রবিউছ ছানী ১৪৪৫ হিঃ

কুরআন ও হাদিস

হাদীছের আলো

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

** হযরত আবূ উমামাহ বাহেলী রা. হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে শুধু আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য এতীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে, তো যতগুলো চুলের উপর দিয়ে তার হাত যাবে, প্রতিটি চুলের বিনিময়ে বহু নেকি সাব্যস্ত হবে। আর যে তার তত্ত¡াবধানে প্রতিপালিত এতীম ছেলেমেয়ের প্রতি সদাচার করবে, জান্নাতে আমি এবং সে এভাবে থাকবো। (একথা বলে তিনি আপন শাহাদাত ও মধ্যমা যুক্ত/ফাঁক করে দেখালেন।

মুসনাদে আহমদ, হাদীছ নং ২২১৫৩


** ফায়দা: মুসলিম উম্মাহ্র প্রতিটি সমাজে এতীম শিশুর বিপুল উপস্থিতি একটি গুরুতর সামাজিক পরিস্থিতি। আমাদের পেয়ারা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এতীম ছিলেন, এবং আব্বা ও আম্মা উভয় দিক থেকে।সদাচারের সঙ্গে এতীমের প্রতিপালনের বিষয়ে যে পরিমাণ তারগীবী (ও উৎসাহমূলক) বয়ান হাদীছে এসেছে, পৃথিবীর ধর্ম ও সভ্যতার ইতিহাসে তার কোন তুলনা নেই।এর চেয়ে বড় সৌভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে যে, এতীমের প্রতিপালনে সদাচারকারী জান্নাতে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত নৈকট্য লাভ করবেন।কতটা নৈকট্য, তা বোঝানোর জন্য তিনি নিজের দু’টি আঙুল, শাহাদাত ও মধ্যমা স্বাভাবিক দূরত্বের সঙ্গে একত্র করে দেখিয়েছেন। বলাবাহুল্য এ মর্যাদা তখনই অর্জিত হবে যখন এতীমের প্রতিপালন করা হবে শুধু আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার জন্য, দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্যে নয়। যেমন এতীমের অনেক সম্পদ রয়েছে, তো সেই সম্পদের উপর দখল কায়েম করা, বা সমাজে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করা।হাদীছের দ্বিতীয় অংশে তো বলা হয়েছে, এতীমের প্রতি স্থায়ী সদাচারের কথা, যেমন অন্যবর্ণনায় এতীমের কাফালাত ও প্রতিপালন -কারী শব্দ এসেছে।পক্ষান্তরে প্রথম অংশে রয়েছে তাৎক্ষণিক আচরণ দ্বারা এতীমের প্রতি দয়া, মায়া ও ¯েœহ প্রকাশ করা। এতীমের প্রতি সদাচারের এবং কাফালাতের সর্বোচ্চ স্তর তো হলো, এতীমকে নিজের ঘরে নিজের সন্তানের সঙ্গে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করা। তবে অনিবার্য কারণে যদি তা সম্ভব না হয়, আর এতীমখানায় নিয়মিত সাহায্য করা হয় এবং খোঁজখবর রাখা হয়, তাহলেও আশা করা যায় যে, হাদীছের সুসংবাদে সেও শামিল হবে, ইনশাআল্লাহ!

 
** তথ্যকণিকা ১-  এতীম কাকে বলে! শৈশবে যার বাবা ইনতিকাল করেছে, তাকেই বলা হয় এতীম। তবে এতীম যখন বালেগ ও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় তখন তার এতিমি দূর হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যার বাবা জীবিত রয়েছে, আর মা মারা গিয়েছে, শরী‘আতের পরিভাষায় তাকে এতীম বলে না। তবে মা-হারা শিশু যদি প্রতিক‚লতার মধ্যে পড়ে যায় তখন তার প্রতি সদাচারেরও রয়েছে অনেক বড় ফযীলত। বিষয়টি হলো শহীদের মত। একটা হলো প্রকৃত শহীদ, আরেকটি হলো শহীদের ফযীলত ও মর্যাদা!

* আহলে ইলম একটি চমকপ্রদ কথা বলেছেন। তা এই যে, মানুষের মধ্যে যেমন এতীম আছে, পশুপাখীর মধ্যেও তেমনি এতীম রয়েছে। তবে ওখানে এতীম পশু বা পাখী হবে, যদি মা-পাখী, বা মা-পশু মারা যায়। আহলে ইলম আশা করেছেন, যে ব্যক্তি এতীম পশু ও পাখীকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবে, সফল হোক বা না হোক সেও হাদীছের ফযীলত হাছিল করবে।

** তথ্যকণিকা ২-  হযরত আবূ উমামাহ্ বাহেলী রা.র পরিচয় সম্ভবত পিছনে গিয়েছে। এ হাদীছ এমন কিছু বিরল হাদীছের অন্তর্ভুক্ত যেখানে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ কোন অভিব্যক্তি ও আচরণসহ হাদীছ বয়ান করেছেন। যেমন এখানে জান্নাতে অত্যন্ত নৈকট্য বোঝানোর জন্য শাহাদা ও মধ্যমা, এ দুই আঙুল ব্যবহার করে দেখিয়েছেন। এক্ষেত্রে ছাহাবী হাদীছ বয়ান করার সময় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভিব্যক্তির সঙ্গে সাদৃশ্য গ্রহণ করার জন্য ঐ রকম অভিব্যক্তি করে দেখাতেন।  এমনকি সনদ পরম্পরায় যুগে যুগে প্রত্যেক বর্ণনাকারী মুহাদ্দিছ ঐ নববী অভ্যিক্তির হুবহু অনুসরণ করে দেখাতেন। আমাদেরও কর্তব্য, হাদীছটি বয়ান করার সময় উপরোক্ত সাদৃশ্যের সৌভাগ্য অর্জন করা। আল্লাহ্ যেন তাওফীক দান করেন, আমীন।

** বিশ্বনবী সম্পর্কে: নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের পর তায়েফের বনী সা‘আদ গোত্রের কতিপয় নারীর সঙ্গে হযরত হালিমা রা.ও দুগ্ধপোষ্য শিশুর সন্ধানে মক্কা শরীফে এসেছিলেন। ঘটনাপ্রবাহে তাঁর কিসমতে এসেছিলেন শিশু মুহম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন হযরত হালীমা রা. ঐ শিশুর কল্যাণে অনেক বরকত লাভ করেছিলেন। প্রথম বরকত ছিলো, তাঁর বুকে এই পরিমাণ দুধ ছিলো না, যা তাঁর নিজের শিশুপুত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু শিশু নবীর বরকতে মা হালিমার বুকে দুধের এমন প্রাচুর্য হলো যে...! দ্বিতীয় বরকত হলো, মা হালিমার বাহন ছিলো এতন শীর্ণ যে, অন্যদের চেয়ে পিছনে পড়ে থাকতো, কিন্তু ফেরার সময় তার বাহন ছিলো সবার আগে। তখন অন্যরা বলতে লাগলো...! তায়েফে ফিরে আসার পরো বরকতের ধারা অব্যহত...!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা