হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, জান্নাতে প্রবেশ করিবে এমন কিছু লোক যাহাদের অন্তর ছিল পাখিদের অন্তরের ন্যায়। (মুসলিম)
ফায়দা-
এই হাদীছ দ্বারা উদ্দেশ্য হইল উম্মতকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা করিতে উদ্বুদ্ধ করা। পাখিদের অন্তরের মত বলিয়া মূলতঃ তওয়াক্কুলের কথাই বোঝানো হইয়াছে। পাখীরা এমনই তাওয়াক্কুলকারী যে, রিযিকের জন্য উহারা বাহ্যিক কোন উপকরণই গ্রহণ করে না। অথচ তাহারা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাসা হইতে উড়িয়া যায়, আর সন্ধ্যাকালে পূর্ণ উদরে বাসায় ফিরিয়া আসে, যেমন একটি হাদীছে বলা হইয়াছে। তো এই জান্নাতিরাও দুনিয়াতে রিযিকের জন্য অতিরিক্ত পেরেশানি ও দৌড়ঝাঁপ করিত না, বরং পরিমাণ মত মেহনত করিত, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা করিয়া ইবাদত বন্দেগিতে মগ্ন থাকিত। আল্লাহ তা‘আলা গায়বি কুদরত দ্বারা তাহাদের রিযিকের ইন্তিযাম করিতেন, আর তাহারা উহাতেই সন্তুষ্ট থাকিত এবং আল্লাহর শোকর করিত।
কোন কোন মতে এখানে কোমলতার ক্ষেত্রে অন্তরের সহিত তুলনা করা হইয়াছে। অর্থাৎ পাখীরা যেরূপ কোমল হৃদয়ের অধিকারী এবং উহারা যেমন স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যে ও কৃতজ্ঞতায় বিগলিত থাকে, এই জান্নাতিদের হৃদয়ও এমনই কোমল যে, দ্বীনের ডাক আসিবামাত্র উহা কবুল করিত, আর বিগলিত চিত্তে আনুগত্য করিত এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিত।
অন্য এক মতে, হাদীছটির অর্থ এই যে, পাখীরা যেমন শিকারীর ভয়ে সর্বদা ভীত ও সতর্ক থাকে এই জান্নাতিরাও সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকিত এবং শয়তান ও নফসের ধোকা ও হামলা সম্পর্কে সর্বদা সতর্ক থাকিত।
বস্ত্তত ইহা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই ই‘জাযপূর্ণ বালাগাতের নমুনা যে, মানুষের অন্তরকে তিনি পাখীর অন্তরের সহিত তুলনা করিয়াছেন এবং উহা দ্বারা মুমিন-হৃদয়ের তিন তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করিয়াছেন।
আল্লাহ যেন আমাদের অন্তরগুলিকেও পাখিদের অন্তরের মত করিয়া দেন। রিযিক ও অন্যসকল বিষয়ে আমাদের অন্তর যেন আল্লাহর প্রতি এমনই ভরসা করিতে পারে, আমাদের অন্তর যেন আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে ও কৃতজ্ঞতায় এমনই কোমল হয় এবং আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়, আর শয়তান ও নফসের বিষয়ে সতর্ক হয়, আমীন।
বিশ্ব নবী সম্পর্কে
জনৈক অমুসলিম বলেন, জীবনের, বিশেষত আজকের জটিল আধুনিক জীবনের আদর্শ তিনিই হতে পারেন যিনি শুধু উত্তম কিছু কথা বলেই কর্তব্য সমাপ্ত করেননি, বরং নিজের ব্যক্তিত্বের মাধ্যম্যে জীবনের জটিল ও সংবেদনশীল সমস্যা-গুলোর বাস্তব সমাধানও উপস্থাপন করেছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমি যিশুকে চিন্তা করেছি, বুদ্ধকে চিন্তা করেছি, তারপর ইসলামের নবীকে চিন্তা করেছি। আমি অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করি যে, এ মানদন্ডে ইসলামের নবী ছাড়া আর কোন আধ্যাত্মিক পুরুষ উত্তীর্ণ হতে পারেননি।