মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

রোযনামচার পাতা

হা ফী দা শা ম সে র - রো য না ম চা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট


১-১২-৪৪ হি.

আল্লাহর শোকর, একটি ভালো কাজের তাওফীক হলো। দৃশ্যত এর কারণ হলেন আমার মা। মায়ের কোমল-কঠিন শাসন না হলে হয়ত...জীবনে বহুবার দেখেছি, মায়ের কোমল-কঠিন শাসনের কারিশমা। এজন্যই মায়ের সঙ্গে আমার অন্যরকম সম্পর্ক। আসলে ‘বিশেষ করে’ মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক হতে হবে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের, সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের।

৩-১২-৪৪হি.

বাংলায় বিসমিল্লাহ্ দুই খণ্ড পড়ার পর ছেলের কায়দায় বিসমিল্লাহ্ দ্বিতীয়বার সমাপ্ত হয়েছে। আল্লাহর রহমতে নাযেরায় বিসমিল্লাহ্ শুরু হবে। আলহামদু লিল্লাহ্ পড়া ও পড়ানো অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। কায়দার ‘কঠিন’ পড়া শিশুর জন্য এত সহজ হতে পারে, এ অভিজ্ঞতা আমার প্রথম। এর আগে ছিলো বিপরীত অভিজ্ঞতা, যখন মেয়েকে পড়িয়েছি। শিশুমনকে সামনে রেখে এ কায়দা যত সহজায়নের চেষ্টা করা হয়েছে, সম্ভবত আগে তা হয়নি; অন্তত আমার জানা নেই। ‘আগে বাংলা, তারপর আরবী’, আমার হুযূরের এ চিন্তা, আমি মনে করি, আল্লাহর পক্ষ হতে ইলহাম। ঘরে ঘরে মায়েরা কত যে উপকৃত হচ্ছেন! جزى الله الـمؤلـف أحسن الـجزاء  

৬-১২-৪৪ হি.

জীবনের এই সংক্ষিপ্ত সময়ে বাসস্থান কয়েকবারই পরিবর্তন করতে হয়েছে। তবে আল্লাহর রহমতে সবখানেই একখণ্ড হলেও আকাশের দেখা পেয়েছি। সেই আকাশের অনেক রকম সৌন্দর্য আমি দেখেছি। শরতের আকাশে সাদা-কালো মেঘের আনাগোনা। কখনো আঁধার রাতে ঝিলমিল তারার মেলা, কখনো পূর্ণিমার রাতে চাঁদ ও মেঘের লুকোচুরি খেলা। আবার ভোরে রাঙা সূর্যের উদয়, সন্ধ্যায় বিষণ্ন সূর্যের বিদায়। যদিও উদয়-অস্ত দু’টোই দেখতে হতো শহরের দালান-কোঠার আড়াল থেকে, তবু আমার ভালো লাগতো।

একটি আকাশের এত রূপ দেখতে কার না ভালো লাগে! সুযোগ অবশ্য কমই হয়, তবু আমি উন্মুক্ত আকাশের নীচে দাঁড়াই। চেষ্টা করি আকাশের সৌন্দর্য অনুভব করার এবং আকাশের দান গ্রহণ করার। সত্যি আকাশ মানুষের হৃদয় ও আত্মাকে অনেক সমৃদ্ধ করে, মানুষ যদি আকাশকে আপন করে নিতে পারে। যখন থেকে হযরতপুরে আছি, অনেক বড় পরিসরে আকাশ দেখতে পাই। বড় ভালো লাগে। বিশেষ করে অস্তযাওয়া সূর্যের সন্ধ্যার আকাশ, তন্ময় হয়ে শুধু তাকিয়েই থাকি! .... 

৯-১২-৪৪ হি.

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আজ নয় তারিখ, ঈদুল আযহার রাত। সৌভাগ্য যে, আমার হুযূরের পক্ষ হতে কোরবানির যাবীহা দেখার দাওয়াত পেলাম। এ সৌভাগ্যেরই প্রতীক্ষায় ছিলাম সারাটা দিন। গতবার হুযূরের সঙ্গে গিয়েছিলাম, এবার...। মাশাআল্লাহ্! পঁচিশটি বড় যাবীহা, পাঁচটি ছোট যাবীহা। আগামীকাল এবং পরশু কোরবানি করার পর যথাক্রমে হযরতপুরে ও আশরাফাবাদে কোরবানির হাদিয়া বিতরণ করা হবে। দেড়হাজারের বেশী গরীব ও অসহায় পরিবারে যাবে কোরবানির হাদিয়া। এমন সুশৃঙ্খলভাবে ও নীরবে সবকিছু সম্পন্ন হয় যে,...প্রতিটি মাদরাসা যদি এভাবে চিন্তা করে তাহলে আলিম-সমাজের প্রতি সমাজের অনুভূতি অন্যরকম ...। 

০০ (জীবন কত মধুর! জীবন কত বিচিত্র! জীবন কত গতিশীল! হাফীদা শামস্ যখন এই শিরোনামে পুষ্পের পাতায় প্রবেশ করে তখন সামান্য একটি মেয়ে। এখন সে একটি মেয়ে, একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মা। আজ তাকে নিজের কিছু জায়গা ছেড়ে দিতে হচ্ছে মেয়ে ও ছেলের জন্য। ইনশাআল্লাহ্ হয়ত... তবে আশা করি, মা হিসাবে এটা তার জন্য সৌভাগ্যই।

***

বিনতে মারয়াম, হযরতপুর

১০/১২/৪৪ হি.

আজ ঈদের দিন। সারা সকাল খুব বৃষ্টি ছিলো। দুপুরে অবশ্য থেমেছে; তবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিলো। বৃষ্টির মধ্যেই আল্লাহর রহমতে আমাদের মাদরাসার কোরবানির আমল সম্পন্ন হয়েছে। দুপুরের পর শুরু হয়েছে গরীব পরিবারের মধ্যে কোরবানির হাদিয়া বিতরণের কাজ। একটি মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেখলাম। শিশুদের আদর করে চকোলেট দেয়া হচ্ছে। তিনজন বুড়ো মানুষ এসে হাত পেতে দাঁড়ালো। তাদেরও চকোলেট দেয়া হলো। তাদের মুখেও হাসি ফুটলো। ওরা বোধহয় বুড়ো শিশু! এমন ঘটনা পড়েছি, দেখালাম এই প্রথম।

***

ইবনে মারয়াম 

২৯-১২-৪৪ হি

আজ দুপুরের দিকে যখন সবার খাওয়া শেষ শুধু আমি ‘খাছি’ (খাচ্ছি)। পরে ‘আবী’ বলছে কী জে (যে,) আজকে আসরের পরে ‘ইট্টু’ বায়রে (একটু বাইরে)  যাবে। পরে অনেক পড়াপড়ি (পড়া পড়তে হবে)। এসেছ (এসেছি) একদম মাগরিবে।

০০ শৈশবে যদি আমার সুযোগ হতো এমন ‘লেখক’ হওয়ার। আর এখন যদি দেখতে পেতাম আমার তখনকার হাতের এমন লেখা! যা হয়েছে আশা করি তাই ভালো হয়েছে।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা