রবিউছ ছানী ১৪৪৫ হিঃ

রসের কলমদানি

ইহা রসে টইটুম্বুর একটি লেখা। প্রিয় পাঠক, ইহাকে বেশী কাত করিয়া পড়িও না; তাহাতে রসটুকু পড়িয়া যাইতে পারে!

জঙ্গলে পশুসমাজে গণতন্ত্রের চর্চা!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

জঙ্গলে পশুসমাজে গণতন্ত্রের চর্চা!


পেয়ারে পাঠকান ও পাঠিকান! গতবারের লেখাটি হইতে তোমরা কি যথার্থ রস আস্বাদন করিতে পারিয়াছ! আস্বাদন করিতে গিয়া রসগুলা আবার গায়ে গতরে পড়িয়া যায়নি তো! পড়িয়া গেলে মহাবিপদ, দলে দলে পিঁপড়া আসিতে পারে, আর তখন...! জি¦, তখন পিঁপড়াগুলাকে তাড়াইয়া কিছু মানুষ প্রাণীও আসিতে পারে বড় বড় জিহŸা বাহির করিয়া চাটিয়া চাটিয়া রস আস্বাদন করিবার মতলবে, তাহাতে গঙ্গার জল ও বুড়িগঙ্গার পানি অনেক দূর গড়াইতে পারে! এমনকি মান ইজ্জতের উপরও টান পড়িতে পারে! কারণ ‘যামানা খারাব হ্যায়’! তো শ্রবণ করো পেয়ারে বেরাদারান ও পেয়ারী দোখতারান! আজিকার মজলিসে বিলকুল নয়া কিসিমের, নয়া রসের মযমূন বয়ান ফরমাইবো। তো তোমরা যাহারা পার্কের জলসার সঙ্গে জড়িত নহ এবং যাহারা মোবাইলের আলাপ ও প্রলাপ হইতে নিরাপদ দূরত্বে আছ তাহারা আমার নিকটে আসিয়া বইস এবং শুনিবার আগে ও পরে দস্তুরমত তাওবা করিয়া লইও। কারণ মযমূন বড়ই খতরনাক!অনেক অনেক দিন আগের কথা! আফ্রিকার জঙ্গলে হিং¯্র ও নিরীহ, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ বহু পশু ও প্রাণীর সঙ্গে বাস করিত একটি বানর ও একটা শেয়াল। আর জানা কথা, তোমরা না জানিলেও ইহা অবশ্যই জানা কথা যে, বানরটি ছিল দুষ্টুমিতে সেরা, আর শেয়ালটা ছিল বুদ্ধিতে সেয়ানা।তবে দুষ্ট ও ধূর্ত দু’টিতে বন্ধুত্ব ছিল নির্ভেজাল! সারা জঙ্গল এবং জঙ্গলের রাজা-প্রজা সকলেই জানিত বানর ও শেয়ালের বন্ধুত্বের কাহানী ও দাস্তান!একদিনের কথা, বরং দুই দিনের কথা, তরতীবের সঙ্গে বলিতেছি শ্রবণ কর। প্রথমদিন বানর তাহার বন্ধু শেয়ালকে বলিল, আমার বড় আকাক্সক্ষা, জঙ্গলের সবাই, রাজা ও প্রজা আমরা সবাই মানুষ হইবার চেষ্টা করি!শেয়াল অবাক হইয়া কহে, এমন ছন্নছাড়া চিন্তার উৎস কী বন্ধু! বানর কহিল, দেখো, সত্যমিথ্যা জানি না, তবে মানুষের সমাজে কিছু মানুষ বলে ও বিশ^াস করে, মানুষ নাকি আমাদের বানর সম্প্রদায়ের বংশধর! অথচ তাহারা আমাদের বানর  সম্প্রদায়ের চাইতে, বরং সমস্ত পশুসমাজের চাইতে উন্নত। তো আমরা যদি মানুষের সভ্যতা সংস্কৃতি কিছুটা হইলেও গ্রহণ করিতে পারি তবে আশা হয়, আমাদের জঙ্গল- জগত যথেষ্ট উন্নত হইতে পারে।কিছ্ছা মুখতছর, শেয়ালের মনে যদিও আশঙ্কা ছিল যে, শেষটায় জঙ্গলের জীবনে মনুষ্যসমাজের হানাহানি ও খুনাখুনি না শুরু হইয়া যায়! তবু বন্ধুকে খুশী করিবার জন্য সে কহিল, তা আমাকে কী করিতে হইবে বন্ধু! বানর কহিল, তুমি তো জান, আমার বুদ্ধি কম, তোমার বুদ্ধি জঙ্গল-সমাজে সবার সেরা! তাই তুমি আমার কথাগুলা জঙ্গলরাজকে বুঝাইয়া বল, তোমার বুদ্ধি তিনি ফেলিতে পারিবেন না!প্রশংসায় শেয়াল তো শেয়াল, মানুষ পর্যন্ত কাবু হয়! গলিয়া যায়! তো দ্বিতীয় দিন শেয়ালপÐিত বানরকে সঙ্গে করিয়া জঙ্গলরাজের দরবারে গেল এবং বেশ বুদ্ধি করিয়া ও কৌশল আঁটিয়া বিষয়টি জঙ্গল-রাজকে বুঝাইল এবং তিনি খুব বুঝিলেন যে, ইহাতে জঙ্গলের পশুদের লাভলোকসান যাই হউক, তাহার নিজের লাভ প্রচুর। ...জঙ্গলরাজ খোশমেজাজে জিজ্ঞাসা করিলেন, তা এখন কী করিতে হইবে! শেয়াল মুচকি হাসিয়া কহে, জাহাপনা, মনুষ্য-সমাজে রাজতন্ত্র বড়ই নাপছন্দ। তাহারা নির্বাচন ও নির্বাচিত শাসক বহুতই পছন্দ করে! জঙ্গলরাজের মাথার টনক নড়িল এবং কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়িল, কারণ নিজের আমলনামা তো তাহার জানা। তাই তিনি কহিলেন, কিন্তু জঙ্গলের পশুরা কি আমাকে ভোট দেবে!শেয়ালপÐিত কৃত্রিম ক্রোধ প্রদর্শন করিয়া কহিলেন, দেবে না মানে! আলবৎ দেবে! মানুষ বলুন, পশু বলুন, প্রাণ সবারই প্রিয়!জঙ্গলরাজ তবু শঙ্কা প্রকাশ করিয়া কহেন, কিন্তু ভোট তো হইবে গোপনে, কে দিল, আর কে দিল না, জানা তো যাইবে না।শেয়াল মুচকি হাসিয়া কহিল, জাহাপনা, সেই ভার আমার উপর ছাড়িয়ে দিন, মনুষ্য-সমাজের নির্বাচনপদ্ধতি এখন যথেষ্ট আধুনিক, আমরা তাহাই অনুসরণ করিব। এখন দিনের ভোট দিনে হয় না এবং নিজের  ভোট নিজে দিতে হয় না।...কিছ্ছা মুখতছর! জঙ্গলরাজ সম্মত হইলেন এবং শেয়ালকে সেই পদে বসাইলেন, মনুষ্যসমাজে যাহাকে বলে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার!’আর বানর! সে হইল, জঙ্গল-রাজের পক্ষে প্রচারদলের প্রধান। সূর্য ডুবিল এবং নির্বাচন শুরু হইল, সূর্যের যখন উদয় হইল তাহার কিছু পূর্বে নির্বাচন সাঙ্গ হইল।জঙ্গলের প্রজারা শুনিতে পাইল, তাহাদের রাজা এখন রাজা নহেন, তিনি এখন...!এই যে, তুমি বোধহয় কিছু জানিতে চাহ!

০ জি¦ হুযূর, জানিতে চাহি, এই খবর আপনি কোন্ তরীকায় প্রাপ্ত হইলেন!

০০ আরে মূর্খ! মানুষ কী তরীকায় জানিত হইল, সে বানরের বংশধর!

 

 
** নাছীরুদ্দীন হোজ্জা এখন রাজধানীতে বেশ ব্যস্তসময় যাপন করিতেছেন! তবে প্রকাশ্যে নহে, অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করিয়া। কারণ, তিনি এখন আত্মগোপনে আছেন! কেন! কেন আবার কী! কবরস্তানের ব্যবস্থাপক, মধ্যযুগের হোজ্জার নামে ফেরারী আসামী বলিয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিয়াছেন।কিন্তু তাহার এইভাবে পালাইবার কারণ কী! কবরস্তানে তাহার বসবাসে কী সমস্যা!মিয়াঁ ভাই, তুমি তো জান, ঢেকী যেখানেই যায় ধান বানে। তো হোজ্জা কি কবরে গিয়াও তাহার হোজ্জাগিরি ভুলিতে পারেন! তাই তাহাকে ফেরারি হইয়া পৃথিবীতে আসিতে হইয়াছে।কিন্তু জনাব, এত এত দেশ থাকিতে, তাহার আগমন বা শুভাগমন বাংলাদেশে কেন!কী মুছীবত, সব কেনর জবাব কি আমাকেই দিতে হইবে! স্বয়ং হোজ্জা মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লও না কেন! তিনি এখন কোথায়, ঠিকানা বলুন। ইহা তো ‘স্টেটসিক্রেট’! তাছাড়া তুমি কি জান না, হোজ্জার যে পেশা, ‘রাজতো..’ তাহার জন্য বাংলাদেশই হইল সব চাইতে উর্বর ভ‚মি!আচ্ছা জনাব, হোজ্জা এখন কী কর্মে ব্যস্ত!তিনি এখন উপদেষ্টারূপে কাজ করিতেছেন এবং তাহার মধ্যযুগীয় জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার আলোকে দিনের আলোতে, তবে নিরাপদে নির্বাচন পার হইবার কর্মকৌশল নির্ধারণ করিতেছেন! 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা