যিলক্বদ ১৪৩০হিঃ (১৪)

কুরআন ও হাদিস

কুরআনের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

নিশ্চয় আল্লাহ আদেশ করিয়াছেন তোমাদিগকে যেন আদায় কর তোমরা আমানতসমূহ উহার মালিকদের নিকট। আর যখন ফায়সালা করিবে তোমরা মানুষের মাঝে তখন যেন ফায়াসালা কর ইনছাফের সহিত। নিশ্চয় আল্লাহ অতি উত্তম উপদেশ দান করেন তোমাদিগকে। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশ্রবণকারী, মহাঅবলোকনকারী।

ফায়দা-

মানবজীবনের শান্তি ও স্থিতির জন্য আলোচ্য আয়াতে দু’টি মৌলিক দিকনির্দেশনা রহিয়াছে। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে যাহারাই এই মূলনীতি দুইটি অনুসরণ করিবে তাহাদের জীবনে শান্তি ও স্থিতি বিরাজ করিবে। প্রথমত আমানত রক্ষা করা এবং যাহার যাহা প্রাপ্য তাহা তাহার নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া। আমানত প্রধানত মালের সহিত সম্পৃক্ত হইলেও মানুষের যাবতীয় হক ও অধিকার ইহার অন্তভুক্ত। সুতরাং সরকারী পদ ও দায়িত্বসমূহ সৎ, যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে ন্যাস্ত করিতে হইবে। আঞ্চলিকতা, আত্মীয়তা, সামপ্রদায়িকতা বা অন্য কোন বিবেচনায় অযোগ্য লোককে দায়িত্ব দেওয়ার অর্থ আমানতের খেয়ানত, সেজন্য আখেরাতে আল্লাহর নিকট জবাবদেহি করিতে হইবে। এমনকি দুইজন সমান যোগ্য লোক কোন পদের জন্য সামনে আসিলে, শুধু দলীয় কারণে একজনকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হইলে আমানতের খেয়ানত হইবে, সেক্ষেত্রে লটারী বা অন্যকোন নিরপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। বলাবাহুল্য যে, বর্তমানে যত অশান্তি ও অস্থিরতা তার বেশীর ভাগ কারণ হইতেছে আমানাতের ব্যাপক খেয়ানত।

দ্বিতীয়ত ইনছাফপূর্ণ বিচার। ইহা শুধু আদালতের বিষয় নহে, ঘরেরও বিষয়। বরং প্রত্যেক উর্ধ্বতনকে তাহার অধঃস্তনের সহিত ইনছাফের আচরণ করিতে হইবে। ‘লোকদের মাঝে’ দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করা হইয়াছে যে, বাদী-বিবাদী কোন্‌ ধর্মের, কোন্‌ গোত্রের এবং কোন্‌ ভাষা ও বর্ণের এই সকল বিষয় যেন বিবেচনা না করা হয়। এমনকি হক ও সাক্ষ্য-প্রমাণ যদি অমুসলিমের পক্ষে হয় তাহা হইলে অমুসলিমের পক্ষেই ফায়সালা করিতে হইবে।

এই কোরআনি আয়াতের বাস্তব নমুনা ছিলেন ছাহাবা কেরাম, খোলাফায়ে রাশেদীন। বর্ণিত আছে যে, হযরত কাযী শোরায়হ-এর আদালতে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রা) এবং এক সাধারণ ইহুদীর মামলা আসিয়াছিল। হযরত আলী (রা)-এর পক্ষে তাঁহার পুত্র সাক্ষ্য দান করিয়াছিলেন, তখন কাযী শোরায়হ এই বলিয়া সাক্ষ্য রদ করিয়াছিলেন যে, পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। ফলে ফায়সালা ইহুদীর পক্ষে চলিয়া গেল, আর হযরত আলী (রা) অম্লান বদনে তাহা মানিয়া লইলেন। এই অপূর্ব ইনছাফ অবলোকন করিয়া ইহুদী তৎক্ষণাৎ মুসলমান হইয়াছিল।

কোরআন সম্পর্কে

জনৈক অমুসলিম বিদগ্ধ লেখক পাবত্র কোরআন সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেছেন, কোরআন হলো ‘ট্রেজারি অব নলেজ’ -সর্বজ্ঞানের আধার। অন্য এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন, কোরআনের বৈশিষ্ট্যের কোন অন্ত নেই। কিন্তু আমাকে যখন সিদ্ধান্ত দিতে বলা হয় যে, কোরআনের সবচে’ বড় বৈশিষ্ট্য কী? তখন আমি বলি, সবচে’ বড় বৈশিষ্ট্য এই যে, অন্যভাষী একজন মুসলিম না বুঝেও কোরআন পড়ে, অথচ সারা জীবনেও তাতে অনীহা আসে না।


শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা