রমযান ১৪৩০ হিঃ (১৩)

রসের কলমদানি

রসের কলমদানি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

পেয়ারে বেরাদারান! আমি নাদান বহু দিন ছিলাম ‘গায়েবান’। এদিকে আমার যত ভক্ত-মুরীদান, ভেবেছে আমি এখন ‘আহলে গোরস্তান’! সবার দিলে তাই উঠেছে শোক-মাতমের বিষম তুফান আর কেঁদে কেটে হয়েছে লবেজান। আমি তো দেখিনি, শোনা কথা, কারো কারো কান্না নাকি ছিলো একশভাগ গ্যারান্টিযুক্ত খাঁটি ও নির্ভেজাল, আর কারো কারো কান্নায় ছিলো গ্নিসারিনের সামান্য মেশাল। আর অনেকের কাঁদবার আগ্রহ ছিলো প্রচুর, মাগার চোখের জলের অভাবে ছিলো মজবূর। কাঁদতে পারেনি, তবে সেই কমি-নোকছান পুষিয়ে দিয়েছে করে কুলখানি, ফাতেহাখানির জবরদস্ত অনুষ্ঠান। আমি তো শুনে বিলকুল তাজ্জব হয়রান! কিন্তু আমার পেয়ারা ‘তালেবান’! তাদের আচরণ কেন এত বেমানান! কেন এত দুর্বল তাদের ঈমান! তারা কি জানে না, যাকে রাখে আল্লাহ তাকে মারে কোন্‌ ইনসান! এই দেখো,আমি গোলাম হোসেন যিন্দা, তোমরা কি খুশী? তাহলে জানের ছদকা করো একটা করে খাসী, কিংবা গরু যাদের পঁয়সা আছে বেশী। *** আচ্ছা, এবার হোক কাজের কথা, আর নয় গড়িমসি। আনো কলম, আনো কাগজ দেশী নয়, বিদেশী; অভিধান আনো একখান কলকাতার, নয় বাংলাদেশী। বেছে বেছে দাও চোখা চোখা ‘শব্দরাশি’, কড়া কড়া লিখবো এবার দেখো আমি কেমন সাহসী! আসুক সন্ত্রাসী, মারুক কিল-ঘুষি, ভয় করি না জেল-ফাঁসি। হক কথা বলতে যে আমি ভালোবাসি! ভয় কী, জানের ছদকা দিয়েছো তো মোটাতাজা খাসী? তবে কিনা দেহখানা কমজোর বড়বেশী, তাই ব্যবস্থা করো কিছু ফল বারমাসী এবং ঘী-মাখন ও দুধের কলসী। প্রশ্ন হলো, এখন লিখবো কী, সব বিষয় যে বাসি! নিজের দুর্দশা দেখে নিজেরই পায় হাসি। আচ্ছা, পিলখানা তো আমার পড়শী, ওখান থেকে না হয় ঘুরে আসি? ‘দুইভাই’ ছিলো একসাথে হাসিখুশি। কে জানে কোন চাল চাললো কি না বন্ধু-প্রতিবেশী! কী বেদনার ঘটনা দেখলো এবার দেশবাসী! কী বললে! পিলখানা, শুনে চমকে ওঠে পিলেখানা! শেষে কী লিখতে কী লিখে বসি, তাতে নাখোশ হতে পারেন মাসী-পিসী! থাক তবে এসব নিয়ে কলমের নবিসি। *** আচ্ছা, চলো না বেড়িয়ে আসি টিপাইমুখ! হয়ত তাতে খোরাক পাবে কলমের মুখ! ‘ওনারা’ গেছেন কপ্টারে, আমরা যাবো নৌকায় চড়ে। উজানদেশে পালের নাওয়ে বেড়াতে হবে সুখ। কী বললে, বন্ধ করবো মুখ? যদি বলি আসল কথা কপালে আছে দুঃখ? থাক বাবা, ভয়ে কাঁপছে আমার বুক! তার চেয়ে ভালো, হয়ে থাকা বধির-মুক। কিন্তু মন্ত্রীরা এসব বলছে কী, মাথায় কি তাদের অসুখ! *** কবিতায় পড়েছি ‘প্রেমের ডোর’। ইদানিং দাদাদের মুখে শুনি করিডোর! ওরা দেবেন কাঁটাতারের বেড়া, আমরা খুলে দেবো দোর! দাদা, এ তো দেখি কলিকাল ঘোর! ‘মালের বাবা’ বলো কি তুমি, ধরেছে বুঝি নেশা জোর! জানি না তো এ আঁধার শেষে কবে হবে ভোর! কী বললে, লিখলে এসব যাবে জানটা বেঘোর? আচ্ছা বাবা, ক্ষমা চাই করে করজোড়। *** তাহলে লিখবোটা কী, বলো না হে প্রিয় সঙ্গী! দেশে তো এখন বেজায় শোর জঙ্গী, জঙ্গী! বড় অদ্ভূত বাণিজ্যমন্ত্রীর বলার ভঙ্গি! কে জানে কোন বন্দরে ভিড়েছে তার সওদাগরি ডিঙ্গি। উপঢৌকনে পেয়েছেন বুঝি প্রচুর ‘তরমুজ-বাঙ্গি! নইলে গরীবের জোটে না ভাত, আপনি খান ঘী! বলুন তো মশায় কী লাভ দেশের সুনাম ‘ভাঙ্গি’? জোর শঙ্কা মোর, পিছনে আছে এর পৈতা-ধুতি, নয় জামা-লুঙ্গি। *** কওমীরা তো বেচারা, কখনো করে না কিছু বেয়াড়া, মাখে না ছাই কারো ভাত হলে বাড়া। দিনরাত খায় না কিছু পানছাড়া। তাদের নিয়ে কেন ভাই সরকারের জান সারা! সব কাজ ফেলে বুদ্ধিজীদের এদিকে কেন কান খাড়া! কী বললে, আর যদি বাড়ি আগে খেতে হবে ‘রাম-তাড়া’! বুবুজানের মেজাজ এখন খুব চড়া! থাক ভাই, এই আমি হলুম ভেজা ভেড়া। বেলতলায় একবারের বেশী যায় না ন্যাড়া। সামলে নিলাম, যদিও সাহস উঠতে চায় দিয়ে মাথাচাড়া। *** আচ্ছা, গল্প লিখতে তো নেই মানা, সেই যে পিঁপড়ার গজিয়েছিলো ডানা! কিংবা রাত দুপুরে শেয়াল মৌচাকে দিয়েছিলো হানা! কিংবা দুষ্ট বানরের আটকে গিয়েছিলো লেজখানা! যদিও আমার আছে বেশ জানা, গল্পগুলো মিছে ষোল আনা, তবু তাতে উপদেশ আছে মন্দ না। আমার গল্প পড়েও যদি পিপড়ার মত কারো ডানা গজায়। গজাক আমার কী আসে যায়। জ্বলে পুড়ে মরুক, তাকে বাঁচাতে কার পড়েছে দায়! কিংবা যদি বেকুব-নাদান কারো হয় খেয়াল, হবে সে মৌচাকে হানা দেয়া শেয়াল। হোক না, যা ইচ্ছে করুক না! মৌমাছিরা হুল ফোটাবে, দশা হবে তার বেহাল। ফুলে ওঠবে শরীর, চোখ-মুখ-চোয়াল। এমন বলদের কাঁধে ওঠাও জোয়াল। কিংবা দুষ্ট বানরের গল্প শোনে, জাগে যদি দুষ্টুমি কারো মনে, তাতে আমার হলো কি দোষটা! নিজের দোষে কাটা যাবে তার লেজটা! যখন মন্দ হয় দুষ্ট লোকের কপালটা, তুলো দিয়ে বন্ধ করে রাখে কানটা, শোনবে না, দাও উপদেশ হাজারটা। কর্মদোষে বড় করুণ হয় তাদের পরিণামটা। থাক পিলখানা ও টিপাইমুখ, বন্ধ থাক আমার কলমের মুখ। থাক জঙ্গিবাদ, দিলাম সব বাদ। লিখবো না গল্প-উপদেশ কোন কিছু; দোহাই লাঠি হাতে নিয়ো না আমার পিছু। এত যখন শাসানি, থাক তবে থাক, আঁধারে সব ঢাকা পড়ে থাক। যায় যদি যাক, সবকিছু গোল্লায় যাক। দেশটা খেতে থাক না ঘোরপাক, আমি কেন ডেকে আনবো নিজের দুর্বিপাক, শব্দের ঢিল ছুঁড়ে ভেঙ্গে দিয়ে কারো স্বার্থের মৌচাক! না বাবা, থাক থাক! আচ্ছা দেশের কথা থাক, চলো বিদেশ যাওয়া যাক। আপনি কি জানেন মিস্টার ওবামা, ইহুদীদের কাছে আছে অনেক বোমা! তবে ইরানের প্রতি কেন এত উষ্মা! ইরানের নিন্দায় মুখে নেই দাড়ি-কমা! দিনে দিনে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের কত অপরাধ হলো জমা; আপনার চোখে তবু সাদা তাদের কাপড়-জামা! গাজায় যারা করলো বোমাবর্ষণ, তাদেরই জন্য কায়রোয় আপনার অশ্রুবর্ষণ! ইহুদিরা হলো শান্তির পিয়াসী, আর যারা সব হারালো তারা হলো সন্ত্রাসী! ইসরাইলের প্রতি হয়ে আন্ধা, হামাসের শুধু করে গেলেন নিন্দা, আসলে দিলটা আপনার বড় গান্দা! সালামের কৌশলটা ধরেছেন বড় উমদা! মুখে মুখে রাম রাম হাতে রামদা। বলেন কী, যাবেন কেন ইরাক ছেড়ে! ফুল দিয়ে করেনি বরণ, রেখেছে কবর খুঁড়ে! ইরাক থেকে নিতে চান তেল, ন্যাড়া মাথায় পড়বে যে বেল! আর কত দেখাবেন খেল! মিস্টার, গো টু হেল! মনে রাখবেন, আফগানিস্তান, আপনার সেনাদের কবরস্তান। আমাদের গর্ব কাবুল এবার করেছে জান কবুল। শহীদ হতে বেকারার ব্যাকুল! পাঠান কত পাঠবেন সৈন্য, তাতে প্রকাশ পাবে শুধু আপনার দৈন্য। নিশ্চিত পরাজয় আছে আপনার জন্য। শুনুন বারাক হোসেন, বলছি আমি অধম গোলাম হোসেন! পেয়ারে বেরাদারান! তোমরা আমার মওতের শোকে মাতম করেছো, কেঁদেছো, অন্তত কাঁদবার কোশেশ করেছো, এমনকি কুলখানি, ফাতেহা ুখানিও করেছো, এজন্য শোকরান, শোকরান এবং জাযাকাল্লাহ খায়রান। তবে আসো একটু মশওয়ারা করি; এখন কি চট করে আমার মরে যাওয়া ঠিক হবে? এই না মাত্র রোযানা একহালি করে মরার খোশখবর আসতে শুরু করেছে। যখন ‘মড়ক’ লাগবে তখনই না হবে আসল মজা! সেই মজাটা না দেখেই মরে যাবো! না, আল্লাহ, না! যদিও নিজে আমি কিছু করতে পারি না, তবু সেই মহামড়কের ‘খোশমানযার’ আমি দেখতে চাই। সুতরাং তোমরা আমার জানের ছদকাটা তাড়াতাড়ি..

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা