জুমাদাল আখেরা ১৪৩১হিঃ (১৬)

কুরআন ও হাদিস

হাদীসের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি আমার রাব্বকে জিজ্ঞাসা করিলাম আমার পরবর্তীকালে আমার ছাহাবার মতবিরোধ সম্পর্কে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই মর্মে অহী নাযিল করিলেন, হে মুহম্মদ! আমার নিকট তোমার ছাহাবা হইতেছেন আকাশের তারকাদের তুল্য। কোনটি কোনটি হইতে অধিকতর উজ্জ্বল। তবে প্রতিটিরই রহিয়াছে নিজস্ব আলো। সুতরাং তাহাদের বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলি হইতে যে কেহ কোন কিছু গ্রহণ করিবে সে আমার নিকট হিদায়াতের উপর বলিয়া গণ্য হইবে। তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, আমার ছাহাবগণ তারকাদের তুল্য, সুতরাং তোমরা তাহাদের যে কাহারও অনুসরণ করিবে হিদায়াতপ্রাপ্ত হইবে। (রাযীন-এর বরাতে মিশকাত)

ফায়দা-

উম্মতে ইসলামীর সুদীর্ঘ ইতিহাসে যত ফিতনা আসিয়াছে তাহার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ফেতনা হইল ছাহাবা কেরামের সমালোচনা এবং বিভিন্ন আবরণে তাঁহাদের চরিত্রহননের ফেতনা। কারণ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ত হইলেন উম্মতের একমাত্র আদর্শ, আর তাঁহাকে জানিবার, চিনিবার ও বুঝিবার একমাত্র মাধ্যম হইলেন ছাহাবা কেরাম। সুতরাং এই মাধ্যমটিকে কোন না কোনভাবে সামান্য পরিমাণেও যদি অনির্ভরযোগ্য প্রমাণ করা সম্ভব হয় তবে আপনাআপনি সকল ফেতনার দরজা খুলিয়া যায়। তখন কোরআন ও সুন্নাহ এবং সমগ্র শরী‘আতকে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অনুগত করা সহজ হইয়া যায়। ছাহাবা-সমালোচনার ছোটখাটো বিষয় ত বহু আছে, সবচেয়ে কঠিন ও জটিল বিষয় হইল ছাহাবা কেরামের পরস্পরের বিরোধ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘাত। পরিষ্কার বোঝা যায় যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমানী অহীর মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত ছিলেন, এবং পরবর্তী উম্মতের জন্য এই জটিল সমস্যার সমাধান তিনি অহীর মাধ্যমে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হইতে হাদীসে কুদসীর মাধ্যমে রাখিয়া গিয়াছেন। বস'ত কাহারো যদি গোমরাহ হইবার খাহেশ থাকে তবে ভিন্ন কথা; নচেৎ এই বিষয়ে আমাদের করণীয় কী তাহা দিবালোকের মত স্পষ্ট। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ বলিতেছেন যে, তাঁহাদের প্রত্যেকের নিয়ত ছিল বিশুদ্ধ, অর্থাৎ যে যাহা করিয়াছেন নিজ নিজ ইজতিহাদমত আল্লাহর রিযা ও সন'ষ্টির জন্যই করিয়াছেন। সুতরাং পরবর্তী যুগে কেহ যদি সঠিক ইজতিহাদের মাধ্যমে উম্মতের কল্যাণ মনে করিয়া যে কোন ছাহাবীর যে কোন নীতি ও অবস'ান অনুসরণ করে, স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা বলিতেছেন, আমার নিকট সে (ইজতিহাদের ভুলসত্ত্বেও) হিদায়াতের উপর বলিয়া গণ্য হইবে। তো কাহারও কি আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের চেয়ে বেশী ধার্মিক হইবার ইচ্ছা আছে! আমরা আমাদের মুসলিম ভাইদিগকে সতর্ক করিয়া দিলাম, যেন কেহ না বলিতে পারে যে, আমাদিগকে ত কিছু বলা হয় নাই।

বিশ্বনবী সম্পর্কে

প্রত্যেক যুগে নবী ও রাসূলের নিকট কোন না কোন মু‘জিযা ছিলো যাতে কাউম তাঁর নবুওয়তের সত্যতা বিশ্বাস করতে পারে। আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটও বহু মু‘জিযা ছিলো। যেমন চাঁদ দু'টুকরো হওয়া, আঙ্গুল থেকে পানি প্রবাহিত হওয়া, সামান্য খানা বহু লোকের জন্য যথেষ্ট হয়েও বেঁচে যাওয়া, ইত্যাদি। কিন' তাঁহার আসল মু‘জিযা হইল তাঁহার সর্বোত্তম চরিত্র। তাই কোরআন এটাকেই প্রাধান্যে এনে বলেছে, নিঃসন্দেহে আপনি উত্তম চরিত্রের উপর আছেন।

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা