শাবান ১৪৩৯ হিঃ (৩/৪)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

রোহিঙ্গাদের আমরা কাদের হাতে তুলে দিচ্ছি?!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

আমরা আজ রোহিঙ্গাসঙ্কট নিয়ে খুব কঠিন অবস্থায় পড়ে গিয়েছি, সন্দেহ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্ভবত শুরুতে সমস্যার জটিলতা ও গভীরতা ঠিক মত উপলদ্ধি করা হয়ে উঠেনি, তাই বিরোধী দলের জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নিয়ে...!

এটা আজ জ্বলন্ত সত্য যে, আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ এখন বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে। এটাও সত্য যে, বিলম্বে হলেও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন কোন আন্তর্জাতিক মহল থেকে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ খেতাব পেয়েছেন, যার বাংলা তরজমা করা হয়, ‘মানবতার মা’! বেশ কিছু দিন এটাকে উৎসবের বিষয় বানিয়ে যথেষ্ট প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে।

কিন্তু নির্মম সত্য হলো, খেতাবের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে আন্তর্জাতিক মহল থেকে সাহায্য তেমন একটা আসেনি। তাছাড়া যাদের আমরা বন্ধু বলে সবকিছু উজাড় করে দিলাম, দেখা গেলো, শুরু থেকে শেষ, তারা মিয়ানমারের কসাইদেরই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কি বলা যায় না যে, তাদের অতীতের সাহায্য ছিলো নিজেদের স্বার্থেই?!

এখন তো জোরালো আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, প্রতিবেশী বন্ধুর পক্ষ হতেই নতুন করে পঞ্চাশ লাখ জনসংখ্যার বিশাল এক শরণার্থীসঙ্কটের!

***

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ আজ কতটা অসহায় অবস্থায় পড়েছে মিয়ানমারের সামনে। সবরকম নতি স্বীকার করে যে প্রত্যাবাসন চুক্তি করা হলো, দেখা যাচ্ছে, তাতেও মিয়ানমারের জান্তা এখন বাংলাদেশকে কাঁচকলা দেখাতে শুরু করেছে! চুক্তি হওয়ার পর দীর্ঘদিন পার হয়ে গেছে, এর মধ্যে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারের জান্তা ফেরত গ্রহণ করেনি। তাহলে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জন কী হলো ‘মাদার অব হিউমিনিটি খেতাবটা ছাড়া?!

***

এদিকে চুক্তি হয়েছে, ওদিকে রাখাইনের রোহিঙ্গা পল্লীগুলোর স্থানে গড়ে তোলা হচ্ছে বৌদ্ধদের জন্য ‘আদর্শ গ্রাম’! এখনো চলছে হত্যা-অগ্নিসংযোগসহ যাবতীয় যুলুম নির্যাতন। জাতিসঙ্ঘসহ সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী হয়নি। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া সেখানে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর অর্থ হবে আরেকটি গণহত্যার মুখে তাদের নিক্ষেপ করা। কিন্তু আমরা কীভাবে তা হতে দিতে পারি?!

অথচ মনে হচ্ছে, মিয়ানমার জান্তার হাতে পায়ে ধরে কোনমতে রোহিঙ্গাদের নাফ নদী পার করে দিতে পারলেই আমরা বাঁচি। তাহলে ইতিহাস এবং নির্মম নিয়তি কি আমাদের কখনো ক্ষমা করবে?

আমরা যেমন আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন দেখতে চাই না তেমনি রাখাইনে তৈরী ‘অস্থায়ী ক্যাম্প’ নামের নরককু-ে ধুঁকে ধুঁকে মরার জন্য তাদের ঠেলে দিতে পারি না।

‘মাদার অব হিউমিনিটি’ একসময় ঘোষণা করেছিলেন ১৬ কোটি মানুষ ও কয়েক লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে খাবার ভাগাভাগি করার কথা। আজ সময় এসেছে সেই আবেগময়ী ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের।

সেই সঙ্গে আমরা চাই, বাংলাদেশ জোরালো ও সাহসী ভূমিকা পালন করুক, যাতে আরাকান রাজ্যের অন্তত অর্ধেক অংশ রোহিঙ্গাদের জন্য ছেড়ে দিতে মিয়ানমার জান্তা বাধ্য হয়। এজন্য যা করা দরকার, আবারো বলছি, যা যা করা দরকার, সমগ ্রজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাই করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দুর্বলের ফরিয়াদ কারো কানে কখনো ঢোকে না। যা বলার এবং যা করার সবল ও শক্তিশালী অবস্থান থেকেই আমাদের করতে হবে।

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা