মুহররম.১৪৪০হিঃ (৩/৬)

রোযনামচার পাতা

পঞ্চম সংখ্যার সম্পাদকীয় আমার অনুভূতি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

যতবার পড়ি, পড়ার আকুতি বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন বিষয়ে এর চেয়ে উত্তম লেখা থাকতেই পারে। তবে ভবিষ্যত জীবনের পথনির্দেশরূপে যথার্থই এটি ‘শতাব্দীর লেখা’। আদীব হুযূরের কলমের বড় একটা বৈশিষ্ট্য এই যে, তা জীবনের চিত্র অঙ্কন করে। জীবন সম্পর্কে নতুন চিন্তা, চেতনা, নতুন দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। বস্তুত জীবন-সম্পর্কিত তাঁর লেখা এত প্রচুর এবং এত বৈচিত্র্যপূর্ণ যে, সেগুলো একত্র করলে বিপুল আয়তনের একটা গ্রন্থ হতে পারে। আর এই লেখাটি হতে পারে গ্রন্থের ভূমিকা বা সারনির্যাস। ‘কাযা ও কাদার’ (তাকদীর ও ভাগ্য) সম্পর্কে যত কঠিন ও জটিল হাদীছ, সেগুলো সহজ-সরল, আবেগঘন ও মর্মস্পর্শী ব্যাখ্যা এখানে উঠে এসেছে। ‘নিয়ত ও নিয়তি’ এ পরম তাৎপর্যপূর্ণ শব্দযুগলের চেয়ে উত্তম ব্যাখ্যা তাকদীর সম্পর্কে আর কী হতে পারে!! তিনি লিখেছেন, ‘নিয়ত ও নিয়তি দু’টোরই ভূমিকা রয়েছে জীবনের মোড় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে।’কয়েক শব্দের এই ছোট্ট বাক্যটিতে বড় সুন্দরভাবে উঠে এসেছে জীবন সম্পর্কে একদিকে হুঁশিয়ারি ও সতর্কবাণী, অন্যদিকে বিপুল আশ্বাস ও সান্ত¡না।লেখাটির অন্যতম সৌন্দর্য হলো এর উপস্থাপনশৈলী। মানুষের কারণে মানুষের চোখ থেকে যে অশ্রু ঝরে তার দু’টি রূপ রয়েছে, একটা অশ্রু হলো অভিশাপ, একটি অশ্রু হলো আশীর্বাদ। দু’টি বিপরীতমুখী ঘটনা উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে কীভাবে একটি ঘটনা রাজপুত্রের জীবনে ডেকে এনেছে মর্মান্তিক পরিণতি, পক্ষান্তরে একটি সামান্য সদয় আচরণ একজন সাধারণ বালকের জীবনে বয়ে এনেছে ‘রাজসৌভাগ্য’।জীবনের দু’টি বিপরীত রূপের বিশদ চিত্রায়নের পর রয়েছে দু’টি সংক্ষিপ্ত চিত্রায়ন।এর পর সরাসরি চলে যাওয়া যেতো লেখাটির মূল বার্তা উপস্থাপনের অংশে। কিন্তু না, সুচিন্তিতভাবে এখানে পাঠককে চিন্তা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, যেন সামনের বার্তাটি গ্রহণের জন্য মানসিক প্রস্তুতি পূর্ণতা লাভ করে। তদুপরি প্রশ্নের শৈলীটি হয়েছে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী।জীবন ও জগত সম্পর্কে তাঁর প্রতিটি লেখা এমন জীবন্ত যেন ‘শ্বাস-প্রশ্বাস’ অনুভব করা যায়। কারণ জীবন ও জগত সম্পর্কে লেখার উপাদান তিনি আহরণ করেন জীবন থেকে, সাধারণত নিজের জীবন থেকে, প্রয়োজনে চারপাশের জীবন থেকে।ভেবে অবাক হই, তাঁর জীবন এত সমৃদ্ধ কীভাবে! নিজের কাছেই জবাব পেয়ে যাই, কারণ জীবনকে তিনি সঙ্গ দান করেন এবং জীবনের সঙ্গ গ্রহণ করেন। আল্লাহ যাকে দয়া করেন তার পক্ষেই শুধু এটা সম্ভব।একদশকের সময় পরিসরে যত দূর দেখেছি, জীবনের কোন সিদ্ধান্ত তিনি যুক্তি ও প্রয়োজনের বিচারে গ্রহণ করেন না। সবকিছুর আগে তিনি ‘আসমানের ইশারা’র ইনতিযার করেন এবং তা অনুধাবনের চেষ্টা করেন, যাতে জীবন জীবনদাতার সন্তুষ্টি অনুযায়ী যাপিত হয়।তাঁর সব লেখাই হৃদয় থেকে উৎসারিত, তবে জীবন ও জগত সম্পর্কে তাঁর লেখাগুলো হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত। তাঁর সব লেখাই আল্লাহর দান, তবে এ লেখাগুলো, আরো বিশেষভাবে এ লেখাটি হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ দান।আল্লাহর কাছে আমার সবসময়ের মিনতি, আমাকে এবং সকলকে ‘তাঁর লেখার আলো এবং তাঁকে দেখার আলো’ দু’টোই যেন দান করেন। আর তাঁকে যেন দান করেন জীবনের নতুন নতুন আলোকধারা।শেষ বাক্যটি সম্পর্কে-কারো কষ্টের অশ্রুতে তোমার আঁচল যেন না ভেজে, বরং তোমার আঁচল যেন সিক্ত হয় দুঃখী মানুষের কৃতজ্ঞতার অশ্রুতে।’জানতে ইচ্ছে করে বাক্যটি এমন হলে কেমন হতো? কষ্ট-অশ্রু থেকে তোমার আঁচল যেন থাকে মুক্ত; কৃতজ্ঞতা-অশ্রুতে তোমার আঁচল যেন হয় সিক্ত।’সম্পাদক ঃ আবু ফায়যান (ফায়রোয), প্রথমে তোমাকে আন্তরিক অভিনন্দন! (এ জন্য নয় যে, প্রশংসা পেয়েছি, বরং এ জন্য যে, আমার হৃদয়কে তুমি শান্তি এবং আত্মাকে প্রশান্তি দান করেছো!) সত্যি, আমার জীবনের এটি অন্যতম সেরা বিস্ময় যে, তুমি কলম ধরেছো, আর তোমার কলম সবার এবং আমার অগোচরে এত দূর অগ্রসর হয়েছে! এটা তাহলে সত্য, ‘বিসর্জনের মধ্যেই প্রকৃত অর্জন’!আশ্চর্য, আমার চেয়ে ভালো কে জানে, তোমার দিন-রাতের ‘পঁচিশঘণ্টা’ পুরোটাই খরচ হয় মাদরাসার জন্য, তাহলে কলম ধরেছো কখন! অনুশীলন করেছো কখন! নাকি শুরু থেকে শেষ এটা কুদরতেরই ‘কারিশমা’?!তোমার সমালোচনার মধ্যে চিন্তার উদ্ভাস রয়েছে, কোন সন্দেহ নেই। প্রথম কথা হলো এখানে ইযাফত উত্তম হবে। অর্থাৎ কষ্টের অশ্রু এবং কৃতজ্ঞতার অশ্রু। দ্বিতীয়ত বাক্যটাকে কষ্টার্জিত ছন্দ তৈরী করা হয়েছে। কারণ অশ্রুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শব্দ হলো ভেজা ও সিক্ত, ‘মুক্ত’ নয়। তাই আমরা বলি, ধূমপানমুক্ত জীবন, কিন্তু বলি না, অশ্রুমুক্ত জীবন। ভেজা শব্দটি ভালো ও মন্দ উভয় ক্ষেত্রের জন্য, পক্ষান্তরে সিক্ত শব্দটি উত্তম ক্ষেত্রের জন্য।হাঁ, বাক্যটি আরো সুন্দর ও আবেদনপূর্ণ হতে পারে এভাবে, ‘তোমার আঁচল যেন না ভেজে কারো কষ্টের অশ্রুতে; তোমার আঁচল যেন সিক্ত হয় দুঃখীজনের কৃতজ্ঞতার অশ্রুতে।’পরিশেষে তোমার জন্য আন্তরিক ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান।’ 



শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা