মুহররম ১৪৩২ হি: (১৮)

রসের কলমদানি

রিয়েলি সরি ম্যাডাম!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

 

সরি ম্যাডাম! আপনার পক্ষে এখন আমার কিছুই বলিবার নাই। কারণ কোন বিষয় ভাবিয়া চিন্তিয়া এবং চিন্তিয়া ভাবিয়া দেখিবার যতগুলি ‘এ্যাঙ্গেল’ আছে প্রতিটি এ্যাঙ্গেল হইতে আমি ভাবনা-চিন্তা করিয়া দেখিলাম এবং দেখিয়া বুঝিলাম, এই বাড়ী আপনার কপালে কখনো ছিল না, এখনো নাই। কিন্তু জলের মত তরল বিষয়টি আপনি কেন বুঝিলেন না ম্যাডাম! আপনি তো মাটি ও মানুষের কথা বলেন। তো বঙ্গদেশের মনুষ্যগণের খাছলত- খাছিয়ত এবং মাটির আঁশলা ও দোআঁশলা হালত-কয়ফিয়ত কি আপনি জানিত নহেন! কোন্ আক্কেলে আপনি ম্যাডাম এই জাতির দান গ্রহণ করিতে গেলেন! হাদীছের বয়ানে দানের মাল ফেরত চাওয়া, আর কুকুরের ‘উল্টী’ গিলিয়া খাওয়া সমান। কিন্তু ইহাতে যে ‘উনার’ কিছুমাত্র অরুচি নাই, সকলে বুঝিল, আপনি বুঝিলেন না!  

রিয়েলি সরি ম্যাডাম, আপনার পক্ষে আমার এখন কিছুই করিবার নাই। তবে ম্যাডাম, আপনি চাহিলে অতি খাছ দিলে একটি পরামর্শ দিতে পারি। আমার ‘টাইমসট’, স্রেফ একটি। অবশ্য তার আগে কিছু স্পষ্ট কথা আছে। জানি, আপনার দিলে এখন বহুত তকলীফ, আর তকলীফের হালতে মিঠা কথাও তিতা। তাই চেষ্টা করিব, স্যাকারিন দিয়া মিঠা করিয়া পেশ করিতে।  

স্যাকারিন কেন, চিনি নহে কেন?! প্রথম কারণ, বর্তমানে আমি অধম ডায়াবেটিসের খাদেম। সুতরাং চিনি আমার জন্য ‘টক’। দ্বিতীয়ত, বাজারমূল্যগত কারণে আপনার জন্যও টক! সুতরাং চিনির বিকল্প স্যাকারিনেই ছবর শোকর করুন।

তো বিসমিল্লাহ! ম্যাডাম, আপনি হৃদয়ঙ্গম করিতে না পারিলেও অতি অবশ্যই অন্তরঙ্গম করিতে পারিবেন যে, ধর্মগত, আইনগত, দস্ত্তরগত এবং ভূগোলগত, কোন ‘গতেই’ এ বাড়িতে বসত করা আপনার জন্য সঙ্গত ছিল না। ‘উনি’ একটি অসঙ্গত কর্ম সংশোধন করিয়াছেন মাত্র।

আচ্ছা আইসুন, প্রথমে ধর্মীয় এ্যাঙ্গেল হইতে চিন্তা করি। ধর্মের কথা, ‘এই দুনিয়া দু’দিনের লাগিয়া’! সুতরাং বৈধব্যের ‘দুইখানা দিন’ বস্তির কুঁড়ে ঘরেও তো পার করা যায় এবং ইহাই ছিল বেহতর! মউতের পরে তো আপনি ‘ফ্রি’! কারণ উনার উচ্ছেদ-অভিযান মউতের বাড়ী পর্যন্ত গড়াইবে না, এরূপ আশা বোধ হয় করা যায়। (যদিও কবরে উঁকি দেওয়ার খাছলত ‘উনার’ আছে বলিয়া শোনা যায়, তবে অধমের খেয়ালে ইহা শুধুই গুজবের বাতাস এবং বাতাসের গুজব!)

সুতরাং ‘দু’দিনের’ বাড়ি লইয়া কেন এত হৈচৈ এবং চৈহৈ! ম্যাডাম, রাগ করিবেন না, আমার মনে হয়, দুনিয়ার বাড়ীঘরে আপনার কিছুটা মোহ আছে, যাহা ধর্মত অসঙ্গত, আর ‘উনি’ সম্ভবত আপনার মোহভঙ্গ ঘটাইতে চাহিয়াছেন, সুতরাং আখেরি বিচারে উনি অবশ্যই আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু আপনি ম্যাডাম, ‘উনার’ দিলের নিয়ত না বুঝিয়া নাহক নাখোশ হইতেছেন।

আরেকটি এ্যাঙ্গেল হইতে চিন্তা করুন, ‘পরপুরুশ ইজ পরপুরুশ’ তার উপর লোকটা নাকি সুবিধার না। এই কারণে লোকে তাহাকে ‘তালব্য-শ’ বলে। সুতরাং এরূপ পরপুরুশের দান গ্রহণ করা ঘোরতর অধর্ম, যাহাতে বাঁধা দেওয়া ‘উনার’ কর্তব্য। হাদীছের কথা, অধর্ম রোধ কর, হাতে পারিলে হাতে, মুখে পারিলে মুখে, অন্যথায় দিলে দিলে...। তো মাশা‘আল্লাহ ‘উনি’ হাতের কাজে যেমন সিদ্ধহস্ত তেমনি মুখের কাজে সিদ্ধমুখ! সুতরাং এক্ষেত্রে তিনি শুধু কলবের কাজে সন্তুষ্ট থাকিবেন, এত দুর্বল ঈমান তো তাহার নহে!

হাঁ ম্যাডাম, আপনি যদি মনে করেন, ‘উনি’ অন্যায় করিতেছেন, তো আপনার কর্তব্য ছিল, শুধু দিলে দিলে খারাপ জানা। কারণ হাতের কাজ, মুখের কাজ কোনটাতেই আপনার তেমন পটুতা নাই।

আচ্ছা, এইবার শুনুন আইন ও দস্ত্তরের বাহাছ। বর্তমানে  যেহেতু দেশের দস্ত্তরের দস্ত্তরমত ‘চিকিৎসা’ চলিতেছে এবং কেহ জানে না যে, উহা কোন্ চিৎকাসা, ইউনানি, না এলোপ্যাথি, না আইউর্বেদি? সেহেতু  উহা এখন আপনার জন্য সুবিধার হইবে বলিয়া মনে হয় না।

আইন অবশ্য লোকে বলে, নিজের গতিতেই চলে। কে জানে, কোন্ গতিটি উহার নিজস্ব! খয়ের, যে গতিতেই চলুক, আইন যখন চলিতে শুরু করে, প্রজার কর্তব্য হইল আইনের লাগামটি যাহার হাতে তাহাকে ‘প্রণাম’ করিয়া চলা। কিন্তু আপনি ম্যাডাম, কাহার বুদ্ধিতে কী করিয়া বসিলেন! আমার মনে হয় আপনাকে ম্যাডাম, আইনের ঘোল ‘পান’ করান হইয়াছে। আপনি তো অতিশয় নিরীহ প্রকারের বাঙ্গাল, আর বাঙ্গালকে যখন হাইকোট দেখানো হয় তখন সে কোন প্রকার হুজ্জত করে না। কিন্তু আপনি করিলেন। ‘উনি’ হাইকোট দেখাইলেন, আপনি সুপ্রিম কোট দেখিতে চাহিলেন! মানলাম, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু অধিকার থাকিলেই হয়! আদব-কায়দা বলিয়া কি কিছু নাই! যাক, আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট দেখা আপনার সাঙ্গ হইয়াছে! কাজী ছাহেব খারিজ করিয়াছেন, আর আপনি ‘খারেজী’ হইয়া গেছেন! সহসা ‘সুন্নী’ হইবার তেমন আশা  বোধহয় নাই।

আচ্ছা ম্যাডাম, হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্ট না হয় বুঝিলাম, কিন্তু হরতাল! এইডা কী হইল ম্যাডাম! তাল ঠিক না করিয়াই হরতাল! অতপর! হরতালের পর তো আর কোন তাল নাই ম্যাডাম! আপনার উপদেষ্টার মাথায় টাক আছে জানি, আর লোকে বলিত, বুদ্ধি বাড়িলে মাথায় টাক পড়ে, কিন্তু ...! আসলে আবহাওয়ার

উল্টাপাল্টা হালত আকল-বুদ্ধির উপরও আছর করিতেছে বলিয়া মালুম হইতেছে!

আচ্ছা, এইবার ভৌগোলিক আলাপটাও সারিয়া ফেলি। ম্যাডাম, ভৌগলিক দিক হইতে আপনার বাড়ীটি বড়ই বেকায়দা অবস্থানে আছে। রীতিমত ক্যান্টনমেন্টের হৃৎপিন্ডে! যখন স্বামী ছিল তখন অন্য কথা ছিল। বর্তমানে তো আপনি বেসামরিক ‘বিধবা’। তো সামরিক স্বামীর অবর্তমানে সামরিক বাড়ীটি দখলে রাখিয়া আপনি মারাত্মক ভৌগোলিক অপরাধ করিয়াছেন! মানিলাম, অপরাধ দেশে সর্বত্র ঘটিতেছে। তো সব বাদ দিয়া আপনার বাড়ীটি কেন?! কিন্তু প্রায়োরিটি বলিয়া কথা! আমার মতে অপরাধ নির্মূলের শুভকর্মটি সামরিক এলাকা হইতে শুরু করিয়া ‘উনি’ বড়ই উমদা লেয়াকতির পরিচয় দিয়াছেন। আখের কন্যাটি কাহার!

দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের মানচিত্র দেখিলেই ম্যাডাম, আপনি বুঝিতে পারিবেন, আমাদের ভূগোলটা কিঞ্চিৎ লম্বা। অর্থাৎ কিনা জন্মগতভাবেই ইহা ট্রান্জিটের দেশ। তো সেই দেশের নেত্রী হইয়া আপনি কিনা বলিয়া বসিলেন, দেশের বুকের উপর দিয়া ‘গাড়ী’ যাইতে দিবেন না! দেখ বুকের পাটা, ডাঙ্গায় বাস করিয়া কাহার সঙ্গে যেন লাগিতে যাওয়া!

যাক, এখন ম্যাডাম, আমার পরামর্শটি শুনুন। আপনি ম্যাডাম রাজনীতি ছাড়িয়া দিন, কারণ এই দেশে রাজনীতি করা আপনার কর্ম নহে, ইহা শুধু উনার কর্ম। ‘উনি’ দশটাকা কেজি চাল বেচিতে পারেন, আপনি কস্মিনকালেও পারিবেন না। সুতরাং রাজনীতি ত্যাগ করিয়া নিরালায় বসিয়া তসবি জপিতে থাকুন। তসবি নাই! হায় ম্যাডাম, এই রোগেই তো ঘোড়া মরিল! হিজাব, তসবি, মুছল্লা, এগুলা হাতের কাছে রাখিতে হয়। রাজনীতির বাজারে এগুলার নিজস্ব মূল্য আছে। আপনি বুঝিবেন না ম্যাডাম!

খয়ের, ‘উনার’ তসবীটা  এখন সম্ভবত অবসর যাপন করিতেছে। চাহিলে আশা করি দিতে তিনি কার্পণ্য করিবেন না। তো নির্বাচনের আগে ফেরত দিবেন, ওয়াদা করিয়া তসবীহটি হাওলাত করুন এবং নির্জনে বসিয়া তসবী জপিতে থাকুন।

কিন্তু ম্যাডাম, রাজনীতির ‘কম্বল’ যদি আপনাকে ছাড়িতে না চায়, তবে আমার দ্বিতীয় পরামর্শ, দয়া করিয়া ভূগোলের নতুন পাঠ গ্রহণ করুন এবং মানচিত্র খাওয়ার অভ্যাস করুন। তার চেয়ে বড় কথা, একটি নিজস্ব তসবি সংগ্রহ করুন।

অনেক কথা হইল, এখন একটি খাছ কথা শুনুন! ধর্মে যেহেতু সুযোগ আছে সেহেতু অতি সত্বর দুইটি না হোক, অন্তত একটি বিদেশীনি পুত্রবধু সংগ্রহ করিবার চেষ্টা করুন, মার্কিনি হইলে খুবই ভালো, বধুর ধর্ম লইয়া চিন্তা করিবেন না। দেশের মানুষ পুত্রবধুদের ধর্ম সম্পর্কে তেমন মাথা ঘামায় না।

আপনার তো ম্যাডাম, বিদেশেও ঠাঁই নাই। এখন তো শুধু ঘরছাড়া, খোদা নাখাস্তা যদি...!

ফী আমানিল্লাহ!

 

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা