জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

রোযনামচার পাতা

পুষ্পকলি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

 

                        পুষ্পকলি                                                                                 

                  পুষ্পকলি, ও পুষ্পকলি!

                  আগামী দিনের ফুলগুলি!!                                                                  

                   বুলবুলি, ও বুলবুলি!                                                                             

                 এসো বাগানে ফুল তুলি!!                                                                   

                   ফুলের মালা গলায় দিয়ে                                                                           

                   পরীর দেশে পথ চলি!!                                                                                             

 

ছোট্ট খোকা, ছোট্ট খুকি! আমার ছোট্ট একটি সালাম নাও। আশা করি তোমরা সবে আল্লাহ্র রহমতে ভালো আছো, সুস্থ আছো, লেখা-পড়ায় ব্যস্ত আছো এবং ভবিষ্যতের সুন্দর জীবনের পথে সুন্দরভাবে এগিয়ে চলেছো। জীবনের সকল কাজে তোমরা সফল হও, তোমাদের জন্য আমার এটাই কামনা।

এসো, আজ এখানে তোমাদের নতুন কিছু কথা বলি! এমন কিছু কথা যা শুনলে এবং মেনে চললে জীবন আমাদের সুন্দর হবে; মানুষ আমাদের ভালো বলবে এবং ভালোবাসবে। তার চেয়ে বড় কথা, আল্লাহ্ আমাদের ভালোবাসবেন! আল্লাহ্ আমাদের প্রতি খুশী হবেন; খুশী হয়ে দুনিয়াতে আল্লাহ্ আমাদের শান্তি-সুখ দান করবেন, আর আখেরাতে জান্নাত দান করবেন। চিরকাল আমরা জান্নাতে বাস করবো! জান্নাতের সুখ-শান্তি, জান্নাতের নায-নেয়ামত কখনো শেষ হবে না।

এবার শোনো সেই সুন্দর কথাগুলো! তার আগে বলো তো, তোমরা কি নিজেদের ছায়া দেখেছো! দেখবে না কেন, সবারই তো ছায়া আছে। বিশেষ করে সকাল বেলার ছায়া! তোমার ছায়া তোমার পিছনে থাকে। তুমি যেদিকে যাও তোমার ছায়া সেদিকেই যায়। তোমার ছায়া কখনো তোমার থেকে আলাদা হতে পারে না। তুমি যাবে ডান দিকে, তোমার ছায়া বাম দিকে, এ কখনো হতেই পারে না! তুমি যাবে সামনের দিকে, তোমার ছায়া যাবে পিছনের দিকে, এ কিছুতেই হতে পারে না। এ জন্য আমরা বলি, ‘ছায়ার মত অনুসরণ করা’! লোকটা আমাকে ছায়ার মত অনুসরণ করছে!

আমরা তো এখন ছোট! কিন্তু চিরকাল তো আর ছোট থাকবো না! ইনশাআল্লাহ্ একদিন আমরা বড় হবো এবং বড় আলেম হবো। আলিমকে বলা হয় নবীর ওয়ারিছ! এ জন্য দুনিয়াতে মানুষের কাছে এবং আসমানে আল্লাহ্র কাছে আলিমের অনেক মর্যাদা।

নবীর ওয়ারিছ কথাটার অর্থ কী? আসল অর্থ তো জানবে যখন বড় হবে। এখন সহজ করে বলি, নবীর ওয়ারিছ মানে হলো নবীর ছায়া। সারা জীবন আমরা নবীর ছায়া হয়ে থাকবো! ছায়ার মত নবীজীকে আমরা অনুসরণ করবো। নবীজী যা করেছেন, আমরা তা করবো, যেভাবে করেছেন সেভাবে করবো! নবীজী যা করেননি, আমরা তা কিছুতেই করবো না। এককথায় নবীজীর পুরো সুন্নাহ্ অনুসরণ করে আমরা জীবন যাপন করবো। আমাদের জীবন দেখেই যেন মানুষ বুঝতে পারে, কেমন ছিলো নবীজীর জীবন। তাহলেই আমরা হতে পারবো নবীর ছায়া, নবীর ওয়ারিছ! তাহলেই আমাদের জীবন হবে সুখী, সুন্দর ও সফল!

আল্লাহ তাওফীক দান করুন, আমীন। কথাগুলোর মধ্যে যদি কোন ভুল থাকে, দয়া করে আল্লাহ্ মাফ করুন! (এখানে যা কিছু বলা হলো, এ সম্পর্কে যদি তোমাদের কিছু বলার থাকে, আশা করি তোমরা আমাকে লিখে জানাবে। যার লেখা হবে সবচে’ সুন্দর তার জন্য রয়েছে সুন্দর একটি পুরস্কার!)

 

                কে তি নি ?

                                                                                              

আমি যখন আমার চারপাশে প্রকৃতির সৌন্দর্যের দিকে তাকাই তখন মুগ্ধ হয়ে ভাবি, এ সৌন্দর্যের মধ্যে আমি কার সৌন্দর্য দেখতে পাই? কে তিনি?

আমার ভিতর থেকে কে যেন উত্তর দেয়, তিনি আল্লাহ্!

যত দূর চোখ যায়, এই যে সর্ষেফুলের মাঠ, যেন হলুদ গালিচা, কী সুন্দর! এ সৌন্দর্যের মধ্যে আমি কার সৌন্দর্য দেখতে পাই? তিনি আল্লাহ্!

এই যে এত বড় মধুর চাক। মৌমাছিরা সর্ষেফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা করছে। মৌমাছি ও মৌচাকে আমি কার কুদরত দেখতে পাই? কে তিনি? আমার ভিতর থেকে কে যেন উত্তর দেয়, তিনি আল্লাহ্!

সকালে সন্ধ্যায় পাখীদের কী সুন্দর গান! পাখীরা কার নামে গান গায়? পাখীর কলরবে আমি কার যিকির শুনতে পাই? কে তিনি? তিনি আল্লাহ্। সৃষ্টির সকল সৌন্দর্যে লুকিয়ে আছে তাঁরই সৌন্দর্য।

(আফ্ফান বিন মুশিউর-রহমান)

পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবকিছু আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। চঁদ-সূর্য, গ্রহ-তারা আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। মেঘ-বৃষ্টি ও বিজলী-বাদল আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। নদী-নালা, পাহাড় পর্বত, সবুজ বন, বনের সমস্ত পশু-পাখী আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন। মাঠের ফসল, গাছের ফুল ও ফল আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন।

সবকিছু আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য, যেন এগুলো দেখে মানুষ আল্লাহ্কে চিনতে পারে। তারপর মানুষ যেন খুশিমনে আল্লাহ্র শোকর আদায় করে এবং আল্লাহ্র কথা মেনে চলে, আল্লাহ্র ইবাদত করে।

যারা আল্লাহ্র ইবাদত করে আল্লাহ্ তাদের প্রতি খুশী হন। নেক বান্দাদের জন্য আল্লাহ্ জান্নাত তৈরী করেছেন। -আমীর হামযা, মাদানী মাক্তাব

 

আমার মনে পড়ে এবং ভালো লাগে!

 

শৈশব এখন আমার থেকে অনেক দূরে, অন্তত পঞ্চাশ বছর দূরে। শৈশবের অনেক কিছুই এখন আমার কাছে অস্পষ্ট ও ধূসর। এত দূর থেকে না ভালো করে দেখা যায়, না চেনা যায়। তবু শৈশবের কথা ভাবতে বড় ভালো লাগে।

শৈশবের কিছু কিছু কথা এখনো মনে পড়ে এবং মনে পড়ে শৈশবের একজন দু’জন বন্ধুর কথা। মনে পড়ে এবং ভালো লাগে। চোখদু’টো তখন নিজের অজান্তেই ভিজে ওঠে। কেউ যদি দেখে ফেলে, বিশেষ করে আমার নাতী ও নাতিন দু’টো, যদি দেখে ফেলে, লজ্জা পাবো তো, তাই তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ফেলি।

 

মনে পড়ে, সাঁঝের বেলা শুরু হতো কী সুন্দর জোনাকির মেলা! আলোর কণারা পুরোটা অন্ধকার জুড়ে ছুটোছুটি করে, আর আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। দাদিমা বলতেন, এগুলো নাকি আকাশের তারাদের শিশুকন্যা, আমাদের আনন্দ দিতে রোজ নেমে আসে সন্ধ্যার আঁধারে। এখন আর জোনাকিদের দেখা পাই না। নাতী ও নাতিন বায়না ধরে, জোনাকির আলো দেখবো নানা! আমি তখন কী করি! আমি ওদের আমার শৈশবের জোনাকিদের গল্প বলি। ওরা খুশী হয়; আমার ভালো লাগে।

একটি ছেলের কথা এবং একটি মেয়ের কথা এখনো মনে পড়ে। ওরা ছিলো দু’টি ভাই-বোন। আমার সঙ্গে ছিলো অনেক ভাব। ওদের বাগান ছিলো। সারা বাগানজুড়ে কত রকমের যে ফুল! ছেলেটি, মেয়েটি ভালোবেসে আমাকে বলতো, রোয সকালে এসো, তোমাকে অনেক ফুল দেবো।

আমি ওদের চেয়ে একটু ছোট ছিলাম তো, তাই আমার সঙ্গে ওরা বড়দের মত কথা বলতো। আমাকে আদর করে যেন ওরা আনন্দ পেতো।

ওদের বাগানে এত ফুল ছিলো, কিন্তু ওরা মালা বানাতো না। একদিন আমি বেলীফুলের দু’টি মালা বানিয়ে ওদের উপহার দিলাম। কী যে খুশী হলো, ছেলেটি এবং মেয়েটি!

একদিন ছোট্ট ভাই-বোন দু’টি একসঙ্গে পুকুরের পানিতে পড়ে মারা গেলো। পানি থেকে তুলে এনে ওদের শুইয়ে রাখা হলো বাড়ির ওঠোনে। আমার মনে হলো, দু’টি ফুল যেন ঘুমিয়ে আছে পাশাপাশি। আমার কানে বাজলো সেই কথাটি, ‘রোয সকালে এসো, তোমাকে অনেক ফুল দেবো’।

পরের দিন ওদের বাগানে গেলাম। বাগানের একটি কোণেই বকুল গাছের নীচে হয়েছিলো ওদের কবর।

দেখি, ওদের মা দাঁড়িয়ে আছেন অনেকগুলো ফুল হাতে নিয়ে। খুব আদর করে বললেন, খোকা-খুকু তোমাকে ফুল দিতো না! এই নাও, তোমার জন্য ফুল কুড়িয়ে রেখেছি। মা, ফুলগুলো আমার হাতে দিলেন, আর আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন। আমারও কান্না পেলো, কিন্তু আমি কাঁদলাম না। মাকে সান্ত¡না দিয়ে বললাম, কাঁদবেন না মা! দেখবেন, ওরা জান্নাতের দুয়ারে আপনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে ফুল হাতে!

ওদের কবরে প্রতিদিন বকুলফুল ঝরতো। আমার খুব ভালো লাগতো।

যখন মনে পড়ে সেই ছেলেটির কথা, মেয়েটির কথা, চোখ দু’টো ভিজে ওঠে। ওদের কথা আমার মনে পড়ে এবং ভালো লাগে।

 

আমার বয়স এখন পঞ্চাশ (ঞ+চ) পার হয়েছে। তাহলে বলা যায়, তোমাদের চেয়ে আমি অনেক বড়। জীবনের দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে আমি এখন প্রায় পড়ন্ত বেলায় এসে পড়েছি। তোমরা যারা আজকের শিশু, তোমাদের দেখে আমার মনে যেমন আনন্দ হয় তেমনি বুকের ভিতরে ঠিক মাঝখানটায় চিনচিনে একটা ব্যথাও হয়!

কী অবাক হলে?! শোনো তাহলে।

শিশুদের দেখে কারো মনে আনন্দ হবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। শিশুরা তো নিষ্পাপ, যেন জান্নাতের ফুল! শিশুদের কাছ থেকে আমরা জান্নাতের ঘ্রাণ পাই। ফুলের কাছে গেলে যেমন আলতো করে একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে এবং ইচ্ছে করে একটু ঘ্রাণ নিতে, তেমনি কোন শিশুকে কাছে পেলে- হয়ত চিনি না, জানি না, কার ছেলে, কার মেয়ে- তবু ইচ্ছে হয়, আলতো করে একটু ছুঁই, মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদর করি, একটু ঘ্রাণ নেই, তাতে যেন জান্নাতি ফুলেরই ঘ্রাণ পাওয়া যায়!

যখন কোন শিশুর মুখে দেখি ফুলের মত সুন্দর হাসি তখন ইচ্ছে করে জীবনের সব কালিমা মুছে ফেলে আমি আবার এই শিশুটির মত নিষ্পাপ হয়ে যাই। এই শিশুটির মত সুন্দর করে হাসি। এই শিশুটির মত সবার আপন হয়ে যাই, সবাইকে আপন করে নেই। এই শিশুটির মত সবার মুখে হাসি ফোটাই, সবার মাঝে আনন্দ বিলাই। শিশুরা কাউকে কষ্ট দেয় না, আমিও যেন কখনো কাউকে কষ্ট না দেই।

ফুলের মত সুন্দর নিষ্পাপ শিশুকে দেখে মনের আকাশে আরো কত ইচ্ছে যে উদিত হয়, সবগুলো ইচ্ছের কথা ঠিক মত গুছিয়ে বলতেও পারি না! আচ্ছা থাক, মনের সেই সব ইচ্ছের কথা মনের মধ্যেই লুকিয়ে থাক।

এবার বলি, একটি শিশুকে দেখে আমার বুকের ভিতরে চিনচিনে ব্যথা কেন জাগে?

কারণ আমার তখন মনে পড়ে নিজের হারিয়ে যাওয়া শৈশবের কথা। আমিও তো একদিন তোমার মত এমন সুন্দর নিষ্পাপ শিশুটি ছিলাম। আমারও মুখে ছিলো জান্নাতি ফুলের হাসি! আমিও একদিন তোমার মত চারপাশের সবকিছু দেখে কেমন অবাক হতাম! শৈশবের সেই নিষ্পাপ হাসিটি এখন আমার মুখে নেই। শৈশবের সেই অবাক চাহনিটি এখন আমার চোখে নেই। শৈশবের সেই সুন্দর চিন্তাগুলো এখন আমার অন্তরে নেই। বুকের ভিতরে তখন আকুতি জাগে সেই নিষ্পাপ হাসিটি, সেই অবাক চাহনিটি ফিরে পাওয়ার, সেই সুন্দর চিন্তাগুলোর কাছে আবার ফিরে যাওয়ার; অথচ বুঝতে পারি, ফিরে পাওয়ার, ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই; তখন বুকের ভিতরে ঠিক মাঝখানে চিনচিন করে একটি ব্যথা জাগে।

বুকের সেই চিনচিনে ব্যথাটি বড় তীব্ররূপে অনুভব করি যখন আমার জীবনের কোন পাপ, কোন কলঙ্ক ও কালিমার ছায়া আজকের কোন শিশুর উপর পড়ে, আর সে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, আর যেন ভাবে, বড় মানুষ এমনও হয়!!

তখন ইচ্ছে করে, পৃথিবীর সবশিশুকে হাত জোড় করে বলি, আমার থেকে দূরে থাকো, আর আমাকে মাফ করে দাও।

(আ, ফ, জীবন-নদীর স্রােতে কোথায় ভেসে গেলো! মন বলে, ওদের প্রতীক্ষায় থাকো, হয়ত একদিন ফিরে আসবে। আমার শুভকামনায় কি কোন ত্রুটি ছিলো? কেন তাহলে এমন হলো?!

 

 

বয়স আমার একটুও বাড়েনি!!

 

আমার মনে হয় কী! বয়স আমার একটুও বাড়েনি!! এখনো আমি ঠিক তোমাদেরই মত শিশু! বিশ^াস হলো না তো! জানতে চাও, তাহলে মুখে কেন সাদা দাড়ি?!

এখানেই তো করেছো ভুল! আসলে ওগুলো দাড়ি নয়, আজ সকালে কাশবনে গিয়েছিলাম তো ক’জন বন্ধু মিলে! ঐ যে দূরে নদীর তীরে বিশাল কাশবন, কী সুন্দর ফুটে আছে সাদা সাদা কাশফুল! ঐ কাশবনে গিয়েছিলাম ক’জন বন্ধু মিলে লুকোচুরি খেলতে। তখন হলো কী, সাদা সাদা কাশফুল মুখে আটকে গেলো! এবার বিশ^াস হলো তো আমার কথা! আসলেই আমি বড় হইনি! বুড়ো তো বিলকুল হইনি! আমি তোমাদেরই মত একটি শিশু! খুব বেশী হলে বলতে পারো, বড় শিশু! এই দুষ্টরা, আবার যেন বলো না, ‘বুড়ো শিশু’!

এই, কাছে এসো না, দূরে থাকো। টান দিয়ে দেখতে চাও বুঝি, দাড়ি না কাশফুল?!

আচ্ছা বাবা, আমি নিজেই কবুল করে নিলাম, কাশফুল নয়, ওগুলো বুড়ো মানুষের সাদা দাড়ি! কবুল না করে উপায় কী! দাড়ি ধরে যখন দেবে টান, ধরা তো পড়েই যাবো, মাঝখান পাবো ব্যথা! তোমরা হবে হেসে খুন, আমি হবো ব্যথায় কাবু!

আসলে হয়েছে কি জানো! বয়সে বুড়ো হয়েছি যদিও, মনটা এখনো রয়ে গেছে শিশু, ঠিক তোমাদের মত। তাই ইচ্ছে হয়, তোমাদের সঙ্গে থাকি, তোমাদের সঙ্গে খেলা করি। তোমাদের সঙ্গে মিলে বালু দিয়ে ঘর বানাই। আর ইচ্ছে হয়, তোমাদের সঙ্গে বাগানে গিয়ে ফুল কুড়াই! ওই যে প্রজাপতিরা উড়ে বেড়ায় এ ফুল থেকে ও ফুলে! এ ডাল থেকে ও ডালে! ইচ্ছে হয়, তোমাদের সঙ্গে প্রজাপতির পিছনে ছুটে বেড়াই।

এমন অদ্ভুত ইচ্ছে কেন হয়, সে তোমরা বোঝবে না এখন। আসলে জীবনের দীর্ঘ পথ চলতে চলতে বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি! জীবনের সব ঝড়ঝাপটার মুকাবেলা করে করে এখন বড় দুর্বল হয়ে পড়েছি। তোমাদের মত শিশুদের যখন দেখি, কী সুন্দর হেসে খেলে বেড়াও! কোন দুঃখ নেই, কষ্ট নেই, চিন্তা নেই, আর দুশ্চিন্তা তো একদম নেই, তখন ইচ্ছে হয়, এই বুড়ো জীবনটা থেকে কিছু সময়ের জন্য একটু পালাই! লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাদের দলে ভিড়ে যাই।

রক্ষা করবে তোমরা বুড়ো মানুষের আব্দার! নেবে আমাকে তোমাদের দলে? কথা দিচ্ছি, তোমাদের মত শিশু হয়েই থাকবো! তোমাদেরই মত নিষ্পাপ শিশু! আমার কোন পাপের ছায়া যেন তোমাদের উপর না পড়ে, আমি খুব সতর্ক থাকবো! নেবে আমাকে তোমাদের দলে?!

 

ছোট্ট দু’টি মেয়ে (ওরা দুই বোন), পুষ্পের পাপড়ির সুবাসে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে এবং সুন্দর করে লিখতে শিখেছে। পুষ্পের বন্ধুদের জন্য ওরা সুন্দর একটি ফুলের তোড়া পাঠিয়েছে আমার হাতে। ওদের হৃদয় মনে হয় ফুলের চেয়ে সুবাসিত, ফুলের চেয়ে পবিত্র।

নাও, ওদের ‘হৃদয়ছোঁয়া উপহার তোমাদের হাতে তুলে দিলাম। ওরা লিখেছে, আল্লাহ্ যেন আমাদের সবাইকে জান্নাতে একত্র করে দেন, আহা, কী সুন্দর দু‘আ! হৃদয়ের গভীর থেকে বলছি, আমীন!

দু’বোনের নামও দেখো কত সুন্দর! আঈশা তেহনান ও মারিয়া মুসতানিরা

আমি বুড়ো মানুষ, দিল দিয়ে ওদের জন্য এবং তোমাদের সবার জন্য দু‘আ করি, আল্লাহ্ সবাইকে সুখে রাখুন, আমীন। -সম্পাদক

২/৭/৪০ হি.

তুমি মাঠে ফসল ফলাতে পারো? পারো না। আল্লাহ্র হুকুমে ফসল হয়।

 

 

একছোট্টমণিরছোট্টচিঠি!

০ নানা ভাই! আপনার দাড়ি কি কাশফুলের মত সাদা! কাশফুল আমার খুব প্রিয়, তাই আপনার দাড়িগুলোও আমার প্রিয়!

০০ এম্মা! এ দেখি এক্কেবারে নত্তুন এক মেয়ে! শোনো মেয়ে, হরিণের চোখ আমার প্রিয়। শুনেছি, তোমার চোখদু’টো হরিণের মত, তাই তোমার চোখদু’টো আমার খুব প্রিয়!

০ আচ্ছা, এবার শুনুন কাজের কথা!

০০ এতক্ষণ তাহলে কিসের কথা হলো গো মেয়ে! আচ্ছা, শুরু করো তোমার কাজের কথা! আমিও কাজীকে ...!

০ আমার আব্বু বলেছেন কী, আমাদের মাদরাসায় যখন বিরতি হবে তখন আব্বু আমাকে মাদরাসাতুল মদীনায় নিয়ে যাবেন। আমি তো খুশিতে আটখানা!

০০ আমি বুড়ো মানুষ, অত খুশী কি আর হতে পারি! তাই আমি খুশী হলাম তোমার অর্ধেক, চারখানা! চলবে তো?

০ হঠাৎ করে এসে আপনাকে তাক লাগিয়ে দেবো!

০০ না লক্ষ্মী মেয়ে! একটু খবর দিয়ে এসো। ফুল দিয়ে তোমার জন্য ‘আহলান ওয়া সাহলান’ লিখতে হবে তো!

০ আপনার বাগানে শুনেছি অনেক ফুল আছে!

০০ আছেই তো! আর অনেক মানে অ-নে-ক!!

০ বেলীফুল আছে! বেলীফুল আমার প্রিয়! খোঁপায় বাঁধি বেলীফুলের মালা!

০০ এইটুকুন মেয়ের খোঁপাও আছে! তা খোঁপা বাঁধতে জানো? আর রাঁধতে জানো?

০ আমাকে কী খাওয়াবেন, নানা ভাই?

০০ তাই তো! কী খাওয়ানো যায়! হাঁ, পেয়েছি! মিষ্টি কুমড়ো! মাদরাসার জমিতে হয়েছে বড় বড় মিষ্টিকুমড়ো।

 

আম্মুর বকা 

আম্মুর বকা খাওয়ার পর রাতের খাবার না খেয়েই ‘দুমদাম’ রাগ করে শুয়ে পড়লাম। যেই না চোখ দু’টো বন্ধ হলো অমনি স্বপ্নের দুয়ার খুলে গেলো! দেখি কী, বড় আর ছোট দু’টি পরী এসে হাজির! ওরা আবার দুই বোন। বলে কিনা, পরিদের রানী তোমাকে যেতে বলেছেন। আমরা তোমাকে নিতে এসেছি। শুনে আমি তো খুশী!

তার আগে শোনো, কেন আম্মুর বকা  খেলাম! সন্ধ্যায় আম্মু একবাটি দুধ দিলেন, আর বললেন, পুরোটা খেতে হবে! খাবো! দুধ আমি খেতেও পারি, কিন্তু আজ হলো কী! দুধের উপর ভাসছিলো বড় একটা সর। আমার আদরের মিনি বেড়ালটা পায়ের কাছে বসে করুণ সুরে মিঁউ মিঁউ করছিলো। কেমন জানি মায়া হলো। আম্মুকে লুকিয়ে... কিন্তু না, আম্মু দেখে ফেললেন, আর তখনি দিলে কড়া বকুনি। সেটাকেই আমি বলি বকা খাওয়া!

বেড়ালটাকে ভেংচি কেটে বললাম, আমি তোকে খাওয়ালাম দুধ-র্স, আর তুই কিনা খাওয়ালি আমাকে ববুনি, যা র্স!

আচ্ছা, এবার শোনো পরীর কথা। বড় পরীটা আমাকে পিঠে বসিয়ে ডানা মেলে উড়ে চললো, ছোট পরীটা ছোট ছোট ডানা মেলে বড় পরীটার পিছনে পিছনে এলো।

উড়তে উড়তে আমরা পৌঁছে গেলাম পরীর দেশে, যাকে বলে পরীস্তান। ওম্মা কী সুন্দর! তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না। চারদিকে ফুল আর ফুল, নানা বর্ণের, নানা আকারের! আর কী খোশবু!

আমি একটি ফুল ছিঁড়তে চাইলাম। যেই না হাত বাড়িয়েছি, ছোট পরীটিকোমলভাবে আমার হাতটি ধরে বললো, ভালো ছেলেরা গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে না। আমি লজ্জা পেয়ে বললাম, আম্মু আমাকে বলেছেন, ফুল ছিঁড়তে নেই! এখন ঘুমিয়ে আছি তো, তাই ভুলে গিয়েছি।

বড় পরীটা তো আমার কথা শুনে হেসেই খুন। পরীটা ‘ছিম ছিম, ছুম ছুম’ বলে হাত বাড়ালো, অমুনি বড় একটা ফুল এসে পড়লো পরীর হাতে। যেমন সুন্দর তেমনি তার খোশবু! বড় পরীটা আদর করে বললো, এই নাও তোমার ফুল।

বড় পরীটা আমাকে নিয়ে গেলো রানীর প্রাসাদে। এমন সুন্দর প্রাসাদ পরীর দেশেই শুধু কল্পনা করা যায়। পরীর রানীকে সালাম দিলাম। রানীপরী খুশী হয়ে বললেন, তুমি খুব ভালো ছেলে!

তারপর রানীপরী বললেন, তুমি তো ক্ষুধার্ত, রাতে কিছু খাওনি। এসো আমি তোমাকে অনেক মজার মজার খাবার খাওয়াবো। ...

বিদায়ের সময় রানীপরী আমার চিবুক ধরে অনেক আদর করে বললেন, খোকা, মায়ের সঙ্গে কখনো রাগ করো না, মায়ের তাতে কষ্ট হয় ...

একটি কোমল হাতের ছোঁয়ায় ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো! চোখ মেলে দেখি, আম্মু কেমন মায়ার চোখে তাকিয়ে আছেন! আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আম্মু, তোমার বকুনি খেয়ে আর কখনো রাগ করবো না।

আমার কথা শুনে আম্মু এমন খুশী হলেন যে, তার চোখে পানি এসে গেলো। আমার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, তুমি খুব ভালো ছেলে! তুমি আমার হিরামানিক!

-শাব্বীর আহমদ ইলিয়াস

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা