জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

তোমাদের পাতা

দরদী মালীর কথা শোনো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

দরদী মালীর কথা শোনো

তালিবানে ইলমের দস্তরখানের

যাহেরি ও বাতেনি সৌন্দর্য

এশার পর ‘আশা’-এর পূর্বে দস্তরখান সম্পর্কে আদীব হুযুরের বয়ান। ১৫/৫/৪০ হি. রোয মঙ্গলবার

বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহীম

হামদ ও ছানা এবং দুরূদ ও সালামের পর।

আমার পেয়ারে তালিবানে ইলম। আল্লাহ্ চাহে তো আগামী সকালে আশরাফাবাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। আজকের পরে হয়ত অনেক দিন আর তোমাদের সঙ্গে বসা হবে না। আবার আল্লাহ্ কখন সুযোগ দেন। বেশ কিছু কথা কয়েক দিন ধরে চিন্তার মধ্যে তোলপাড় করছে। বড় ব্যাকুলতা বোধ করছি কথাগুলো তোমাদের বলার জন্য। দিলের মধ্যে আফকারের, চিন্তা পেরেশানির এমনই ‘হুজূম’ যে, মাঝে মধ্যে অস্থিরতা চরমে পৌঁছে যায়।

বড়দের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে ‘সূউল আদব’-এর আশঙ্কা হয়, কিন্তু যামানা হিসাবে নিজের মধ্যে ঐ রকমের হালাতেরই যেন ছায়াপাত দেখতে পাই। একবার গভীর রাতে হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ, অস্থির অবস্থায় পায়চারি করছেন। তাঁর স্ত্রী হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে ঐ অবস্থা দেখে জানতে চাইলেন, কী হয়েছে আপনার? কিসের পেরেশানি?

উত্তরে যে জুমলাটা তিনি বলেছিলেন সেটা সম্ভবত ‘দ্বীনী দাওয়াত’ কিতাবের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেছিলেন,  ‘আমার পেরেশানি যদি তুমি জানতে পারো, আর বুঝতে পারো তাহলে এ ঘরে নির্ঘুম মানুষ দু’জন হয়ে যাবে।’

মুসলিম জাহানের যে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা, মুসলিম উম্মাহর যে এতীমী হালাত সে সম্পর্কে তো চিন্তা করারও যোগ্যতা আমার নেই, তবু মাঝে মধ্যে খুব অস্থিরতায় ভোগি। দেশ ও সমাজের পরিবেশ পরিস্থিতিও অন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে আমাদের গাফলত ও নির্লিপ্ততা যখন দেখি, সত্যি বুঝে উঠতে পারি না, কী হতে পারে আমাদের ভবিষ্যত?!

তবে ক্ষুদ্র মানুষ হিসাবে আমার আসল পেরেশানি তোমাদের নিয়ে, আমার তালিবানে ইলমকে নিয়ে। পেরেশানি এই যে, দুনিয়াতে এসেছি অল্প ক’দিনের জন্য। কিছু দায় ও দায়িত্ব তো আল্লাহ্র পক্ষ হতে অর্পিত হয়েছে আমাদের উপর। ঐ দায় ও দায়িত্বগুলো অন্তত যে অবস্থায় অর্পিত হয়েছে তার চেয়ে আরেকটু ভালো অবস্থায় যেন পরবর্তীদের জন্য রেখে যেতে পারি। আমরা যে তালিবানে ইলম পেয়েছি, আমাদের পরবর্তীরা যেন তার চেয়ে ভালো তালিবানে ইলম পায়। আমাদের তালিবানে ইলম যেমন শিক্ষক পেয়েছে, পরবর্তী তালিবানে ইলম যেন আরো ভালো শিক্ষক পায়। এধরনের আরো অনেক বিষয় আছে।

জাতির সঙ্গে, দেশ ও সমাজের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বর্তমান যে অবস্থা, আস্থা ও বিশ^াসের সম্পর্ক, ভক্তি ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক, দায় ও দায়িত্বের সম্পর্ক; এগুলো আমরা যে অবস্থায় পেয়েছি, দুনিয়া থেকে যাওয়ার সময় পরবর্তীদের জন্য যেন আরো ভালো অবস্থা রেখে যেতে পারি। কিন্তু বাস্তবতা কী? প্রতিটি ক্ষেত্রে দিন দিন তো অবস্থার অবনতিই ঘটছে। এজন্য দিলের মধ্যে একটা পেরেশানি, একটা অস্থিরতা যেন কুরে কুরে খায়।

আরেকটা বিষয় হলো, এই যে বিশাল দায়-দায়িত্ব, বিপুল কর্ম ও কর্মযজ্ঞ এগুলো আঞ্জাম দেয়ার জন্য তো যাহেরি আসবাবের দরকার, যা ন্যূনতম পর্যায়েও আমাদের হাতে নেই। কমযোর ইনসান হিসাবে, মানবীয় দুর্বলতা হিসাবে এটাও মাঝে মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

বাকি নিজের স্থূল চোখেও তো দেখতে পাই, গায়ব থেকে আল্লাহ তা‘আলা কত সাহায্য করছেন! আমাদের হাজারো অযোগ্যতা সত্ত্বেও কত সাহায্য করছেন, অথচ আমাদের মধ্যে শোকরের কোন জাযবা নেই। আল্লাহ্ যে বলেছেন,“যদি শোকর করো, অবশ্যই বাড়িয়ে দেবো’, এর উপর কোন আমল নেই, এটাও অন্তরে বড় অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

তো যাই হোক, অন্তরে এত কথা, এত ব্যথা, এত জ¦ালা, এত দহন-যন্ত্রণা যে, ভেবে পাই না, কোন্টা রেখে কোন্টা বলি! কোন্টা আগে বলা দরকার, কোন্টা বেশী দরকার!

আজ শুধু দস্তরখান সম্পর্কেই কিছু কথা বলি। আল্লাহ্ যেন তাওফীক দান করেন।

দস্তরখানের কথা কেন বলতে হবে? কারণ মানুষের জীবনে আল্লাহ্ তা‘আলা দু’টো বুনিয়াদি জরূরত ও মৌলিক প্রয়োজন রেখেছেন, যার উপর নির্ভর করে ইনসানের রূহানি ও জিসমানি উজূদ, মানুষের দৈহিক ও আত্মিক অস্তিত্ব। একটা হলো ইবাদত! জ¦ী হাঁ, ইবাদত আমাদেরই প্রয়োজন; আমাদের অস্তিত্বের প্রয়োজন, আমাদের আত্মার প্রয়োজন!!

আরেকটা হলো গিযা ও খাদ্যের প্রয়োজন। ইবাতদের প্রয়োজন এবং খাদ্যের প্রয়োজন, দু’টোর প্রকৃতি যদিও আলাদা তবে কোনটারই প্রয়োজন কম না। একথার পক্ষে কোরআনি দলিল রয়েছে আমার কাছে।

ইবাদতের যে প্রয়োজন, যদি সুযোগ হয় পরে সে সম্পর্কে বলবো। এখন শুধু গিযা ও খাদ্যের প্রয়োজনের কথা বলি।

গিযা মানে হলো সঠিক গিযা। একটা হলো নফসে গিযা, যেটা আমাদের পশুসত্তার চাহিদা। আরেকটা হলো হালাল গিযা, হালাল তরীকায় হাছিল করা এবং হালাল তরীকায় গ্রহণ করা, যেটা আমাদের মানবসত্তার প্রয়োজন।

দেখো, দুনিয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা পশু ও প্রাণীর জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা  রেখেছেন, কিন্তু তাতে কোন বৈচিত্র্য রাখেননি। কারণ এ খাদ্যের উদ্দেশ্য শুধু ক্ষুধা নিবারণ এবং প্রাণ ধারণ।

মানুষের জন্যও আল্লাহ তা‘আলা গিযা ও খাদ্যের নিযাম রেখেছেন, তবে তাতে বিরাট বৈচিত্র্যরেখেছেন এবং রেখেছেন অপার সৌন্দর্য। মানুষের গিযা ও খাদ্যব্যবস্থার যে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য শুধু এ সম্পর্কে আলোচনা করতে হলেও অনেক সময় ও পরিসর দরকার।

গিযা ও খাদ্যের এ বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যই প্রমাণ করে যে, এটা শুধু ক্ষুধা নিবারণ ও প্রাণধারণের প্রয়োজনে নয়। এর পিছনে অবশ্যই রয়েছে আরো বড় কোন কারণ, ঊর্ধ্বজাগতিক কোন রহস্য। সেটা অবশ্যই আমাদের জানা দরকার। কারণ মানবজীবনে এবং ইনসানি যিন্দেগিতে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গিযা ও খাদ্য যদি হালাল উপায়ে এবং যথাযথ-ভাবে গ্রহণ করা যায় তাহলে ইবাদত দ্বারা বান্দার যেমন তারাক্কী হয়, গিযা ও খাদ্য দ্বারাও একই রকম তারাক্কী হওয়ার কথা।

দেখো, আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন-

وَمَـا خَـلَقْــتُ الـجِـنَّ وَ الإنْـسَ إلَّا لِـيَـعْـبُـدُونِ

জিন্ ও ইনসানকে আমি শুধু আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।

ইবাদতের কথা বলেই আল্লাহ্ তা‘আলা রিযিকের বিষয়টি নিয়ে এসেছেন-

مَـا أُرِيـدُ مِـنْـهُـم مِّـن رِّزْقٍ

তাদের কাছে আমি কোন রিযিক চাই না।

কী প্রয়োজন ছিলো এটা বলার? বান্দার কাছে আল্লাহ্র যে ‘চাহিদা’ সেটা তো তিনি বলেই দিয়েছেন আয়াতের প্রথম পর্বে।

চাহিদা শব্দটি নিয়ে অবশ্য কথা আছে। ইবাদত আসলে বান্দার নিজের চাহিদা, নিজের আবদিয়াতের প্রয়োজন। এ প্রয়োজন তার ‘খিলকতের’ মধ্যেই রেখে দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ্ তো ইন্সানের খালিক, মানুষের ¯্রষ্টা, আল্লাহ্ তো জানেন, মানুষের জীবনের সবচে’ সংবেদনশীল বিষয় হলো রিযিক। নাদান ইনসান যদি ভেবে বসে,  ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে রিযিকেরও মুতালাবা রয়েছে বান্দার কাছে তার খালিকের, তাহলে তো সে অযথা পেরেশানির শিকার হবে। বান্দাকে তিনি নিশ্চিন্ত করে দিয়ে বলেছেন-

مَـا أُرِيـدُ مِـنْـهُـم مِّـن رِّزْقٍ

কিন্তু কথা হলো, এতটুকুই তো যথেষ্ট ছিলো। তারপর আরো স্থূল রূপটাও তুলে ধরেছেন-

وَمَـا أُرِيـدُ أَن يـُّطْـعِـمُـونِ

ইয়া রাব্ব! আল্লাহ্ই ভালো জানেন; হয়ত এভাবে বলা হয়েছে মানুষের জীবনে রিযিক ও গিযা-এর আযমত ও আহাম্মিয়াত (মহত্ত্ব ও গুরুত্ব) বোঝানোর জন্য। প্রথমে মৌলিক রূপটা এনেছেন, তারপর স্থূল রূপটাও উল্লেখ করেছেন-

مَـا أُرِيـدُ مِـنْـهُـم مِّـن رِّزْقِ وَّمَـا أُرِيـدُ أَن يـُّطْـعِـمُـونِ

আল্লাহ্র কালামের কোন অংশ যদি বেলা সবব এবং অকারণ না হয়; প্রতিটি অংশেরই যদি কোন না কোন হিকমত থাকে তাহলে তো

وَمَـا خَـلَقْــتُ الـجِـنَّ وَ الإنْـسَ إلَّا لِـيَـعْـبُـدُونِ

এর পর আমাদের চিন্তা করতে হবে

যে-

مَـا أُرِيـدُ مِـنْـهُـم مِّـن رِّزْقٍ

এর অবতারণা কেন? কী এর রহস্য? তারপর আবার আরো স্থূল-ভাবে দ্বিতীয় অংশটি কেন? কেন বলা হচ্ছে-

وَمَـا أُرِيـدُ أَن يـُّطْـعِـمُـونِ

আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে, সুবহানাল্লাহ্!

‘রিযিক থেকে দায়মুক্তির’ বিষয় তো হলো, কিন্তু বান্দার নিজের যে রিযিকের প্রয়োজন! তার উপায় কী? দেখো, দয়াময়ের কত দয়া!

إنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ

আল্লাহ্-ই রায্যাক, তিনিই একমাত্র রিযিকদাতা। আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন রিযিকদাতা নেই।

বান্দার দিলে কি মহান খালিকের রায্যাকিয়াতের শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে চিন্তার কোন দুর্বলতা আছে? তাহলে শোনো-

إنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْـمَـتِـيـن

জিন-ইনসানের (ও কুলমাখলূকের) রিযিকের ব্যবস্থা করা তাঁর জন্য কঠিন কিছু নয়। তিনি তো সুসংহত শক্তির অধিকারী!

তো দেখো ভাই! ইবাদত সম্পর্কে শুধু একটি বাক্য, সঙ্গে সঙ্গে রিযিকের প্রসঙ্গ। তাও আবার দীর্ঘ বক্তব্য!

এটা এজন্যই যে রিযিক ও গিযার প্রয়োজন মানুষের জীবনে ইবাদতের প্রয়োজনের চেয়ে কোন অংশে কম না। বরং ইবাদত হলো মানুষের সৃষ্টিগত চাহিদা, আর রিযিক হলো তার সৃষ্টিগত দুর্বলতা। চাহিদা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, আর দুর্বলতা করে উৎকণ্ঠিত।

এখন কথা হলো, রিযিক, গিযা ও খাদ্যের ব্যবস্থায় এই যে বিপুল বৈচিত্র্য, এই যে অপার সৌন্দর্য, কী এর উদ্দেশ্য? কী এর রহস্য?

শুধু কি ক্ষুধা নিবারণ? শুধু কি প্রাণ ধারণ? না, কিছুতেই না।

ইবাদত দ্বারা বান্দার রূহের গিযা হাছিল হয়, আর এই গিযা দ্বারা, এই খাদ্যসম্ভার দ্বারা, রূহটা যে জাসাদের মধ্যে রয়েছে সেই জাসাদের মধ্যে ছালাহিয়াত ও যোগ্যতা অর্জিত হয়।

দেখো, শক্তি বা পুষ্টি বলিনি, সালাহিয়াত বা যোগ্যতা বলেছি। মানে হলো, রূহকে ধারণ করার জন্য শারীরিক শক্তি ও পুষ্টির কোন ভূমিকা নেই। এর জন্য প্রয়োজন অন্যরকম একটা সালাহিয়াত ও যোগ্যতার।

কাফির-মুশরিকের জাসাদ ও শরীর যত শক্তি ও পুষ্টির অধিকারী হোক, তা কিন্তু রূহকে ধারণ করার যোগ্যতা রাখে না। তাই তাদের রূহ সবসময় কষ্টের মধ্যে থাকে। বুঝতে পারছো আমার কথাটা?

-জি¦ আল-হামদু লিল্লাহ!

এমনকি মুসলমানদের মধ্যেও যাদের গিযা হালাল নয়, সুন্নত মুতাবেক নয় তাদের জাসাদও কিন্তু ঐভাবে তৈয়ার হয় না। তাতে রূহকে ধারণ করার সালাহিয়াত ও যোগ্যতা ঐভাবে পয়দা হয় না। তাই তাদের রূহও একরকম কষ্টের মধ্যে থাকে।

ইনসানের জাসাদ, এর মূল মাকছাদ হলো রূহকে ধারণ করা। তো ইবাদত হলো রূহের প্রয়োজন, ‘মিন হাইছু’, এই দিকথেকে যে, রূহকে ঊর্ধ্বজগতের সঙ্গে, আল্লাহ্র সঙ্গে, খালিকের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধন দান করে; ইবাদত রূহের ঊর্ধ্বজাগতিক চাহিদা পূর্ণ করে।

পক্ষান্তরে এই যে গিযা ও খাদ্যসম্ভার, এটা হলো জাসাদের প্রয়োজন। ‘মিন হাইছু’, এদিক থেকে যে, এর দ্বারা জাসাদ রূহকে ধারণ করার সালাহিয়াত ও যোগ্যতা অর্জন করবে।

শুধু ক্ষুধা নিবারণের জন্য, বা স্বাদ আস্বাদনের জন্য যে গিযা ও খাদ্য গ্রহণ করা হয় তা দ্বারা কিন্তু জাসাদ ঐ সালাহিয়াত অর্জন করতে পারে না। এখানেই পার্থক্য কাফির-মুশরিকের খানা এবং মুমিনের গিযা ও দস্তরখানের আমল, এ দু’য়ের মধ্যে। দস্তরখানের আমল থেকে জাসাদ রূহকে ধারণ করার সালাহিয়াত হাছিল করে। সেই সঙ্গে ক্ষুধানিবারণও হয়, স্বাদ আস্বাদনও হয় এবং শারীরিক শক্তি ও পুষ্টিও অর্জিত হয়।

সুতরাং রিযিক বলো, গিযা বলো, বা খাদ্যগ্রহণ বলো, এটা খুবই হাস্সাস ও সংবেদনশীল বিষয়। আমাকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করতে হবে যে, কী গিযা আমি গ্রহণ করছি এবং কীভাবে গ্রহণ করছি? দু’টোই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

প্রথম কথা হলো, আমার গিযা হালাল হতে হবে। এই মুখ দিয়ে কখনো কোন হারাম গিযা যেন ভিতরে না যায়। তোমাদের কি ঐ ঘটনা মনে আছে? হযরত আলী রা. হযরত হাসান বা হোসায়ন রা.-এর গলার ভিতরে আঙুল ঢুকিয়ে খেজুর-সাদাকার খেজুর- বের করে এনেছিলেন। বাপ, বেটার প্রতি এত কঠিন কেন হলেন? মাসুম বাচ্চা, নছীহত করে দিলেই তো হতো যে, বাবা, এটা সামনে আর করো না। এটা তোমার জন্য হালাল নয়। কিন্তু কথা হলো যার যেমন বুঝ, যেমন অনুভব ও উপলব্ধি! কিতাবের বর্ণনায় এসেছে, হযরত আলী রা. কেমন অস্থির পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন যে, সন্তানের পেটে সাদাকার খেজুর (হারাম গিযা) চলে যায় কি না। অথচ এটা তো ঠক প্রত্যক্ষ হারাম পর্যায়ের বিষয় ছিলো না, ছিলো মুশতাবিহ (সন্দেহযুক্ত) পর্যায়ের। অথচ আজ মুসলমান অবলীলায় হারাম মাল খেয়ে চলেছে। হারাম গিযা দ্বারা সন্তানের প্রতিপালন করছে! আবার শেকায়াত করে, সন্তান মানুষ হচ্ছে না। সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। সন্তান বুড়ো মা-বাবাকে ঘরে রাখছে না, ইত্যাদি।

সন্তান দ্বীনের উপর চলছে না, নামায পড়ছে না, পর্দা মানছে না, এগুলো অবশ্য অভিযোগের বিষয় না; মাদকাসক্তির পর্যায়ে গেলেই শুধু এবং বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়ার পরিস্থিতি হলেই শুধু শেকায়াত। নচেৎ নিজের এবং সন্তানের হারাম উপার্জনে মা-বাবা খুশী! অর্থাৎ হারাম গিযায় আপত্তি নেই। হারাম গিযার সাধারণ কুফলেও আপত্তি নেই। আপত্তি হলো, যখন চূড়ান্ত কুফল দেখা দেয়।

্্আমার অবাক লাগে -দুঃখও হয়- বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পাওয়া অসহায় মা-বাবা চোখের পানি ফেলেন আর বলেন, এত কষ্ট করে নিজেদের আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে যে সন্তানকে ‘মানুষ’ করলাম...!

দেখো, লেখা-পড়া শেখানো এবং চাকুরির উপযুক্ত বানানোকে বলছেন ‘মানুষ’ করা!

আমি জানতে চাই, তাকে মানুষ করার যে শিক্ষাব্যবস্থা তাতে কি এ শিক্ষা ছিলো-

وَإِمَّـا يَـبْـلُـغَنَّ عِنْدَكَ الْـكِـبَـرَ أَحَـدُهُـمَـا أَوْ كِلاهُـمَـا فَلا تَقُل لَّـهُـمَـا أُفٍّ

আর যদি তাদের উভয়ে বা একজন তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হয় তখন তাদের সামনে/ তাদের উদ্দেশ্যে ‘উফ’ শব্দটা পর্যন্ত উচ্চারণ করো না।

وَلا تَـنْـهَـرْهُـمَا

তাদের প্রতি রূঢ় আচরণ করো না।

وَقُـل لَّـهُـمـا قَوْلًا كَريـمًـا

আর তাদের উদ্দেশ্যে কোমল কথা বলো।

وَاخْـفِـضْ لَـهُـمَـا جَـنـاحَ الذُّلِّ مِـنَ الرَّحْـمَـة

আর তাদের প্রতি সদয় হয়ে বিনয়ের ডানা অবনত করো/ আর তাদের প্রতি অত্যন্ত সদয় ও বিনয়ী হও।

وَقُـل رَّبِّ ارْحَـمْـهُـمَـا كَـمَـا رَبَّــيَـانِـي صَـغِـيـرًا

আর বলো, হে রাব্ব, আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন ছোট অবস্থায় তারা আমার প্রতিপালন করেছেন।

এ শিক্ষা কি আমাদের সন্তান পেয়েছে এবং পেয়েছে এরূপ শিক্ষাগ্রহণের উপযোগী পরিবেশ, পরিবারে বা শিক্ষাঙ্গনে?

আমরা যারা নিজেদের দ্বীনদার বলি, আমাদের গিযাও কি হালাল? ভাই, এ লজ্জা কোথায় রাখি, আমি তো জানতামই না যে, মাদরাসায় এমন ‘ছাত্র’ রয়েছে যার পুরো পরিবার সুদের উপর চলে! এমনকি ঐ সুদের টাকা থেকেই তার খরচও মাদরাসায় আসে। এটাই তো এখন আমাদের চিন্তার মধ্যে নেই যে, সুদ হারাম। কোন ভয়ভীতি নেই সুদের কামাই সম্পর্কে, অথচ আল্লাহ্ তা‘আলার ঘোষণা হলো-

فَــأْذَنُوا بِـحَـرْبِ مِّنَ اللهِ وَرَسُولِه

তাহলে ঘোষণা শুনে নাও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের।

দেখো তো, আমার অবস্থাটাই দেখো তো! যুদ্ধের ঘোষণা শুনলাম; না আমার মধ্যে কোন ভয়ভীতি হলো, না তোমাদের মধ্যে! কারণ দিল মুরদা হয়ে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি! তিনজন তালিবে ইলম সম্পর্কে জেনেছি। তো অভিভাবকদের ডেকে বুঝিয়েছি, আর বলে দিয়েছি। আপনার বিষয় আপনি বোঝবেন, তবে আপনার সন্তানের খরচ আপনার কাছ থেকে আমরা গ্রহণ করবো না। সুদের টাকা মাদরাসায় আসবে, আমি তা বরদাশত করবো না। এই ছেলেদের যিম্মা এখন থেকে মাদরাসার। এখন থেকে ওরা মাদরাসার খাছ মেহমান।১

তো ভাই, গিযা, খাদ্য ও দস্তরখানের পবিত্রতা, এটা وَقُـل رَّبِّ ارْحَـمْـهُـمَـا كَـمَـا رَبَّــيَـانِـي صَـغِـيـرًا

আর বলো, হে রাব্ব, আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন ছোট অবস্থায় তারা আমার প্রতিপালন করেছেন।

এ শিক্ষা কি আমাদের সন্তান পেয়েছে এবং পেয়েছে এরূপ শিক্ষাগ্রহণের উপযোগী পরিবেশ, পরিবারে বা শিক্ষাঙ্গনে?

আমরা যারা নিজেদের দ্বীনদার বলি, আমাদের গিযাও কি হালাল? ভাই, এ লজ্জা কোথায় রাখি, আমি তো জানতামই না যে, মাদরাসায় এমন ‘ছাত্র’ রয়েছে যার পুরো পরিবার সুদের উপর চলে! এমনকি ঐ সুদের টাকা থেকেই তার খরচও মাদরাসায় আসে। এটাই তো এখন আমাদের চিন্তার মধ্যে নেই যে, সুদ হারাম। কোন ভয়ভীতি নেই সুদের কামাই সম্পর্কে, অথচ আল্লাহ্ তা‘আলার ঘোষণা হলো-

فَــأْذَنُوا بِـحَـرْبِ مِّنَ اللهِ وَرَسُولِه

তাহলে ঘোষণা শুনে নাও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের।

দেখো তো, আমার অবস্থাটাই দেখো তো! যুদ্ধের ঘোষণা শুনলাম; না আমার মধ্যে কোন ভয়ভীতি হলো, না তোমাদের মধ্যে! কারণ দিল মুরদা হয়ে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি! তিনজন তালিবে ইলম সম্পর্কে জেনেছি। তো অভিভাবকদের ডেকে বুঝিয়েছি, আর বলে দিয়েছি। আপনার বিষয় আপনি বোঝবেন, তবে আপনার সন্তানের খরচ আপনার কাছ থেকে আমরা গ্রহণ করবো না। সুদের টাকা মাদরাসায় আসবে, আমি তা বরদাশত করবো না। এই ছেলেদের যিম্মা এখন থেকে মাদরাসার। এখন থেকে ওরা মাদরাসার খাছ মেহমান।১

তো ভাই, গিযা, খাদ্য ও দস্তরখানের পবিত্রতা, এটা وَقُـل رَّبِّ ارْحَـمْـهُـمَـا كَـمَـا رَبَّــيَـانِـي صَـغِـيـرًا

আর বলো, হে রাব্ব, আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন, যেমন ছোট অবস্থায় তারা আমার প্রতিপালন করেছেন।

এ শিক্ষা কি আমাদের সন্তান পেয়েছে এবং পেয়েছে এরূপ শিক্ষাগ্রহণের উপযোগী পরিবেশ, পরিবারে বা শিক্ষাঙ্গনে?

আমরা যারা নিজেদের দ্বীনদার বলি, আমাদের গিযাও কি হালাল? ভাই, এ লজ্জা কোথায় রাখি, আমি তো জানতামই না যে, মাদরাসায় এমন ‘ছাত্র’ রয়েছে যার পুরো পরিবার সুদের উপর চলে! এমনকি ঐ সুদের টাকা থেকেই তার খরচও মাদরাসায় আসে। এটাই তো এখন আমাদের চিন্তার মধ্যে নেই যে, সুদ হারাম। কোন ভয়ভীতি নেই সুদের কামাই সম্পর্কে, অথচ আল্লাহ্ তা‘আলার ঘোষণা হলো-

فَــأْذَنُوا بِـحَـرْبِ مِّنَ اللهِ وَرَسُولِه

তাহলে ঘোষণা শুনে নাও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে যুদ্ধের।

দেখো তো, আমার অবস্থাটাই দেখো তো! যুদ্ধের ঘোষণা শুনলাম; না আমার মধ্যে কোন ভয়ভীতি হলো, না তোমাদের মধ্যে! কারণ দিল মুরদা হয়ে গেছে। আমরা আর কী করতে পারি! তিনজন তালিবে ইলম সম্পর্কে জেনেছি। তো অভিভাবকদের ডেকে বুঝিয়েছি, আর বলে দিয়েছি। আপনার বিষয় আপনি বোঝবেন, তবে আপনার সন্তানের খরচ আপনার কাছ থেকে আমরা গ্রহণ করবো না। সুদের টাকা মাদরাসায় আসবে, আমি তা বরদাশত করবো না। এই ছেলেদের যিম্মা এখন থেকে মাদরাসার। এখন থেকে ওরা মাদরাসার খাছ মেহমান।১

তো ভাই, গিযা, খাদ্য ও দস্তরখানের পবিত্রতা, এটা আমাদের কী পরিমাণ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে, অন্যদের কী পরিমাণ। আলহামদু লিল্লাহ্ আলিম ও তালিবে ইলমের অসুস্থতাও কম, তাদের শেফাও খুব আসানির সঙ্গে হয়ে যায়। এটা হলো আমাদের বিশ^াসের দুর্বলতার পরে। যদি বিশ^াসের দুর্বলতা না থাকতো, যদি আমাদের সুদৃঢ় বিশ^াস থাকতো যে-

وَإذا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ

আর যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে শিফা ও আরোগ্য দান করেন।

তাহলে দেখতে বাজান! তারপরো তিব্বে নববীর উপর যদি আমাদের আমল থাকতো, একীন ও বিশ^াসের সঙ্গে তাহলে আমাদের অসুস্থতা শূন্যের পর্যায়ে নেমে আসতো, আর শেফা ও সুস্থতা হতো আরো সহজ।

মূল কথা হলো গিযা হালাল হওয়া এবং সুন্নত মুতাবেক যিগা গ্রহণ করা। শিক্ষার জন্য বলি, আমাদের এখানে শ্রমিক আছে মুসলিম এবং অমুসলিম। সবাই আমাদের মেহমান। আমাদের মুসলিম শ্রমিকরা কি খুব বেশী বা-আমল, নামাযী? তারপরো গিয়ে দেখো উভয়ের খাদ্যগ্রহণের আকৃতি ও প্রকৃতিতে আসমান যমীনের তফাৎ। আবার মুসলিম শ্রমিকদের সঙ্গে তালিবানে ইলমের দস্তরখানের হালতের মধ্যেও বিরাট পার্থক্য। অথচ আমাদের দস্তরখানের অবস্থাও খুব  যে ভালো, তা কিন্তু নয়। না গিযার হালাল হওয়ার দিক থেকে, না কাইফিয়াত ও প্রকৃতিগত দিক থেকে।

আচ্ছা বলো দেখি, কতজন আমরা বিসমিল্লাহ বলে দস্তরখানের  আমল শুরু করি? কত জন দস্তরখানের শেষে الحمد لله الذي ...  দু‘আটা পড়ি? দস্তরখান ওঠানোর দু‘আ কতজন আমরা জানি, আমল করি? আমাদের দস্তরখান যদি ঠিক হয়ে যায়, হালাল গিযা এবং সুন্নত তরীকা, তাহলে আমাদের রূহ ও জিসিম দু’টোই ইনশাআল্লাহ্ অনেক নূর ও নূরানিয়াত হাছিল করতে পারে।

এটা হলো মৌলিক কথা; প্রতিদিন আমরা এ আয্ম ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে  দস্তরখানে বসবো এবং দস্তরখান থেকে উঠবো যে, সারা জীবন আমরা হালাল গিযার জন্য মেহনত মুজাহাদা করবো। মানে ও পরিমাণে যত সামান্যই হোক আমরা হালাল গিযার উপর সন্তুষ্ট থাকবো এবং যত সুস্বাদু ও উপাদেয় হোক, হারাম গিযাকে বিষ মনে করে পরিহার করবো। তারপর সুন্নত তরিকায় দস্তরখানের আমল করবো, ইনশাআল্লাহ্।

দস্তরখানের কিছু যাহের আছে, আর কিছু বাতিন আছে। বাতেনি সৌন্দর্যগুলো রক্ষা করলে আল্লাহ্ তা‘আলা দস্তরখানের যেটা আসল মাকছাদ, কলবের মধ্যে নূর পয়দা হওয়া, জিসিমের মধ্যে  রূহকে ধারণ করার ছালাহিয়াত পয়দা হওয়া, এটা আল্লাহ্ দান করেন। পক্ষান্তরে যাহিরি সৌন্দর্য রক্ষা করলেও আল্লাহ্ তা‘আলা খায়র ও বরকত দান করেন। আগেও এ বিষয়ে একাধিকবার বলেছি, আজ আবার সংক্ষেপে বলি।

যাহিরি সৌন্দর্য দ্বারা সবচে’ বড় যে জিনিসটি হাছিল হয় তা হলো আল্লাহ্র পক্ষ হতে মুহাব্বাত এবং আল্লাহ্র প্রতি মুহাব্বাত। এটা তো তোমরা জানো-

إن الله جـمـيـل يـحـب الـجـمـال

তো দস্তরখানের যাহিরি জামাল দ্বারা এ মহামূল্যবান সম্পদ অর্জিত হবে।

দ্বিতীয়ত কলবে সুরূর ও ইন্বিসাত (আনন্দ ও প্রফুল্লতা) অর্জিত হবে এবং দস্তরখানের শরীকানের মধ্যে পরস্পর মুহাব্বাত পয়দা হবে ইনশাআল্লাহ্।

দস্তরখান যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, জগ, গ্লাস ও সমস্ত সামান যদি পরিচ্ছন্ন থাকে। দস্তরখানে যদি ‘ঝুটা’ না ফেলি, বরং আলাদা তশ্তরিতে ফেলি। প্রতিটি দস্তরখানে জগগুলো রাখার সময় হাতলগুলো যদি একদিকে থাকে, এভাবে সবকিছু যদি সুবিন্নস্ত থাকে; না থাকলেও তোমার পানাহার হয়ে যাবে, ক্ষুধা দূর হবে, কিন্তু ঐ দু’টো জিনিস হাছিল হওয়ার কথা না।

আরেকটা কথা, এতে মানুষের মধ্যে মুগ্ধতা সৃষ্টি হয়। সমাজে তালিবানে ইলমের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটারও আলাদা ভূমিকা রয়েছে। এই যে বিরতির সময় এখানে আমার ছেলের অলিমা হলো। পনেরোজন তালিবানে ইলম মেহমানদারি করেছে আমার প্রিয় ফায়রোযের তত্ত্বাবধানে রিজাল ও মাস্তূরাত উভয় প্রকার মেহমান অত্যন্ত মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। ফোনে কতজন যে আমাকে বললেন...!

এটা কেন হচ্ছে!? দস্তরখানের যাহিরি সৌন্দর্যের কারণে। এমন নয় যে, এমন খাবার, বা এর চেয়ে উন্নত খাবার তাদের সামনে আর আসেনি। আর কিছু না, পরিবেশনের সৌন্দর্য ও আন্তরিকতা। তো সবার তারিফ শুনে আমি শুধু মনে মনে বলি, ‘আমার কানা পোলার এত তারিফ!’

এটা কেন বলছি জানো? এই যে দেখো, তোমাদের আজকের দস্তরখানে বেশ কিছু নিমকদানির ঢাকনা নেই! দশজনের দস্তরখান, অথচ কোন দস্তরখানে নয়জন, আটজন। আরো কিছু বিশৃঙ্খলা! তো আসল কথা হলো, তোমাদের মধ্যে এমন রুচিশীলতা তৈরী হতে হবে যে, পরিচ্ছন্ন দস্তরখান ছাড়া খেতে ইচ্ছাই হবে না। মাদরাসার দস্তরখানের এই সৌন্দর্যগুলো তোমার বাড়ীতেও যাবে। চারশ তালিবে ইলমের চারশ পরিবার আছে। প্রতিটি পরিবারের দস্তরখান তো  সুন্দর হয়ে যাওয়ার কথা। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। তুমি নিজের ঘরের দস্তরখান সাজানো শুরু করো। তোমার সাজানো দস্তরখান দেখলে যে কেউ বলবে, খুব সুন্দর তো! তোমাদের মাদরাসা শিখিয়েছে বুঝি!

তারপর ধরো, তুমি খালার বাড়ী বেড়াতে গেলে। যেখানেই যাবে সুযোগ হলে দস্তরখান সাজিয়ে দাও। সবাই মুগ্ধ হবে। সেটা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হবে।

কিন্তু বাস্তবতা এই যে, ইজতিমাঈ ভাবে কিছু হচ্ছে। কিন্তু তোমাদের প্রত্যেকের মধ্যে তো এই রুচিশীলতা তৈরী হচ্ছে না। তাই বাড়ীতে গিয়ে সব ভুলে যাও। তো দু‘আ করি আল্লাহ তা‘আলা যেন দস্তরখানের সমস্ত যাহেরি সৌন্দর্য আমাদের প্রত্যেকের তবিয়তের মধ্যে, স্বভাবের মধ্যে, অন্তত অভ্যাসের মধ্যে দান করেন, আমীন।

আর বাতেনি সৌন্দর্যের কথা কী বলবো। এ অনুভূতি আমাদের মধ্যে আসা দরকার যে, আমি তো এ দস্তরখানের উপযুক্ত ছিলাম না। আল্লাহ্ তা‘আলা মেহেরবানি করে দয়া ও মায়া করে আমাকে এই গিযা, এই দস্তরখান দান করেছেন। আজকের দুপুরে এবং এখন রাতে কত বনী আদম, এমনকি আমার চারপাশেও কত মানুষ অনাহারে আছে। ক্ষুধা দূর করার মত দু’লোকমা খাবার তাদের জুটে নাই। তখন ভিতরে শোকরের জাযবা পয়দা হবে। নচেৎ শেকায়াত পয়দা হবে যে, এমন খানা খাওয়া যায়!

এটা হলো বরবাদির পথ। এই খানা, এই নেয়ামত আমার মুহতাজ না, আমি এর মুহতাজ।

দস্তরখান ওঠানোর সময় কী দু‘আ করো? غَـيْـرَ مُـسْـتَـغْـنـٍى عَـنْـهُ رَبـَّــنـَا

এই দস্তরখান ওঠানো হচ্ছে ইস্তিগনা-এর সঙ্গে নয়। আমাদের প্রয়োজন আছে, প্রয়োজনের এবং শোকরের অনুভূতি আছে। এই দস্তরখানে বসার কোন যোগ্যতা আমার নেই, অথচ প্রয়োজন আছে। আবার আমাকে এ দস্তরখানের কাছে ফিরে আসতে হবে। হে রব্ব, নাফরমানি ও অযোগ্যতার কারণে রিযিক থেকে, দস্তরখান থেকে মাহরূমি যেন না আসে।

এটাই তো বাস্তব সত্য যে, দস্তরখানের নেয়ামত ভোগ করার কোন যোগ্যতা আমার নেই, না বান্দা হিসাবে, না ইনসান হিসাবে। ইবাদতের মধ্যে, বন্দেগির মধ্যে আমার যে গাফলত তাতে এই নেয়ামত ভোগ করার কোন যোগ্যতা আমার নেই। ইনসান হিসাবেও আমার মধ্যে এত ক্ষুদ্রতা, এত নীচতা রয়েছে যে...। তারপরো আল্লাহ্ তা‘আলা দয়া করে আমার ক্ষুধার অন্নের ব্যবস্থা করেছেন...!

তো এই ইহতিয়াজ, এই মাসকানাত, এই শরমেন্দিগির অনুভূতি নিয়ে যদি আমি দস্তরখানের আমলে শরীক হই তাহলে শুধু নূর আর নূর হাছিল হবে ইনশাআল্লাহ্।

কিন্তু আফসোস, আমরা খানা খাই ক্ষুধা ও স্বাদের ‘পাশবিক’ চাহিদার কারণে। ইনসানি স্তরেও উঠতে পারি না, মুমিনের স্তর, তালিবে ইলমের স্তর তো অনেক দূরের কথা।

দ্বিতীয়ত দস্তরখানে সবসময় আমি চাইবো, আমার হিছ্ছা কম হোক, আমার ভাইয়ের হিছ্ছা বেশী হোক। পক্ষান্তরে পশুর স্বভাব হলো সবটুকু আমার ভাগে আসুক, অন্য পশুর ভাগে কিছুই না পড়–ক। আর সাধারণ মানুষের স্বভাব হলো, আমার হিছ্ছায় বেশী আসুক, অন্যের হিছছায় কম আসুক; অথবা আগে আমার জরূরত পুরা হোক, তারপরে অন্যের বিষয়। পক্ষান্তরে মুমিনের স্বভাব হলো, আমার ভাগে কম হয়েও আমার ভাইয়ের ভাগে যেন বেশী হয়। এক্ষেত্রে তালিবে ইলমের অবস্থান সবার উপরে।

তাকে পশুর স্তর থেকে উপরে তো উঠতেই হবে, বরং ইনসানের স্তর অতিক্রম করে মুমিনের স্তরে উঠতেই হবে। সর্বোপরি তালিবে ইলমের স্তরে অবশ্যই আমাদের উঠে আসতে হবে। আমাদের দস্তরখান যেন হয় আল্লাহ্র ‘মুর্কারাব’ ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের দস্তরখান। আল্লাহ্র পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছেন-

أَيُّــكُـمْ مِـثْـلِـى يُـطْـعِـمُـنِـى رَبِّـي وَيَـسْـقِـيـنِـى

তোমাদের কে আমার মত হতে পারে! আমাকে তো আমার রব্ব আহার করান এবং পান করান!

উছূলে ফিকাহর কিতাবে শুধু প্রসঙ্গক্রমে হাদীছটি আলোচনায় আসে। তারপর তা কিতাবের পাতায়ই থেকে যায়, যিন্দেগির পাতায় আর আসে না।

একটু চিন্তা তো করি, এখানে কী বলা হয়েছে? আমাদের জন্য এখানে কী শিক্ষা ও বার্তা রয়েছে?

অর্থাৎ মানুষ দেখবে, আমি তালিবে ইলম একটুকরো রুটি খেয়েছি, সামান্য ডালভাত খেয়েছি। হায়, এত কম খেয়ে, এমন পুষ্টিহীন খাবার খেয়ে বেচারা বাঁচবে কীভাবে! কিন্তু হাকীকত এই যে, আল্লাহ্ স্বয়ং আমাকে পানাহার করাবেন এবং সেটা হবে জান্নাতের নূরানিয়াতপূণর্  গিযা।

তো আমরা ঐ নবীর উম্মত যিনি বলেছেন, ‘আমার রব্ব আমাকে পানাহার করান।’

أيـكم مـثـلـى (তোমাদের কে আমার মত হতে পারে?!) এর মর্ম হলো, নবীর মাকাম তো আমাদের জন্য নয়, তবে মাকামে কুরব অবশ্যই উম্মতের জন্য। যেমন জান্নাতে كهاتـيـن এর র্কুব ও নৈকট্য হবে। মনে পড়ে না তোমাদের, ঐ যে এতীমের প্রতিপালনকারী সম্পর্কে বলা হয়েছে!

এখানেও يـطـعـمـنـى ربـى ويـسـقـيـنـى  এর নবীওয়ালা মাকাম তো আমাদের পক্ষে অসম্ভব, তবে ঐ মাকামের র্কুব ও নৈকট্য অবশ্যই হাছিল হতে পারে। দস্তরখানের

আদাব ও শারায়েত যে যত বেশী পালন করবে, রক্ষা করবে يـطـعـمـنـى ربـي ويـسـقـيـنـى এর তত বেশী নিকটবর্তী সে হতে পারবে।

আমাদের দস্তরখানের আমল যেন পূর্ণ সুন্নত অনুযায়ী হয়। দস্তরখানে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া। আঙুল চেটে খাওয়া, বর্তন পরিষ্কার করে খাওয়া। কত সুন্দর করে বলেছেন আমাদের নবী-

‘তুমি তো জানো না, খাবারের কোন্ অংশের মধ্যে/ কোন্ কণার মধ্যে বরকত রয়েছে।

তারপর তোমাদের বয়সের কিশোরকেই তো আল্লাহর নবী শিক্ষা দিয়েছিলেন, ‘বিসমিল্লাহ বলো এবং নিজের দিক থেকে খাও (বিশেষত যখন একপাত্রে একসঙ্গে কয়েকজন বসা হয়)।

দস্তরখান সম্পর্কে আলোচনা তো অনেক দীর্ঘ হতে পারে। তবে আজ এ পর্যন্ত থাক। আজ এ প্রতিজ্ঞা করি, আমাদের দস্তরখানকে, পানাহারকে আমরা যেন নবীওয়ালা দস্তরখানের যত বেশী সম্ভব নিকটবর্তী করতে পারি, সে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্।

নবীর দস্তরখানই হলো মুমিনীনের, তালিবানে ইলমের দস্তরখানের মূল। ঐ যে হযরত আবু হোরায়রা রা. ক্ষুধার্ত হয়েছিলেন। পুরো ঘটনা তোমাদের সামনে আছে। শিক্ষাগ্রহণের অনেক দিক রয়েছে। শুধু এতটুকু বলি, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু তাঁর ক্ষুধানিবারণের ব্যবস্থা করলেই তো পারতেন। কিন্তু না, তিনি তাঁকে খিদমতে নিযুক্ত করেছেন, যাও ছুফ্ফার সবাইকে দাওয়াত দাও। এখান থেকে আমরা দস্তরখানের খিদমতের নিযাম পেয়েছি। নবীগৃহ থেকে এক পেয়ালা দুধ এসেছে। এখন খাদেমকে বলা হচ্ছে, সবাইকে পান করাও।

তোমরা যারা দস্তরখানের খেদমত করো পালাক্রমে, আসলে তোমরা আল্লাহর নবীর দস্তরখানের খাদেম হযরত আবু হোরায়রা রা.-এর যে মাকাম সেই মাকামের র্কুব ও নৈকট্য হাছিলের চেষ্টা করছো। আল্লাহ যেন ভরপুর তাওফীক দান করেন, আমীন। চিন্তা করলে অনেক বড় কিসমত, আর চিন্তা না করলে শুধু মাহরূমি।

আর যারা দস্তরখানে বসছো তারা, আছহাবে ছুফফার যাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নববী দস্তরখানে আনা হয়েছিলো, তোমরা হলে তাদেরই উত্তরসূরী মেহমান। ঐ দাওয়াতই তোমাদের দেয়া হচ্ছে। ঐদাওয়াতেরই অনুসরণ করে দস্তরখানে তোমাদের শরীক হওয়া। তোমাদের তারানার মধ্যে আছে না! ‘নবীহাতে ছুফ্ফার সত্তরজনে পিয়েছে দুধের পেয়ালা/ আমরাও তার ভাগিদার, আমাদের কাফেলা সেই কাফেলা।’

এখন দস্তরখানের আমলে শরীক হওয়ার দাওয়াত দেয়া হয়, অব্যাহত আছে, না শিথিলতা এসে গিয়েছে? এই দাওয়াতটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং খুব বরকতপূর্ণ। আল্লাহ্র নবীর আদেশে হযরত আবু হোরায়রা রা. কিন্তু আছহাবে ছুফ্ফাকে দাওয়াত দিয়ে এনেছিলেন। এর সঙ্গে তাশাব্বুহ, এটা কিন্তু খুবই বরকত-পূর্ণ। এটা অব্যাহত থাকা দরকার।

আর যারা দস্তরখানের পুরো ইন্তিযাম করছে, মেযবান হয়ে ইন্তিযাম করছে তারা আসলে, আমাদের হালাত দেখে তো বলার সাহস হয় না, মনে হয় স্পর্ধা। তবে আল্লাহর দান, আর-

وَأَمَّـا بِـــنِـعْـمَـةِ رَبِّـكَ فَـحَدِّثْ

মেযবান হিসাবে আমরা নবুয়তের যে মেযবানির মাকাম ঐ মাকামের কিছুটা র্কুব ও সাদৃশ্যের সৌভাগ্য অর্জন করছি।

যতটুকু আলোচনা করা হলো, এটাকে অনুভব করো। এর সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করো।

মূল কথাগুলো আবার বলি, আল্লাহ্র নেয়ামতের প্রতি শোকরের অনুভূতি নিয়ে, নিজের অযোগ্যতার অনুভূতি নিয়ে দস্তরখানে বসো। যিন্দেগি ভর হালাল গিযা গ্রহণের প্রতিজ্ঞা নিয়ে দস্তরখানের আমল করো। দস্তরখানের সমস্ত যাহেরি ও বাতেনি সৌন্দর্য হাছিল করার চেষ্টা মেহনতে মশগূল হও। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন, আমীন।

وآخـر دعـوانـا أن الـحـمـد لله رب العالـمـيـن

 

কিতাবের পাতা এবং জীবনের পাতা

একই কথা বারবার বলতে হচ্ছে এ কারণে যে, আমাদের অন্তর এখনো ‘অন্তর দিয়ে’ কথাটা গ্রহণ করেছে বলে মনে হচ্ছে না। কথা হলো, কিতাবের পাতায় আমরা যা পড়ি তার কোন রকম ছায়াপাত ঘটে না, জীবনের পাতায় আমাদের আচরণে।

কিতাবের পাতায় আমরা পড়েছি, কালামুল মুলূকি, মুলূকুল কালাম’। অর্থাৎ বাদশাহ্র মুখের কথা এতই অভিজাত ও রাজোচিত হয় যে, কথার জগতে তা বাদশাহ্-এর মর্যাদা লাভ করে। অর্থাৎ মানুষ যত অভিজাত হবে, যত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে তার কথাও হবে তত অভিজাত এবং তত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী।

এটা হলো কিতাবের পাতায় আমাদের পড়া, কিন্তু জীবনের পাতায় আমাদের আচারণ ও উচ্চারণ কী? একজন তালিবে ইলম হিসাবে আমাদের মুখের ভাষা কতটা অভিজাত, কতটা ভদ্র ও শরীফ? আমাদের মুখের উচ্চারিত প্রতিটি ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিকে আমাদের জাতি কতটা আস্থা ও বিশ^াসের সঙ্গে গ্রহণ করে?

***

আমাদের নবী তাঁর গোত্রে, তাঁর সমাজে ছাদিক ও আমিন উপাধি লাভ করেছিলেন, আমাদের পরিবারে ও সমাজে আমাদের অবস্থান কী?

উত্তর তো সুস্পষ্ট এবং অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

কিতাবের পাতা ও জীবনের পাতার মধ্যে এই যে ভিন্নতা ও বৈপরীত্য এটা যতদিন দূর না হবে ততদিন আমাদের ...

***

 

আমাদের এখানে অভিভাবক এবং অন্য যারা আসেন তাদের আমরা মেহমানরূপে পূর্ণ ইকরামের সঙ্গে দস্তরখানে দাওয়াত দেই এবং বরণ করি। মেহমানেরও কর্তব্য দস্তরখানের আদব রক্ষা করা এবং মেযবানের মর্যাদা রক্ষা করা।

এই যে আজ যে দৃশ্যটা দেখলাম, আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। দস্তরখানে গিয়ে দেখি, একজন অভিভাবক, যাকে সর্বোচ্চ ইকরাম করে আসাতিযায়ে কেরামের সঙ্গে দস্তরখানে বসানো হয়েছে, তার কি কর্তব্য নয় এর মর্যাদা রক্ষা করা! না করলে তো এর বে-বরকতি তাকেই ভোগ করতে হবে, তার সন্তানকেই ভোগ করতে হবে।

দস্তরখানে গিয়ে দেখি, চারশ তালিবানে ইলমের দস্তরখানে বসে দিব্বি ‘মোবাইলে’ কথা বলছেন! দস্তরখানের প্রতি কত বড় অসম্মান! আপনার যদি এতই জরুরত হয়, দয়া করে বাইরে গিয়ে কথা সেরে আবার আসুন। কিন্তু না, এতটুকু অনুভূতি নেই। আসলে দস্তরখানের প্রতি মর্যাদাবোধ নেই। শুধু খাওয়ার সময় হয়েছে, তাই খেতে বসা। আফসোসের বিষয় হলো, তিনি হয়ত জানেন না, বোঝেন না, কিন্তু যারা দস্তরখানের খাদেমান, তারা তো ইকরামের সঙ্গে, বিনয়ের সঙ্গে বলতে পারতো, আপনার যদি কথা বলার প্রয়োজন হয় তাহলে...! কিন্তু না, তারাও নির্লিপ্ত। সবাই নির্লিপ্ত! এই যে অবস্থাটা দেখে আমি দস্তরখান থেকে ফিরে চলে এলাম, তাতেও কারো অনুভূতিতে কোন নাড়া পড়লো না।

মাদরাসাতুল মাদীনাহ্ তালিবানে ইলমের সঙ্গে, আভিভাবকের সঙ্গে যতই মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করছে, ততই তারা মাদরাসার বে-ইকরামি করে চলেছে। এতে যদি তাদের কোন ক্ষতি না হতো, আমি চুপ থাকতাম। চুপ থেকে ছবর করতাম। কিন্তু আমাদের চিন্তা করা উচিত কেন মাহরূমি আসে? এই চেতনাটুকু সবার মধ্যে জাগ্রত করার যে চেষ্টা, এরই নাম মাদরাসাতুল মাদীনাহ্। এটা না হলে তো মাদরাসাতুল মাদীনাহ্র কোন ওয়াজহুল জাওয়ায থাকে না, কোন বৈধতা থাকে না। আফসোস আমার প্রতি, আফসোস তোমাদের প্রতি, আফসোস যারা অভিভাবক তাদের প্রতি। আরো আফসোস এই যে, আমার এ আওয়ায হয়ত তাদের কানে পৌঁছবেই না যাদের কানে পৌঁছা দরকার। তাদের কান হয়ত...! তবে আল্লাহ্ ...!

***

 যে কোন মায়ের আঁচল সন্তানকে মমতার শীতলতা দান করে, তবে কোন মাতৃআঁচলে মমতার সঙ্গে দুর্বলতারও মিশ্রণ ঘটে যায়। যে মায়েরা তাদের বুকের মাণিককে জিহাদের ময়দানে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেন, তাদের আঁচলে কি মমতা ছিলো না! যে মা তার বুকের মাণিককে ইলমের জন্য ঘর থেকে বের করেন, তিনি! আর যে মা সন্তানকে ‘মমতার আঁচলের’ নীচে লুকিয়ে রাখতে চান সারা জীবন?

এ দুর্বলতার কারণেই সন্তান ইলমের অঙ্গন ত্যাগ করে অস্থির হয়ে ছুটে যায় মায়ের আঁচলের কাছে। চূড়ান্ত বিচারে কিন্তু মায়ের মমতাই পরাস্ত হয়, আর সন্তানের জীবন হয় ক্ষতিগ্রস্ত। এবছরও রামাযানে এবং রামাযানের পরে এর নমুনা দেখা হলো মাদানী মাক্তাবে। মায়েরা যদি ...!

***

* দস্তরখানে যখন বড় মাজমা হয় তখন দস্তরখানের বড় একটা আদব হলো শোরগোল না হওয়া, হৈচৈ বিলকুল না হওয়া। নীরবতা ও সুকূনের পরিবেশ বজায় থাকা।

* মুখ থেকে চপ চপ শব্দ হওয়া বড় মন্দ একটা স্বভাব। কোন তালিবে ইলমের মধ্যে এটা থাকতেই পারে না। আলহামদু লিল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে এটা নেই। চারশ তালিবে ইলম আহার গ্রহণ করছে, অথচ...!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা