জিলহজ্ব ১৪৪০ হিঃ (৩/৮)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

বুঝতে হবে পানির মূল্য

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

পানির অপর নাম জীবন, এ কথা আমরা সবাই জানি। অনেক সময় এর বাস্তব অভিজ্ঞতাও আমাদের কিছু না কিছু হয়। কিন্তু দুঃখজনক সত্য এই যে, পানির প্রকৃত মূল্য আমরা বুঝি বলে মনে হয় না।

একসময় আমাদের দেশ ছিলো নদীমাতৃক। নদী-নালা ও খালবিলের জাল বিছানো ছিলো সারা দেশে। তদুপরি পানি ছিলো এত স্বচ্ছ যে, স্বচ্ছন্দে পান করা যেতো। মানুষ করতোও। কিন্তু এখন তা যেন কল্পনাও করা যায় না, যেমন একসময় কল্পনা করা যেতো না, আমাদের দেশে বোতলে করে পানি বিক্রি হবে। এর বড় কারণ হচ্ছে পানির অভাবে নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়া এবং বর্জ্য দ্বারা নদীর পানি দূষিত হওয়া।

একসময় আমাদের ভূগর্ভে ছিলো পানির বিপুল মজুদ। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তবতায় ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। ফলে দেখতে দেখতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনক হারে নীচে নেমে যায়। তদুপরি, এতদিন ভূগর্ভের যে পানিকে মনে করা হতো নিরাপদ, সেটাই এখন হয়ে পড়েছে আর্সেনিক দূষণের শিকার। আসলে প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে একটা কথা যে আছে সেটা ধ্রুব সত্য। প্রকৃতির বিরুদ্ধে আমরা অনেক স্বেচ্ছাচারিতা করেছি, হয়ত আমাদের অজান্তে। হয়ত এর কিছুটা দায় আমাদের প্রতিবেশীরও। কিন্তু নদী-গুলোকে অন্তত বর্জ্যদূষণ থেকে তো আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম! তা তো আমরা করিনি। এখন হয়ত প্রকৃতি আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছে। প্রকৃতির প্রতিশোধ আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠার আগেই আমাদের সাবধান ও সতর্ক হতে হবে এবং জাতীয় সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জাতির উদ্দেশ্যে সে আহ্বানই জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বিশ^পানিদিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ-মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীতে বর্জ্যনিক্ষেপের কারণে নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। নদীদূষণের এটাই বড় কারণ। সুতরাং নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান যারা গড়ে তোলেন তারা যেন নদীদূষণ না করেন।’

কোন সন্দেহ নেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী। তবে দেশ ও জাতি এ আহ্বানের সুফল তখনই পাবে যখন বাস্তবেও তা কার্যকর হবে এবং যারা নদীতে বর্জ্য ফেলে নদীদূষণের অপরাধ করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে, দলীয় পরিচয় যাই হোক।

পানির অভাব এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব এখন সারা পৃথিবীর সমস্যা। এমনকি পানির দখল নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ারও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞগণ। প্রতিবেশী দেশের অন্যায় আচরণের কারণে দীর্ঘদীন থেকে বাংলাদেশও পানিসঙ্কটের মুকাবেলা করে আসছে। শুকনো মৌসুমে নদী-নালা শুকিয়ে সারা দেশ মরুভূমির আকার ধারণ করে, আবার বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার কারণে দেশ পানিতে ভাসতে থাকে।

এ অবস্থার প্রতিকার যদিও প্রতিবেশী দেশের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে, তবে নদীকে দূষণমুক্ত রেখে এবং নদীর নাব্যতা বজায় রেখে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি সাধন করা সম্ভব। এজন্য অবশ্য ব্যাপক গণসচেতনতা দরকার। সে আহ্বানই জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ^পানিদিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ভাষণে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পানি মানবজাতির জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার অনেক বড় নেয়ামত। আলকোরআনের বহু স্থানে বিশেষ নেয়ামতরূপে পানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবার এভাবে সতর্কবাণীও উচ্চারণ করা হয়েছে- (হে নবী) আপনি বলুন, বলো দেখি, তোমাদের পানি যদি ভূগর্ভে (অনেক নীচে) চলে যায় তাহলে কে তোমাদের জন্য প্রবাহিত পানি এনে দেবে?

একটি বাস্তব সত্য এই যে, পৃথিবীর বহু দেশে পানির অভাব থাকলেও বাংলাদেশে এখনো পানির অভাব নেই। অভাব শুধু পানিসম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতার। যদি আমরা পানি সম্পদের সংরক্ষণ এবং এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি, সর্বোপরি যদি আমরা এই বিপুল পানিসম্পদ যিনি দান করেছেন তাঁর শোকর আদায় করি এবং জীবন যাপনে তাঁর প্রতি অনুগত থাকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের সম্পদ বাড়িয়ে দেবেন। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পানি রপ্তানীর যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সেটা অবাস্তব মনে হবে না কিছুতেই। আল্লাহ্র কুদরতে বরং সবই সম্ভব।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা