কাশ্মীরসংখ্যা

কুরআন ও হাদিস

কোরআনের আলো/হাদিসের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

কোরআনের আলো

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ্ তালা ইরশাদ করেন,

وَلا تَـهِـنُـوا وَلا تَـحْزَنُـوا وَأنْتُـمُ الأعْـلَونَ إنْ كُـنْتُـم مُّـؤْمِـنيـنَ . إنْ يَّـمْـسَـسْكُـمْ قَـرْحٌ فَـقَـدْ مَـسَّ القَومَ قَـرْحُ مِّـثْـلُـه ج وَتِـلْـكَ الأيَّـامُ نُـداوِلُـها بَـيْـنَ الـنَّـاسِ...

 আর তোমরা ভেঙ্গে পড়ো না এবং বিষণ হয়ো না। তোমরাই তো জয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তোমরা আহত হয়ে থাকো তাহলে (পেরেশানির কী আছে!) লোকেরাও (আগে) এরূপ আহত হয়েছে। আর দিনকাল তো আমি লোকদের মাঝে আবর্তিত করি। ....  (আলে ইমরান, ৩/১৪০)

 

ফায়দা

জীবন ও জগতের বিধান মুমিন-অমুমিন সবার জন্য অভিন্ন। জাতীয় দুর্যোগ অন্যদের জীবনে যেমন আসতে পারে, তেমনি আসতে পারে আমাদের জীবনে, উম্মাহর যিন্দেগিতে। সুতরাং কোন বিপদে দুর্যোগে ভেঙ্গে পড়া উচিত নয়; অন্যদের তো কোন ঊর্ধ্বজাগতিক আশ্রয়স্থল নেই। তারপরো তো তারা পরাজয়ে মুষড়ে পড়েনি, নতুন বলে বলীয়ান হয়ে ময়দানে এসেছে। মুমিনদের জন্য তো রয়েছে আশ্বাস ও আশ্রয়। বিপদে ধৈর্য ধারণ করার উপর রয়েছে আজর ও ছাওয়াব। সুতরাং মুমিনদের মুষড়ে পড়ার বা বিষণ হওয়ার সুযোগ কোথায়!

তাছাড়া জীবন ও জগতের বিধানই আল্লাহ্ এরূপ নির্ধারণ করেছেন যে, একবার একদল জয়ী হবে, আবার অন্যদল জয়ী হবে। যেমন বদরে মুসলিমগণ জয়ী হয়েছে, অহুদে কাফিরদের পাল্লা কিছু ভারী হয়েছে। এটা আসলে জাগতিক কারণ ও কার্যকারণের উপর নির্ভর করে। পার্থক্য হলো মুমিনীনের জন্য জয়ের মধ্যে যেমন কল্যাণ, পরাজয় ও বিপদ-দুর্যোগের মধ্যেও কল্যাণ, যদি তারা ছবর করে, ইসতিগফার করে এবং ভুলত্রুটির সংশোধন করে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে। দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় ক্ষেত্রে শেষ ফল মুমিনীনের অনুকূলেই হবে।

আমাদের কর্তব্য হলো, বিপদ ও দুর্যোগ কেন এসেছে, কোথায় ছিলো ত্রুটি ও বিচ্যুতি এবং দুর্বলতা ও শৈথিল্য, এগুলো চিন্তা করে সংশোধনের পথে আত্মনিয়োগ করা।

মুমিনীনের জন্য আয়াতের সবচে’ বড় আশ^স ও সান্ত¡না এই যে, জয় -পরাজয় উভয় অবস্থায়ই অন্যদের উপর মুমিনীনের তাপ ও প্রতাপ বজায় থাকার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে; শর্ত শুধু এই যে, তাদের প্রকৃত ঈমানদার হতে হবে এবং ঈমানের দাবী ও তাকাযার উপর অবিচল থাকতে হবে। মুসলিম উম্মাহর সমগ্র ইতিহাস এ আয়াতেরই সত্যতার অকাট্য প্রমাণ।

 

তথ্যকণিকা

* সূরাতু আলে ইমরানের আয়াতসংখ্যা দুশ। এটি মাদানী সূরা। ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, মুফাস্সিরীনের ইজমা রয়েছে যে, প্রথম থেকে তিরাশি পর্যন্ত আয়াত নাজরানের প্রতিনিধিদল সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা মদীনায় এসেছিলো হিজরতের নবম বছর।

* অহুদযুদ্ধে প্রথম পর্বে মুমিনীনের বিজয় ছিলো সুস্পষ্ট। কিন্তু একটা ভুলের কারণে যুদ্ধের পাল্লা শেষ পর্যন্ত কাফিরীনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ভুল ছিলো এই যে, পঞ্চাশজন তিরান্দায, যাদের প্রতি আদেশ ছিলো, জয় হোক বা পরাজয়, কোন অবস্থাতেই তারা যেন তাদের স্থান থেকে না নড়ে। কিন্তু জয়ের আনন্দে তাদের একাংশ ঐ আদেশ ভুলে গিয়ে গনীমতের মাল জমা করার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। মুশরিকপক্ষের খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ বিষয়টা লক্ষ্য করে ঐ ফাঁকা পথে পিছন থেকে মুসলিম বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।

* অহুদযুদ্ধে সত্তরজন ছাহাবী শহীদ হয়েছেন।

قَـرْح ٌ এ আয়াতে দুবার এবং আলে ইমরানেরই ১৭২ নং আয়াতে একবার, এভাবে  মাত্র তিনবার এসেছে।

إنْ كُـنْـتُـم مُـؤْمِـنِـيـن এর সম্পর্ক হলো لاتَـهِـنُـوا ولا تَـحْـزَنُوا এর সঙ্গে। অর্থাৎ إنْ كُـنْـتُـم مُـؤْمِـنِـيـن فَلاتَـهِـنُـوا ولا تَـحْـزَنُوا

কিংবা وَأنْـتُـمُ الأعْلَوْنَ এর সঙ্গে।

অর্থাৎ إنْ كُـنْـتُـم مُـؤْمِـنِـيـن فَأنْـتُـمُ الأعْلَوْنَ

* আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়েছে গাযওয়া অহুদ উপলক্ষে মুমিনদের সান্ত¡না দেয়ার জন্য।

إن يمسسكم قرح فقد مسَّ القومَ قـرح مثـله এখানে ইশারা হতে পারে বদরের দিকে। অর্থাৎ যদি অহুদে তোমরা হতাহত হয়ে থাকো, তাহলে বদরে তো ওরা হতাহত হয়েছে। আবার অহুদের দিকেও ইশারা হতে পারে। অর্থাৎ যদি যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তোমরা আক্রান্ত হয়ে

থাকো তাহলে প্রথম দিকে তো ওরা পর্যুদস্ত হয়েছিলো

 

কোরআন সম্পর্কে

সমগ্র কোরআন যেমন একটি মুজিযা। তেমনি কোরআনের প্রতিটি আয়াতই আসলে একটি করে মুজিযা। প্রতিটি আয় সমগ্র কোরআন যেমন একটি মুজিযা। তে সমগ্র কোরআন যেমন একটি মুজিযা। তেমনি কোরআনের প্রতিটি আয়াতই আসলে একটি করে মুজিযা। প্রতিটি আয়াতেরই শব্দসমাবেশের মধ্যে রয়েছে এমন অপূর্ব এক সুরছন্দ, যা রক্ষা করা মানুষের কালামে কখনো সম্ভব নয়। একজন সঙ্গীতবিশেষজ্ঞ শুধু কোরআনের আয়াতের সঙ্গীতসৌন্দর্য এবং সুরসঙ্গতি অনুধাবন করেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন যে, এটা তো মানুষের কালাম হতে পারে না।

আসলে, আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত দান করেন, কোন না কোন ওছিলায় তার সামনে কোরআনের সত্যতা উদ্ভাসিত করে দেন, আর ইসলাম তার অন্তরে প্রবেশ করে। আল্লাহ্ যেন কোরআনের সর্বসৌন্দর্য অনুধাবন করার তাওফীক আমাদের দান করেন।

হাদীছের আলো

হযরত ছাওবান রা.  হতে বর্ণিত যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, খুব দূরে নয় যে, বিভিন্ন সম্প্রদায় তোমাদের বিরুদ্ধে ডাকাডাকি করবে, যেমন মানুষ একে অন্যকে ডেকে আনে খাদ্য-থালার দিকে। কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, (এমন কি হবে) তখন আমাদের সংখ্যাল্পতার কারণে? তিনি বললেন, তোমরা তো বরং সেদিন হবে অনেক। তবে কিনা তোমরা (হবে) ঢলে ভেসে আসা খড়কুটোর মত। আর অবশ্যই আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহনপ্রক্ষেপণ করবেন। একজন জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ওয়াহ্ন কী? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ এবং মৃত্যুর অনীহা।

 (আবু দাঊদ, কিতাবুল মালাহিম)

 

ফায়দা

দূর ভবিষ্যতের উম্মতের উদ্দেশ্যে যতগুলো ভয়ের হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। বস্তুত উম্মাহর বর্তমান মর্মন্তুদ অবস্থা চিন্তা করলে পরিষ্কার বোঝা যায়, এ যুগের উম্মাহ্কে উদ্দেশ্য করেই যেন তা বলা হয়েছে। জনসংখ্যায় এবং দেশের সংখ্যায় আমরা বিশের একতৃতীয়াংশের কাছাকাছি। কিন্তু দুনিয়ার মোহ এমন যে কারুণকেও যেন ছাড়িয়ে যায়, এই মোহের কারণেই নিজেদের মধ্যে এত বিবাদ-বিরোধ, এত হানাহানি, খুনাখুনি। পক্ষান্তরে মৃত্যুর প্রতি অনীহা এমন যে, বিড়ালের ভয়েও যেন গর্তে লুকোতে চায়! অথচ আমাদের মহান আসলাফ, মৃত্যুকে ধাওয়া করে দুশমনের উপর ঝঁপিয়ে পড়তেন, সংখ্যায় শক্তিতে যারা হতো বহুগুণ। দুশমনের উদ্দেশ্যে তারা বলতে পেরেছেন, ‘যিন্দেগি তোমাদের কাছে যত প্রিয়, মউত আমাদের কাছে তার চেয়ে প্রিয়।

বস্তুত এই ওয়াহ্ন তথা দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুভয় থেকে মুক্ত হওয়ার সাধনাই আজ আমাদের করতে হবে যদি আমরা দুনিয়ার মাহফিলে ইয্যতের যিন্দেগি চাই এবং দুনিয়ার ইমামত ও কিয়াদাত আবার ফিরে পেতে চাই।

এখানে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি শিক্ষা এই যে, দূর ভবিষ্যতের উম্মতের প্রতিও ছাহাবা কেরামের মায়া-মমতা ও একাত্মতা এমন ছিলো যে, তাদের দুর্দশাকে অবচেতনভাবেই যেন নিজেদের দুর্দশা ভেবেছেন। তাই ‘তাদের’না বলে বলেছেন, এমন হবে কি তখন ‘আমাদের সংখ্যাল্পতার কারণে?

রহমাতুল্-লিল আলামীন ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ছাহাবা কেরামের একাত্মতার অনুভূতিকে অনুমোদন করে বলেছেন, ’তোমরা বরং সেদিন হবে অনেক।

তাহলে বিভিন্ন জনপদের মযলূম মুসলিমীনের প্রতি কেমন দরদ-ব্যথা হওয় উচিত আমাদের অন্তরে! অথচ...

 

তথ্যকণিকা

* ২৭৫ হিজরীর শাওয়াল মাসে তিনি ইনতিকাল করেন। তাঁকে দাফন করা হয় হযরত সুফয়ান ছাওরীর পাশে।

* ইমাম আবু দাঊদ একজন পুত্র সন্তান রেখে গিয়েছেন। তিনিও হাদীছ শাস্ত্রের শীর্ষস্থানীয় হাফিয ছিলেন। তিনি হলেন আবু বকর আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবু দাঊদ। ২৩০ হিজরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন, আর মৃত্যুবরণ করেন ৩১৬ হিজরীতে। তাঁকে বলা হয় ইমাম ইবনুল ইমাম।

* ইমাম আবু দাঊদের হাদীছ সঙ্কলনটি হচ্ছে সুনানশ্রেণীর। মুহাদ্দিছীনের পরিভাষায় সুনান হচ্ছে এমন সঙ্কলন যাকে বিন্যস্ত করা হয়েছে ফিকহের বিভাগীয় ভিত্তিতে, যেমন তাহারাত, ছালাত, যাকাত প্রভৃতি। তবে শর্ত এই যে, তাতে যেন কোন মাওকূফ সনদ না থাকে। কেননা মাওকূফকে সুন্নাহ বলা হয় না, হাদীছ বলা হয়।

* সুনানে আবুদাঊদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘কালা আবু দাঊদ। তাতে তিনি বিভিন্ন জটিল বিষয়ের অবতারণা করেছেন।

* ইমাম আবু দাঊদ রহ.-এর জন্ম ২০২ হিজরীতে এবং মৃত্যু ২৭৫ হিজরীতে।

ইমাম আবুদাঊদের সময়কালটি হাদীছের ক্ষেত্রে ছিলো স্বর্ণযুগ। তিনি পেয়েছেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইয়াহয়া ইবনে মাঈন, বুখারী, মুসলিম প্রমুখকে।

তাঁর পূর্ণ নাম, আবু দাঊদ সোলায়মান ইবনুল আশআছ, ইবনে ইসহাক, ইবনে বাশীর, ইবনে শাদ্দাদ, ইবনে আমর আলআযদী, সিজিস্তানী।

সিজিস্তান হচ্ছে কাবুলের নিকটবর্তী গ্রাম।

তিনি বছরায় বসবাস করেছেন। বছরা তখন ছিলো আলিম ও তালিবানে ইলমের কেন্দ্র। বাগদাদেও আগমন করেছেন একাধিকবার।

হাদীছ ও ফিকাহ উভয় শাস্ত্রে তিনি ছিলেন উচ্চস্তরের ব্যক্তিত্ব। এমনকি তাঁকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যুহদ ও ধার্মিকতায়ও তাঁর স্থান ছিলো অত্যুচ্চে।

বিশ্বনবী সম্পর্কে

আল্লাহ্ তা’আলার বড় মেহেরবানি এই উম্মতের উপর যে, তাদের শ্রেষ্ঠ রাসূলের উম্মতরূপে নির্বাচন করেছেন, যিনি সাইয়েদু উল্দে আদম এবং সারা বিশের জন্য রহমত। উম্মতের ওলামাকে আম্বিয়া কেরামের ওয়ারিছ নির্বাচন করেছেন। আমাদের নবী হলেন, খুলুকে আযীমের অধিকারী। তাহলে উম্মত হিসাবে, আমাদের আখলাক কেমন হতে হবে! আর বর্তমানে আমাদের অবস্থা কী? আল্লাহ্র পেয়ারা নবী তো আখলাক দিয়েই দুশমনের দিল জয় করেছেন। আমাদের আখলাকের মধ্যেও যদি নববী আখলাকের সামান্য ছায়াপাতও ঘটে, দুনিয়ার সমস্ত জাতির দিল জয় করা আমাদের জন্য হবে খুবই সহজ, কিন্তু ...!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা