কাশ্মীরসংখ্যা

তোমাদের পাতা

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে তুর্কী প্রেসিডেন্ট

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে তুর্কী প্রেসিডেন্ট

এরদোগানের ভাষণ

(সংক্ষেপিত)

... আমি আবারো পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বিশ্বপাঁচশক্তির চেয়ে বড়। বিভিন্ন দেশ, জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে যদি ইনছাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে বিশ্বব্যাপী অশান্তিই হবে এর অনিবার্য পরিণতি। পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো যদি অন্যদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তাহলে অপারমাণবিক দেশগুলো অস্বস্তি ও অস্থিরতার মধ্যে থাকবে। এটা ইনছাফের দাবী নয় যে, কোন দেশ পারমাণবিক অস্ত্রধারী হবে, আর কোন দেশের জন্য তা নিষিদ্ধ হবে। হয় সবার জন্য তা নিষিদ্ধ হোক, আর না হয় সবার জন্য তা উন্মুক্ত করা হোক।

ইনছাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আশু কর্তব্য হবে জাতিসঙ্ঘের কাঠামোতে, বিশেষ করে নিরাপত্তাপরিষদের বর্তমান কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন সাধন করা।

... সিরিয়ার পরিস্থিতি বিশ্ববিবেকের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এত গুরুতর যে, এপর্যন্ত দশলাখ বনীআদম নিহত হয়েছে এবং এককোটিরও উপর মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেছে, যাদের বলা হচ্ছে শরণার্থী এবং অভিভাসী। এ মানবিক সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান করার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের জানা উচিত, তুরস্কই হচ্ছে সিরিয়া পরিস্থিতির সবচে’ ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আমাদেরকেই মূল লক্ষ্যস্থল বানিয়েছে। তদুপরি তুরস্ক প্রায় পয়ত্রিশ লাখ সিরীয়কে আশ্রয় দিয়েছে, যারা ভয় ও ক্ষুধা থেকে পালিয়ে তুরস্কে এসেছে। এটা নিউইয়র্কের জনসংখ্যার অর্ধেক । আমাদের জাতীয় আয়ের বিচারে, এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের অন্যান্য জাতি থেকে বেশী কিছু করছি। অথচ বিশ্ব খুব দ্রুত, এই যে আমার হাতে দেখতে পাচ্ছেন, সাগরতীরে পড়ে থাকা সিরীয় শিশু আইলানের ছবি, বিশ্ব খুব দ্রুত এই শিশুটিকে ভুলে গিয়েছে। আমরা এক্ষেত্রেও, যাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে না হয়, তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। এ পর্যন্ত শিশু-নারীসহ কয়েক হাজার বিপন্ন মানুষকে আমরা সমুদ্রথেকে উদ্ধার করেছি। অথচ বিশ্বসম্প্রদায় নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। এমনকি এটাও তারা ভুলে গিয়েছে যে, সিরীয়ার পরিস্থিতি তাদেরই সৃষ্টি। দুঃখের সঙ্গেই বলছি যে, এ পরিস্থিতির মুকাবেলা করার জন্য আমাদের নিঃসঙ্গ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমরা মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করি। কারণ একা তুরস্কের পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করা কিছুইতেই সম্ভব নয়।

***

সাইপ্রাস সমস্যাও আমাদের জন্য বড় একটা কষ্টের বিষয়। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি সাইপ্রাস সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান বের করার। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষ গ্রীক সরকার আমাদের উপর অন্যায় সমাধান চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করবো...!

***

... মিসরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে যেভাবে আদালতের সামনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে, এমনকি তার পরিবারকে দাফন করার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে, এটা আমাদের অন্তরে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে। ...

***

ইয়ামানের বিরুদ্ধে যে আগ্রাসন চলছে এবং কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ, এগুলো অঞ্চলে গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া খুব জরুরি। ... সাংবাদিক জামাল খাশোগীর মর্মান্তিক হত্যাকা-, এর কোন সুষ্ঠু বিচারের ব্যবস্থা এখনো হয়নি। এ বিষয়টা আমরা খুব নিকট থেকে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ক্ষেত্রে করণীয় রয়েছে। ...

আমরা মনে করি, বর্তমান বিশ্বে সবচে’ বেশী জুলুমের শিকার হচ্ছে যে ভূখ-ণ্ডটি তা হলো ফিলিস্তীন, যা দীর্ঘকাল থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের আগ্রাসনের শিকার। সম্প্রতি যে বর্বর রাষ্ট্রীয় হত্যাকা- ঘটিয়েছে ইসরাইল, তা নযিরবিহীন। অথচ, বিশ্ববিবেকে সামান্য প্রত্রিক্রিয়াও দেখা যায়নি। সত্যি আমরা বড় দুঃখজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন। আমি প্রশ্ন করতে চাই, ইসরাইল রাষ্ট্রটি আসলে কোথায় অবস্থিত? এর স্থায়ী কোন সীমান্ত রয়েছে কি না? এই যে দেখুন, আমার হাতের মানচিত্রই বলে দিচ্ছে, কীভাবে এর সীমান্ত ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে, ফিলিস্তীনের আরবভূমি দখল করার মাধ্যমে। পক্ষান্তরে ফিলিস্তীন সঙ্কুচিত হতে হতে প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। জাতিসঙ্ঘ শুধু প্রস্তাব পাশ করছে, কিন্তু তার যেন কোন মাথাব্যথা নেই যে, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না! জাতিসঙ্ঘ তাহলে কী জন্য? কী তার দায় ও দায়িত্ব? এই ছাদের নীচে বসে আমরা শুধু কথাই বলে যাবো, তাহলে ইনছাফ কোথায় গেলো, মানবতা ও বিবেক কোথায় গেলো? .... আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। এছাড়া কোন পদক্ষেপই ইনছাফ ও শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে না।... আমি মনে করি, এই যে বিশ্বসংস্থা, তাকে আজ পরিষ্কার করে বলতে হবে, ইসরাইলের সীমান্ত কোনটি? নাকি ইসরাইল এমন একটি দেশ যার নির্দিষ্ট কোন সীমান্ত নেই?... ফিলিস্তীনে যা ঘটছে, ভূমিদস্যুতা, সারা বিশ্বের চোখের সামনে কীভাবে তা ঘটছে? এর দায় থেকে কি বিশ্ব মুক্ত হতে পারবে?

***

...একই ভাবে কাশ্মীরও একটি রক্তক্ষয়ী সমস্যারূপে দীর্ঘকাল ধরে, বাহাত্তর বছরেরও বেশী সময় ধরে ঝুলে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতি আমরা কল্পনাই করতে পারি না কাশ্মীর সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান ছাড়া। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে সমগ্র কাশ্মীর এবং আশি লাখ অধিবাসী অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বিশ্বের কাছে এ সমস্যাটি যেন কোন গুরুত্বই পাচ্ছে না! আমি মনে করি, জাতিসঙ্ঘ কিছুতেই কাশ্মীর সমস্যার দায় এড়াতে পারে না। জাতিসঙ্ঘ যদি তার অস্তিত্বের সার্থকতা প্রমাণ করতে চায় তাহলে তার গৃহীত প্রস্তাব বাস্তায়নে তাকেই এগিয়ে আসতে হবে।

***

...একই ভাবে বিশ্বসম্প্রদায় ঐ রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি থেকেও চোখ ফিরিয়ে রেখেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বহুবছর ধরে যা ভোগ করে চলেছে। জাতিসঙ্ঘের নিয়োগকৃত তদন্তকমিশনের প্রতিবেদনও বলছে যে, যা কিছু আরাকানের ভূখ-ণ্ডে ঘটেছে জাতিগত উচ্ছেদের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। তুরস্ক তার সাধ্যমত রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে এবং দিয়ে যাবে। তবে আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বিশ্বশক্তি বলে যাদের পরিচয় তাদের দায়িত্ব হলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দান করা এবং তাদের জন্মগত ও মানবিক অধিকারগুলো তাদের ফিরিয়ে দেয়া। তারপর অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা...

***

একই ভাবে অফগানিস্তানে দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে যে আগ্রাসন ও সন্ত্রাস চালানো হয়েছে বিভিন্ন শক্তির পক্ষ হতে তার জনগণের বিরুদ্ধে, অবশ্যই বিশ্বশান্তিকে তা হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বকে সন্ত্রাস ও অশান্তি হতে রক্ষা করতে হলে অতিসত্তর অফাগানিস্তানেও তার জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ন্যায়পূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ ও বৃহৎ শক্তিবর্গ সকলের দায় ও দায়িত্ব রয়েছে। ...

***

আরেকটা বিষয় বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তা হলো ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে অবমাননামূলক ও বৈষম্যমূলক আচরণ। নিউজিলেন্ডের ক্রাই.. শহরের মসজিদে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে একই ভাবে শৃলঙ্কায় খৃস্টানসম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যা ঘটেছে, তো এগুলো কেন ঘটছে, এর পিছনে কারা দায়ী তা আমাদের নিরপেক্ষ ও নির্মোহ দৃষ্টিতে ভেবে দেখতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগুলো রোধের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বসমাজের নেতৃত্ব এখন যাদের হাতে প্রথম দায়িত্ব তাদেরই উপর বর্তায়। আমি মনে করি,  ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছাড়ানোর যে ভয়ানক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, অবিলম্বে তা রোধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে বুঝতে হবে যে, জাতিগতভাবে আমরা অপদস্থ হচ্ছি, তরুণহৃদয়ে যার প্রভাব পড়তে বাধ্য। ...

আমি মনে করি, এতক্ষণ যে সমস্ত সমস্যা ও পরিস্থিতির কথা বলা হলো, বিশ্বের অংশ হিসাবে তুরস্কও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তা দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। তুরস্ক সামনের দিনগুলোতেও এসমস্ত সমস্যার ন্যয়সঙ্গ সমাধানে তার প্রচেষ্টা  চালিয়ে যাবে। ... আমি আশা করবো, জাতিসঙ্ঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ যে ন্যায়পরতা ও মানবিক মূল্যবোধ ও বিবেকের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাবে। তুরস্ক তার সাধ্যমত শান্তির পক্ষে যে কোন প্রচেষ্টায় সহযোগিতা দিয়ে যাবে।....

পরিশেষে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ!

পারমাণিক শক্তিধর দেশগুলো যদি আমাদের হুমকি দিতে থাকে তাহলে তো...

পারমাণবিক অস্ত্র হয় সবার জন্য নিষিদ্ধ হবে না হয় সবার জন্য উন্মুক্ত হবে! এরদোগান

 

দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সমগ্র কাশ্মীর এবং তার আশি লাখ অধিবাসী অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

জাতিসঙ্ঘ কিছুতেই এর দায় এড়াতে পারে না। এরদোগান

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা