জন্মগ্রহণ করে। তার মা-বাবাই তাকে (ভুল পরিবেশ, ভুল শিক্ষা ও ভুল দীক্ষার মাধ্যমে) ইহুদি বানায়, নাছারা বানায় এবং মাজূসী বানায়। শিশুটি জীবনের পথে যত অগ্রসর হতে থাকে, ততই সে জন্মসময়ের ফিতরত ও স্বভাব থেকে দূরে সরে পড়ে। যে ঘরে বিন্দু পরিমাণ হলেও ঈমান আছে সে ঘরের শিশু পরবর্তী জীবনে হয়ত নামের মুসলমান থেকে যায়, নামে মাত্র ঈমান থেকে যায়, অন্যথায় বিশ্বাসে, সংস্কৃতিতে, রীতি-নীতি ও আচার অনুষ্ঠানে তার ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং ঈমানি সত্তার কোন পরিচয়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ এই শিশুটিই আমার নবীর বয়ান মতে ফিতরতের উপর নিষ্পাপ ও পবিত্র স্বভাব নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে! কত যালিম তাহলে মা-বাবা, পরিবার, সমাজ!

পক্ষান্তরে যে ঘরে ঈমান নেই সে ঘরের শিশু তো নামের ইসলাম এবং নামের ঈমানটুকু থেকেও বঞ্চিত হয়ে যায়। সে হয়ে যায় অমুসলিম পরিবারের অমুসলিম শিশু! জীবনের পথে সে যত অগ্রসর হতে থাকে ফিতরত থেকে তত দূরে সরতে থাকে! রূহের জগতে, রব্ব ও প্রতিপালকের সঙ্গে তার যে আত্মিকবন্ধন ছিলো, যে বন্ধন স্বীকার করে সে পৃথিবীতে এসেছে তা ভুলতে ভুলতে একেবারে বিস্মৃত হয়ে যায়।তো অতীতের এই মুসলিম শিশুটি জীবনের পথে ভুল পদচিহ্ন অনুসরণ করে যখন অনেক দূর চলে যায় তখন আল্লাহ তা‘আলা আপন হিকমত ও প্রজ্ঞাগুণে যার জন্য কল্যাণের ফায়ছালা করেন, তার জীবনে পরিবর্তনের আবহ ও পরিবেশ তৈরী করে দেন। তো এই পরিবর্তন প্রকৃতপক্ষে আর কিছু নয়, জন্মকালের সেই ফিতরত, সেই নিষ্পাপ ও পবিত্র স্বভাবের দিকে প্রত্যাবর্তন! পরিবর্তন ও প্রত্যাবর্তন সে জন্যই আমার মনে হয় যুগলশব্দ! প্রকৃত পরিবর্তন, যা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে হয়, যা রকমারি মিথ্যাচার ও পাপাচার থেকে সত্য ও পুণ্যের দিকে হয় সেটা আসলে প্রত্যাবর্তনের শুভ্র সুন্দর এক রূপ।

তো জীবনের চলার পথে হঠাৎ একদিন সেই আলোকিত মানুষটির দেখা আমি পেলাম এবং বুঝতে পারলাম, কাকে বলে মানুষ! কেমন হয়ে থাকেন সেই মানুষ যিনি মাটির হয়েও নূরের!

***

এখানে আমি অন্ধকার থেকে আলোর পথে আমার যে যাত্রা, আলোকিত মানুষের সান্নিধ্যে আমার যে পথচলা সে সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। হয়ত তাতে আল্লাহর কোন না কোন বান্দা জীবনের পরিবর্তনের পথে কিছু না কিছু উপকৃত হবে। তাওফীক তো আল্লাহর হাতে।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা