রবিউল আউয়াল ১৪৪০হিঃ (৩/৭)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

মিয়ানমার বলে, সেন্টমার্টিন তাদের, তাপরপর?!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা ট্রাজেডির জটিল আবর্তে নিক্ষেপ করার পর মিয়ানমার এবার তার নতুন আগ্রাসী চেহারা নিয়ে হাজির!। এবার সে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নিজেদের ভূখ- বলে মানচিত্রে প্রকাশ করেছে। এ নতুন মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে মিয়ানমারের সরকারী ওয়েবসাইটে! আমাদের সরকার অবশ্য এতই নিরীহ যে, তারা কোনরকম ‘ঝগড়া-বিবাদে’ নেই। তারপরো সরকার যথেষ্ট সৎসাহসের পরিচয় দিয়েছে। উস্কানিমূলক এ ঘটনার প্রতিবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বর্মীজ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে, একটা প্রতিবাদপত্র ধরিয়ে দিয়েছে। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন ওঠে! ঠিক এসময় এরূপ ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের রহস্য কী? এটা বোঝার জন্য সামান্য পিছনে ফিরে যেতে হবে।

উল্লেখ্য, এর আগে বর্মীজ সেনাবাহিনীর নযিরবিহীন নির্যাতন ও দমন-নিপীড়নের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী যখন বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করছে তখন বর্মীজ সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার বারবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে তখন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার উদ্দেশ্য ছিলো উস্কানি দিয়ে বাংলাদেশকে সঙ্ঘাতে জড়ানো, যাতে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর পরিচালিত গণহত্যা ও জাতিগত উচ্ছেদের অপরাধ থেকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি সরানো যায়।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে এবার মিয়ানমারের মানচিত্রকেন্দ্রিক উস্কানির উদ্দেশ্যও মূলত

অভিন্ন। একদিকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দেশটির উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের ‘গভীর ও প্রামাণ্য’ তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে মগবাহিনীকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মোট কথা, বিভিন্নভাবে মিয়ানমার ও তার সামরিক জান্তা এবং তাদের দোসর ‘গণতন্ত্রের নেত্রী’ অংসান সূ চি বেশ বেকায়দা অবস্থায় পড়েছে। তো পর্যবেক্ষক মহল দৃঢ়ভাবে মনে করছে, মানচিত্র নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করাই মিয়ানমারের উদ্দেশ্য।

খবরে প্রকাশ, মিয়ানমার তাদের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে জানিয়েছে, বিষয়টি নিছক ভুলবশত হয়েছে। এজন্য দেশটি গাছাড়াভাবে একটা ‘দুঃখপ্রকাশ-জাতীয়’ বক্তব্য দিয়েছে। আর তাতেই যেন আমরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। অন্তত আমাদের আচরণ থেকে এরকমই মনে হতে পারে।

আমাদের মতে কিন্তু বিষয়টা এতটা সরল নয় যতটা মনে করা হচ্ছে। এমনকি এর পিছনে শুধুই বর্মীজ কূটকৌশল কাজ করছে, অভিজ্ঞ মহল তাও মানতে প্রস্তুত নয়। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এর পিছনে রয়েছে গভীর কোন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র একং তা একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই অংশ!

মিয়ানমারের প্রধান মিত্র চীন হয়ত চায়, মিয়ানমারের নিকটবর্তী এই দ্বীপটিতে যুক্তরাষ্ট যেন সামরিক ঘাঁটি করার সুযোগ না পায়। হয়ত এই মার্কিন ভীতি থেকেই একটি কূটনৈতিক চাল চেলে রাখা হলো, যাতে প্রয়োজনের সময় প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে আন্তর্জঅতিক ফোরামে উত্থাপন করা যায়। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বাংলাদেশের কতর্ব্য হবে অবিলম্বে রোহিঙ্গাপ্রশ্নে আরো শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা এবং মানচিত্র প্রসঙ্গটিকে তীক্ষè নযরদারিতে রাখা*

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা