যীকা‘দা ১৪৩৯ হিঃ (৩/৫)

টেকনাফ/তেতুলিয়া

শিক্ষা এখন বাণিজ্যের পণ্য জাতির ভবিষ্যত কোন্ পথে?

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

গত সংখ্যায় লেখা হয়েছিলো, পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া সম্পর্কে, যাকে আমরা তুলে ধরেছি বিবেকের গলায় ফাঁসরূপে। বিষয় তো আর এই একটাতেই সীমাবদ্ধ নয়! দুর্ভাগ্য -জনক সত্য তো এই যে, আমাদের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় এমন ধ্বস নেমেছে, এমন পচন ধরেছে যে, সর্বাঙ্গেই দগদগে ঘা, মলম কোথায় কোথায় লাগানো হবে সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে চিন্তার বিষয়।

শিক্ষার সঙ্গে বাণিজ্য শব্দটি তো যুক্ত হয়েছে বেশ আগে থেকেই। একসময় ছিলো গাইড বাণিজ্য, তারপর এসেছে কোচিং বাণিজ্য। প্রতিটি বাণিজ্যই শিক্ষাকে একেকটা করে ধাপ অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে গেছে। সমাজের যারা কর্ণধার, জাতির এবং তরুণ প্রজন্মের যারা ‘রাখওয়াল’, সবকিছু ঘটেছে তাদের চোখের সামনে। তারা দেখেও না দেখার ভান করে ছিলেন। বরং তাদেরকে তো ইচ্ছে করলে অপরাধের কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানো যায়। কীভাবে?

শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা, একই ভাবে জাগতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা দু’টোই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ছিলো অপরিহার্য। কারণ প্রথমটি শুধু কিছু কুশলী জনগোষ্ঠী তৈরী করে, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরীর ক্ষেত্রে তা কোন ভূমিকাই রাখে না, বরং নৈতিবাচক প্রভাবই বিস্তার করে। এটা এখন আর দলিল-সাবুদে প্রমাণ করার পর্যায়ে নেই। খোলা চোখেই আমরা সবাই পরিণতি প্রতক্ষ করছি। কিন্তু  আমাদের দেশের সুশীল সমাজ বুঝে বা না বুঝে শিক্ষাকে সবসময় ধর্ম ও নৈতিকতা থেকে দূরে রাখার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। তারই প্রাথমিক কুফল এখন ফলতে শুরু করেছে মাত্র। আশঙ্কা, হয়ত আরো ভয়ঙ্কর কোন পরিণতি জাতির জন্য অপেক্ষা করছে।

একটা সময় ছিলো, সাধারণ শিক্ষার জগতে শিক্ষাকে মনে করা হতো মহান পেশা, আর দ্বীনী শিক্ষার জগতে মনে করা হতো মহান সেবা, যার পিছনে সক্রিয় ছিলো ত্যাগ ও কোরবানির জযবা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মহান আকুতি। এ অবস্থার এত পরিবর্তন কীভাবে হলো?!

জাতি এবং জাতির অভিভাবক যারা, কখনো তারা ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি যে, শিক্ষক, তিনিও এই সমাজ ও জনগোষ্ঠীরই অংশ। তিনিও রক্তমাংসের মানুষ। তারও

রয়েছে পরিবার ও পোষ্যপরিজন। তিনি নিজে হয়ত ত্যাগের পথে আরো কিছু দূর চলতে পারতেন, তিনি হয়ত প্রতিষ্ঠিত ছাত্রের শুধু ‘পা-সালামি’তে আরো কিছুদিন সন্তুষ্ট থাকতে পারতেন, কিন্তু তার স্ত্রী-পুত্র-পরিজন?

তিক্ত হলেও সত্য, এভাবেই ধীরে ধীরে অর্থচিন্তা, তারপর বাণিজ্য-চিন্তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রাস করেছে। শুরুতে হয়ত শিক্ষকসমাজের নূন্যতম প্রয়োজন পূর্ণ করলেই অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব ছিলো, কিন্তু এখন বাণিজ্যিক চিন্তা এমন শিকড় গেড়ে বসেছে যে, তা থেকে মুক্ত হওয়ার কোন পথই দেখা যাচ্ছে না।

সুখের বিষয়, দ্বীনী শিক্ষার অঙ্গনে  ‘সেবাব্রত’ এখনো কিছুটা হলেও অবশিষ্ট আছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে জাতির এখনো চিন্তা করার সুযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ‘শিক্ষা ও এ প্লাস বাণিজ্য’ নামে যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রতিবেদনে, তা জাতির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেন এমন যে কাউকে বিচলিত করার জন্য যথেষ্ট।

জাতি ও তার তরুণ প্রজন্মকে এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে রক্ষা করার সত্যি যদি আমাদের কোন সদিচ্ছা থাকে তাহলে এখনই সবার একসঙ্গে বসা দরকার এবং দরদের সঙ্গে সমাধান চিন্তা করা দরকার।

আমরা পূর্ণ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বলতে চাই, শুধু বাজেটে শিক্ষার উন্নয়নে বিশাল বরাদ্দ রাখা, বা অন্য কোন স্থূল পথে এর সমাধান আসবে না। এর সমাধান আসতে পারে শুধু তখনই যখন আমরা শিক্ষা ও নৈতিকতাকে এবং শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষাকে ‘একত্র’ করার চিন্তা করবো। বিষয়টি জাতির ভবিষ্যৎসম্পর্কিত। সুতরাং ‘পার্শ¦ -চিন্তা’ থেকে আমাদের অবশ্যই মুক্ত হতে হবে। আল্লাহ তাওফীক দান করুন, আমীন।

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা