মুহাররম ১৪৪৫ হিঃ

কুরআন ও হাদিস

হাদীছের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 بسم الله الرحمن الرحيم

হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের রাব্ব যেমন লজ্জাশীল তেমনি মহানুভব। বান্দা যখন তাঁর দিকে (দুআ ও মুনাজাতের জন্য) হাত তোলে, তখন তিনি লজ্জাবোধ করেন যে, ঐ হাতদুটি তিনি খালি ফিরিয়ে দেবেন।

সুনানে তিরমিযি, হাদীছ নং ৩৫৫৬, ইবনে মাজাহ্, হাদীছ নং ৩১৩১

ফায়দা: দু‘আ ও প্রার্থনা হচ্ছে মানুষের একটি স্বভাবচাহিদা। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ তার চেয়ে বড় কোন শক্তির কাছে হাত পেতে কিছু চেয়ে আসছে এবং পাওয়ার আশা করছে। ঐ শক্তিটি হোক মানুষ, বা অতিমানুষ। আল্লাহ্ ছাড়া জগতের কোন শক্তি মানুষের সর্বপ্রকার চাহিদা ও প্রার্থনা পূর্ণ করতে পারে না। এমনকি মানুষের এই ‘চাহিদাপ্রবণতা’কে সবসময় পছন্দও করে উঠতে পারে না। কোন না কোন সময় মানুষের চাহিদার সামনে ঐ শক্তি নিজেকে বিপন্ন বোধ করে, ফলে বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে।

আল্লাহ্ একমাত্র সত্তা যিনি সর্বশক্তিমান এবং যার খাযানা এমনই অফুরন্ত যে, সৃষ্টির শুরু থেকে দুনিয়ার সমস্ত মানুষের প্রার্থনা ও চাহিদা পুরা করার পরো তার খাযানায় কোন কমি হবে না। তাই বান্দা যত চায়, আল্লাহ্ তত খুশী হন; বরং যে বান্দা আল্লাহ্র কাছে চায় না, আল্লাহ্ তার প্রতি নারায হন।

বান্দা তো আল্লাহ্র কাছে চাইবে নিজের গরযে, নিজের প্রয়োজনে; সুতরাং আল্লাহ্ যদি বান্দার  দুআ ও প্রার্থনা কবুল করেন এবং তার চাহিদা পুরণ করেন, তাহলেই তো বান্দা কৃতার্থ! অথচ এখানে অবস্থা হলো এই যে, আল্লাহ্র কাছে চাওয়া এবং দুআ করাকেই ইবাদত বলা হয়েছে, বরং বলা হয়েছে, ইবাদতের মূল ও প্রাণ। সুতরাং বান্দার চাওয়া জিনিসটি তো আল্লাহ্ দেবেনই, তদুপরি  যেহেতু বান্দা আল্লাহ্কে একমাত্রা দাতা বলে বিশ্বাস করে তার কাছে চেয়েছে, সুতরাং চাওয়ার কারণেই আল্লাহ্ তাকে আলাদা আজর ও ছাওয়াব দেবেন। তবে হাদীছে আছে, দুআর কবূলিয়াতের বিষয়ে তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। অর্থাৎ এমন বলা যে, কোথায়! এত চাইলাম, এত চাইলাম, কবূল তো হলো না! কারণ আল্লাহ্ আপন ইলম ও প্রজ্ঞার আলোকে বান্দার দুআর কবূলিয়াতের সময় ও প্রকৃতি নির্ধারণ করে থাকেন। সুতরাং বান্দার কর্তব্য হলো দুআ করে যাওয়া। কারণ  দুআর আজর ও ছাওয়াব তো সুনিশ্চিত!

তথ্যকণিকা-১ :  হযরত সালমান রা. নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত প্রিয় ছাহাবী। পারস্যে তাঁর জন্ম। সত্যের সন্ধানে পারস্য থেকে বের হয়ে দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে তিনি মদীনায় উপনীত হন এবং নবীজীর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাত তিনজনের প্রতি বড় আগ্রহী, আলী ও আম্মার ও সালমান।

* তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ষাটটি, তার মধ্যে, বুখারীতে আছে চারটি, আর মুসলিমে তিনটি।

* জন্ম ৫৬৮ খৃ. (সম্ভবত), ৩৩ হিজরীতে হযরত উছমান রা.র খেলাফতকালে তিনি মৃত্যুবরণ  করেন। ইরাকের মাদায়েন শহরে তাঁর কবর।

* দুআর কবূলিয়াতের প্রধান শর্ত হলো কামাই হালাল হওয়া, গিযা হালাল হওয়া। দ্বিতীয় শর্ত হলো, খুশুখুযূর সঙ্গে (আকুতি-মিনতির সঙ্গে) দুআ করা।

তৃতীয় শর্ত, তাড়াহুড়া না করা এবং কবূলিয়াতের বিশ্বাস রাখা।

তথ্যকণিকা-২ : এখানে লজ্জাশীলতাকে আল্লাহর ছিফাতরূপে যুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলার যে হায়া ও লজ্জাশীলতা, তা মানুষের মত কিছুতেই নয়। আল্লাহ্র লজ্জাশীলতা কেমন তা শুধু আল্লাহ্ জানেন। আমরা আল্লাহর লজ্জাশীলতার ছিফাতের প্রতি বিশ্বাস রাখি এমনভাবে যা তাঁর শানের উপযোগী।

* আল্লাহ্ তাআলার ছিফাতে হায়া বা লজ্জাশীলতার গুণের অনিবার্য ফল হলো, মানুষের কোন দুআ তিনি কবুল না করে ফিরিয়ে দেন না।

আল্লাহ্ তাআলার ছিফাতে হায়ার আরেকটি অভিপ্রকাশ এই যে,বান্দা যখন লোকচক্ষুর আড়ালে গোনাহ করে, আল্লাহ্র তো পূর্ণ কুদরত রয়েছে তার শাস্তিবিধান করার এবং মাখলূকের সামনে তাকে লজ্জিত করার, কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা তাতে লজ্জা বোধ করেন, তাই তার সতর করেন।

* কোরআন শরীফেও ছিফাতে হায়ার কথা এসেছে, বাকারাহ, আয়াত ২৬ এবং আহযাব, আয়াত ৫৩

  বিশ্বনবী সম্পর্কে

আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পেয়ারা হাবীবের শানে বলেছেন, আল্লাহ্র রহমতের কারণেই আপনি আছহাবের প্রতি (সমস্ত মানুষের প্রতি) কোমল হয়েছেন। আর যদি আপনি তাদের প্রতি রূঢ় ও কঠোরহৃদয় হতেন তাহলে তো তারা আপনার চারপাশ হতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতো!

হাদীছ ও সীরাতের কিতাবে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোমলতা ও হৃদয়নম্রতার এত এত ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে...!

শুধু হযরত আনাস রা.র বক্তব্য দেখুন, তিনি বলেন, আমি দশবছর আল্লাহ্র নবীর খেদমত করেছি, এর মধ্যে কখনো তিনি বলেননি, এটা কেন করেছো, বা কেন করোনি!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা