মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

আর যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন।

কাঁঠাল, আমরা কি জানি তার গুণ!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

কাঁঠাল সবার প্রিয় বড় আকারের অতি সুস্বাদু ও রসাল ফল। কাঁঠাল গ্রীষ্মকালীন ফল এবং বাংলাদেশের জাতীয় ফল, এটা আমরা জানি। যা জানি না তা হলো কাঁঠালের বিস্ময়কর পুষ্টিগুণ। কাঁঠাল পুষ্টিগুণে এমনই সমৃদ্ধ যে, কাঁঠালকে বলা হয় পুষ্টিভান্ডার। কাঁঠাল একমাত্র ফল যা খুব সহজে দেশের প্রায় সর্বত্র চাষাবাদ করা যায়। তুলনামূলক অল্পমূল্যে কাঁঠাল দেশের গরীব মানুষের পুষ্টি-চাহিদা পূরণ করে বলে একে বলা হয় গরীবের ফল। এমনকি কাঁঠালই একমাত্র ফল যা গরুছাগলের ফলরূপেও বিবেচিত হতে পারে। কারণ কাঁঠালের খোসা গরুছাগলের শুধু অতি প্রিয় খাদ্যই নয়, বরং গরু-ছাগলের উন্নত স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

পাকা কাঁঠালের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, শর্করা, চর্বি ইত্যাদি। মা ও শিশুর যাবতীয় পুষ্টি-চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিশুদেহের রোগপ্রতি-রোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঁঠাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকায় যদি পরিমাণমত কাঁঠাল যুক্ত করা যায়, অর্থাৎ প্রতিদিন সকালের নাস্তায় পাকা কাঁঠালের কোষ ২০০ গ্রাম যুক্ত করা হয় তাহলে গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর সবধরনের পুষ্টিচাহিদা পূর্ণ হতে পারে।

আমাদের দেশে প্রক্রিয়াজাত করে কাঁঠালের বহুমুখী ব্যবহার করার চিন্তা এখনো বাণিজ্যিক মর্যাদা লাভ করেনি। অথচ ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশে বাণিজ্যিক পর্যায়ে কাঁঠালের ব্যবহার শুরু হয়েছে, তাও অনেক বছর হলো। কাঁঠালের চিপস, কাঁঠালের রস, জেলি ইত্যাদি সারাবছরই বাজারে পাওয়া যায়। সেখানে চিকিৎসকগণ গর্ভবর্তী ও স্তন্যদানকারিণী মাকে এবং ছয়মাসের বেশী বয়সী শিশুকে কাঁঠাল বা কাঁঠালের চিপস্ ও রস-জেলি খেতে পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, আমাদের দেশে সারা বছর তো দূরের কথা, গ্রীষ্মকালেও মা ও শিশুকে কাঁঠাল বা কাঁঠালজাত খাবার দেয়া হয় না, যা সহজেই মা ও শিশুর পুষ্টিচাহিদা পূরণ করতে পারে। পুষ্টিবিদ্যায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, গর্ভবতী মা পরিমিত পরিমাণে তাজা কাঁঠাল বা প্রক্রিয়াজাত কাঁঠাল গ্রহণ করলে তার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক এবং গর্ভজনিত পুষ্টিহীনতা থেকে মুক্ত থাকে। তাছাড়া গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও তা সাহায্য করে। স্তন্যদানকালে মাকে যদি পরিমিত পরিমাণে পাকা কাঁঠাল বা রস দেয়া হয় তাহলে দুধের পরিমাণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। শিশুর বেড়ে ওঠা, স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য দুই বছর পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ অপরিহার্য। অথচ বুকে পর্যাপ্ত দুধের অভাবে অনেক মা বেশী দামের আমদানি করা গুঁড়ো দুধের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। তাতে আর্থিক ব্যয় যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন পার্শ তিক্রিয়া পর্যন্ত দেখা দেয়, যা সঙ্গত কারণেই সাধারণত অনুভব করা হয় না। অথচ কাঁঠাল ব্যবহার করে মাতৃদুগ্ধের অভাব সহজেই দূর হতে পারে।

কাঁঠালের কোষ যেমন উপকারী তেমনি কাঁঠালের বিচিও যথেষ্ট উপকারী। কাঁঠালের বিচি নিয়মসম্মত-ভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। কাঁঠালের বিচি ভেজে খেতে বেশ সুস্বাদু। ভাজা ও সিদ্ধ বিচি বেটে ভর্তা করেও ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা