মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

রোযনামচার পাতা

নানুকে মনে পড়ে

লিখেছেনঃ ইবনে আবদুস-সালাম

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

২-৮-৩০ হিঃ

আজকের সন্ধ্যাটা এত বিষণ্ণ কেন! সেই সঙ্গে আমার মনটাও। আসলে কার বিষণ্ণতা কাকে স্পর্শ করেছে? সন্ধ্যার বিষণ্ণতা মনকে, না মনের বিষণ্ণতা সন্ধ্যাকে?

আজকের বিষণ্ণ সন্ধ্যায় মনে পড়ে গেলো আট বছর আগের সেই বিষণ্ণ সন্ধ্যার কথা।

সেদিন সেই বিষণ্ণ সন্ধ্যায় যখন সূর্যটা পশ্চিম দিগন্তে অস্ত গিয়েছিলো তখন আমার নানুরও জীবন- সূর্যের অস্ত ঘটেছিলো। আমাদের কাছে অবশ্য খবর এসেছিলো নানুর অসুস্থতার, তবে বুঝতে বাকি ছিলো না, এর পিছনে কত মর্মান্তিক খবর লুকিয়ে আছে। আম্মা অস্থির হয়ে পড়লেন। তিনি তখনই রওয়ানা হতে চাইলেন, কিন্তু সেটা সম্ভব ছিলো না। আমাদের সবার রাতটা যেন পার হলো কাঁটার বিছানায় শুয়ে।

আমরা যখন পৌঁছলাম নানুর জানাযা তখন প্রস্ত্তত।

নানুর মৃত্যু আমার কাছে অকল্পনীয় ছিলো। কিন্তু তাকদীরের ফায়ছালা তো আমাদের ইচ্ছা বা কল্পনার উপর নির্ভর করে না, আর তাকদীরের ফায়ছালা মেনে নেয়া ছাড়া উপায়ও থাকে না।

নানাজানকে আমি দেখতে পাইনি, দাদাজানকেও না। দাদুকে দেখেছি, মনে আছে শুধু আবছা একটু স্মৃতি। তাই নানুই ছিলেন আমার সব। কত রকম দুষ্টুমি করতাম, কতরকম কষ্ট দিতাম, নানু শুধু আদর করতেন। আমার দুষ্টুমি করা, আর কষ্ট দেয়াতেই যেন নানুর শান্তি ছিলো।

নানুকে হারিয়ে সেদিন জীবনে যে শূন্যতা এসেছিলো তার অনুভূতি এখনো আছে, হয়ত সারা জীবন থাকবে। এ শূন্যতা তো অন্য কিছুতে পূর্ণ হওয়ার নয়!

আজ এ বিষণ্ণ সন্ধ্যায় নানুকে আমার খুব বেশী মনে পড়ছে। কত দিনের কত দুঃখের, কত সুখের স্মৃতি আমার মনের পাতায় জমা হয়ে আছে। সুখের সময়ও নানু আমাকে কাছে ডেকে আনতেন। আমাকে ছাড়া যেন তার সুখের ভান্ডার পূর্ণ হতো না। দুঃখের সময়ও তিনি আমাকে কাছে পেতে চাইতেন। দুঃখের সময় আমাকে ছাড়া যেন তার সান্ত্বনা হতো না।

নানুর বড় আকাঙ্ক্ষা ছিলো আমি যেন কোরআনের হাফিয হই। হাফিয আমি হয়েছি, কিন্তু নানু তা দেখে যেতে পারেননি।

নানুর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে যখন কোরআন তিলাওয়াত করি নানু কি তা শুনতে পান?! নানুর আত্মা কি তাতে শান্তি পায়?!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা