মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

কলমী শাকের পুষ্টিগুণ

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অপুষ্টি বাংলাদেশের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যা। ছোট থেকে বড় সব বয়সের নারী-পুরুষই ভয়াবহ পর্যায়ের অপুষ্টির শিকার। অথচ আল্লাহ্ বিভিন্ন ফল ও শাকসবজীর মধ্যে প্রচুর পুষ্টিগুণ রেখেছেন, যা সহজলভ্য ও সস্তা। দেশের গরীব জনগোষ্ঠীরও নাগালের মধ্যে। এগুলো নিয়মিত ব্যবহার করে সহজেই বাংলাদেশের দরিদ্রজনগোষ্ঠী অপুষ্টির হাত থেকে উদ্ধার পেতে পারে। কিন্তু অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণেই আল্লাহ্প্রদত্ত এত সহজ উপাদান নাগালের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও অপুষ্টি থেকে আমাদের যেন নিষ্কৃতি নেই।

পুষ্টিগুণে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি শাক হলো আমাদের গ্রাম বাংলার সুপরিচিত কলমী। এটি সাধারণত জলাবদ্ধ স্থানে, তথা খালবিল, ডোবা কিংবা পুুকুরে অনায়াসেই জন্মে। এর কাণ্ড ফাঁকা থাকায় পানিতে ভাসে। কলমি শাক দুই রকম দেখা যায়। একটির ডাঁটা লাল, অন্যটির ডাঁটা সাদা-সবুজ। আজ এখানে আমরা কলমী শাকের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

কলমী গ্রীষ্মকালীন ও বর্ষাকালীন শাক। এটি এমনই সহজলভ্য যে, আলাদাভাবে এর চাষ হয় না। নিজে নিজেই জন্মাতে থাকে। এর জন্মক্ষেত্র হচ্ছে গ্রামবাংলার পুকুর-ডোবা ও খাল-বিল। তবে সম্প্রতি বাজারচাহিদা লক্ষ্য করে এর বাণিজ্যিক চাষও শুরু হয়েছে। কলমিশাকের চাষাবাদে উৎপাদন খরচ খুব কম, লাভ অনেক বেশী। একবার বীজ বপণ করলে সারা বছর শাক সংগ্রহ করা যায়। গরীব ঘরের মেয়েরা কলমীর পুষ্টিগুণে সচেতন হয়ে নয়, বরং অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে ডোবা নালা থেকে কলমী শাক সংগ্রহ করে। নিজেরাও খায়, আবার সচ্ছল পরিবারে খুব অল্প মূল্যে বিক্রি করে। কলমীশাকে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন এ,বি,সি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন। ভিটামিন-এ এর প্রধান কাজ হলো চোখের দৃষ্টিশক্তি সতেজ রাখা। দেহে ভিটামিন-এ এর অভাব হলে দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়; বিশেষ করে রাতে ভালো দেখতে পায় না, বরং অনেক সময় মোটেই দেখতে পায় না। এ অবস্থাকে বলা হয় রাতকানা রোগ। কলমীশাকে অধিক পরিমাণে ক্যারোটিন নামে একটা উপাদান থাকে, যার সাহায্যে দেহে ভিটামি-এ তৈরী হয়।ভিটামিন বি-১ ¯ স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও স্বাভাবিক রাখে এবং দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কলমীশাকে অন্যান্য শাকের চেয়ে বেশী পরিমাণে ভিটামিন বি-১ রয়েছে। ভিটামিন সি দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত করে। কলমীশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখা খুব জরুরি, ভিটামিন সি তাপসংবেদনশীল। তাই রান্নার সময় পঞ্চাশভাগ ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য কলমী শাক (এবং অন্যান্য শাকসবজী) উচ্চ তাপে অল্পসময়ে রান্না করে যত দ্রত সম্ভব ব্যবহার করে ফেলা উচিত। কলমীশাক হচ্ছে ক্যালসিয়ামের ভাণ্ডার। গর্ভবতী নারীর দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব হলে তার নিজের স্বাস্থ্য যেমন ঝুঁকিতে পড়ে যায় তেমনি শিশুরও হাড়ের কাঠামো দুর্বল হয়, দাঁত দেরীতে ওঠে। ভেষজবিদদের মতে কলমী শাকে বহুমুখী ঔষুধি গুণও রয়েছে। যেমন প্রচুর আঁশবিশিষ্ট হওয়ার কারণে কলমীশাক কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং হজমশক্তি ঠিক রাখে। কলমী- শাকের রস ঘীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত সকাল-বিকেল সেবন করলে প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বাড়ে এবং দুধের খাদ্যগুণ সমৃদ্ধি লাভ করে।কলমীশাকের দু’চামচ রস একটু গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে দেহের রোগপ্রতিরোধ- ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কলমিশাক দেহের হাড় যেমন মজবুত করে তেমনি রক্তশূন্যতাও দূর করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। কলমীশাকের মৌসুমে আমাদের সবার খাদ্যতালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে কলমীশাক যুক্ত হওয়া উচিত বলে পুষ্টিবিদগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।(চলবে, ইনশাাআল্লাহ)

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা