মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

কুরআন ও হাদিস

কোরআনের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

আর (আয় পেয়ারে নবী) যখন আমার বান্দারা আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তখন (তাদের জানিয়ে দিন যে,) আমি (তাদের অতি) নিকটবর্তী। ডাকনেওয়ালা যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাকে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও যেন আমার (আদেশ-নিষেধের) অনুকূলে সাড়া দেয়, আর আমার প্রতি ঈমান আনে, যাতে তারা সুমতি লাভ করে। সূরাতুল বাকারাহ্  ১৮৬

ফায়দা: কত বড় সান্ত্বনার আয়াত! নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আমার বান্দারা’! তারপর পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাধ্যম করে সুসংবাদ দিয়েছেন, বিপদ ও দুর্যোগ যত বড় হোক, (এবং আহকাম ও বিধান যত কঠিন হোক) চিন্তার কিছু নেই। আমি তো আমার বান্দার অতি নিকটেই আছি। আমি তো তাকে সাহায্য করেই যাবো; যেন ছবরের মাধ্যমে বিপদ-দুর্যোগ সে অতিক্রম করতে পারে, আর আহকাম ও বিধান পালন করা যেন তার জন্য সহজ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত বান্দাকে তারগীব ও অনুপ্রেরণা দেয়া হয়েছে, যেন বান্দা সবসময় আল্লাহ্কে ডাকে, আল্লাহ্র কাছে দু‘আ-মুনাজাত করে! কাউকে ডাকার ক্ষেত্রে, কারো কাছে কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে সবচে’ বড় অনিশ্চয়তা যা দেখা দেয় তা হলো, যাকে ডাকছি, তিনি আমার ডাক শুনছেন তো! তিনি আমার ডাকে সাড়া দেবেন তো! আমি যা চাই তা পাবো তো! তো দয়াময় আল্লাহ্ বান্দাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, বান্দা যখনই আমাকে ডাকবে আমি তার ডাক শোনবো এবং ডাকে সাড়া দেবো। তবে জরুরি কথা হলো, আল্লাহ্ যেমন পরম দাতা, পরম দয়ালু, তেমনি তিনি পরম জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান। তাড়াহুড়ার স্বভাবের কারণে বান্দা হয়ত চায়, এখনই যেন তার চাওয়া তাকে দান করা হয়! আবার মূর্খতার কারণে চায়, সে যেমন চায় তেমন করেই যেন দান করা হয়, কিন্তু আল্লাহ্ বান্দার কল্যাণ চিন্তা করে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত পরিমাণে দান করেন, আর যা তার জন্য ক্ষতিকর তা না দিয়ে, তার পরিবর্তে তার জন্য কল্যাণকর জিনিস দান করেন, যদিও সে তা চায়নি, বরং চেয়েছে, যা তার জন্য ক্ষতিকর।

তো যিনি এত বড় দাতা, এত বড় দয়ালু এবং এত বড় জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান, বান্দার কি কর্তব্য নয়, তাঁর প্রতিটি আদেশ-নিষেধ (বাহ্যত) যত কঠিনই মনে হোক, পূর্ণ আনুগত্যের সঙ্গে মেনে চলা! বিশেষ করে যখন তাতে বান্দারই কল্যাণ! কারণ এভাবে সে সঠিক পথ প্রাপ্ত হবে, আর তার দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে যেমন সফলতা আসবে, তেমনি সফলতা আসবে আখেরাতের অনন্ত জীবনে!

বান্দার প্রতি আল্লাহ্র যত আদেশ-নিষেধ তা তো আল্লাহ্র প্রয়োজনে নয়, বান্দার দুনিয়া আখেরাতের কামিয়াবির জন্য!

তথ্যকণিকা-১ : পুরো আয়াতটি মূলত ছিয়ামের বিস্তারিত আহকাম ও বিধান বয়ানের জন্য। তো আগে ও পরে ছিয়ামের আহকাম বয়ান করার মাঝখানে এই মধ্যবর্তী বক্তব্য দ্বারা সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, ছিয়াম হচ্ছে আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম। সুতরাং ছিয়ামের যা কিছু কষ্ট, প্রাপ্তির তুলনায় তা তো কোন কষ্টই না!

* ‘আর আমার প্রতি যেন ঈমান আনে।’ অর্থাৎ আমার যাত ও সত্তার প্রতি ঈমান তো আছেই, তবে ‘আমি যে বান্দার ডাকে দয়ার সঙ্গে এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে সাড়া দেই, আমার প্রতি এই বিশ^াস যেন তার অন্তরে অটুট থাকে।

* لَـعَـلَّـهُـم يَـرشُـدُونَ যাতে তারা সুমতি লাভ করেÑ এখানে যে বক্তব্যটি প্রচ্ছন্ন তা এই যে, বান্দার জন্য আল্লাহ্ যে আহকাম ও বিধান নাযিল করেছেন একমাত্র সেটাই হলো কল্যাণ ও সফলতার উৎস। এ ছাড়া মানব-মস্তিষ্কপ্রসূত যে কোন বিধান, তা সুমতির পথ নয়, কল্যাণ ও সফলতার পথ নয়, জাহিলিয়াতের পথ এবং ধ্বংস ও বরবাদির পথ। ঐ পথ থেকে তার ফিরে থাকা...

তথ্যকণিকা-২ :  সূরা বাকারাহ্ শুরু হয়েছে আলিফ-লাম-মীম দ্বারা। আরো পঁচটি সূরা এভাবে শুরু হয়েছে; আলেইমরান; আনকাবূত, রূম: লোকমান; সাজদা।

* সূরা বাকারার আয়াতসংখ্যা ২৮৬, রুকূসংখ্যা ৪০

* আয়াতের শানেনুযূল সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. লিখেছেন, কতিপয় ছাহাবা কেরাম (তাদের সহজ-সরল) চিন্তা থেকে জানতে চেয়েছিলেন, আল্লাহ্ কি আমাদের কাছে, তাহলে অনুচ্চ কণ্ঠে ডাকবো, নাকি দূরে, তাহলে উচ্চ কণ্ঠে ডাকবো! এমন একটি সহজ-সরল জিজ্ঞাসার জবাবে কত প্রজ্ঞাপূর্ণ এবং সান্ত্বনাপূর্ণ আয়াত নাযিল করা হয়েছে!

* আহলে ইলম লিখেছেন ‘আমি অতি নিকটে’ থেকে বোঝা যায়, দু‘আ অনুচ্চ কণ্ঠে করাই উত্তম, উচ্চ কণ্ঠে নয়।

* আল্লামা ইবনে কাছীর রহ. বলেন,  ছিয়ামের আহকাম ও বিধান বয়ানের মাঝখানে এই মধ্যবর্তী আয়াত দ্বারা বোঝানো হয়েছে, ছিয়ামের হালাত হলো দু‘আ কবুলের হালাত।

কোরআন  সম্পর্কে:

 কোরআনের অলৌকিকত্ব কোন্দিক থেকে এবং কতদিক থেকে তা বয়ান করাও সম্ভব নয়। যেদিক থেকেই চিন্তা করো, কোরআনের অলৌকিকত্ব দিবালোকের মতই সুস্পষ্ট। একজন বিজ্ঞানী বলেছেন, বিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্রের দিকে কোরআন যেমন সুসংক্ষিপ্তভাবে দিকনির্দেশ করেছে, এপর্যন্ত লেখা বিজ্ঞান-গ্রন্থেও এর তুলনা নেই। আরেকজন বলেছেন, জীবনে কখনো যিনি সমুদ্র দেখেননি, তিনি সমুদ্রের এমন বিবরণ কীভাবে দিতে পারেন! এটাই প্রমাণ করে যে, কোরআন মানুষের কালাম নয়, অথবা তিনি নিজেই অতিমানব!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা