রজব ১৪৩৯ হিঃ (৩/৩)

রসের কলমদানি

আমাকে চিনিয়াছ, জানেমান!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

ইহা রসে টইটুম্বুর একটি লেখা। ইহাকে বেশী কাত করিয়া পড়িও না; তাহাতে রসটুকু পড়িয়া যাইতে পারে!

পেয়ারে বেরাদারান! আমাকে চিনিয়াছ?! কী বল, চিনিতেছ না! আসতাগফিরুল্লাহ!! মানিলাম, কিঞ্চিৎ বৃদ্ধ, অর্থাৎ দেশের ভাষায় যাহাকে বলে বুড়া, কিঞ্চিৎ না হয় বুড়া হইয়াছি। মাগার চেহারা সুরতে মাশাআল্লাহ, এখনো আয়নার সামনে দাঁড়াইতে পারি। না চিনিবার মত কোন পরিবর্তন তো জানেমান, এখনো চেহারার মানচিত্রে ঘটে নাই! তো না চিনিবার পক্ষে তোমাদের কী যুক্তি থাকিতে পারে?!

মিয়াঁরা, খালেছ দিলে তাওবা কর। অতঃপর চোখের  ব্যাটারিতে উত্তমরূপে ফোকাস করিয়া অধম গরীবের চেহারাখানা অবলোকন কর।

এখনো যদি চিনিতে না পার, তোমাদিগকে ‘নিমকহারাম’ বলিব না। কারণ নিমক তাহাতে কিঞ্চিৎ আপত্তি করিতে পারে ।

নিমক ছাড়া আর কি পদার্থ আছে, যাহাকে টানিয়া আনিলে ঐ পদার্থটি ‘ইজ্জত গেল’ বলিয়া আপত্তি করিবে না?!

আচ্ছা, এই সম্পর্কে পরবর্তী- সুযোগে চিন্তা করা যাইতে পারে। আপাতত চল, আমরা পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণ করি।

তো ঘটনা যেন কী হইল?! অমি অধমকে তোমরা চিনিতেছ না! আমিও ‘চীনাজোঁক’ তোমাদিগকে ছাড়িতেছি না। চিনি না বলিলেই হইল! এত দিনের পেয়ার মুহব্বত এবং মুহব্বত পেয়ার ভুলিয়া গেলেই হইল!! মিয়াঁ, চোখের পর্দা বলিয়া কিছু কি থাকিতে নাই!  স্বীকার করি, আমি বাঙ্গালী, তুমিও বাঙ্গালী, সুতরাং খালাতো ভাই! তাই বলিয়া এতটা?! না মিয়াঁ ভাই, এত সহজে ছাড়িব না। আমাকে অবশ্যই চিনিতে হইবে। আলবৎ চিনিতে হইবে। তুমি চিনিবে; তোমার পিতামহাশয় চিনিবেন, এমনকি তোমার প্রপিতামহাশয় যেখানেই থাকুন আমি অধমকে চিনিতে হইবে। বানের জলে ভাসিয়া আসা খড়কুটা তো নহি মিয়াঁ ভাই!! এমনকি কচুরিপানাও নহি এবং নহি কচুপাতার পানি। আমি রীতিমত যাহাকে বলে কা-বিশিষ্ট শিকড়বিশিষ্ট একখান গাছ, মানে বৃক্ষ!! বটবৃক্ষ নহি, তবে মান্দাল বৃক্ষ অবশ্যই। আর মান্দাল গাছে শেষপর্যন্ত তোমাকে চড়িতেই হইবে। বেড়াল পর্যন্ত ফান্দে পড়িলে মান্দালগাছে চড়িয়া জান সালামত করে, আর তুমি তো মিয়াঁ ভাই, আদমের বেটা ইনসান!

তো কোথাকার জল কোথায় গিয়া গড়াইল! আমি মান্দাল গাছ, আর তোমরা নাদান ইনসান তাহাতে চড়িতে চাহিতেছ না। আমিও ছাড়িতেছি না। বিড়াল চড়িতে পারে, তোমরা পারিবে না কেন?!

মিয়াঁ ভাই, একটু চেষ্টা তো করিতে পার! চেষ্টার অসাধ্য কী আছে বল! চেষ্টা করিলে মানুষ কাঁচকলা খাইতে পারে, এমনকি মানকচুও খাইতে পারে, আর তুমি মিয়াঁ ভই, এই অধম গোলাম হোসেনকে চিনিতে পারিবে না?!

***

আচ্ছা চল, ফেরসে বিসমিল্লাহ। এতক্ষণ যাহা বলিয়াছি, ভুলিয়া যাও। মনে কর, আমি কিছু কহি নাই, তুমিও কিছু শ্রবণ কর নাই। নতুন করিয়া যাহা কহিতেছি, কর্ণদ্বয় পরিষ্কার করিয়া, চক্ষুদ্বয় উন্মিলিত করিয়া শ্রবণ কর।

একদেশে ছিল এক নাখান্দা ইনসান। লোকে তাহাকে বলিত গোলাম হোসেন।

ইহা তো নাম! কী তাহার কাম? অর্থাৎ কী কর্ম করিয়া লোকমা হালাল করিত? সে কিছুই করিত না। বেকার মানুষ কোন কাজ করে না, আর সে ছিল সর্বদিকে একজন আদর্শ বেকার।

সেই দেশে ছিলেন এক বুবুজান। তিনি কী করিতেন? তিনিও কিছুই করিতেন না। তবে কি তিনিও বেকার ছিলেন? না, কস্মীন-কালেও না। তিনি বেকার ছিলেন না। অবশ্যই তিনি কিছু কা- করিতেন। তবে ঐ কা-কে লোকে কর্ম বলিয়া স্বীকার করিত না। লোকে যাহা বলিত তাহা আমার মুখে সাজিবে না। বুবুজান বেকার ছিলেন না, তবে দেশের তাবৎ বেকারকে তিনি বে-হদ পেয়ার করিতেন, আর বলিতেন, বেকারসমস্যা আমি আলবৎ দূর করিব। এই লও, এখন হইতে কাজের বিনিময়ে খাদ্যকর্মসূচী চালু করিলাম। সুতরাং দেশের যত বেকার, শীঘ্র একত্র হও।

বেকার লোকে কাজ পছন্দ করিবে কেন? কিন্তু উপায় কী গোলাম হোসেন! কাহার ঘাড়ে দুইটি মস্তক অবস্থান করে যে, ‘তিনার’ ফরমান খেলাফ করিবে!

বুবুজান কহিলেন, তোমাদের কাজ হইল, কঠিন কিছু না, বসিয়া বসিয়া, আমার এবং আমার আগিলা পিছিলা পুরা খান্দানের ফযিলত বয়ান করিবা। পদ্য লিখিতে পার, আবার গদ্যও লিখিতে পার। সত্য লেখ বা মিথ্যা, আমি মাইন্ড করিব না। তবে শর্ত হইল, সুর করিয়া, হাসিয়া কাঁদিয়া এয়সা বয়ান করিবা, যাহাতে শ্রোতাসকল সত্য বলিয়া বিশ্বাস করে। করে মানে করিতে বাধ্য হয়।

বুবুজান আরো কহিলেন, কাজের বিনিময়ে তোমরা খাদ্য প্রাপ্ত হইবে, সকালে এক কেজি চাল, বিকালে এককেজি! বছরের শেষে যে বেকার এই কর্মে প্রথম স্থান অধিকার করিবে তাহাকে সোনার পদক দেয়া হইবে। তবে পদকে সোনার পরিমাণ লইয়া কোন আপত্তি চলিবে না। সোনার কী দাম! আসল জিনিস তো হইল পেয়ার এবং মুহব্বত। দেশের পদার্থ-অপদার্থ সকল বেকার, একত্র হইয়া কেহ পদ্যে, কেহ গদ্যে বুবুজানের ফযিলতের বয়ানে লাগিয়া গেল।

সকাল-বিকাল দুই কেজি চাল, কম তো নয়! তবু বেকার জীবনের সুখ কল্পনা করিয়া সকলের প্রাণ বড় কাঁদিত!

একমাত্র ব্যতিক্রম গোলাম হোসেন। তাহার কিন্তু বুবুজানের ফযিলত বয়ান করিতে দিলের অন্দরে বহুতই ফুর্তি লাগিত। তাই বুবুজান তাহাকে আলাদা করিয়া পেয়ার করিলেন, আর  বছর শেষে বড় একখান পদক তাহার গলায় ঝুলাইয়া দিলেন। মিয়াঁ ভাই, চিনিয়া লও, আমি অধম তোমাদের সেই পেয়ারা গোলাম হোসেন!

বুবুজানের ফযিলত বয়ানের ফাঁকে ফোঁকরে তোমাদের রসের কলমদানিতে নানা রসের গল্প বলিতাম! মিয়াঁ ভাই, এইবার মনে পড়িয়াছে! আমি তোমাদের সেই পেয়ারা গোলাম হোসেন!

***

এত দিন কোথায়, কেন, কীভাবে গায়েবান ছিলাম? সে বড় দুঃখের কাহিনী মিয়াঁ ভাই। প্রশ্ন করিও না। কারণ উত্তরে যাহা বলিব, সত্য হইলে তুমি অবিশ্বাস করিবে, আর মিথ্যা হইলে বিশ্বাস করিবে না। তাই কোন প্রশ্ন করিও না। শুধু জানিয়া রাখ, আমি আবার ফিরিয়া আসিয়াছি এবং বহু কষ্ট কসরতে পরিচয়পত্র পেশ করিতে কামিয়াব হইয়াছি। আর খোশখবর শ্রবণ কর, আবার আমি তোমাদের মজলিসে হাজির হইব এবং .... তো মিয়াঁ ভাই এত দিন ছবর করিয়াছ। এখন মাত্র একখান মাহিনা ছবর কর। 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা