জুমাদাল আখেরা ১৪৩১হিঃ (১৬)

তোমাদের পাতা

চোখে দেখা রক্তঝরা ২৪শে ফেব্রুয়ারী

লিখেছেনঃ ছাদেকুল ইসলাম

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট
সেদিন কোন বিদ্রোহ ছিলো না, সরকার পতনের আন্দোলন ছিলো না; ছিলো না কোন সন্ত্রাস ও নাশকতা; শুধু ছিলো ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিলের দাবীতে এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে আলেম-ওলামাদের শানি-পূর্ণ সমাবেশ, যা প্রতিটি বাংলাদেশীর সাংবিধানিক অধিকার। কিন' তাদের উপর চালানো হলো বর্বর পুলিশি হামলা ও গুলিবর্ষণ। স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আমি সামনের গাড়ীতে ছিলাম। পুলিশের পাশবিক বর্বরতা আমার চোখের সামনেই ঘটলো। লালদিঘী ময়দানের উদ্দেশে যাত্রাকরা মিসিলটিকে বালুচড়া এলাকায় বাধা দেয়া হলো। হিফাযাতে ইসলাম প্রধান হযরত মাওলানা আহমাদ শফী ছাহেব গাড়ী থেকে নেমে বাধাদানকারীদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন, আমাদের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ শানি-পূর্ণ। কিন' মারমুখী পুলিশের এককথা, উপরের আদেশ, এককদম আগে যাওয়া চলবে না। কিন' হাজার হাজার আলিম ও ছাত্রজনতাকে তখন থামিয়ে রাখার কোন উপায় ছিলো না। মিসিল পুলিশি বাধা অতিক্রম করলো। ব্যস, এতটুকু অজুহাতই যথেষ্ট ছিলো। শুরু হলো নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ। সে এক ভয়াবহ পরিসি'তি, যা না দেখে কল্পনা করা সম্ভব নয়। বয়োবৃদ্ধ হিফাযাতে ইসলাম প্রধানকে লক্ষ্য করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হলো। তার প্রাণ-উৎসর্গী অনুসারীরা বুক পেতে ঢাল হয়ে দাঁড়ালো, তাই তিনি রক্ষা পেলেন, আর কয়েকটি তাজা প্রাণ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। পুলিশি বর্বরতার মুখে নিরস্ত্র আলিম ও ছাত্রজনতার মিসিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। আমি এবং আরো দু’জন সাথী গুলিবিদ্ধ একছাত্র ভাইকে কাঁধে তুলে নিলাম। সম্ভবত গুলি তার গলায় লেগেছিলো। পরে তাকে গাড়ীতে করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস'া করা হলো। লাল তাজা রক্তে রাজপথ ভেসে গেলো। বহু ছাত্র গুলিবিদ্ধ হলো, লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হলো এবং অসংখ্য ছাত্র গ্রেফতার হলো। এ অবস'ায়ও আহত ও রক্তাক্ত তালিবানে ইলম হাটহাজারীর পথে প্রতিবাদ সভা করে তাদের দাবিদাওয়া পেশ করলো। প্রতিবাদসভায় আহতব্যঘ্ররা হুঙ্কার দিয়ে জানিয়ে দিলো, জান দেবো, তবু ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখে দেবো। মাদারাসায় এসে যে কেয়ামতের দৃশ্য দেখলাম তাতে দেহের সঙ্গে আমার হৃদয়েও যেন রক্তক্ষরণ হতে লাগলো। একজনের পিঠে একে একে সাতটি গুলির আঘাত! কারো গুলি লেগেছে পায়ে, কারো হাতে, কাঁধে। লাঠির আঘাতে কারো হাত ভেঙ্গেছে, কারো পা, কারো বা মাথা ফেটে গেছে। সব ব্যান্ডেজ ভিজে লাল হয়ে আছে। এদের কী অপরাধ ছিলো? সন্ত্রাস, হত্যা, লুণ্ঠন, ধ..?! নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামের পক্ষে আওয়ায তোলা কি এত বড় অপরাধ?! আজ না হোক, এর জবাব একদিন দিতেই হবে। কারণ শেষ দিনের জন্য সর্বোচ্চ বিচার তোলা আছে। রক্তঝরা ২৪শে ফেব্রুয়ারী আরেকবার প্রমাণ করলো, এখনো যদি আল্লাহর নামে বুক পেতে দাঁড়ানো হয়, এখনো যদি দ্বীনের জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়া হয় তাহলে আল্লাহর গায়বি মদদ এখনো নেমে আসে আসমান থেকে। যার পিঠে সাতটি গুলি লেগেছে সে বলতেই পারেনি এতগুলো আঘাতের কথা, যার মাথা ফেটে গেছে সে জানতেই পারেনি তার এত রক্তঝরার কথা। একছাত্রকে পুলিশ যখন লাঠি দিয়ে আঘাত করলো সে নিজের অজানে-ই লাফ দিয়ে সরে গেলো, আর আঘাত গিয়ে লাগলো পিছনের পুলিশের মাথায়। সে মাটিতে পড়ে গেলো, কিন' ছাত্রটি আল্লাহর রহমতে অক্ষত থাকলো। সে জানালো, আমার মনে হয়েছে ফিরেশতা আমাকে সরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের ফরিয়াদ কোন মানুষের কাছে নয়, আমাদের যা কিছু ফরিয়াদ তা শুধু আল্লাহর কাছে। তবে শুনে রাখো হে যালিম, যে রক্ত ঝরেছে তার প্রতিটি কণা থেকে জন্ম নেবে নতুন রক্ত! এ রক্তের ফোয়ারা বন্ধ হবে না কখনো। রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে সব অন্যায়
শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা