যিলক্বদ ১৪৩০হিঃ (১৪)

রসের কলমদানি

রসের কলমদানি

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

পেয়ারে বেরাদারান! আমি বিশ্বাস করি বা না করি, তোমাদের তো দাবী এই যে, আমি অধমকে তোমরা বহুত বহুত পেয়ার করো। তোমরা আমাকে পেয়ার করো বা না করো, আমার দাবী এই যে, রসের কলমদানি তোমরা বহুত বহুত পছন্দ করো। রসের কলমদানি তোমরা পসন্দ করো বা না করো একটা প্রশ্ন তোমরা অবশ্যই করতে পারো, রসের কলমদানির মজলিস থেকে আমি কেন গায়েব ছিলাম? এতকাল কোথায় ডুব মেরে ছিলাম? তোমাদের প্রশ্নটিতে রসের ছোঁয়া থাক বা না থাক, প্রশ্নের জবাব তো আমাকে দিতেই হবে। কারণ তোমাদের সঙ্গে আমার কত দিনের জান-পহচান! ‘আফটার অল’ তোমাদের তো একটা হক আছে অধমের জানমালের উপর! ঘটনা এই যে, একদিন কাহাফের সূরা তিলাওয়াত করতে করতে বুঝতে পারিনি, আমি নিজেই কখন ‘কাহাফীয়’ নিদ্রার কোলে ঢলে পড়লাম। জেগে দেখি, বহু যামানা পার হয়ে গেছে! শহর-নগর সবকিছু বদলে গেছে, বদলে গেছে শহর-নগরের এমনকি মানুষগুলোও! এ দীর্ঘ নিদ্রায় পার্শ্বপরিবর্তন করেছিলাম কি না মনে নেই। তবে ‘ডানপার্শ্বে’ বড় বেশী ব্যথা, আর ‘বামপার্শ্বে’র তবিয়ত বড়ই খোশহাল! কী এর কারণ কে জানে! হয়ত অন্য কিছু নয়, শুধু একপার্শ্বিক নিদ্রার উপসর্গ; হয়ত অন্য কিছু, আরো গভীর কিছু। যাক সে চিন্তায় এখন মাথাটা আর ঘামাতে চাই না। সুদীর্ঘ নিদ্রায় এমনিতেই মাথাটা ভার হয়ে আছে। তবে একটি বিষয়ে মাথাটা কেন জানি নিজে নিজেই ঘামতে শুরু করেছে। একটু আগে শব্দটা কানে পড়েছে তো, তাই; ঐ যে, ‘উপসর্গ’। স্বর্গ এবং উপসর্গ-এর মানেটা যেন কী? হাঁ, কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ মনে পড়ছে। নিদ্রাকালে স্বপ্নযোগে কে যেন এসেছিলেন এবং স্বর্গ ও উপসর্গ সম্পর্কে আমাকে নছীহত করেছিলেন। কে যেন! কে যেন! হাঁ, মনে পড়েছে, নিল আর্মস্ট্রং! মানুষটা সাদা চামড়ার; যদ্দুর মনে পড়ে স্বপ্নেও তাই দেখেছিলাম; তবে লোকটাকে নিল বলে কেন? চাঁদের বুড়ি কি তার গায়ে ‘নীল’ ছিটিয়ে দিয়েছিলো? তা হবে কেন? নামটা তো আগে থেকেই নিল ছিলো! সাদা মানুষের নাম নীল, অদ্ভুত কাণ্ড তো! যাকগে। এসব তুচ্ছ বিষয়ে এখন মাথা ঘামানো ঠিক না। সুদীর্ঘ নিদ্রায় মাথাটা এমনিতেই ভার হয়ে আছে। তবে কেন জানি মাথাটা নিজে নিজেই বড় বেশী ঘামতে শুরু করেছে। এই দেখো না, মাথার লম্বা লম্বা চুলের ডগা থেকে কেমন টপ টপ ঘাম ঝরছে! তো কী বিষয়ে যেন মাথাটা ঘামছে! হাঁ, মনে পড়েছে, স্বর্গ এবং উপসর্গ-এর অর্থ নিয়ে মাথাটা ঘামছে। দীর্ঘ নিদ্রাকালে বড় শান্তিতে ছিলাম, হঠাৎ নিল আর্মস্ট্রং সাহেব স্বপ্নযোগে এসে হাযির। আমি তো অবাক! এত নামী-দামী মানুষ! উচিত ছিলো অনেক খাতির যত্ন করা। ঘী-দুধ-মাখন দিয়ে আপ্যায়ন করা। কিন্তু উপায় কী, আমি তো ছিলাম নিদ্রায় অচেতন! তাছাড়া ক্রিকেটে-ফুটবলে এবং দাবা-হকিতে যত পিছনেই থাকি, ভেজালে তো আমরা বিশ্বচ্যম্পিয়ন! কে জানে, নিল সাহেব বাংলাদেশী দুধ-ঘী-মাখন খাবেন কি না! যাকগে এখন এসব তুচ্ছ বিষয়ে মাথা ঘামানো ঠিক না, দীর্ঘ ঘুম থেকে উঠেছি তো, কিন্তু মাথাটা যে নিজে নিজেই ঘামতে শুরু করেছে! তো কী বিয়য়ে যেন মাথাটা ঘামছে! হাঁ, মনে পড়েছে। নিল আর্মস্ট্রং সাহেবের নছীহত। কী বলেছিলেন তিনি, চাঁদে যাওয়ার কথা! সে তো আগে থেকেই জানা! চাঁদের বুড়ির কথা? সে তো দাদী-নানীর কাছ থেকেই শোনা! তবে! হাঁ মনে পড়েছে,তিনি বলেছিলেন স্বর্গ এবং উপসর্গের কথা। আচ্ছা শুরু থেকেই শুরু করি। এসেই বসলেন ঠিক আমার পাশটিতে। বললেন, তুমি আবার উঠতে যেয়ো না। ঘুমিয়ে থাকো। অনেক লিখেছো তো জেগে জেগে ঘুম মেরে। কী লাভ হলো তাতে? ঘুম থেকে জেগেই বুঝতে পারবে, কোন লাভ হয়নি। যাদের উদ্দেশ্যে লেখা ওরা পড়েইনি! যাও বা পড়েছে, বুঝেইনি! যাও বা বুঝেছে, মানেইনি। অথচ সহজ কথা, সাগর পাড়ি দিতে জাহাজ লাগে, নৌকাতে হয় না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! হুড়মুর করে চড়ে বসলো গিয়ে ‘নৌকায়’। এখন দেখো ঝড়ে কেমন টালমাটাল! কী ডুবু ডুবু! হবেই তো, যেমন কর্ম তেমন ফল, সে তো জানা কথা। যাক গে, আমি ভাবছিলাম, কীভাবে তোমাকে সাবধান করি। কিন্তু তুমি তো জেগে বসে থাকো কলম নিয়ে, ঘুমোতেই চাও না। আমি আবার স্বপ্ন ছাড়া আসতে পারি না, ওরা আমাকে বেঁধে রেখেছে তো। আজ তুমি ঘুম পাড়াতে সুযোগ পেয়ে এলাম তোমাকে সাবধান করে যেতে। শোনো, নামে, আর কালো চামড়াতে ধোকা খেয়ো না। ওর বুদ্ধিতে কিছু করতে যেয়ো না। আর শোনো, জেগে উঠে দেখবে, শুরু হয়ে গেছে মহাফেতনা, দীপুমণি, আপুমণি সবাই মিলে স্বর্গ থেকে তোমাদের নিয়ে যেতে চাচ্ছে উপসর্গে। সাবধান, স্বর্গ ছেড়ে উপসর্গের মোহে পড়ো না। আমি বললাম,স্বর্গ আর উপসর্গ, ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলম না! নিল সাহেব বললেন, এখন বোঝবে না, ঘুমিয়ে আছো তো! ঘুমের মাঝে মগজ বলো, দেমাগ বলো, ঠিক মত কাজ করে না। মুসলিম বিশ্বের নেতারা ঘুমিয়ে আছে বলেই তো কিছু বুঝতে পারছে না, মগজ-দেমাগ ঠিক সময় ঠিক কাজটি করতে পারছে না। নইলে কি আর এক ভাষণে এত ফুর্তি! যাক গে, আপাতত এইটুকু বুঝে রাখো যে, তোমার দেশের সীমানাটাই হলো স্বর্গ, আর উপসর্গটা বুজে নিয়ো ঘুম থেকে জেগে । আচ্ছা, যাওয়ার আগে শেষ উপদেশটা দিয়ে যাই। তোমরা মাদরাসাগুলোতে নিজেদের মত করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা শুরু করো। তোমাদের পূর্বপুরুষরা তো ছিলেন এপথের অগ্রপথিক। তোমরা কেন পিছিয়ে থাকবে? আমি জানি, তোমাদের আছে বিপুল সম্ভাবনা। মরচে ধরা সম্ভাবনাকে ঘষে মেজে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ঠিক রেখে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়ো বিজ্ঞানের সাধনায়। আমি আবার আসবো তোমার কাছে, তোমাকে .. না, তুমি তো বুড়ো হয়ে গেছো, বুড়োদের দিয়ে আসলে কিছু হয় না। তুমি বরং ঘুম থেকে জেগে কিছু তরুণ ও যুবককে প্রস্তুত করো। ওদের নিয়ে আমি আবার যাবো চাঁদের অভিযানে। চাঁদের অধিকার আমি তুলে দিয়ে যাবো তোমাদের হাতে। পিট পিট করে কী দেখছো! গায়ে পড়ে কেন উপদেশ দিতে এসেছি! কেন, মনে নেই, চাঁদে গিয়ে তোমাদের নবীর মুজেযা দেখে আমি যে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি তো এখন মুসলিম উম্মাহর সদস্য! ওরা আমাকে নযরবন্দী করে রেখেছে, নইলে কবেই এসে পড়তাম তোমাদের কাছে! *** ঘুম থেকে জেগে কিছুই মনে ছিলো না স্বপ্নের কথা। খুব ক্ষুধা পেয়েছিলো। বাজারে গেলাম। গিয়ে তো অবাক! পথঘাট চিনি না, এটা কোন শহর! না আমি কারো কথা বুঝি, না কেউ আমার কথা বোঝে! এরা কারা! এ কোন্‌ মুদ্রা! মুদ্রার গায়ে লেখা এটা কোন ভাষা! ওম্মা! এটাও দেখি স্বপ্ন! এবার সত্যি সত্যি ঘুম থেকে জেগে উঠলাম! দেখি, পুষ্পের এক বন্ধু ধাক্কা দিচ্ছে। ধড়মর করে উঠে বসলাম। একি! এই নির্জন পাহাড়ী এলাকায় আপনি! তাও ঘুমে এমন অচেতন! ওদিকে রসের কলমদানির সমঝদার পাঠকান সব পেরেশান! চলুন, চলুন, আমি নিজে আপনাকে পৌঁছে দেবো আমার হেলিকপ্টারে। আমি তো অবাক, হেলিকপ্টার! দুষ্ট বন্ধুটি মুচকি হেসে বললো, মানে আমার সাইকেল। সাইকেল বটে, তবে ‘চলে হাওয়ায় উইড়া উইড়া’! **** তো পেয়ারে পাঠকান, এই হলো আমার ঘটনা, কিন্তু আমি নিজেই বুঝতে পারছি না, এ পাহাড়ি জঙ্গলে কী করে এলাম! এত দীর্ঘ ঘুমই বা আমাকে পেলো কীভাবে! আর বাজার! এখন বুঝলাম, আসলে আমি স্বপ্নেই ঘুম থেকে জেগে উঠেছিলাম এবং বাজারে গিয়েছিলাম। তবে যাই বলো, ঘুমটা ছিলো জবর মজার, আর স্বপ্নটা হলো ফাউ। আর লেখাটা সেটা হলো ডবল ফাউ! ফাউ-এর উপর ফাউ! বেশ মজা তো!

শেয়ার করুন:     
প্রিন্ট

অন্যান্য লেখা