রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭)

রোযনামচার পাতা

হা ফী দা শা ম সে র রো য না ম চা

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

২৫-১-৪০ হি.

জানালা দিয়ে একটি সুন্দর দৃশ্য দেখলাম। একটি ক্ষুর্ধাত কুকুরকে রুটি খাওয়ানোর দৃশ্য। অবজ্ঞার সঙ্গে ছুঁড়ে দেয়া নয়, কোমলভাবে, আল্লাহর মাখলূকের প্রতি দয়া-মায়া নিয়ে। এমন দৃশ্য কখনো দেখেছি, মনে পড়ে না। আরো ভালো লাগলো, মেয়েটি বোরকা পর।

রুটির শেষ টুকরোটি দিয়ে মেয়েটি যখন ফিরে যাচ্ছে, কুকুরটা তার পিছনে পিছনে গেলো না। শুধু তাকিয়ে থাকলো যতদূর দেখা যায়, যেন কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে। মেয়েটিও বারবার ফিরে তাকালো গলির মোড় পর্যন্ত, যেন পূণ্য অর্জনের আত্মতৃপ্তি নিয়ে।

মনে পড়লো হাদীছের সেই ঘটনা! কল্পনার চোখে যেন স্পষ্ট দেখতে পেলাম দূর অতীতের সেই মেয়েটিকে। পাপের পঙ্কে ডুবে থাকা ‘নিষ্পাপ’ একটি মুখ। একটি পিপাসার্ত কুকুরের জন্য কী উৎকণ্ঠা তার চোখে মুখে! কোন উপায় না পেয়ে মাথার উড়না, আর পায়ের জুতার সাহায্যে কুয়া থেকে ...!

আফসোস, এমন সুন্দর একটি দৃশ্যের আমি শুধু দর্শক!

২৭-১-৪০ হি.

শান্তির স্বপ্ন এখন আর দেখা হয় না। আজ দেখা হলো। বড় শান্তির একটি স্বপ্ন দেখে জেগে উঠলাম। শান্তির আমেজ তখনো আমার সর্বসত্তাজুড়ে!

ছোট বোনটি পাশে বসে পড়ছে। আশ্চর্য, এত কাছে বসেও সে জানতে পারেনি আমার স্বপ্নের কথা! আমিও জানতাম না তার এমন সুন্দর পাঠনিমগ্নতার কথা!

স্বপ্ন আর বাস্তব এক হয় না কেন? মধুর স্বপ্নগুলো যদি জীবনের সত্য, আর জীবনের তিক্ত সত্যগুলো যদি হতো নিছক স্বপ্ন!

১-২-৪০ হি.

হযরত আলী মিঁয়া রহ.-এর লেখা অবলম্বনে ছোটদের জন্য তৈরীলেখাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। ছোটদের হৃদয়কে বেশ স্পর্শ করছে। সেটা বুঝতে পারি আমার মেয়েকে দিয়ে। যখন পড়ে শুনাই তন্ময় হয়ে শুনতে থাকে। যদি নিছক অনুবাদ করা হতো, এত সুন্দর, এত মর্মস্পর্শী কি হতো! এটাকেই বোধ হয় বলে ‘ছায়া অনুবাদ’।

আরবী পাঠ হৃদয়ঙ্গম করার জন্য যে অনুবাদ তা শিশুসাহিত্যরূপে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। সে জন্য এমন অনুবাদই প্রয়োজন যা পুষ্পে করা হয়েছে। আমার হুযূরের কলমে এমন লেখা আল্লাহ আরো দান করুন।

০০ আমার তো কামনা হলো, বিদায়ের আগে তোমাদের কিছু কলম যেন তৈরী হয়ে যায় আগামী জীবনের জন্য।

৩-২-৪০ হি.

প্রায় সারাটা দিন পুষ্পের সান্নিধ্যে ছিলাম। কষ্টের মেঘেরা যখন হৃদয়ের আকাশ আচ্ছন্ন করে ফেলে তখন আমি পুষ্পের সান্নিধ্য গ্রহণ করি। কখন একসময় দেখি, হৃদয়ের আকাশ স্বচ্ছ হতে শুরু করেছে। একসময় মনে হয়, সারাটা আকাশ যেন বৃষ্টির পর মিষ্টি রোদে হেসে উঠেছে। এটা আমার সবসময়ের অভিজ্ঞতা। জানি না, অন্যদের এমন হয় কি না! কী আছে আসলে পুষ্পের লেখাগুলোতে! একটি দরদী হৃদয়ের স্পর্শ!

ষষ্ঠ সংখ্যার সম্পাদকীয় একবার পড়লাম। দ্বিতীয়বার পড়া শুরু করেছি একটু একটু করে। উপলব্ধি ও চিন্তাকে জাগ্রত করে। কীভাবে, কোন্ ভাষায় প্রকাশ করবো হৃদয়ের অনুভূতি!

শুধু সম্পাদকীয়গুলোর কথাই যদি বলি, প্রতিটি সম্পাদকীয় আমাদের জীবনের জন্য অমূল্য সম্পদ।

ষষ্ট সংখ্যার সম্পাদকীয়-এর একটি বাক্য সম্পর্কে ভাবছি; চতুর্থ লাইনে- ‘যার ভিত্তি ইসলামের নবীর জন্ম বা মৃত্যু-দিবসকে কেন্ত্র করে নয় ...

এখানে ‘দিবস’ শব্দটি না হলে কেমন হতো!

০০ সত্যি তো! বড় লজ্জাজনক ভুল! তোমার রুচিবোধ ও সমালোচনাজ্ঞান ভালো লেগেছে। তুমি বলতে পারতে, ‘দিবস শব্দটি না হলেই ভালো হতো মনে হয়।’

তা না বলে তুমি বিনয়ের সঙ্গে জানতে চেয়েছো, ‘না হলে কেমন হতো!’

এটা সবার হয় না; যাদের হয় তাদের জীবন সুন্দর হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। তোমার জন্য আমার হৃদয়ের ¯িœগ্ধ শুভকামনা!

৫-২-৪০ হি.

কত অকৃতজ্ঞ আমি, আর কত দয়ালু, কত মেহেরবান তিনি! দিন -রাত নেয়ামতের পর নেয়ামত দান করেই চলেছেন। নেয়ামতের মধ্যেই তো ডুবে আছি সকাল-সন্ধ্যা! তবু কোথায় একটু শোকর, একটু কৃতজ্ঞতা!

সকাল থেকে যত রকম অবস্থার সম্মুখীন হলাম, শুধু মনে হলো, কোমলভাবে তিনি আমাকে তারবিয়াত করছেন!

রাতের দস্তরখানে আশ্চর্য এক প্রশান্তির অনুভূতি হলো। সারা দিনের সব কষ্ট ও বিষণœতা দূর হয়ে গেলো, যখন মনে হলো, এই যে ক্ষুধার অন্ন, আমি কি এর উপযুক্ত ছিলাম! তবু তো দয়াময় এত মায়া করে, কোন কষ্ট না দিয়ে ক্ষুধার অন্ন যুগিয়েছেন। আমি যেন তার মেহমান, তিনি যেন আমার মেযবান!

কীভাবে শোকর আদায় করবো আমার মাওলার!

৯-২-৪০ হি.

সব কাজ গুছিয়ে ক্লান্ত শরীরে বিছানায় এলাম। বেশ কিছুক্ষণ হলো ঘুম পাড়িয়ে গিয়েছি। এখনই জেগে ওঠবে না তো! একট ঘুমোতে পারবো তো!

ভাবতে ভাবতে চোখটা মাত্র লেগে এসেছে, ঠিক তখন জেগে উঠলো এবং ...!

আমার কি কষ্ট হলো, বিরক্তি!! না! কোন মায়েরই কষ্ট হয় না। কারণ মায়েরা ঘোমায় প্রায় জাগ্রত অবস্থায়, একটি কান্নার জন্য উৎকর্ণ হয়ে!

বারবার মনে পড়ে আমার মায়ের কথা। এমন করেই হয়ত তিনি ঘুমুতেন, আর এমন করেই আমি কেঁদে উঠতাম!

বড় হয়ে সন্তানের কি মনে পড়ে মায়ের কষ্টের কথা! মায়ের ত্যাগ ও আত্মত্যাগের কথা!

চারপাশে যা দেখি, হৃদয়টা তাতে শুধু ভারাক্রান্তই হয়।

কামনা করি, সব সন্তান সব মায়ের জন্য যেন হয় চক্ষুর শীতলতা।

১৩-২৪০ হি.

পশ্চিম দিগন্তে নতুন চাঁদটি যখন উদিত হয়, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাকিয়ে থাকি চাঁদের দিকে। একটু একটু করে চাঁদের বড় হওয়া দেখতে আমার ভালো লাগে।

আগামীকাল পূর্ণিমা। কত প্রতীক্ষার পর মাত্র একটি রাতের পূর্ণিমা! একসময় হারিয়ে যাবে অমাবস্যার অন্ধকারে।

পূর্ণিমার পরে চাঁদের দিকে তাকাতে আমার কষ্ট হয়। কেমন একটা বিষণœতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি।

চাঁদের মতই জীবনের খ- খ- সুখের সময়গুলো। সুখের পেয়ালা ধীরে ধীরে পূর্ণ হয়, কিন্তু স্থির থাকে না, ধীরে ধীরে আবার শূন্য হতে থাকে। তাই জীবনের যা কিছু আনন্দ, সুখের পেয়ালাটা পূর্ণ হওয়ার আগে!

চাঁদের সান্ত¡না, তার জীবনে বারবার আসে পূর্ণিমা। মানুষের জীবনে সান্ত¡না কোথায়!

০০ মানুষের জীবনে সান্ত¡না হলো, অনন্ত পূর্ণিমার সুসংবাদের মধ্যে!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা