রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

রোযনামচার পাতা

দেশ ও সমাজের দিনলিপি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

তুমি ছিলে, তুমি আছো, তুমি থাকবে প্রতিটি হৃদয়ের পাতায়, প্রতিটি চোখের অশ্রুবিন্দুতে!! ওরা তোমাকে উৎখাত করতে চায়? পারবে না; তোমার শেকড় যে মাটির অনেক গভীরে!!

বৃহস্পতিবার

১৩-০৬-৩৪ হি./ ২৫-০৪-১৩ খৃ.

আগের দিন নয়াদিগন্তে ছোট্ট খবর ছিলো, সাভারে নয়তলা ভবন ‘রানা প্লাজায়’ ফাটল। তবু গতকাল জোর করে পোশাকশ্রমিকদের ভবনের ভেতরে ঢোকানো হয়েছে। সকালে হঠাৎ করেই যেন কেয়ামত! পুরো ভবন ধ্বসে পড়লো!! আজ নয়াদিগন্তের আটকলামব্যাপী প্রধান শিরোনাম হলো, ‘সাভারে লাশের পর লাশ’! ভবনটি সাভারের যুবলীগ নেতা রানা জনৈক হিন্দু রবিন্দ্রনাথ-এর জমি জবরদখল করে গড়ে তুলেছিলো। মাত্র ছয়তলার অনুমোদন ছিলো। করা হয়েছে নয়তলা; তাও অনুমোদিত নকশা অনুসরণ না করে। ইউএনও পরিদর্শন করে বলেছেন, ফাটল কোন সমস্যা নয়। ‘যুবলীগ নেতা’, সুতরাং শুধু সাতখুন নয়, সব খুনই মাফ!

সাভারবিপর্যয়ের কারণে একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

***

আজ নয়াদিগন্তের উপসম্পাদকীয় পাতায় বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, কবি ফারহাদ মাযহারের একটি মূল্যবান লেখা এসেছে কওমি মাদরাসার উপর। সংগ্রহে রাখার মত। তাঁর লেখা থেকেই জানলাম, নূরুল মোমেন ভূঁইয়া নামে এক তরুণ গবেষক কওমি মাদরাসার উপর পিএইচডি করেছেন। আফসোস, কওমি মাদরাসার উপর গবেষণাপত্র হলো, অথচ আমার খবর নেই! এটি যোগাড় করার চেষ্টা করতে হবে।

ফারহাদ মাযহারের কয়েকটি মূল্যবান মন্তব্য

(ক) সাধারণভাবে ইসলাম ও বিশেষভাবে শিক্ষার প্রতি কওমি মাদরাসার সুনির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে। সেকারণেই এই ধারার নৈতিক বল, বা তাদের ভাষায় ‘ঈমান-আকিদার’ শক্তির তাৎপর্য অন্যদের থেকে ভিন্ন। তাই ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো, তাদের আলাদা করে বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।

(খ) শিক্ষা মানুষের জন্য। মানুষ সম্পর্কে প্রাথমিক কোন অনুমান ছাড়া কোন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা অসম্ভব। কওমি মাদরাসার অনুমান হচ্ছে, মানুষ জীবজন্তু নয়। অতএব জীবের বৃত্তিসম্পন্ন ভোগী মানুষ তৈরী করা শিক্ষার লক্ষ্য হতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ যেহেতু পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা সেহেতু প্রতিটি মানুষের এমন কিছু আধ্যাত্মিক গুণ রয়েছে যার বিকাশ ঘটানোই শিক্ষার কাজ। এটা অনস্বীকার্য যে, সমাজে বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন আছে, সাধারণভাবে যাকে বলা হয়, সমাজে কিছু একটা করে খাওয়ার শিক্ষা। কওমি মাদরাসা সামাজিক মানুষের এই চাহিদাকে মোটেও অস্বীকার করে না, কিন্তু মাদরাসার দায়িত্ব নয় কলকারখানা ও অফিস-আদালতের জন্য শিক্ষার নামে শ্রমিক সরবরাহের কারখানা চালানো, অথচ আধুনিক বা পুঁজিবাদী শিক্ষার এটাই প্রধান উদ্দেশ্য। ....

(গ) খুবই দরকার কওমি মাদরাসার প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস, সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলেম ওলামাদের সম্পর্কের ধরণ সুনির্দিষ্টভাবে পর্যালোচনা করা। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও আতঙ্কের কারণে শহুরে সেকুলার মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণী যত সহজে এই শক্তিকে উপেক্ষা করতে চাইছে, বাস্তবতা অত সহজ নয়। মাওলানা মাশায়েখদের প্রতি তাদের বদ্ধমূল শ্রেণীঘৃণা উগরে দিয়েই তারা ভাবছে, এই শক্তিকে মোকাবেলা করা যাবে। আসলে তা হবে না। কর্তব্য হলো বাস্তব পরিস্থিতির বাস্তব অনুধাবন ও সঠিক বিশ্লেষণ।

(ঘ) কওমি মাদরাসাকে ‘আধুনিক’ করার কথা বলা হচ্ছে, যাতে শিক্ষা সম্পর্কে তার বৈপ্লবিক দিক আড়াল করে বিদ্যমান ব্যবস্থার অধীনে একে আনা যায়।

টুইন টাওয়ার হামলার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে অনন্ত যুদ্ধের শুরু, সেখানে কওমি মাদরাসাকে প্রধান টার্গেট করা হয়েছে। তাদের বিশেষ লক্ষ্য এখন কওমি শিক্ষাব্যবস্থা। ...

(ঙ) আলেম ওলামারা কওমি মাদরাসাশিক্ষার সংস্কার চান না, তা নয়। চান। প্রয়োজনে নানান সময়ে সংস্কার হয়েছেও। তবে সেটা হয়েছে ইসলামি তালিম সম্পর্কে তাদের নীতি, দর্শন ও আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। কিন্তু আধুনিক বা যুগোপযোগী করার নামে আদর্শের পরিপন্থী শিক্ষা চাপিয়ে দেয়া, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী জড়িত। সেই সময়ের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কন্ডালিসা রাইসা রীতিমত ঘোষণা দিয়েই তা জানিয়েছেন। কন্ডালিসার দাবি হচ্ছে, ‘কওমি মাদরাসার ছাত্ররা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ঘৃণা করতে শেখে। তাদের জন্য ব্যবহারিক বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা দরকার, যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা আর ঘৃণা না করে।’ অর্থাৎ তারাও যেন পুঁজিবাদের গোলাম হয়ে সা¤্রাজ্যবাদের সেবা করে যেতে পারে।

ফারহাদ মাযহারের লেখাটির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট হচ্ছে হেফাজতে ইসলামের বিস্ময়কর উত্থান। আমার মনে হয়, হেফাজতে ইসলামের মাধ্যমে এই যে নবজাগরণ, তা আমাদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কোথায় আমাদের শক্তি, আর কোথায় দুর্বলতা। যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হলে এখনই আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে কওমি শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়টি, যাতে অন্যরা হস্তক্ষেপের সুযোগ না পায়। যথেষ্ট বিলম্ব হয়েছে, আর বিলম্বের সুযোগ নেই।

শুক্রবার

১৪-০৬-৩৪ হি./ ২৬-০৪-১৩ খৃ.

৫ই মে ঢাকা অবরোধের প্রস্তুতি হিসাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী সমাবেশ হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে গতকাল ফেনীতে বিশাল সমাবেশ হয়েছে। মঞ্চ থেকে ঘোষণা এসেছে, ‘১৩ দফা না মানলে, সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু করা হবে’।

মনে হচ্ছে, আন্দোলনের গতি ক্রমেই চরমপন্থার দিকে চলে যাচ্ছে। নিজেদের শক্তি সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা আছে কি না, সন্দেহ।

***

মন্ত্রী একটি আশ্চর্য শ্রেণী, তার মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো যেন আলাদা, তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘হরতালকারী বিরোধীদল বিএনপি, জামায়াতের জঙ্গিরা রানা প্লাজার পিলার ধরে ‘নাড়াচাড়া’ করার কারণে ভবনটি ভেঙ্গে গিয়ে থাকতে পারে।’ শাব্বাস! এই না হলে মন্ত্রী, তাও আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী! তাকে ‘মানসিক ভারসাম্য-হীন’ বলা হচ্ছে। আমরা অবশ্য এভাবে বলতে রাজী নই।

এত বড় বিপর্যয়ের পর প্রধানমন্ত্রী সংসদে যে বিবৃতি দিলেন, তাতে তিনি বললেন, রানা যুবলীগের কেউ নয়, আমার হাতে সাভারের যুবলীগের তালিকা আছে।’ অথচ সাভারে এখনো পোস্টার ঝুলছে, ‘পনেরই আগস্ট জাতীয় শোকদিবস’ মুরাদ জং এমপি, সৌজন্যে সোহেল রানা, সিনিয়র যগ্মআহব্বায়ক, সাভার পৌর যুবলীগ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে উপরের পোস্টারটি ছাপা হয়েছে নয়াদিগন্তে।

***

জনৈক উদ্ধারকর্মী ভবন থেকে বের হয়ে জানালেন, দু’জন মা ভবনের চতুর্থ তলায় সন্তান প্রসব করেছেন। মা ও সন্তান জীবিত আছে। এখনই তাদের উদ্ধার করা দরকার। তিনি বলেন, ‘শত শত লাশের মধ্যে সন্তানপ্রসবের যে দৃশ্য দেখে এসেছি তা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই।’

এ থেকেই বোঝা যায়, আমাদের দেশে কত অমানবিক অবস্থায় কাজ করে বা করতে বাধ্য হয়, বিশেষত নারী পোশাক শ্রমিকরা। এদের ব্যবহার করেই হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে নারিসমাবেশ করতে চেয়েছে সরকার! হায়রে মানবতা!

পত্রিকায় যে সব ছবি আসছে, সহ্য করার মত নয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সংবাদমাধ্যমের মতে, এপর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কাজ করে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং স্থানীয় মাদরাসাছাত্ররা। সেনাবাহিনী ও অন্যরা শুধু উদ্ধার করে আনা লোকদের নিয়ে ছোটাছুটি করেই বাহবা নিচ্ছেন!

***

সবকিছুই এখন মেলায় পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যমেলা ঠিক আছে, বইমেলাও হয়ত চলে, কিন্তু ‘হজ্জ ও ওমরা মেলা’!

পত্রিকায় একদিকে সাভার-বিপর্যয়ের হৃদয়বিদারক দৃশ্যের বিভিন্ন ছবি, তারই নীচে হেফাজত নেতাদের জিহাদি হুঙ্কার, আর পাশেই হলো, বঙ্গবন্ধুসম্মেলনকেন্দ্রে হজ্জ ও ওমরা মেলার উদ্বোধনের আড়ম্বরপূর্ণ ছবি। ফিতা কাটছেন সম্ভবত কোন আরবদূতাবাসের কেউ। অদ্ভুত! সবই অদ্ভুত! ওদিকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে চলছে বাংলাদেশ গেমসের আনন্দ-উৎসব। শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের খরচই আটকোটি টাকা! স্বর্ণ জয় করার পর সাইক্লিস্ট পারুল বিজয়চি‎হ্ন দেখাচ্ছেন! তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখে কে বলবে, সাভারে এখন ...!

আহতদের সেবায় সবার আগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে সাভারের ব্যক্তিমালিকানাধীন এনাম হাসপাতাল। ইবনে সিনাক্লিনিক গতকাল হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে পাঁচলাখটাকা মূল্যের জরুরি ঔষধ সরবরাহ করেছে। কিন্তু জাতীয় দৈনিকগুলোতে কোন সাধুবাদ নেই! আগে রাজনীতি, তারপর মানবতা!

আজকের নয়াদিগন্তের প্রথম পৃষ্ঠায় তিনটি ছবি এসেছে, প্রথম ছবিটি ধ্বংসস্তূপে চাপাপড়া দুই শ্রমিকের। একটি পুরুষ, একটি নারী। ছবির ক্যাপশন, ‘ছবিই বলে দেয়, বাঁচার কী সুতীব্র আকুতি ছিলো তাদের।’

দ্বিতীয় ছবি, শ্রমিক বিক্ষোভ ও ভাঙ্গচুরের। দেশের অর্থনীতির শত্রুরা সুযোগটাকে ভালোই কাজে লাগাচ্ছে!

তৃতীয় ছবিটি হেফাজতের ফেনীসমাবেশের, মঞ্চে নেতৃবৃন্দকে বেশ তরতাজাই দেখাচ্ছে। শুরু থেকেই আমার মনে হচ্ছে, এখন হেফাজত নেতাদের অপরিহার্য কর্তব্য হলো, সমস্ত কর্মসূচী স্থগিত করে জাতীয় ত্রাণতৎপরতার ঘোষণা দেয়া। ব্যাংকএকাউন্টের মাধ্যমে একটি জাতীয় ত্রাণতহবিল খোলা। আমার বিশ্বাস এতে জাতীয় পর্যায়ে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যাবে। আলেমসমাজের ভাবমর্যাদাও অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের আন্দোলনের জন্য হবে অত্যন্ত সহায়ক। এখন কর্তব্য হলো, প্রতিটি আহত ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের পাশে সহানুভূতি ও সাহায্য নিয়ে দাঁড়ানো। হেফাজতের চৌকস কর্মীদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় নিযুক্ত করা, কিন্তু ..!

শনিবার,

১৫-০৬-৩৪ হি./ ২৭-০৪-১৩ খৃ.

এপর্যন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৩১৪টি, জীবিত উদ্ধার পেয়েছে ২৩৯৭ জন, যার অধিকাংশই গুরুতর আহত। এখনো ভিতরে রয়ে গেছে অসংখ্য মৃতদেহ। লাশের দুর্গন্ধে উদ্ধার-তৎপরতা চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

***

অবশেষে প্রধানমন্ত্রীকে ঘোষণা দিতে হয়েছে সোহেল রানাকে গ্রেফতারের। এতেই বোঝা যায়, লোকটার খুঁটির জোর কত! তবে মনে হয় শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করে ‘বড়’দের রক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।

***

‘আমার’ দেশ বন্ধ; সম্পাদক মাহমূদুররহমানও বন্দী। আজকের খবর, হাসপাতালে তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এবার মনে হয় তার জানটা ‘কবজ’ করেই ছাড়বে। এই একটি মাত্র মানুষ ছিলেন, যিনি নির্ভয়ে লিখতেন এবং লিখতে পারতেন।

***

আজও একই অবস্থা, একদিকে আহত-নিহতদের উদ্ধারের মর্মস্পর্শী ছবি, অন্যদিকে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের ছবি। ব্যক্তিগত-ভাবে আমার কাছে বিষয়টি বড় কষ্টদায়ক মনে হচ্ছে।

হেফাজতের মহসচীব মাওলানা জোনায়দ বাবুনগরির নামে নয়া দিগন্তে লেখা এসেছে, ‘নাস্তিকদের কর্মসূচীতে নারীদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার’। অনেক কিছু লিখেছেন এবং ভালোই লিখেছেন, লেখেননি শুধু অসহায় এই সব ‘বানাতে আদমের’ প্রতি আমাদের বাস্তব করণীয় কী, সে সম্পর্কে! আল্লাাহ তা‘আলা আমাদের বিরাট সুযোগ দিয়েছেন সসম্মানে আন্দোলনের প্লাটফরম পরিবর্তনের। এখনই আমরা পুরো আন্দোলনকে সঙ্ঘাতের অবস্থান থেকে খেদমতে খালকের অবস্থানে নিয়ে আসতে পারি। নইলে যে ঝড় দেখতে পাচ্ছি তা থেকে উত্তরণের কোন উপায় নেই।

আমার ছেলে দেখছি পেরেশান। আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, তোমার মতে এখন করণীয় কী? আলহামদু লিল্লাহ, সে চিন্তা করে এবং যথেষ্ট সচেতন। কিছু দুর্বলতা আছে, সেগুলো কেটে গেলে আল্লাহ চাহে তো কিছু কাজ করতে পারবে। তাকে বিষয়টি বুঝালাম। সে বুঝলো এবং খুব জোরালোভাবে বললো, আমি যেন হেফাজতের আমীর ছাহেবের খেদমতে বিষয়টি পেশ করি। আমি বিব্রত হলাম। ওকে কীভাবে বোঝাই, আমাকে কে চিনবে, আর আমার কথারই বা কী গুরুত্ব হবে। কিন্তু সে ‘নাছোড়বান্দা’।

দুপুরের দস্তরখানে আমার স্ত্রীর একটি কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হঠাৎ করেই আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা করে বললাম, ঠিক আছে, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমি এ আবেদন পৌঁছাবো যে, আপনারা এই মুহূর্তে জাতীয় ত্রাণতহবিল ঘোষণা করুন, আমি সবার আগে তিনলাখ টাকা দান করবো এবং আপনাদের সঙ্গে এ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বো।

মাওলানা আব্দুল মালেক ছাহেবকে ফোন করলাম, তারপর মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহকে। তিনি খুবই উদ্বুদ্ধ হলেন, বললেন, ‘হযরত আহমদ শফী ছাহেবের ছাহেবযাদা মাওলানা আনাস আমার হামসবক। তার মাধ্যমে আপনার বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।’

দেখি, আল্লাহ কী করেন!

রোববার

১৬-০৬-৩৪ হি./ ২৮-০৪-১৩ খৃ.

গতকাল ২৯জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত কারো উদ্ধার পাওয়ার আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। শোকে কাতর স্বজনদের এখন দাবী, জীবিত না হোক, অন্তত লাশটি ফিরিয়ে দিন। দেশে নিয়ে দাফন করে একটু সান্ত¦না পাই!

***

আছরের পর মাদরাসার দফতরে মজলিস হলো। ছেলেকে এই প্রথম মজলিসে নিলাম। আমার ইচ্ছা, খেদমতে খালকের বিষয়টি সে নিকট থেকে দেখুক। মজলিসকে আমার বক্তব্য বললাম এবং জানালাম, মাওলানা আনাস ছাহেবের কাছে বার্তা পৌঁছেছে। তিনি বলেছেন, ‘আব্বাজানের’ সামনে বিষয়টি রাখবো।

আমি বললাম, সময় খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। সময়ের এককোপ, আর অসময়ের দশকোপ। খুব বেশী হলে আগামীকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। তারপর যদি ‘উপযুক্ত’ সাড়া না পাই তাহলে আমাদের সীমিত সাধ্য নিয়েই দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য বলে মনে হয়। সবাই একমত হলেন এবং যথাসাধ্য সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।

... ছাহেব বললেন, তিনি মুফতী ইযহার ছাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি বললাম, ঠিক আছে, তিনিও কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তবে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে; আগামীকাল আছরের পর আমরা বসবো, ইনশাআল্লাহ।

***

আবারও একই দৃশ্য। সাভারের আহত ও নিহতদের উদ্ধার তৎপরতার মর্মস্পর্শী ছবি, অন্যদিকে যশোরের মহাসমাবেশের ছবি। বাবুনগরী খুব জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চালাবেন, বাবুনগরী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মুখে মদীনা সনদের কথা বলেন, আর বাস্তবে ভারতের সনদ বাস্তবায়ন করেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ‘তার উপযুক্ত’ ভাষায় বলেছিলেন, হেফাযত লেঙ্গুর (লেজ) গুটিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়েছে, যশোরের সমাবেশে বাবুনগরী তার জবাবে বলেছেন, ‘লেজ গুটিয়ে চলে যাইনি, বরং হেফাজত সিংহের মত সারা দেশে বিরাজ করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইমরান সরকার হেফাজতে ইসলামের রক্ত দিয়ে শাহাবাগ রঞ্জিত করার হুমকি দিয়েছেন, তাই যদি হয় তবে এ দেশের কোটি কোটি মুসলিম তাদের রক্তে সারা দেশকে রঞ্জিত করবে।’

‘তাদের’ দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য যাই হোক, এরূপ উত্তেজক বক্তব্য ভালো মনে হচ্ছে না। বক্তব্য আরো আছে, ‘১৩ দফা না মানলে ৫ই মে হবে সরকারের ক্ষমতার শেষ দিন, সেদিন তারা পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।’

শুরু থেকে হেফাজত নিজেকে অরাজনৈতিক বলে দাবী করছে এবং তা ঠিক আছে, কিন্তু বক্তব্য দিন দিন রাজনৈতিক মারমুখিতার দিকে চলে যাচ্ছে। যেখানে বিএনপি এবং জামাতের মত ক্যাডারভিত্তিক সুসংগঠিত দল হিং¯্রতার মুখে দাঁড়াতে সাহস করছে না সেখানে হেফাজতের মত নিরীহ অসংগঠিত একটি দল কিসের ভিত্তিতে এভাবে রণহুঙ্কার দিচ্ছে, আমি তো বুঝতে পারছি না। বড় আশঙ্কা হয়, শেষ পর্যন্ত কী হবে?

***

মুরাদ জং-এর সঙ্গে সোহেল রানার অন্তরঙ্গ ছবি এসেছে নয়া দিগন্তে। সম্ভবত তারই আশ্রয়ে সে আত্মগোপন করে আছে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী আদেশ দিয়েছেন তাকে গ্রেফতারের।

সোমবার

১৭-০৬-৩৪ হি./ ২৯-০৪-১৩ খৃ.

অবশেষে ভারতে পালানোর পথে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা গ্রেফতার হয়েছে। বেনাপোল থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়েছে; মাশাআল্লাহ! মনে পড়ে, এ সরকারেরই আমলে বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ের সফল অর্থমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলেন, আর হেলিকপ্টারের অভাবে তাঁকে দ্রুত ঢাকা আনা গেলো না, ফলে তাঁর মৃত্যু হলো। অপরাধ শুধু এই, তিনি জাতীয়তাবাদী দলের মানুষ। সোহেল রানার গুণ, অপরাধী হলেও সে যুবলীগের নেতা।

***

আছরের সময় মজলিস হলো। বললাম, মাওলানা আব্দুল মালিক এবং মাওলানা যাকারিয়্যা আব্দুল্লাহ’র প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়েছে। ... ছাহেব বললেন, মুফতী ইযহার ছাহেবের খাদেম, মাওলানা শাহাদাতের মাধ্যমে মুফতী ছাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তবে তিনি ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এধরণের কাজ করার মত অবস্থায় তারা নেই’ বলে জানিয়েছেন। পুরো বক্তব্যটা শুনে কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে গেলাম।

সিদ্ধান্ত হলো মাদরাসাতুল মাদীনাহর পক্ষ হতে সাধ্যমত ত্রাণ তৎপরতা শুরু করার। কাজের প্রয়োজনীয় রূপকাঠামোও তৈরী হলো। এধরণের সামাজিক সেবামূলক কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সতর্কতার গুরুত্ব সম্পর্কে জরুরি কিছু কথা পেশ করে বললাম, আমাদের কওমি মহলে আমানতদারি আছে যথেষ্ট, কিন্তু স্বচ্ছতা ও সতর্কতা কম। ফলে আমানতদারির সঙ্গে কাজ করেও হিসাব চাওয়া হলে অনিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়ে যাই, এমনকি অনেক সময় আস্থারও সঙ্কট দেখা দেয়। তো আমাদের এই কাজে যেন স্বচ্ছতা ও সতর্কতা পূর্ণ মাত্রায় রক্ষিত হয়।

ছেলেকে দায়িত্ব দেয়া হলো ত্রাণবিতরণের ফরম তৈরীর। এধরণের কাজ এটাই তার জন্য প্রথম। আল্লাহ কবুল করুন।

***

দুর্ঘটনার নিকটবর্তী অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে আসা হাজার হাজার মানুষ দিন-রাত পড়ে আছে। তাদের মানসিক অবস্থা কী করুণ তা তো বলাই বাহুল্য। এমনকি তাদের ‘শারীরিক’ প্রয়োজনগুলো সারার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। স্থানীয় লোকেরা পানি ও খাবারের যৎসামান্য ব্যবস্থা করছেন। অথচ শাহাবাগে সরকারের রীতিমত জামাই আদরে ‘বসবাস’ করছে নাস্তিক ব্লগাররা! বিরিয়ানির প্যাকেট আসছে, আসছে মিনারেল ওয়াটার, তার উপর রয়েছে নাচগানের ব্যবস্থা। ‘বিরিয়ানি নিষ্কাশনের জন্য’ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে রয়েছে মোবাইল টয়লেটেরও ব্যবস্থা। সাভার ও শাহাবাগ, কত পার্থক্য!

***

গতকাল নয়াদিগন্তের ইন্টারনেট জনমত জরিপে প্রশ্ন ছিলো, ‘সাভারট্রাজেডির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হবে বলে মনে করেন কি? ৮৫.৭৮ মত ছিলো, ‘না’। জরিপের এ ফল স্বাভাবিক। কারণ বড় বড় অপরাধের পর সাজা না হওয়া এবং পার পেয়ে যাওয়া দেখে মানুষ অভ্যস্ত।

***

সম্পাদকীয় পাতায় ইবনে গোলাম সামাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা এসেছে ‘ইসলামে নারীর অবস্থান’ নামে। লেখাটি সংরক্ষণে রাখার মত। আরেকটি লেখার শিরোনাম হলো, ‘সাভারট্রাজেডি, নানা প্রশ্ন’। প্রশ্ন করে কী লাভ? আমাদের জীবনের কোন প্রশ্নেরই সমাধান নেই; না ব্যক্তিজীবনে, না পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে, আর না রাষ্ট্রীয় জীবনে।

***

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের জাবুল প্রদেশে ন্যাটোর বিমান বিধ্বস্ত হয়ে চারজন সৈন্য নিহত হয়েছে। (রয়টার্স)

সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, অর্থাৎ সিরিয়ায় আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ যেন ইরাক-নাটকের হুবহু পুনরাবৃত্তি। এদিকে সরকারী বাহিনীর পক্ষত্যাগী জেনারেল জহির আল -সাকিত অভিযোগটি সত্য বলে দাবী করেছেন। সময় হয়ত প্রমাণ করবে, ইনি হতে চাচ্ছেন সিরিয়ার ‘চালাবী’।

***

ইরাকে আল জাজিরা’র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ, সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতা উস্কে দেয়া। যার হাতে শক্তি তার শুধু অভিযোগ করাই যথেষ্ট, প্রমাণ করার কোন দায় নেই।

***

আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিকুররহমানের মন্তব্য, ‘সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন করা গ্রহণযোগ্য ছিলো না’। তার মতে এটি শুধু গণতন্ত্রেরই বিরোধী নয়, বরং ইসলামেরও শিক্ষাবিরোধী। কারণ ইসলামে ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই। এই ‘ভদ্র’ মানুষটিকে কে বোঝাবে, কাউকে জোর করে মুসলমান বানানোর দাবী তো কেউ করছে না। আমেরিকার চেয়ে বেশী গণতন্ত্র কি দরকার আছে? তাদের সরকারি মুদ্রায় তো ‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস’-এর কথা মুদ্রিত আছে, আর সে মুদ্রা একজন নাস্তিকও বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করছে!

মঙ্গলবার

১৮-০৬-৩৪ হি./ ৩০-০৪-১৩ খৃ.

দীর্ঘ পাঁচদিন ঐ মৃত্যুকূপে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেছে আটকে পড়া নারী শ্রমিক শাহানা। তৃতীয় তলায় শাহানার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর উদ্ধারকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শাহানার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো। শাহানার চোখে মুখেও দেখা দিয়েছিলো আশার ঝিলিক। হয়ত সে বাঁচবে; আদরের একমাত্র পুত্রকে আবার কোলে নিতে পারবে। উদ্ধারকর্মিদের আকুতি জানিয়ে বলেছিলো, আমার জন্য না, আমি বাঁচতে চাই আমার ছেলেটার জন্য। ওর জন্য হলেও আমাকে বাঁচান। হায়রে মা! এই মায়েরাও সন্তানের কাছে ‘বোঝা’ হয়ে যায় একসময়!

শেষ পর্যন্ত তকদীরের ফায়ছালা মেনে নিতেই হলো। বিমের রড কাটার সময় ফুলকি দ্বারা গামেন্টের ছড়ানো ছিটানো কাপড়ে আগুন লেগে গেলো। আর সব শেষ হয়ে গেলো। কাপড়গুলো সরিয়ে নিলে কিন্তু আগুন লাগতো না। আসলে এমন মুহূর্তে সবদিকে হুঁশ থাকে না। যা ঘটার তা ঘটেই যায়। অবশেষে অগ্নিদগ্ধ শাহানার লাশ বের করে আনা হয়েছে। পাঁচ দিন এমন কঠিন জীবন ধারণের পর এমন মর্মান্তিক মৃত্যু! অতি  পাষাণেরও চোখে পানি আসে!

***

প্রধানমন্ত্রী গতকাল গেলেন রানাপ্লাজার ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করতে। ‘পরিদর্শন’ শব্দটি পত্রিকার। আমার মনে হয় লেখা উচিত ছিলো ‘দেখতে’। বিরোধীদলীয় নেত্রী গিয়েছিলেন দুর্ঘটনার পরের দিন এবং প্রধানমন্ত্রী যথারীতি এর সমালোচনা করেছিলেন, এতে নাকি উদ্ধারতৎপরতা বিঘিœত হয়েছে। বেচারা খালেদা জিয়া!

প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন মানবিক কারণে হরতাল প্রত্যাহার করার। বিরোধীদল অবশ্য আগেই এ বিষয়ে বৈঠক শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য তার আহ্বানের মধ্যে নিজস্ব ‘আন্দাজ’টি বজায় রেখেছেন। তিনি বলেন, হরতালে যে টাকা তারা ব্যয় করতো তা যেন হতাহতদের পরিবারে দান করে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়ন ব্যয় হয়েছে এ বছর আটকোটি টাকারও বেশী, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

***

গতকাল রাজশাহী ও মৌলভীবাজারে হেফাজতের মহাসমাবেশ হয়েছে। আশ্চর্য, এত বড় একটা জাতীয় দুর্যোগ, সে বিষয়ে কোন বক্তব্য নেই। আল্লাহ জানেন, এর ফল কী!

***

আছরের পর মজলিস হলো। পঞ্চমবর্ষের ছাত্রদের নিয়ে তিনটি কাফেলা তৈরী হয়েছে। আগামীকাল সকালে মাওলানা মাহবুবুরহমান ছাহেবের যিম্মাদারিতে বড় কাফেলাটি যাবে সাভারে। সঙ্গে থাকবেন নদবী ছাহেব। দ্বিতীয় কাফেলা যাচ্ছে মাওলানা আশরাফ হালীমীর যিম্মাদারিতে ঢাকা মেডিকেলে। তৃতীয় কাফেলা যাচ্ছে পঞ্চম বর্ষে ছাত্র ... এর যিম্মাদারিতে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। প্রাথমিক কাজ হলো অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং আহতদের তালিকা ও পূর্ণ ঠিকানা সংগ্রহ করা।

***

বৃটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ডেইলী টেলিগ্রাফের চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন, ‘সাভারে উদ্ধারকাজে ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলো, যা বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে আরো সহজে উদ্ধারকাজ চালানো যেতো এবং অনেক লোকের জীবন বাঁচানো যেতো। কিন্তু এতে জাতীয় অহঙ্কার ক্ষুণœ হতে পারে ভেবে ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। পত্রিকাটির মতে তথাকথিত জাতীয় অহঙ্কার যাতে ক্ষুণœ না হয় সেজন্য প্রস্তাবে বিষয়টি গোপন রাখার কথা বলা হয়েছে; তবু সরকার রাজী হয়নি। হায়রে জাতীয় অহঙ্কার! সত্যি যদি জাতীয় অহঙ্কার বলে কিছু থাকতো!

***

দেশের সব বিভাগীয় ও গুরুত্বপূর্ণ শহরে মহাসম্মেলন শেষে বগুড়ায় হেফাজতে ইসলামের সর্বশেষ মহাসম্মেলন হচ্ছে। হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বগুড়া যাবেন। খবরটা পড়ে মাথায় যেন বাজ পড়লো। কী দরকার ছিলো এমন জাতীয় বিপর্যয়ের সময় এটা করার! তিনি বৃদ্ধ মানুষ, হাটহাজারিতে বসেই দো‘আ করতেন! আমার আশঙ্কা, শত্রুরা এটাকে লুফে নেবে। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হওয়া উচিত সুচিন্তিত।

***

সাভারট্রাজেডির মত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিকে বেছে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন দেশের চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার জন্য। অথচ এত দিন বিভিন্ন অজুহাতে নির্বচান বরাবর এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ১৫ই জুন হবে নির্বাচন। সাংবাদিকমহলে বিষয়টি বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

বুধবার. ১৯/০৬/৩৪ হি. ১/৫/১৩ খৃ.

মে দিবস পালিত হয়েছে। বক্তারা তুমুল বক্তব্য দিয়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষের হাড্ডিসার ছবিও পত্রিকায় এসেছে। কোন ব্যতিক্রম নেই। মাঝখানে রানাপ্লাজা থেকে উদ্ধার করা শতাধিক বেওয়ারিশ লাশ জুরাইনের কবরস্থানে দাফনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ভিতরে উপসম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় একটি লেখা আছে, ‘শুধু দিবস পালনে শ্রমিকদের কল্যাণ নেই’। কথা তো সত্য, কিন্তু ...!

বগুড়ায় হেফাজতের সম্মেলনে জনতার ঢল নেমেছে, আল্লামা শফী বলেছেন, প্রয়োজনে শাহাদতবরণ করবেন। তিনি বলেছেন, নাস্তিক মোরতাদদের দেশ থেকে তাড়াতে হবে। আল্লাহর দেশে নাস্তিকদের থাকার কোন অধিকার নেই। নয়াদিগন্ত বগুড়ার সমাবেশের ছবি ছেপেছে, কিন্তু প্রথম আলো বেশ মুন্সিয়ানা করে আল্লামা শফীর হেলিকপ্টারে আরোহণ করা অবস্থার ছবিটাই দিয়েছে, মন্তব্যসহ।

সংসদে প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, আহতদের পাশে না দাঁড়িয়ে রাস্তায় গাড়ি ভঙচুর ও ধ্বংস কেন? প্রধানমন্ত্রী নিজের অতীতটা যদি মনে রাখতেন!

১৮ দলীয় জোট আগামীকালের হরতাল স্থগিত করেছে। খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবার আলোচনার উদ্যোগ নেবেন।

কাদের মোল্লার আপিল শুনানি চলছে। যে কোন উপায়ে তাকে ফাঁসি দিতে সরকার বদ্ধপরিকর বলেই মনে হচ্ছে। ওদিকে নিযামীর বিরুদ্ধে ষষ্ঠ সাক্ষী শাহাজাহান আলী নিজেই স্বীকার করেছে, ব্যাংকলুটের অপরাধে সোনালী ব্যাংক থেকে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছিলো ১৯৮৪ সালে। এটাই হলো সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদান-কারীদের সাধারণ অবস্থা।

নানার কোলে শাহানার তিনবছরের ছেলে ‘রবীন’-এর ছবি ছেপেছে নয়াদিগন্ত। দু’বছর আগে ওর বাবা ... নিয়ত করেছি ইনশাআল্লাহ এই এতীম শিশুটির কাফালাত করা হবে মাদরাসার পক্ষ হতে।

সাভারে মৃতের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

ডঃ শিরীন শারমিন সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হয়েছেন, আর সুরঞ্জিত বাবু এটাকে বলেছেন, মৌলবাদীদের মুখে চপেটাঘাত! বাবুর ভাগ্য ভালো, ‘এতকিছু’র পরো কথা বলতে পারছেন! মৌলবাদীদের পক্ষেও তো নারী সাংসদ রয়েছে। তাদের পক্ষও তো নারী স্পীকারও হতে পারে! এটা তাহলে চপেটাঘাত হলো কীভাবে? হাঁ, গালে একটু হাত বুলিয়ে বিষয়টা ভেবে দেখুন।

মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন আগামী ৫ই মে। আনোয়ার ইবরাহীম জয়ী হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। মহাথিরের ভায়রা এই আনোয়ার, মহাথিরের সঙ্গে তার বিরোধের পিছনে কুচক্রীদের হাত রয়েছে বলে মনে হয়।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট কারজাঈ শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলেন, সিআইএর কাছ থেকে অর্থ নেয়ার কথা!

আফগানিস্তানের বাগরামে ন্যাটো নিয়ন্ত্রিত বিমানঘাঁটিতে একটি মালবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সাতজন নিহত হয়েছে। তালেবান এটি তাদের কৃতিত্ব বলে দাবী করেছে। ন্যাটো অস্বীকার করেছে।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বিদ্রোহীরা প্রচ- বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আরেকটি হামলায় প্রধানমন্ত্রী অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। কী সুন্দর দেশটা খুনে আগুনে কেমন সারখার হয়ে গেলো। কী বলবো প্রেসিডেন্ট বাশারকে, কী বলবো তার প্রতিপক্ষকে, আর কী বলবো, পরদার আড়ালে সুতা যাদের হাতে তাদেরকে!

উপসম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় মীযানুল করীম লিখেছেন, ‘এই ফাটল শুধু ভবনের নয়, জাতির ভাগ্যেরও’। মর্মস্পর্শী লেখা। তাঁর মন্তব্য, ‘আমাদের দেশটা বড় সুন্দর, কিন্তু জাতিটা বড় দুর্ভাগা।’ তিনি বলেন, আমাদের যা সম্পদ এবং মানবসম্পদ তাতে দেশটা সুখী হওয়ার কথা, কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের দুর্ভাগ্য ডেকে আনছি।

সাভারের বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণতহবিল খুলেছেন। কোটি কোটি টাকা জমা পড়ছে, বাকি আল্লাহ জানেন।

আগামীকাল আমাদের কাফেলা যাচ্ছে তিনটি হাসপাতালে সাহায্য নিয়ে। প্রয়োজনের সমুদ্রে এ যেন একটি বিন্দু, তবে সাধ্যের ভিতরে সবকিছুই করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ কবুল করুন, আমীন।

শুক্রবার,

২১/০৬/১৪৩৪হি.৩/০৫/১৩ খৃ.

রোমান ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, বাংলাদেশের পোশাক -শ্রমিকদের এ যুগের ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, অন্যায্য বেতন ও লাগামহীন মুনাফার বাসনা ঈশ্বরের নীতির বিরোধী। বিগত ১৩ই মার্চ পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর এই প্রথম তিনি শ্রমিক অধিকারের উপর অত্যন্ত কঠোর মন্তব্য করলেন। রানাপ্লাজা তাঁকে ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে, আর তিনি সেটার ‘সদ্ব্যবহার’ করেছেন। তবে তিনি যদি ইউরোপ আমেরিকার আমদানীকারকদের অনুরোধ করতেন মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে আরেকটু উদার হতে তাহলে সেটাই হতো সত্যিকারের শ্রমিকদরদের প্রমাণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নও অনেক দরদের কথা বলছে, বলছে না শুধু পোশাকপ্রতি সামান্য মূল্যবৃদ্ধি করার কথা। এরূপ দাবী এদেশ থেকে উঠলে বরং তারা হুমকি দেন তাদের ফরমায়েশ নিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ার। ফলে আমাদের গামেন্ট সেক্টর একরকম যিম্মি অবস্থায় আছে।

***

সরকার হঠাৎ করে মারমুখিতার অবস্থান থেকে সরে এসে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ অবশ্য একটি কিন্তু জুড়ে দিয়ে বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা যদি ইতিবাচক সাড়া দেন তাহলেই আমরা বিরোধীদলকে লিখিত প্রস্তাব দেবো। প্রশ্ন হলো, কতটা নীচে নামলে ‘ইতিবাচক সাড়া’ বলে গণ্য হবে তা তিনি খোলাসা করেননি। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, শনিবারের সমাবেশ থেকে কঠিন কর্মসূচী যেন না আসে শুধু এ জন্য সরকার সংলাপ প্রস্তাবের কৌশলী টোপ ফেলেছে।

কাঁচপুরের শ্রমিক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেছেন, এই খুনী সরকারকে বিদায় করার জন্য গণ-অভ্যুত্থান ঘটাতে হবে, নচেৎ দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

***

আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন শাস্তির রায় ঘোষণা করেছে আদালত। তখন যে আইন ছিলো তাতে সরকারের আপীল করার কোন সুযোগ ছিলো না, আসামীপক্ষের ছিলো। কিন্তু এখন আইন সংশোধন করে সরকারের জন্য আপীলের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা সারা বিশ্বের আইন-আদালতের ইতিহাসে নযিরবিহীন ঘটনা। সুতরাং বোঝাই যায়, সরকারের আসল উদ্দেশ্য কী!

***

আগামী রোববার ঢাকা অবরোধকর্মসূচী সফল করতে  হেফাজতে ইসলাম ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। রাজধানীর ছয়টি প্রবেশপথে লাখো জনতা অবস্থান গ্রহণ করবে। রাজধানী অভিমুখে আসার পথে বাধা দেয়া হলে শান্তিপূর্ণভাবে সেখানেই বসে পড়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। হেফজত নেতারা বলেছেন আমাদের হাতে থাকবে তসবীহ ও জায়নামাজ, আর শুকনো খাবার। সরকার বাধা না দিলে অবরোধ চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত, আর বাধা দিলে অবরোধ দীর্ঘায়িত করাসহ যে কোন কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হতে পারে।

আমার বড় ভয় হচ্ছে, হেফাজত আমীর বগুড়ায় বলেছেন, পাঁচই মের পরে দেশ কোনদিকে যাবে, আমি জানি না। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কেন এমন কথা বলা হচ্ছে, আল্লাহই ভালো জানেন।

১৪ দলের নেতারা, বিশেষত সুরঞ্জিত সেন বাবু হেফাজত নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সাভারের উদ্ধারকাজের সুবিধার্থে অবরোধকর্মসূচী প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসুন।

অবরোধ কর্মসূচীর কারণে উদ্ধার -কাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে কীভাবে তা কিন্তু তারা বলছেন না।

আগামীকাল শাপলাচত্বরে ১৮দলীয় জোটের মহাসমাবেশ। সরকার হঠাৎ বেশ নমনীয় অবস্থানে চলে এসেছে; উদ্দেশ্যটা কী ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

বার্মার মধ্যাঞ্চলে মুসলিমবিরোধী সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না, বরং দাঙ্গাবাজদের হিংস্রতা উপভোগ করছে এবং বিভিন্ন লোমহর্ষক দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করছে। বিবিসি এ খবর দিয়েছে।

***

ইরানে নারিদিবসের এক বাণীতে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, পশ্চিমা সমাজ নারীকে ভোগের বস্তুতে পরিণত করেছে, আর এটাকেই তারা নারীর স্বাধীনতা বলে প্রচার করছে। নারীর প্রতি এ অসম্মানজনক আচরণই পাশ্চাত্যের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, যার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এর বিপরীতে নারীর প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ মানবিক ও সম্মানজনক।

***

নয়াদিগন্ত সাহিত্যপৃষ্ঠায় সরদার আব্দুস্-সাত্তার রবীন্দ্রনাথের উপর লিখেছেন, ‘তিনি আমাদেরই লোক’ শিরোনামে। লেখক বলতে চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ইসলাম ও মুসলিমজাতি সম্পর্কে যথেষ্ট উঁচু ধারণা পোষণ করতেন। প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, তিনটি উপলক্ষে তিনি তিনটি স্মরণীয় বাণী প্রদান করেছিলেন। কিন্তু লেখক ভুলে গিয়েছেন, বা ভুলে থাকতে চেয়েছেন যে, ঠাকুরের বিশাল সাহিত্যসাগরে মুসলিম চরিত্রের উপস্থিতি বলতে গেলে ‘বিন্দু’! পক্ষান্তরে চরম মুসলিমবিদ্বেষী শিবাজীকে তিনি রীতিমত বীরপূজা দিয়েছেন তাঁর কবিতায়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে তিনি যে অপরাধ করেছেন তা কীভাবে মুছে যাবে?

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

শনিবার, ২২/০৬/৩৪হি. ০৪/০৫/১৩ খৃ.

কাল রোববার ফজরের পর থেকে রাজধানী ঢাকা অবরুদ্ধ হতে যাচ্ছে। সরকার পদে পধে বাধা সৃষ্টি করছে। সবধরণের পরিবহন বন্ধ রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে, যাতে সারা দেশ থেকে মানুষ রাজধানী অভিমুখে আসতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী সংবাদসম্মেলনের কঠোর মন্তব্য করেছেন। হিফাজতের ১৩ দফার প্রায় প্রতিটি সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছেন, যা সত্য, অসত্য ও অর্ধসত্যের মিশ্রণ ছাড়া আর কিছু নয়। সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ-এর পরে ছিলো ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হবে আমাদের সকল কাজের ভিত্তি’। বর্তমান সরকার সুরঞ্জিত সেন বাবুকে সংবিধান সংশোধনের দায়িত্ব দিয়েছে, আর তিনি ‘আল্লাহর উপর আস্থাসম্পর্কিত বাক্যটি সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করে দিয়েছেন। হেফাজতের দাবী হলো, সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। এসম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ আছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আছে। কাজেই নতুন করে আর কিছু দরকার নেই’। প্রধানমন্ত্রী ভুলে যাচ্ছেন, হেফাজত নতুন করে কিছু সংযোজনের দাবী জানায়নি, যা ছিলো তা ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন। ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বিলুপ্ত করার বিষয়টা ঈমানের দিক থেকে কতটা গুরুতর হয়ত প্রধানমন্ত্রী তা বুঝতে পারছেন না। তাই তিনি এভাবে বলতে পেরেছেন।

মোমবাতি প্রজ্বলনের হিন্দুধর্মীয় সংস্কৃতিকে তিনি বাঙ্গালী সংস্কৃত বলে চালিয়ে দিয়েছেন, আর বলেছেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে আপনারাও তো মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকেন, তো মোমবাতির বিরোধিতা করার যুক্তি কোথায়?

ভাস্কর্য সংস্কৃতি সম্পর্কে হেফাজতের দাবীর জবাবে তিনি বলেন, ‘সউদি আরবেও ভাস্কর্য আছে, ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়’। প্রশ্ন হলো এক হোক বা না হোক ইসলামে তা নিষিদ্ধ কি না, আর সউদি আরব, বা কোন মুসলিম দেশ হালাম-হালালের মানদণ্ড কি না?

আল্লামা শফী সংযত ভাষায় এর জবাব দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী স্ববিরোধিতা, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পাশকাটানোর কৌশল অবলম্বন করেছেন। সুতরাং আমি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুরোধ করবো তারা যেন বিভ্রান্ত না হোন এবং পূর্ণ প্রত্যয়ের সঙ্গে অবরোধকর্মসূচী অব্যাহত রাখেন।

নয়াদিগন্তের পঞ্চম পৃষ্ঠায় কুখ্যাত গুয়ানতানামো বন্দিশিবিরের ছবি ছাপা হয়েছে। দেখে মনের ভিতরে কী যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বৃটিশ নাগরিক শাকির আমীর বিনা বিচারে এগার বছর ধরে ওখানে বন্দী আছেন। কিছু বন্দী অনশন পালন করছেন, আর তাদের উপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন।

যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় বিরোধীদের অস্ত্র দেয়ার কথা ভাবছে। আশ্চর্য! আন্তর্জাতিক আইনের কোন ধারায় একটি দেশের বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের অস্ত্র সাহায্য দিতে পারে আরেকটি দেশ? সরকারী বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে, শুধু এ অভিযোগ উত্থাপনই কি যথেষ্ট?

নয়াদিগন্তে সপ্তম পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল লতীফ একটি দীর্ঘ লেখা লিখেছেন, ‘তেরো দফা : হেফাজতের ব্যাখ্যা ও সরকারী ভাষ্য’ নামে। অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিপূর্ণ লেখা। কিন্তু কাজ হবে কী? সরকার তো সবকিছু তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিতে চায়।

সাম্প্রতিক

মঙ্গলবার, ১০-৬-৩৯ হি./২৭-২-১৮ খৃ.

বড় শিক্ষণীয় একটি সংবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য ব্যক্তি। কোনভাবেই আমি তাকে ভালো প্রেসিডেন্ট বলতে পারি না। তিনি মিথ্যাচারী। তাসত্ত্বেও আমি মনে করি, মুসলিম বিশ্বের জন্য তিনি সবচে’ উপযুক্ত প্রেসিডেন্ট।

ইরাকে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘাতক বুশ কি তাহলে বলতে চান, মুসলিম বিশ্ব এতটাই খারাপ যে, ট্রাম্পের মত খারাপ প্রেসিডেন্টই দরকার তাকে শায়েস্তা করার জন্য?

যদ্দুর মনে পড়ে, ইরাকে জনৈক সাংবাদিকের জুতা নিক্ষেপের শিকার বুশ জানতে চেয়েছিলেন, মুসলিম বিশ্ব আমেরিকাকে কেন এত ঘৃণা করে?! আসলে তো বুশ নিজেই এর উত্তর।

জাতিসঙ্ঘের মহাসচীব আবার ‘লিপ্সার্ভিস’ দিয়েছেন, তার মতে রাখাইন এখন কশাইখানায় পরিণত হয়েছে। এটার প্রমাণ তো আর মহাসচীব মহোদয়ের বলার উপর নির্ভর করছে না। এটা তো বিশ্বের সবাই জানে। সব শেষ হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন মিয়ানমার জেনারেলদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা