মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

অগ্ন্যাশয় কী ও কেন?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

বাংলায় বলে অগ্নাশয়। ইংরেজিতে এর নাম হলো (Pancreas)। তো আজ এখানে আমরা মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থি সম্পর্কে আলোচনা করবো। পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করা তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ এ বিষয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই। শুধু তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পড়াশোনা করে যা বুঝেছি তাই এখানে তুলে ধরবো।

প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় দেহের ভিতরের দেখতে ছোট, তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থি। যা দৈর্ঘ্যে প্রায় সাত ইঞ্চি। এটি পাকস্থলীর নীচে এবং উদরগহ্বরে ডিওডেনামের দুই বাহুর মধ্যে আড়াআড়ি ভাবে অবস্থিত এবং প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত। যেহেতু এখানে ডিওডেনাম শব্দটি এসেছে, সেহেতু এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ও জেনে নেয়া ভালো। ইংরেজিতে Duodenum এবং বাংলায় বলে গ্রহণী।

পরিপাকনালীর পরিচয় তো আমরা জানি। এই পরিপাকনালীর দীর্ঘতম অংশটি হলো ক্ষুদ্রান্ত্র বা ক্ষুদে অন্ত্র। তো এই ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম ও ক্ষুদ্রতম অংশটি হচ্ছে ডিওডেনাম বা গ্রহণী। দেখতে এটি U আকৃতির। যা নলের মত ফাঁপা এবং লম্বায় ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এটি পাকস্থলীকে ঊর্ধ্বান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করে। এখানেই রাসায়নিক পরিপাকের বেশীর ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। ডিওডেনাম বা গ্রহণীর প্রধান কাজ হলো খাবার কে হজম করার জন্য এনজাইম ও পিত্তের সঙ্গে মিশ্রিত করা।

তো ফিরে আসি আগের কথায়; দেহের অভ্যন্তরে অগ্ন্যাশয়ের অবস্থান সম্পর্কে বলা হয় যে, এটি ডিওডেনামের দুই বাহুর মধ্যে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত এবং প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত। অগ্ন্যাশয়গ্রন্থিটি দেখতে অনেকটা লম্বা লাল মরিচের মত, অথবা গাজরের মত। অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্রগন্থি। অর্থাৎ এই গ্রন্থিটি অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা, এই দুই ধরনের গ্রন্থির ভূমিকা পালন করে। যে সমস্ত গ্রন্থি হরমোন উৎপাদন করে সেগুলো হচ্ছে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। পক্ষান্তরে যে সমস্ত গ্রন্থি এনজাইম উৎপাদন করে সেগুলো হচ্ছে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি। তো অগ্ন্যাশয় উভয় কাজ করে বলে এটি হচ্ছে মিশ্রগন্থি। অগ্ন্যাশয় মোট তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত।(ক) মস্তকঃ এটি ডিওডেনামের টি আকৃতির বাঁকের মধ্যে অবস্থিত।(খ) দেহঃ এটি হলো মূল অংশ (অগ্ন্যাশয়ের মধ্যবর্তী অংশ) যা পাকস্থলীর পিছনে থাকে। (গ) লেজঃ এটি অগ্ন্যাশয়ের নীচের অংশ, যা প্রসারিত হয়ে প্লীহার সঙ্গে যুক্ত হয়। আগেই বলা হয়েছে যে, অগ্ন্যাশয় একাধারে বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে কাজ করে। বহিঃক্ষরা গ্রন্থিরূপে এটি যে রস ক্ষরণ করে তাতে প্রধানত প্রোটিন ও ফ্যাটজাতীয় খাদ্যের পরিপাকে সহায়ক এনজাইম থাকে। enzyme বাংলায় উৎসেচক। এনজাইম হচ্ছে মানবের (এবং সাধারণ প্রাণীরও) দেহকোষে উৎপন্ন জৈবরাসায়নিক পদার্থবিশেষ, যা নিজে পরিবতিত না হয়ে অন্যপদার্থের (খাদ্যের) পরিবর্তন করে। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসাবে এটি প্রধানত ইনসুলিন নামক একটি রস ক্ষরণ করে। তাছাড়া অগ্ন্যাশয়, গ্লুকাগন, গ্যাসট্রিন এবং সোমাটোস্টাটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ হরমোন ক্ষরণ করে। অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন সকল প্রকার পদার্থ পরিপাকতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেহের শরীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে এগুলোর কোনটিরই ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। অগ্ন্যাশয়কে আমরা প্রধান দু’টি ভাগে ভাগ করতে পারি, সনালী ও অনালী। সনালী অংশ থেকে তিন প্রকার উৎসেচক নিসৃত হয়, যথা- (ক) ট্রিপসিন (প্রোটিন বা আমিষ বিশ্লেষক): এটি আমিষ পরিপাককারী উৎসেচক (খ) এমাইলেজ (শ্বেতসার বিশ্লেষক): এটি শ্বেতসার-জাতীয় খাদ্য পরিপাককারী উৎসেচক। এর প্রভাবে শ্বেতসার ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হয়, যা শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যের পরিপাকের শেষ ধাপ। (গ) লাইপেজ (চর্বিবিশ্লেষক): এটি চর্বিজাতীয় খাদ্য পরিপাক-কারী উৎসেচক। লাইপেজ চর্বির ফেনাকে ভেঙ্গে ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারেলে পরিণত করে। গ্লিসারেল হচ্ছে চর্বিজাতীয় খাদ্যের পরিপাকের শেষ ধাপ। সনালী অংশ থেকে নিঃসৃত এই তিনটি উৎসেচককে একত্রে বলা হয় অগ্ন্যাশয় রস। এগুলো নালীর মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করার পর ক্ষারীর মাধ্যমে যার যার খাদ্য পরিপাক করে।

***

অগ্ন্যাশয়ের প্রধান কাজ হলো ইনসুলিন নামক হরমোন তৈরী করা। ইনসুলিন দেহের মধ্যে বেড়ে যাওয়া গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে রাখে বা নিয়ন্ত্রণ করে। গ্লুকোজ মানেই হলো দেহের মধ্যে বিদ্যমান চিনির পরিমাণ। পক্ষান্তরে গ্লুকাগন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। আবার সেমাটোস্টাটিনের কাজ হলো ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা। সুতরাং বোঝাই যায় দেখতে এত ছোট একটি গ্রন্থি যদি কোনকারণে ঠিকমত কাজ না করে তাহলে পরিপাকক্রিয়ায় কত রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার প্রধান প্রকাশ হলো ডায়াবেটিস রোগ।

***

কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় কী ও কেন? অগ্নাশয়গ্রন্থি ঠিকমত কাজ না করাই মূলত ডায়াবেটিসের উৎপত্তির জন্য দায়ী। অগ্নাশয় ঠিকমত কাজ না করলে শরীরে ইনস্যুলিন সৃষ্টি হয় না। তখন বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ইনস্যুলিন গ্রহণ করতে হয়। সম্প্রতি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, একটি চিকিৎসাসংস্থা কৃত্রিম প্যানক্রিয়াস তৈরী করে রীতিমত বাজারজাত করেছে। আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন যন্ত্রটি অনুমোদন দেয়ার বিষয় পর্যালোচনা করছে। জার্নালের মতে কৃত্রিম অগ্ন্যাশয় তৈরীর মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞান যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে। এর ফলে ডায়াবেটিস রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, আশা করা যায়। ডায়াবেটিস রোগীকে এখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াকমা নিয়ে আর দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না। কৃত্রিম অগ্ন্যাশয়ই সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে। আল্লাহ্ সত্যই বলেছেন, আমাকে চেনার জন্য তোমাদের নিজেদের দিকে তাকাও..। কিছু কি দেখতে পাও না! আল্লাহর পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অসুস্থতার আগে সুস্থতার কদর করো। (চলবে ইনশাআল্লাহ)

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা