মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

টেকনাফ/তেতুলিয়া

চিকিৎসাব্যবস্থার করুণদশা!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা ও চিকিৎসা, এগুলো দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব দেশের সরকারের। সরকার যদি আমাদের ‘বেডরুমের’ নিরাপত্তা দিতে না পারেন, না পারুন, কিন্তু চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিতেই হবে।

কিন্তু বাস্তব অবস্থা কী? অনাহার গরীবের নিত্যসঙ্গী হলেও এবং মধ্যবিত্তের জন্য বাজার করা রীতিমত দুঃস্বপ্ন হলেও খেয়ে না খেয়ে চলে যাচ্ছে। না খেয়ে তো আর মারা যাচ্ছে না! তারপর সতরঢাকার ব্যবস্থা গরীব বলি, ধনী বলি, একটা না একটা ব্যবস্থা হয়েই যায়, উদম শরীরে তো আর কেউ থাকছে না। শিক্ষাব্যবস্থা তো যাহোক কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রীতিমত গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষানীতি ও পরিক্ষা-পদ্ধতি সম্পর্কে নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষাও চলছে। ভর্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শিক্ষাবছর শুরু হচ্ছে এবং ছাত্ররা ভর্তিও হচ্ছে, হোক না বিশ্ববিদ্যালয়ের একহাজার আসনের বিপরীতে দশহাজার প্রার্থী! হোক না বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যয় আকাশছোঁয়া। শৈশবের শিক্ষা কি আর ভুলতে পারি, ‘শিক্ষা অমূল্য ধন!’ 

বাসস্থান! দেশের মানুষ যদি শহরমুখী না হয়ে গ্রামেই পড়ে থাকে তাহলে মাথাগোঁজার জন্য একটা কুঁড়েঘরের ব্যবস্থা অন্তত হয়েই যায়। শহরমুখী হলে অবশ্য ভাড়া গুণতেই হবে। বেতনের সিংহভাগ যদি ব্যয় করার সাহস থাকে তাহলে এ বাজারেও মাথাগোঁজার ব্যবস্থা করা কঠিন কিছু না।

কিন্তু দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আসলেই এখন ভেঙ্গে পড়েছে। যাদের সঙ্গতি নেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার, বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তারা বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছে। পথের ও বস্তির লাওয়ারিছ মানুষগুলার কথা না হয় থাকলো, যাদের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছে তারা পর্যন্ত বিভিন্নভাবে হেনেস্তা ও দুর্ভোগের শিকার! প্রতিটি হাসপাতাল যেন রীতিমত বাণিজ্যের আখড়া। হাসপাতালে ঔষধ থাকবে না, রক্ত পাওয়া যাবে না, এটা তো জানা কথা! এ জন্য রোগী ও সঙ্গে আসা স্বজনদের মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি কিছু না কিছু থাকে। কিন্তু কঠিন প্রয়োজনের সময় চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যাবে না, এটা কীভাবে বরদাশত করা যায়। ভ্যানগাড়ীতে করে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে, কিন্তু ‘দায়িত্বরত’ চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন ব্যক্তিগত চেম্বারে। মুমূর্ষু রোগী হাসপাতালের বিছানায় মারা গিয়েছে প্রায় বিনা চিকিৎসায়। মৃত্যুসনদ আনার জন্যও যেতে হয়েছে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে। এটা কিন্তু গল্প নয়, আমার মফস্বলের ঘটনা!

অপারেশনের ক্ষেত্রে কতটা অবহেলা ও দায়িত্ব-হীনতা হলে কাঁচি-তুলা পেটে রেখেই সেলাই করা হতে পারে! এটাও গল্প নয় জেলাসদরগুলোতে এধরনের ঘটনা প্রায় ঘটছে। রাজধানী ঢাকার হাসপাতালেও ভুল চিকিৎসা, আর অপচিকিৎসার অন্ত নেই। এই তো সেদিন কী যেন হাসপাতালের নাম, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মর্মান্তিকভাবে মারা গেলেন প্রসূতি মা ও নবজাতক শিশু। এখানে রোগীর স্বজনরা কিন্তু হাসাপাতালের চাহিদা মত অর্থের যোগান দিতে কার্পণ্য করেন নি। তারপরো মা ও শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। শেষপর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নাকি ব্যবস্থা নিয়েছেন! কিন্তু ঘটনা তো আর থেমে নেই! এরপরো ভুল চিকিৎসা, আর অপচিকিৎসার খবর আসছে একটা দু’টো, পত্রিকার পাতায়। আর জানা কথা, যা খবরে আসে তার চেয়ে অনেক বেশী ঘটে।

শিক্ষক ও চিকিৎসক অত্যন্ত সম্মানযোগ্য ব্যক্তি। শিক্ষকতা ও চিকিৎসকতাকে বলা হয় ‘মহান পেশা’। কিন্তু বাণিজ্যমুখী শিক্ষক ও চিকিৎসককে কি ‘মহান’ বলার সুযোগ আছে! যারা অবস্থাপন্ন তারা পারৎপক্ষে দেশে চিকিৎসা গ্রহণ করেন না। তারা বিদেশে এবং প্রতিবেশী দেশে পাড়ি জমান। চিকিৎসক মহল এ জন্য  ক্ষোভও প্রকাশা করেন। বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে তারা দেখাতে চান, আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা ভারতের চেয়ে ভালো। কিন্তু বাস্তবতা কী! সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমাদের অনুরোধ, যে কোন মূল্যে চিকিৎসাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও সেবা নিশ্চিত করুন।

পুনশ্চঃ শিক্ষকতা ও চিকিৎসকতা কী মহান পেশা, না মহান সেবা! পেশা মনে করলে মনোভাবেও তার প্রতিফলন ঘটবে, পক্ষান্তরে সেবা বলে বিশ্বাস করলে....

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা